![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্পের নামঃ অনুভূতির পরিবর্তন।
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।
উত্সর্গঃ Tuktuki Datta
.
নূরী রেস্টুরেন্টে ঢুকে চিরচেনা সেই পুরানো টেবিলে বসলো। সামনে বসে আছে আসাদ। এই রেস্টুরেন্টের রসগোল্লা নূরীর ফেভারিট। প্রায়শই এখানে আসা হয় তাদের। তবে অন্যদিনের তুলনায় আজকের দিনটা স্পেশাল। রেস্টুরেন্টের সবকিছুই পুরানো। শুধুমাত্র অনুভূতিটা নতুন। যার কারণ হলো আসাদ। গতকাল বিকালের আগ পর্যন্ত আসাদ নূরীর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। কিন্তু আজ সে মনের মানুষ। আসাদের সাথে নূরীর পরিচয়টা হয়েছিল ব্যতিক্রম ভাবে। সেই দিনটার কথা নূরী আজও ভুলেনি। কখনো ভুলতেও পারবে না। তখন নূরী অনার্স থার্ড ইয়ারে। দিনটা ছিল শীতের দিন। নবীন বরণ হচ্ছে। এক জুনিয়র স্টুডেন্ট রেগিংয়ের স্বীকার হয়ে নূরীর গায়ে পানি ঢেলে দিয়েছিল। যদিও অনেক স্যরি বলেছিল কিন্তু পরিস্থিতিটা অত্যন্ত বিব্রতকর ও লজ্জার ছিল যা প্রকাশ করার ভাষা নেই। পুরো ক্যাম্পাসের মধ্যে ভেজা অবস্থায় নূরী দাঁড়িয়ে ছিল। কেউ মিটমিট করে হাসছে, কেউবা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। শীত ভুলে লজ্জায় নূরী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। ঠিক তখনই আসাদ এসে একটা চাদর নূরীর গায়ে জড়িয়ে দিলো এবং হাসি দিয়ে বলল, "আরে ধুর চল তো।" লজ্জায় নূরীর পা এক কদমও এগোচ্ছে না। আসাদ-ই তাকে টেনে নিয়ে গেল। আসাদের ব্যবহার এমন ছিল যেন সে নূরীর অনেক দিনের বন্ধু। অথচ সেদিন-ই তাদের প্রথম দেখা। তিন বছর ধরে ভার্সিটিতে পড়ছে নূরী। মোটামুটি অনেককেই একটু আধটু চিনে। কিন্তু আসাদকে আগে কখনো দেখেনি। ভার্সিটিতে আসাদ নতুনও নয়। তার হাতে একটা ফাইল ছিল যেখানে লেখা ছিল আসাদ ইসলাম। বিবিএ ফাইনাল। সেদিন আসাদের একটা কথা নূরীর আজও মনে আছে। আসাদ তাকে ক্যান্টিনে এনে এক কোণায় বসালো। তারপর বলে, “যা হবার হয়ে গেছে। মন খারাপ করে বসে থাকলে আপনারই লস। দুনিয়া যখন আপনার দিকে তাকিয়ে হাসবে তখন আপনিও দুনিয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে দিন। দেখবেন দুনিয়ার হাসি থেমে গেছে। জানেনই তো মাইনাসে মাইনাসে প্লাস।” আসাদের কথার কোনো উত্তর দেয়নি নূরী। কিছুক্ষণ পর উঠে বাসায় চলে যায়। পরেরদিন ভার্সিটি এসে আসাদকে তার চাদরটা ফেরত দিয়ে ধন্যবাদ জানায়। এরপরই শুরু হয় তাদের বন্ধুত্ব। সিনিয়র হওয়ায় পড়াশোনার ব্যাপারে আসাদ থেকে অনেক হেল্প পেয়েছে সে। নূরীও আসাদকে হেল্প করেছে। লেখাপড়ায় আসাদের গতি খরগোশের মতো হলেও অ্যাসাইন্টমেন্ট করার ক্ষেত্রে ছিল কচ্ছপের গতি।
