নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিখতে জানতে ও ছড়িয়ে যেতে চাই।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী

আমি বাপ্পী। জন্মস্থান বরিশাল। বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নামঃ চোখের দেখা, মনের দেখা।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:১০

যৌথ গল্পঃ চোখের দেখা, মনের দেখা।
লিখেছেনঃ (১) Sharmistha Mazumder Neel এবং (২) মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।

(১)
প্রায় দশ বছর পর মৌমিতা আর সায়ানের দেখা একটা স্কুলের সামনে, মৌমিতার সাথে ছিলো দশ বছরের মেয়ে দিপা।...
- কেমন আছো মৌমিতা?
- হুম, বেঁচে আছি, হয়তো ভাল আছি। তুমি?
- এইতো চলছে! এ কে হয় তোমার?
- আমার মেয়ে (মেয়েটাকে কোলের কাছে আকড়ে নিয়ে বলে মৌমিতা)
- বাহ বেশ তো। বেশ বলেছিলে, বিয়ে করবে না, আমি ছাড়া কাওকে স্বামী মানতে পারবে না। এখন দিব্যি অন্যের সাথে থেকে বাচ্চাও জন্ম দিয়ে ফেলেছো। দেখে তো মনে হচ্ছে আমি যাওয়ার পরপরই বিয়েটা করেছ। আসলেই তোমরা মেয়েরা পারোও বটে।
- হুম, আমরা মেয়েরা অনেক কিছুই পারি। হয়তো এই পারাটা মাঝে মাঝে তোমাদের ছেলেদের বোধগম্য হয় না।
- খুব তো বলতে তুমি আর সবার মত বেঈমান না, আজ এই তোমার অবস্থা।
- আর কিছু?
- তোমার মত নষ্টা চরিত্রের মেয়ের সাথে কথা বলতেও বাঁধে। শুধু শুধু সময় নষ্ট!
(বলেই সায়ান চলে যায়, মৌমিতা আর মেয়েটা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজেদের মত হাঁটা দেয়। রাস্তার পাশের দোকান থেকে দুইটা চকবার আইসক্রিম কিনে একটা নিজে নেয় আরেকটা মেয়েকে দেয়)
*********
কিছুদুর যাবার পর,
- আচ্ছা মাম্মি, তুমি উনাকে বললে কেন, আমি তোমার মেয়ে?
- তোমাকে কি আমি মেয়ের থেকে কম ভালবাসি? কম স্নেহ করি? আমি কি তোমার মা হতে পারি নি?
- সেটা না, তবে উনি যে তোমাকে খারাপ বললো!
- বাদ দেও, যত যাই হোক, তুমি আমার মেয়ে, আমি তোমার মা। মায়ের মত না।
দিপা কি মনে করে আবার আইসক্রিম খাওয়ায় মন দিল। মেয়েটার মা মৌমিতার এক বোন ছিলো, মেয়ের বয়স চার বছর তখন মা মারা যায়। মৌমিতার বোনের শাশুড়ি আবার ছেলের বিয়ে দিতে চায়, ছেলেও হয়তো রাজি। হাজার হলেও ছেলে বংশের বাতি, ছেলে তো দিয়ে যেতে পারে নি বউ। নতুন মা এলে মেয়েকে যত্ন করবে না, সৎ মা আপন হয় না, যাও হয়, নিজের ছেলে হলে আর আপন থাকে না, এই ভেবে মৌমিতা মেয়েকে নিজের কাছে সারাজীবনের জন্য নিয়ে আসে। একে তো মেয়েটা এখন অভিভাবক ছাড়া আর অন্যদিকে মৌমিতাও বিয়ে না করার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দুজনেই মিলে গেছে, যদিও মেয়েটা জানে মৌমি ওর জন্মদাত্রী মা না, তবে মায়ের থেকে বেশি স্নেহ করে।
আর ওদিকে সায়ান একটা ছোট কথায় কত কি ধরে নিলো। আসলেই মানুষ বাহিরে যা দেখে তাই বিশ্বাস করে, ভিতরে কেউ খুঁজে দেখে না। এজন্যই হয়তো মাঝে মাঝে বলতেই হয়, চোখের দেখা সব কিছু নয়, মনের দেখাও দেখতে হয়।

