নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিখতে জানতে ও ছড়িয়ে যেতে চাই।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী

আমি বাপ্পী। জন্মস্থান বরিশাল। বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নামঃ স্পোর্টস পাগলী।

২৪ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:৪৪

অনুগল্পঃ স্পোর্টস পাগলী।
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।

দুয়ারের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম প্রায় দশ মিনিট। ভেতরে গিয়ে কিভাবে কথা শুরু করব তা নিয়েই এতক্ষণ ভেবেছি। অনেক চিন্তাভাবনার পর আমি ভেতরে গেলাম। রুমের পরিবেশটা আমার সবকিছু এলোমেলো করে দিলো। এতক্ষণ ধরে যা ভেবেছিলাম সব ভাবনা উড়ে গেল। আমি এই পরিবেশের মুগ্ধতায় হারিয়ে যেতে লাগলাম। নূরীর ডাকে ফিরে এলাম।
- এই যে‚ ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? এদিকে আসুন।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফুলের বিছানায় বসে আছে নূরী। সেদিকেই আসার ইশারা করে কথাটা বলল আমাকে। আমি চুপচাপ নূরীর পাশে গিয়ে বসলাম।
- আপনি তো আমার স্বামী। তাই না?
এক নজর আমি নূরীর দিকে তাকালাম। অত্যাধুনিক মেকআপের কারুকাজ ওর মুখে লেপ্টে আছে। যার ফলে ওর প্রকৃত সৌন্দর্য ঢাকা পড়েছে। মেয়েটা মেকআপ ছাড়াই রূপবতী। এসব কারুকাজে ওর চেহারাকে উজ্জ্বল করার ক্ষমতা রাখে না। সূর্যের সামনে যতোই তারা জ্বলুক, সূর্যের আলোকে হার মানাতে পারবে বলে মনে হয় না। আমি ওর দিকে তাকিয়েই যেন সব ভুলে গেলাম। ওর ডাকে নড়েচড়ে বসলাম। তারপর গলা ঝেড়ে বললাম, “হ্যাঁ। কেন? সেদিন দেখোনি?” সামনে দুই পাটি দাঁতের কিছু অংশ বের করে ও ছোট একটা হাসি দিলো। হাসি সম্পূর্ণ হওয়ার আগে আবার হাত দিয়ে ঢেকে ফেলে বলতে লাগল, “স্বামী হিসেবে আমার সব চাওয়া-পাওয়া, আবদার আপনার কাছে করতে পারি‚ তাই না?” মনে মনে ভয় পেলাম। কি না কি চেয়ে বসে আল্লাহ জানেন! সামান্য বেতনে চাকরি করি আমি। বিয়ের অধিকাংশ খরচ বাবা দিয়েছেন। তবুও নিজের সাধ্যমতো যা পেরেছি করেছি। আপাতত পকেটের অবস্থা একদম করুণ। নতুন বউ প্রথমদিন কিছু চাইলে যদি দিতে না পারি তবে নিজের কাছেই খুব লজ্জা লাগবে।