তাদের বন্ধুত্ব বেশ ভালোই চলছিল। গতকাল বিকালের আগ পর্যন্তও তারা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। কিন্তু বিকালের পর সব অনুভূতি পরিবর্তন হয়ে গেছে। মাসখানেক হলো আসাদ বিবিএ ফাইনাল শেষ করে চাকরির জন্য ঘুরছে। মাঝেমাঝে বিকালে তারা আড্ডা দিতে নদীর পাড়ে আসতো। গতকালও এসেছিল। আসাদ বড্ড এলোমেলো ছেলে। কোনো জিনিস ঠিকমতো গুছিয়ে রাখতে পারে না। ইন্টারভিউ দিতে যাবে কিন্তু কি পরবে তা বুঝে না। নূরী বাছাই করে দেয়। আসাদের চালচলন যতোই এলোমেলো হোকনা কেন তার কথা বলার ভঙ্গি অত্যন্ত সোজা। যেন স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্যে লেকচার দিচ্ছে। গতকাল বিকালে দেখা হওয়ার পর থেকেই আসাদকে অন্যরকম লেগেছিল। কথার মাঝে কেমন যেন জড়তা ছিল। কিন্তু নূরী বুঝতেই পারেনি যে আসাদ মনের মধ্যে তাকে ভালোবাসা নিবেদন করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। নূরী বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছিল কি হয়েছে। আসাদ প্রতিবারই, “কিছু না” বলে এড়িয়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই তারা বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটছিল আর গল্প করছিল। তখন আসাদ বলল,
- আমি তো এলোমেলো টাইপের ছেলে, তাই না?
- সেটা কি আর বলতে হয়?
- ভার্সিটিতে আমার অ্যাসাইনমেন্ট আর এখন ইন্টারভিউর ড্রেস সবকিছু তো তুই-ই গুছিয়ে দিস, তাই না?
- কি আর কর, ফ্রেন্ড হিসেবে এইটুকু তো করতেই হয়।
আসাদ কাশি দিয়ে গলা ঝেড়ে বলল,
- তুই কি সারাজীবনের জন্য আমাকে এভাবে গুছিয়ে রাখার দায়িত্বটা নিবি?
নূরী থমকে গেল। মুহূর্তেই নূরীর হার্ট বিট বেড়ে গেল যেন এইমাত্র একশো মিটার দৌঁড়ে এসেছে। নূরী পলকহীন ভাবে আসাদের দিকে তাকিয়ে আছে। জবাবের অপেক্ষায় আসাদও তাকিয়ে আছে। নূরী কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আসাদ আবার বলল,
- আসলে কখন কিভাবে যে মনের কোঠায় তুই বসে পড়েছিস তা আমি নিজেও জানি না। ছবির ডায়ালগের মতই বলছি। চোখ বন্ধ করলে তোর মায়াবী হাসি দেখতে পাই। তোকে ছাড়া এখন জীবন কল্পনাও করতে পারি না।
আসাদ থামলো। নূরী চুপ করেই আছে। আসাদ হাত বাড়িয়ে বলল,
- আমার কাছে কোনো জব নেই। ফিউচারের কোনো ঠিকানা নেই। তোকে দামি দামি শাড়ি গহনা দিতে পারবো কিনা জানি না। তবে তোর সুখের জন্য সবকিছু করার চেষ্টা করব। দিবি তোর হাত আমার হাতে?
কিছুক্ষণ ভেবে তারপর নূরী বলল, “আমাকে একটু সময় দে।”
- হুম। চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি।
নূরীকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসাদ চলে গেল।
সারারাত নূরী ব্যাপারটা নিয়ে ভেবেছে। আসাদ ছেলে হিসেবে খারাপ না। একটু এলোমেলো হলেও মনটা ফ্রেশ। তাছাড়া নূরী ওর সাথে সবসময়ই নিজেকে নিরাপদ অনুভব করে। যা অন্যদের সাথে করে না। তাই তো কোথাও ঘুরতে বের হলে আসাদকেই ডাকে।
বর্তমানে নূরী আর আসাদ রেস্টুরেন্টে বসে আছে। নূরী তার সিদ্ধান্ত বাসা থেকেই ঠিক করে এসেছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে দুজনই চুপচাপ বসে আছে। আসাদের হাবভাব দেখে নূরী মনে মনে হাসছে। আগে এসেই কত কথা বলত। কিন্তু আজ একদম চুপচাপ। কিছুক্ষণ পর আসাদ মুখ খোলার চেষ্টা করলো।
- ইয়ে মানে আমি মানে ……
নূরী বুঝলো যে আজ আসাদ কথা শুরু করার পথ পাচ্ছে না। ব্যাপারটা স্বাভাবিকই। এতদিন ধরে বন্ধু ছিল। কিন্তু গতকাল প্রপোজ করায় এখন আর বন্ধুত্ব নেই। হয়তো নতুন কিছুর শুরু হবে নয়তো সব শেষ। আর এটা নূরীর জবাবেই হবে। নূরী বলল,
- যদি হাত দেই তবে আজীবন ধরে রাখতে পারবি তো?
