![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"গল্পঃ কাল্পনিক নিরাপত্তা"
"মোঃ জোবায়ের বাপ্পী"
………
আসাদ; একজন বিজ্ঞানী। যে বিশ্ব সম্প্রদায় থেকে বিভক্ত। তার নিজেরই একটা আলাদা দুনিয়া আছে। নিজের সকল আবিষ্কার সে তার দুনিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে। আসাদের নিজস্ব সিকিউরিটি আছে। গোপণ ভাবে সে নিজস্ব স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে। তা দিয়েই নিজের সিকিউরিটি আরও শক্ত করেছে। আসাদের তৈরি সিকিউরিটি বিশ্বের সেরা সিকিউরিটি। তার তৈরি সিকিউরিটি অর্থ দিয়ে নয়, ভালোবাসা দিয়ে তৈরি। তার সিকিউরিটির প্রতিটি সদস্যের ওপর আসাদের ঋণ রয়েছে। তাদের বিপদের সময়ই আসাদ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাই তো তারা ভালোবেসে আসাদের জন্য জীবন দিতেও রাজি। বিশ্বের বড় বড় ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ তাদের বিশেষ অনুষ্ঠানে আসাদের কাছ থেকে সিকিউরিটি নেয়। তার পরিবার বলতে শুধুমাত্র তার ছোট বোন মিতু। বাবা মা তাদের অজস্র সম্পত্তি রেখে গিয়েছে আসাদ ও তা দুই বোনের জন্য। কিন্তু আমাদের সমাজের পুরুষ নামক কিছু কীটের লোভ লালসার শিকার হয়ে তার বড় বোন মারা যায়। তারপর থেকে মিতুই তার দুনিয়া। যদিও আসাদ নিজ পায়ে দাঁড়ানোর পর সেই কীটগুলোকে অত্যন্ত ভয়ানক মৃত্যু দিয়েছিল। আসাদ তার সব রকমের আবিষ্কৃত প্রযুক্তি দিতে মিতুকে নিরাপত্তার মধ্যে রেখেছে। যাতে কোনো কীট মিতুর দিকে এগিয়ে আসতে না পারে।
“স্যার, স্যার, একটু এদিকে দেখুন।”
মিতুর মনিটরের সামনে বসে থাকা নিরাপত্তা কর্মী শরিফের ডাকে আসাদ সেদিকে তাকালো। হাতে বেশ কিছু ফাইল নিয়ে বেশ ব্যস্ত আছে সে। তাই কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলল, “দেখতেই তো পারছো আমি ব্যস্ত আছি। তো এভাবে ডাকছো কেন? কি হয়েছে? এ্যানিথিং রং?”
“জ্বি স্যার। বেশ কিছুক্ষণ ধরে কিছু ছেলে মিতু ম্যামকে ফলো করছে।”
আসাদ তার সব ফাইল রেখে ছুটে মনিটরের সামনে চলে এলো আর অবাক হয়ে বলল, “হোয়াট! ওর গাড়ি কোথায়?”
“ড্রাইভারকে আজ নিতে আসতে দেখিনি।”
“এই জায়গাটা অপরিচিত লাগছে যে?”