(২)
রাস্তায় এলোমেলোভাবে হাঁটছে সায়ান যেন নেশা করেছে। তবে সে কোনো নেশা করেনি। তার অন্তরের গহীনে জমে থাকা এতদিনের কষ্টগুলো আজ উতলে উঠেছে। যার ভার সে নিতে পারছে না। তাই ঢুলুঢুলু পায়ে এদিক সেদিক হাঁটছে। আজ দশটা বছর পর মৌমিতার সাথে তার দেখা হলো। এই মেয়েটার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল দশ বছর আগে। ভীষণ ভালোবাসা থাকার পরেও পারিবারিক কারণে তারা পৃথক হয়ে গিয়েছিল। তবে একে অপরকে কথা দিয়েছিল জীবনের সাথে নতুন কাউকে জড়াবে না। তাই তো সায়ান আজও নিঃসঙ্গ। সায়ান মনে মনে ভাবছে সে তো তার দেওয়া কথা রেখেছে। কিন্তু মৌমিতা দিব্যি সংসার করে গেল। অন্যের সন্তানের মাও হয়ে গেল। এখন সে স্বামী-সন্তান-সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আসলেই মেয়েরা সব পারে। সেও পারতো। তার বাবা মাও বেশ কয়েকবার বিয়ের জন্য চাপ দিয়েছিল। কিন্তু সায়ান রাজি হয়নি। প্রতিবারই মাসখানেকের জন্য নিরুদ্দেশ হয়ে যেতো। তাই এখন আর তার বাবা মাও এই ব্যাপারে কিছু বলে না। হৃদয়ের যে স্থানে মৌমিতাকে ঠাঁই দিয়েছে সেটা অন্যকাউকে দিতে পারবে। মৌমিতা থেকে পৃথক হওয়ার পর সায়ান কানাডায় তার মামার কাছে চলে গিয়েছিল। হৃদয়ের মানুষজনকে একেবারে ভোলা তো যায় না তবে নিজেকে ব্যস্ত রেখে সাময়িকভাবে ভোলা যায়। সায়ানও এই পথে চলেছিল। আটটা বছর সেখানে থেকেছে। তারপর মায়ের আকুতির কাছে হার মেনে দেশে ফিরেছে। দেশে আসার দুই বছর পর আজ মৌমিতার সাথে দেখা হলো। তার চেহারার হাসি প্রমাণ করেছে যে সে ভালো আছে। তার কথার দৃঢ়তা প্রমাণ করেছে যে তার সিদ্ধান্তই সঠিক। অতীত ভুলে এগিয়ে যাওয়াই উত্তম। ঢুলুঢুলু পায়ে সায়ান বাসায় ফিরলো। পাথরের মূর্তির ন্যায় সোফায় বসে আছে। তার মা রোকসানা বেগম বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করলো কিছু হয়েছে কিনা। কিন্তু সায়ান কোনো জবাব দিলো। তিনি তার কাজ করতে লাগলেন। আজকাল নিজের ছেলেকেই তার অপরিচিত মনে হয়। হঠাৎ সায়ানের মুখ থেকে বের হলো, “পাত্রী দেখো। আমি বিয়ে করবো।” রোকসানা বেগম যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলেন না। এগিয়ে এসে বিস্ময়ের সাথে আবার বললেন, “কি বললি তুই?” সায়ানের স্বর কাঁপতে লাগল। বাক্যটা দ্বিতীয়বার উচ্চারণ করার শক্তি যেন তার মাঝে নেই। নিজের মনের সাথে বেশ কিছুক্ষণ যুদ্ধ করে তারপর দৃঢ়তার সাথে সবার বলল, “আমি বিয়ে করবো। যতো দ্রুত সম্ভব পাত্রী দেখো।” এবার আর সায়ান বসে রইলো না। কথাটা বলা মাত্রই উঠে চলে গেল। রোকসানা বেগম খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলেন। তাড়াতাড়ি কথাটা তার স্বামী আলমগীরকে জানালেন।