আসাদ মুখস্ত বাক্য বলার মতো গড়গড় করে বলল‚ "হ্যাঁ‚ হ্যাঁ‚ হ্যাঁ পারবো।"
- তোদের এই একটাই সমস্যা। প্রেম করতে আগ্রহী কিন্তু টিকিয়ে রাখতে আগ্রহী না। এখন যে আগ্রহ নিয়ে হ্যাঁ‚ হ্যাঁ বলছিস কিছু মাস পর কি এই আগ্রহ থাকবে?
- বিশ্বাস রাখতে পারিস।
- বিয়ে করবি তো নাকি কিছু মাস প্রেম করে বলবি স্যরি নূরী আমার দ্বারা রিলেশন কন্টিনিউ করা সম্ভব না?
- তুই রাজি থাকলে আজই বাবা-মায়ের সাথে দেখা করিয়ে দিব।
- তা জনাব বিয়ে করে বউকে কি খাওয়াবেন, কি পরাবেন?
- বিশ হাজার টাকা দিয়ে আপনি ঘর সংসার চালাতে পারবেন?
- বেকার মানুষ এত টাকা কই পাবি?
আসাদ নূরীর হাতে একটা খাম দিয়ে বলল‚
- খুলে দেখ।
নূরী খাম খুলে দেখলো জব কনফর্মেশন লেটার।
- তোর জব কনফর্ম হয়েছে?
- হ্যাঁ।
- লেটার তো গতকালের। কিন্তু তুই তো গতকাল এই ব্যাপারে কিছুই বলিসনি।
- জবটা কনফর্ম হওয়ার পরেই প্রপোজ করেছি।
- তো কেন বললি যে জব নেই, ফিউচার নেই?
- দেখলাম তোর প্রতিক্রিয়া কেমন হয়।
নূরী হেসে উঠলো। আসাদ বলল‚
- ইয়ে মানে তোর জবাবটা ………
নূরী হেসে বলল,
- তুই কি কিছু বুঝিস না?
- জানিসই তো আমি কম বুঝি।
- চোখের ভাষা পড়তে শেখ। নয়তো ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
আসাদের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সেই সাথে শুরু হল তাদের পথচলা। আসাদ যে এত রোমান্টিক তা নূরী আগে বুঝেনি। নূরীর প্রতিটি মুহূর্ত ওর জন্য সুন্দর কাটে। তাছাড়া আসাদ এখন কবিও হয়ে গেছে। কেউ ঠিকই বলেছে প্রেমে পড়লে ছেলেরা কবি হয়ে উঠে। এইতো সেদিন পার্কে বসে আছি। তখন আসাদ একটা কবিতা বলল।
“আকাশ বাতাস ফুল
সব তোমায় দেখলে হাসে
আমার এই মনটা
তোমায় ভীষণ ভালবাসে।”
আসাদের কবিতা কেমন তা ভাবার ইচ্ছে নেই নূরীর। তবে কবিতাগুলো শুনে নূরীর মনটা জুড়ে যায়। এভাবেই চলছে তাদের জীবন।
Tuktuki Datta'র জন্মদিন [১৭ ডিসেম্বর] উপলক্ষে নিশি চৌধুরী ও ইচ্ছেঘুড়ির পক্ষ থেকে গল্পটা তাকে উত্সর্গিত করা হলো।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, হাসিখুশি থাকুন, লিখতে ও পড়তে থাকুন। আপনার পথচলা শুভ হোক।
©somewhere in net ltd.