“হ্যাঁ মিতু ম্যাম এখন রূপনগরে আছে।”
“কিন্তু এই সময়ে তো বাসায় থাকার কথা।”
আসাদ কিছুক্ষণ ছেলেগুলোর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে শরিফকে জিজ্ঞেস করলো, “মিতুর কাছে পৌঁছাতে আমাদের কতক্ষণ লাগবে?” শরীফ ল্যাপটপে দু চারটা চাপাচাপি করে বলল, “আমাদের স্পেশাল হেলিকপ্টারে ১ ঘন্টা লাগবে। কিছুক্ষণ মনিটরের দিকে তাকিয়ে তারপর আসাদ সবার উদ্দেশ্যে বলল,
“পল, হেলিকপ্টার বিপি-৪ রেডি করতে বল। ওয়াসিম, তুমি ড্রাইভারকে কল দাও। অ্যাশ, তুমি মিতুর সাথে আমার কন্টাক করাও। শরিফ, তুমি পুরো এরিয়ার ম্যাপ বের কর। রাইট নাউ, কুইক, ফাস্ট।” শেষ বাক্যটা আসাদ বেশ উত্তেজিত হয়ে বলেছে। সেই সাথে মিশে ছিল কিছু ভয় এবং রাগও। শুরু হয়ে গেল রুম জুড়ে ব্যস্ততা ও কিবোর্ডের ঠুস ঠাস শব্দ। আসাদ তার স্পেশাল নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে নিয়ে বিশ তলা ভবনের ছাদে গেল। তারপর সেখান থেকে হেলিকপ্টারে উঠলো। মাইক্রোফোনে অ্যাশ বলল, “স্যার, মিতু ম্যাম অন দ্যা লাইন।” আসাদ তার মনিটরে মিতু ও তাকে অনুসরণ করা ছেলেগুলোর গতিবিধি দেখছে। কন্ট্রোল রুমের সাথে মাইক্রোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ আছে।
প্রাইভেট নাম্বার হওয়ায় মিতু চিনতে পারলো না। তাই প্রথম দুয়েকবার রিসিভ করেনি। তৃতীয়বার রিসিভ করলো।
“হ্যালো কে?”
“আমি। চুপচাপ হেঁটে যা। পেছনে তাকাবি না। আহা বলছি না পেছনে তাকাবি না।”
এদিকে পাশে থাকা জয় ইশারায় বলল, “স্যার, ম্যাপ রেডি।”
বেশ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে মিতু বলল, “কেন ভাইয়া? কি আছে পেছনে?”
“আমার ওপর ভরসা হয়?”
“কি যে বলিস না ভাইয়া! তুই যদি আগুনকে পানি বলে ঝাপ দিতে বলিস তাও আমি চোখ বন্ধ করে সেখানে ঝাপ দিব।”
“গুড গার্ল। আমি যা বলছি তা কর। ইয়ার ব্লুটুথ অন করে কানে দে। তারপর চুপচাপ হাঁট, যেভাবে এতক্ষণ হাঁটছিলি।”
আসাদের কথা মতো মিতু কানে ব্লুটুথ দিয়ে মোবাইল ব্যাগে রেখে হাঁটতে লাগল। আসাদ জয়কে বলল, “আশেপাশে কোনো পুলিশ স্টেশন নাই?”
“২ কি.মি দূরত্বে একটা পুলিশ স্টেশন আছে।”
“যোগাযোগ কর।”
“ওকে স্যার। ড্রাইভার কানেকটেড।”
“কোথায় তুমি?”
“আমি তো ঘরে স্যার।”
“তোমাকে কি ঘরে থাকার জন্য রেখেছি?” বেশ রেগেই কথাটা বলল আসাদ। ড্রাইভার সাজু উঠে বসলো। ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, “মিতু ম্যামই বলেছিল আজ না যেতে। উনি কোথাও যাবেন বলেছিল।” আসাদ তার গলার স্বরে আরও রাগ মিশিয়ে বলল, “তোমাকে ওর নিরাপত্তার জন্য রেখেছি। সেটা কি তুমি ভুলে গেছ? নাকি কারও সাথে হাত মিলিয়েছ?”