ছাদে দাঁড়িয়ে উদাস মনে আকাশপানে তাকিয়ে আছে স্নেহা। সন্ধ্যা নেমে এসেছে। পাখিরা তার নীড়ে ফিরছে। সারাদিন যেখানেই থাকুক না কেন সন্ধ্যা হতেই পাখিরা নিজ নিজ নীড়ে ফিরে আসে। তার পাখিটাও একদিন তার নীড়ে ফিরে আসবে এই আশায় স্নেহা আজ পর্যন্ত বসে আছে। তার সকল বান্ধবীই নিজ নিজ নীড়ে ঠাঁই পেয়েছে। এমনকি তার ছোট কাজিনেরাও ঘর সংসার বেঁধে দিব্যি সুখে আছে। কিন্তু সে আজও তার পাখির আশায় বসে আছে। তার বিশ্বাস একদিন পাখি ফিরবেই। তাকে ফিরতেই হবে। হাঁপাতে হাঁপাতে তার পেছনে এসে উপস্থিত হলো তার মা নূরবানু। এই মোটাসোটা শরীর নিয়ে তিন তলা সিঁড়ি চড়তে যে তার প্রাণ বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে সেটা তার হাঁপানি দেখেই বুঝা যাচ্ছে। স্নেহা অবাক দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। হাজার বলেও যে মানুষটাকে নিচতলায় পাঠানো যায় না, উপরে উঠার ভয়ে। আজ সে তিন তলা সিঁড়ি বেয়ে কেন উঠলো? বিস্মিত স্বরে স্নেহা তার মাকে প্রশ্ন করলো, “কি হয়েছে মা? তুমি এখানে কেন এলে? আমি তো নিচে আসছিলামই।” হাঁপাতে নূরবানু বললেন, “কতবার বলেছি মোবাইলটা সাথে সাথে রাখতে।”
- কি হয়েছে তা তো বলো।
- সায়ান রাজি হয়েছে।
মায়ের মুখে কথাটা শুনে স্নেহা বসে পড়লো। অবশেষে পাখি তার নীড়ে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে।

দিপার সাথে খেলছে মৌমিতা। বিকেলের এই সময়টা সে তার মেয়ের সাথে কাটায়। একটা এনজিওতে উচ্চ পদে জব করে সে। মাস শেষে যে টাকা পায় তা দিয়ে দিপার সাথে বেশ আরামেই চলে যায়। মাঝেমাঝে মৌমিতার বাবা মা এসে দেখে যায়। দিপার সাথে নিজের জীবন জড়ানোর পর থেকেই সে তার বাবা মা থেকে আলাদা থাকে। সায়ানের সাথে সম্পর্ক তার বাবা মা মেনে নেয়নি। তারপর মৌমিতা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সংগ্রামে নামে। এখন সে আত্মনির্ভরশীল। কলিংবেলের শব্দে দরজা খুলল মৌমিতা। দুটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
- কাকে চাই?
- মিসেস মৌমিতা আছেন?
- আমিই মৌমিতা।
মৌমিতার দিকে একটা খাম এগিয়ে দিয়ে ছেলেটা বলল‚ “সায়ান ভাই পাঠিয়েছে।” মৌমিতা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তারপর খামটা হাতে নিলো। ছেলে দুটো চলে গেল। মৌমিতা দরজা বন্ধ করে খামের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি হতে পারে ভেতরে? সেদিনের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চেয়ে পত্র লিখেছে নাকি অতীতের স্মৃতিচারণ নাকি বিদ্বেষ? এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিয়ে ধীরগতিতে খামটা খুলল। তারপর বেশ চমকে গেল। বিয়ের কার্ড। বর সায়ান রহমান। কনে স্নেহা মজুমদার। মৌমিতার বুকের ভেতর হঠাৎ যেন ঝড় শুরু হলো। সে যেন নিজের অস্তিত্বকে হারাতে বসেছে। মনের ভারে সে যেন নুইয়ে পড়ছে। ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়লো। চোখের জ্বল যেন আজ আর কথা শুনছে না। চোখের কোটরে এসে নিজের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। তারপর টুপ করে বেরিয়ে পড়ছে, একফোঁটা দুই ফোঁটা করে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নীরবে সব দেখছে দিপা।