অনেকটাই ভয়ে ভয়ে বললাম, “হ্যাঁ বলো। কি লাগবে?”
- কিছু মনে করবেন নাতো?
- না।
- খেলাধূলা পছন্দ করেন?
আমি চোখ দুটো সামান্য ছোট করে নূরীর দিকে তাকালাম। আমার দৃষ্টি দেখে নূরী লজ্জা পেল আর বলল, “ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস এসবের কথা বলেছি।”
- ওও আচ্ছা। হ্যাঁ, পছন্দ করি।
- আমি কিন্তু মিথ্যা একদম পছন্দ করি না।
- আরে মিথ্যা বলব কেন? আমি সত্যিই স্পোর্টস পছন্দ করি। বিশেষ করে ক্রিকেট‚ ফুটবল।
- মিথ্যাই। সত্য হলে জানতেন যে আজ এল ক্লাসিকো। বার্সা-রিয়ালের খেলা।
আমি বোকার মতো তাকিয়ে রইলাম। কি বলব তা মাথায় আসছে না। নূরী বলল, “তা আপনার পছন্দের দল কোনটা?” আমি একটু ভাবনায় গেলাম তারপর বললাম, “রিয়াল মাদ্রিদ।” নূরী যেন একটা উত্‍সাহ পেল। বাংলাদেশের খেলার সময় সাকিব-ম্যাশরা উইকেট নিলে বা চার-ছক্কা মারলে আমরা যেমন খুশি হই, হাত তালি দেই। তেমনি নূরী খুশি হয়ে হাত তালি দিয়ে বলল, “দারুণ। আমি বার্সার ডাই হার্ড ফ্যান। খেলা মজাই হবে। চলেন চলেন।” আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, “কোথায়?”
- কোথায় আবার? টিভির রুমে চলেন। খেলা দেখবেন না?”
- বাবা টের পেলে খবর আছে।
- তারমানে এল ক্ল্যাসিকো দেখা হচ্ছে না? বিয়ের পর এটাই আমাদের প্রথম ক্ল্যাসিকো। আর এটাই মিস করব?
কাঁদো কাঁদো স্বরে নূরী কথাগুলো বলল। ঘরে ঢোকার আগে যে সকল প্রস্তুতি নিয়েছিলাম তা সব হাওয়া হয়ে গেল। কেননা আমি মনে মনে যে পরিস্থিতির কথা ভেবেছিলাম তার কিছুই এখানে নেই। এখানে তো একদম ভিন্ন পরিস্থিতি। নূরী কিছুক্ষণ পর পর নাক টেনে কান্নার শব্দ অবধারিত রেখেছে। এই মুহূর্তে সামনের রুমে যাওয়া সম্ভব না। নতুন বউ নিয়ে টিভি দেখছি ব্যাপার জানতে পারলে সবাই হাসবে। কি করা যায় ভাবতে লাগলাম। মানুষ চিন্তায় পড়লে বুদ্ধিমত্তা লোপ পায়। তা আজ বুঝলাম। অনেকক্ষণ চিন্তা করেও কোনো উপায় পাচ্ছিলাম না। ঠিক তখনই মোবাইলটা বেজে উঠলো। এক বন্ধু ফোন দিয়েছে। অভিনন্দন জানালো। আমিও ধন্যবাদ জানিয়ে রেখে দিলাম। তখনই মনে পড়লো মোবাইলেও খেলা দেখা যায়। অনেকবার আমিও দেখেছিলাম। নূরীর কাছে এসে বললাম, “মোবাইলে দেখবে?”
- টিভির মজা কি মোবাইলে পাওয়া যায়? তবুও হবে। কই তাড়াতাড়ি চালু করুন। শুরু হয়ে গেল তো।
মুহূর্তেই নূরীর মুখে উজ্জ্বলতা দেখতে পেলাম। কি অদ্ভুত নারীরা। এই কাঁদে তো এই হাসে। দুজনে একত্রে খেলা দেখতে লাগলাম। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সা হেরে গেল। রিয়াল সাপোর্টার হিসেবে আমার খুশির হওয়ার কথা। কিন্তু আজ কেন জানি খুশি লাগছে না। নূরীর গোমরামুখ দেখে খুশি উড়ে গেছে। আমি ওকে মন ভালো করার জন্য বললাম, “আরে বাদ দাও। খেলাই তো। পরবর্তীতে তোমরা জিতবে।”
- হইছে আমাকে শান্ত্বনা দিতে হবে না। মনে মনে আপনি ঠিকই নাচানাচি করছেন। আমাকে আলগা পিরিতি দেখাতে হবে না। আমি সব বুঝি।
- আরে না না। এসব নিয়ে এতো ভাবতে নেই। আচ্ছা তোমার প্রিয় রং কি?
- মেসি।
- কি বললে!
- মেসির খেলা দেখেছেন? কি দারুণ খেলে। আজ আপনাদের কপাল ভালো ছিল না। নয়তো কয়েকটা গোল তো হতোই। তার ড্রিবলিং দেখেছেন………
শুরু হলো মেসির অধ্যায়। ইচ্ছা না থাকলেও আমাকে শুনতে হচ্ছে। বিপরীত কিছু বলতে পারছি না। বললেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়ে যাবে। এভাবেই কেটে যাচ্ছে সময়। কাটুক, তার কথার ফুলঝুড়ি বেশ ভালোই লাগছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.