আসাদ একটা গুলি বের করে নিজের মাথায় ধরলো।
“স্যার, আপনি নিশ্চয়ই আমাকে দেখছেন। আমি আপনার জন্য জীবনও দিতে পারি। অর্ডার দিন। ট্রিগার চালিয়ে দিব।” মনিটরে একপাশের স্ক্রিনে থাকা ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে রইল আসাদ। তারপর শান্ত স্বরে বলল, “বোঝাপড়াটা পরে করব। আপাতত আমি তোমাকে মিতুর লোকেশন পাঠাচ্ছি। তাড়াতাড়ি সেখানে যাও। মিতু ফাঁদে পড়েছে।”
আসাদ ম্যাপ দেখে মিতুকে বলল, “তোর সামনে যে লোকটা আসছে। তাকে এন.এন ম্যানশন কোথায় জিজ্ঞেস করে সময় অতিবাহিত কর। অত্যন্ত চতুরতার সাথে কাজটা করবি।” মিতু তাই করতে লাগল। অ্যাশ বলল, “ওসি অন লাইন স্যার।”
“ওসি সাহেব, আমি সায়েন্টিস্ট আসাদুর রহমান বলছি। আমার ________” আসাদ বিস্তারিত বলে সাহায্য চাইল। ওসি ওকে বলে কেটে দিল। এন.এন ম্যানশনের নাম দিয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটালো মিতু। এবার আসাদ বলল, “আনুমানিক তোর বিশ কদম সামনে ডানে একটা মোড় এসেছে। সেখানের ডানে যাবি। ডানে গিয়েই দেয়াল টপকিয়ে ওপারে চলে যাবি। ওপারে খোলা মাঠ আছে। মাঠের শেষ প্রান্তে গেলেই মেইন রোড দেখতে পাবি। সেখানে গিয়েই কোনো পুলিশকে দেখে বলবি কিছু লোক তোকে ফলো করছে।” ওকে ভাইয়া বলে মিতু তার হাঁটার গতি কিছুটা বাড়াল। নিজের ঘড়ির আয়নায় সময় দেখার বাহানায় মিতু দেখে নিলো তার পেছনে চারটা ছেলে আছে। মিতু ডানের গলিতে গিয়েই ছয় ফুট দৈর্ঘ্য দেয়াল টপকিয়ে ওপারে চলে গেল। বারো বছর বয়স থেকেই মিতু সেলফ ডিফেন্স ও অ্যাথলেটিকস শিখে আসছে। আসাদই তাকে একটা চাইনিজ স্কুলে ভর্তি করিয়েছিল। যেখানে সেলফ ডিফেন্স ও অ্যাথলেটিকস শেখানো হয়। এদিকে ছেলেগুলো এসে রাস্তায় মিতুকে দেখতে না পেয়ে তাদের একজন দেয়ালে উঠলো। তা দেখে আসাদ বলল, “মিতু ভাগ।” মিতুও দেখলো দেয়ালে একজন উঠে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মিতু দৌড় দিল। মিতুকে দৌড়াতে দেখে সে বাকিদেরকে বলল, “ও বুঝে গেছে যে আমরা ফলো করছি। পালাচ্ছে।” সবাই দেয়াল টপকে মাঠে নেমে মিতুকে ধরার জন্য দৌড়াচ্ছে। মিতুও তার সম্পূর্ণ গতিতে দৌড়াচ্ছে। আসাদ উত্তেজিত হয়ে বলল, “আমাদের পৌঁছাতে আর কতক্ষণ লাগবে?” পাইলট উত্তর দিলো, “আর বিশ মিনিট স্যার।” আসাদ বলল, “এত সিকিউরিটি, প্রযুক্তির ব্যবহার করি। তবুও যদি আজ আমার বোনকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হই তবে___” আসাদ কেঁদে উঠলো। জয় বলল, “চিন্তা করবেন না স্যার। আমরা এর আগেই পৌঁছে যাব।”
“ড্রাইভার, তুমি কোথায়?”
“লোকেশনে পৌঁছাতে আর দশ মিনিট লাগবে, স্যার।”
আসাদ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেগুলোও ট্রেনিং প্রাপ্ত ছেলে। নয়তো মিতুর সাথে দৌড়ে পারত না। ছেলেগুলো প্রায় কাছে চলে এসেছে। মিতু থেকে এক হাত দূরত্বে আছে। হঠাৎ মিতু লাফ দিয়ে পেছনের একজনকে লাথি মারলো। আকস্মিক পরিবর্তনে সবাই চমকে গেল। মিতু বসে আছে। চোখে বিচক্ষণতার ভাব। ছেলে তিনটে একটু হাসলো।
“লড়াই করবে? আমাদেরকে চিনো? মার্সাল আর্টে আমরা ব্ল্যাক বেল্ট প্রাপ্ত।”
“আর আমি গোল্ডেন।”
আসাদ বলল, “কি করছিস মিতু? পালা ওখান থেকে।”
“পালানোর জন্যই কি ট্রেনিং দিয়েছিলে ভাইয়া?”