সায়ানের কাজিন স্নেহা। সায়ান যখন স্কুলে পা রেখেছিল তখন এই দুই পরিবার পাশাপাশি থাকতো। প্রায় চারটা বছর একত্রে ছিল তারা। সেই সুবাদে দুই পরিবারের মধ্যে যাতায়াতও ছিল বেশ। সায়ান যখন কলেজে পদার্পন করে স্নেহা তখন অষ্টম শ্রেণিতে ছিল। তখন থেকেই সায়ানের প্রতি এক রকম ভালোলাগা কাজ করতো তার মনে। স্কুল পেরিয়ে কলেজের গণ্ডিতে পা রাখতেই সেই ভালোলাগা ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়। কিন্তু অজানা ভয়ে মনের কথা সায়ানকে জানাতে পারেনি। এরইমধ্যে সায়ান ও মৌমিতার সম্পর্কের খবর জানাজানি হয়ে যায়। স্নেহা সেদিন খুব কেঁদেছিল। বারবার নিজেকে বকেছিল কেন মনের কথা মনে রেখে দিলো? যদি বলতো তাহলে হয়তো আজ সায়ান তার থাকতো। এর কিছুদিন পরেই সায়ান কানাডায় চলে যায়। কিন্তু স্নেহা তার মন থেকে সায়ানকে সরাতে পারেনি। যখন বাবা মা তার বিয়ের কথা উঠালো তখন স্নেহা সরাসরি বলে দিয়েছিল সে সায়ানকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারবে না। অনেক পিড়াপিড়ি করেও মেয়েকে রাজি করাতে পারেননি তারা। তাই সায়ানের বাবা মায়ের সাথে এই নিয়ে আলোচনা করেন। তারা রাজি ছিল। কিন্তু সায়ান না। এইভাবেই কেটে গেল এতটা বছর। এখন সায়ান রাজি হওয়ায় খুব দ্রুতই সবকিছু পাকাপোক্ত করা হলো।

অফিসে বসে ফাইল পত্র দেখছেন মৌমিতার বাবা আশরাফ আলী। ফোনটা বেজে উঠলো।
- হ্যালো।
- নানু, আমি দিপা।
নানু শব্দটা শুনে তিনি একটু হকচকিয়ে গেলেন। তবে তাত্‍ক্ষনিক স্মরণে এলো দিপাকে। শান্ত স্বরেই বলল,
- হ্যাঁ বলো।
- আমার একটা হেল্প লাগবে।
- মৌয়ের কিছু হয়েছে? [মৌমিতাকে আদর করে মৌ ডাকেন।]
- না। তবে তুমি যদি হেল্প করো তবে আমি মাম্মিকে তোমার ব্যাপারে রাজি করাবো।
- কোন ব্যাপারে?
- তুমি যে মাম্মির বিয়ে দিতে চাও এই ব্যাপারে।
- তুমি পারবে?
- তা তুমি সময় হলেই দেখে নিও।
- ঠিক আছে। বলো কি হেল্প লাগবে।
নিজের মেয়েকে ফিরে পাওয়ার একমাত্র পথ দিপা। আশরাফ আলী মেয়ের বিয়ে দিতে চাচ্ছেন। সব পিতার মতোই তিনিও চান তার মেয়েটা ঘর সংসারী করুক। এভাবে একা একা জীবন কাটানো যায় না। কিন্তু মৌমিতা রাজি হয় না। দিপার হাত ধরেই সে জীবন কাটিয়ে দিবে বলে অটল হয়ে রয়েছে। দিপার কথায় রাজি হলো আশরাফ আলী। তবে তিনি এইটুকু বাচ্চার বুদ্ধি দেখে বেশ অবাক হলেন।

চারিদিকে রংবেরঙের বাতি ঝিকিমিকি করছে। ব্যান্ড বাজনার আওয়াজে চারদিক মুখোরিত হয়ে আছে। বর ও কনে পক্ষ নিজ নিজ আত্মীয়স্বজনের আপ্যায়নে ব্যস্ত। বিয়েতে উপস্থিত আছে দিপা ও তার নানু। মৌমিতাকে বলে এসেছে তারা একটু ঘুরতে যাচ্ছে। মৌমিতা অবাক হয়েছিল। ভেবেছিল হয়তো তার বাবা দিপাকে আপন করার চেষ্টায় আছে। তাই দিপাকে একদম পরীর মতো সাজিয়ে দিয়েছে মৌমিতা। দিপা ও আশরাফ আলী অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে। সায়ানের অপেক্ষা করছে তারা। বেশ কিছুক্ষণ পর আশরাফ আলী বললেন, “নানু ভাই, আমি বলি কি, এসবের দরকার নাই। সে তার জীবন শুরু করুক। আমরা আমাদেরটা দেখি।” গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে দিপা বলল, “না, আমার মাম্মি যে কষ্ট পাচ্ছে তাকেও সেই একই কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।” আশরাফ আলী চুপ হয়ে গেলেন। তিনি ভেবেই পাচ্ছেন না এইটুকু বাচ্চার মধ্যে এমন প্রতিশোধের স্পৃহা কিভাবে এলো? কিছুক্ষণ পর সায়ান ও স্নেহা একত্রে স্টেজে এলো। সবাই নতুন দম্পতির সাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। দিপাও সুযোগ বুঝে ছবি তোলার বাহানায় তার কাছে গেল। পেছনে তার নানুও আছে। দিপাকে দেখে সায়ানের মনে রাগ ও ভালোলাগার মিশ্র অনুভূতি তৈরি হলো। সায়ানের দিকে একটা উপহারের বক্স এগিয়ে দিয়ে বলল, “এটা তোমার জন্য।” স্নেহা আগ বাড়িয়ে বলল, “মামুনি‚ তুমি এটা সামনে দাও। উপহার ওখানে নিচ্ছে।”
- স্পেশাল তো তাই হাতে দিলাম।
সায়ান হাত বাড়িয়ে বাক্সটি নিলো।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সায়ান। ভালোবাসা কি অদ্ভুত! স্নেহা তাকে কতটা ভালোবাসে তা বিয়ের কিছুদিন আগে মায়ের মুখে শুনেছে। সব শুনে সে নিজেই অবাক হয়েছে। স্নেহা শুধুমাত্র তার জন্য এতগুলো বছর অপেক্ষা করেছে। অথচ সায়ান অপেক্ষায় ছিল অন্য এক ভালোবাসার। আমাদের আশেপাশে যে ভালোবাসা থাকে তা আমরা দেখি না। দূরের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকি। দিপার দেওয়া বাক্সটি বাইরে ফেলে দিলো সায়ান। আর কোনো পিছুটান সে চায় না। মৌমিতা তার মতো ভালো থাকুক। আর নিজেকে ভালো থাকতে হবে স্নেহার সাথে। এই মেয়েটার ভালোবাসা উপেক্ষা করার সাহস তার নেই। কিছুক্ষণ পর স্নেহা এসে তার পাশে দাঁড়ালো। নিচু স্বরে বলল, “এমন একটি জোসনা বিলাসের আশায় আমি হাজার দিন অপেক্ষা করেছি।” বেশ ধীরগতিতে সায়ান তার হাতটা স্নেহার হাতের ওপর রাখলো। স্নেহার খুশির বাঁধ যেন ভেঙে গেল। সে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।

“এসব কিন্তু একদম ঠিক না, দিপা।” বেশ কড়া গলায় বলল মৌমিতা। “না, না আমি পাপা চাই। এছাড়া খাবো না।” নাছোড়বান্দার মতো করতে লাগল দিপা। আশরাফ আলী দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। মৌমিতাও বুঝতেছে এর পেছনে তার বাবারও হাত আছে। আজ সায়ানের বিয়েতে লুকিয়ে সেও গিয়েছিল। নিজ চোখে তাদের বিয়ে দেখেছে। কেন জানি আজ আর কষ্ট হয়নি। মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছিল। এদিকে চলছে মা মেয়ের জেদ। যেখানে একটা সময় মেয়ের জয় হবে। মৌমিতাও হয়তো একদিন বিয়ের পিঁড়িতে বসবে। সাজাবে তার সংসার। সায়ান-মৌমিতা দুজনই নিজ নিজ প্রতিজ্ঞা রেখেছিল। কিন্তু নিয়তি তাদের মেনে নেয়নি। তাই তো তাদের সত্যিকারের ভালোবাসাকেও এক হয়নি।

সমাপ্ত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.