আসাদ চুপ হয়ে গেল। মিতু তার হাতের ইশারায় ছেলেগুলোকে আসতে বলল। এদিকে তখনই জয় বলল, “স্যার এদিকে দেখুন।” আসাদ দেখল মিতুর পেছনে আরও ছেলে আসতেছে। আসাদ বলল, “মিতু পালা। পেছনে আরও অনেক আসতেছে।” মিতু এক নজর পেছনে তাকালো। তারপর সামনের তিনজনের দিকে দৌড় দিলো। তাদের একজনের কাঁধের ওপর ডিঙিয়ে আবার দৌড়াতে লাগল। পেছনে প্রায় দশ পনেরো জন আছে।
“ভাইয়া এরা কারা?”
“তুই একদম চিন্তা করিসনে। আমরা এসেই গেছি।”
মাঠের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে মিতু থেমে গেল। তার সামনে আরও কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। যাওয়ার আর পথ নেই। আস্তে আস্তে সবাই ঘিরে আসছে। মিতু এক নজর সবার দিকে তাকালো। তারপর ব্যাগ থেকে একটা লাঠি বের করলো, এক ফুটের মতো। তবে একটা বাটন চাপতেই সেটা চার ফুট হয়ে গেল। ছেলেগুলোও লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে।
ঠিক তখনই একটা গাড়ি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে প্রবেশ করলো। নিজেদেরকে এক্সিডেন্টের হাত থেকে বাঁচাতে ছেলেগুলো সরে গেল। গাড়িটা একদম মিতুর সামনে এসে দাঁড়াল। গাড়ি দেখেই মিতু বুঝে গেল এটা তার গাড়ি। এদিকে হেলিকপ্টারের শব্দে সবাই পেছনে তাকালো। হেলিকপ্টার থেকে আসাদ ও তার নিরাপত্তা কর্মী নামলো। মিতু এবার একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। নিরাপত্তা কর্মীদের উদ্দেশ্যে আসাদ বলল, “একটাও যাতে পালাতে না পারে। শেষ নিঃশ্বাস বের না হওয়া পর্যন্ত যেন কারও হাত না থামে। No mercy.” নিরাপত্তা কর্মী ছুটলো ছেলেগুলোর উদ্দেশ্যে। শুরু হলো রক্তারক্তির এক যুদ্ধ। আসাদের লোকজন সবাই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এমনকি ড্রাইভারও। মিতুর ঘরের চাকরটাও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সবই আসাদের লোক। মুহূর্তেই সবাইকে মেরে হেলিকপ্টারে উঠানো হলো। আসাদ তার বোনকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো।
“ভয় পেয়েছিলি?”
মিতু তার ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলল, “যতক্ষণ তুই আছিস, আমার কোনো ভয় নেই।”
“নেক্সট টাইম কোথাও যাওয়ার আগে আমাকে একবার বলিস।”
মিতু শুধু মাথা দুলালো। আজ মিতু বুঝলো কেন তার ভাই সিকিউরিটির জন্য এত টাকা খরচ করে। আসাদ চুপচাপ মিতুর মাথায় বুলাতে লাগল। আসাদ সিকিউরিটির পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। আজ সব টাকা উসুল হয়ে গেছে। বোনের নিরাপত্তার সামনে লক্ষ কোটি টাকাও কিছু না। বড় বোনকে তো বাঁচাতে পারেনি। তবে ছোট বোনের দিকে একটা কীটও আসতে দিবে না।
"সমাপ্ত"
আমার একটাই স্বপ্ন। আমি যেন আমার বোনদেরকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে পারি। হে আল্লাহ তুমি সাহায্য করো। বোনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিটি ভাইয়ের হয়তো এমনই স্বপ্ন।
©somewhere in net ltd.