নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিখতে জানতে ও ছড়িয়ে যেতে চাই।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী

আমি বাপ্পী। জন্মস্থান বরিশাল। বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নামঃ সুখের তৃষ্ণা।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:৪২

গল্পঃ সুখের তৃষ্ণা।
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।

ট্রেনে উঠেছে নিধি। উদ্দেশ্য চাঁদপুর। টিকিট অনুযায়ী সিট বের করে জানালার পাশে বসে পড়লো। ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে অথচ এখনও ছাড়ছে না। এই দেশে এই সমস্যা খুব বেশি হয়। সময় মতো কোনো কিছুই হয় না। হয়তো এজন্যই এখনও অনেক যাত্রী ট্রেনে উঠানামা করছে। বিদায় জানাতে এসে অনেকেই তাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে রুটি কলা, চিপস, বিস্কুট, পানি জাতীয় জিনিস কিনে দিচ্ছে। নিধি চুপচাপ বসে বসে তা দেখছে। তাকে বিদায় জানাতে কেউ আসেনি। এই শহরে তার আপন বলতে যে আছে সে সবসময়ই ব্যস্ত থাকে। তার কাছে নিজের ক্যারিয়ার সবার উর্ধ্বে। এমনকি স্ত্রী থেকেও। বিয়ের পরপরই এই নির্মম সত্যকে মেনে নিয়েছে নিধি। অবশেষে ট্রেন ছাড়লো। বিদায়ের পর্ব শেষ। এখন সবাই যাত্রা পথের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে, কেউ পত্রিকা পড়ছে, বাচ্চারা কান্নাকাটি করছে। আর কেউ কেউ নিধির মতো চুপচাপ বাইরের দৃশ্য দেখছে। নিধির চোখ বেয়ে পানি নেমে আসতে চাচ্ছে। কিন্তু সে মনেপ্রাণে চেষ্টা করে তা ধরে রেখেছে। অপরিচিত স্থানে অপরিচিত লোকদের ভীড়ে চোখের জল বেমানান। এই জলের কোনো দাম নেই। হয়তো কিছু শুষ্ক মায়া পেতে পারে। এর বেশি নয়। তার চোখের জল দেখলে কেউ কেউ ভাববে মেয়েটি কোনো কষ্টের মাঝে অতিবাহিত হচ্ছে, কেউ কেউ সহানুভূতি দেখাতে পারে। না, বর্তমান যুগে কেউ কাউকে সহানুভূতি দেখাতে আসে না। যা করার দূর থেকেই করে। মনে মনে আহারে বলে এবং চোখ দিয়েই সহানুভূতির পর্ব শেষ করে। নিধির কান্নার একমাত্র কারণ তার স্বামী আবিদ। মানুষটা ক্যারিয়ার নিয়ে এতোই ছুটছে যে বর্তমানকে তুচ্ছ করে বেড়াচ্ছে। নিধির এখনো স্পষ্ট মনে আছে সেই দিনটার কথা। যেদিন নিধি লাজ-লজ্জা ভুলে তার স্বামীকে বলেছিল, “বিয়ের তো অনেক মাস হলো। আমার মনে এখন আমাদেরকে সন্তান নিয়ে ভাবা উচিত।”
- এমনটা মনে হওয়ার বিশেষ কোনো কারণ আছে?
নিধি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আবিদ আরও বলল, “যেদিন আমার মনে হবে সেদিন এই নিয়ে ভাববো।” ব্যস এইটুকুই। এরপর আর আবিদ সন্তানের প্রসঙ্গ তুলেনি। যতবারই নিধি ইঙ্গিত দিয়েছিল ততবারই একটাই জবাব এসেছিল, “যখন আমার মনে হবে তখন।”

স্টেশনে বসে আছে নূরী। স্টেশনে জমায়েত অনেক যাত্রীর নজরই তার দিকে। গ্রামের এই স্টেশনে স্যুট-বুট-টাই পরিহিত মেয়ে খুব কমই দেখা যায় এখানে। তারওপর চোখে নীল-সবুজ মিশ্রণের সানগ্লাস। যা একটু এদিক গেলে নীল দেখায় আবার ওদিকে গেলে সবুজ। তার পায়ের পাশে একটা সুটকেস আছে। ট্রেনের আসার কথা অনেক আগে। কিন্তু এখনও আসছে না। নূরী স্টেশন মাস্টারের সাথে একদফা ঝগড়া সেরে এসেছে। “কি ধরণের টাইমটেবল মেইন্টেইন করেন আপনারা? আপনাদেরকে চাকরিতে রেখেছে কে? আপনি জানেন আমার সময়ের মূল্য কত?” মাঝেমাঝে প্রতিপক্ষের পোশাক-আশাক, আচার আচরব আমাদের মস্তিষ্কের উপর প্রভাব বিস্তার করে। তাই তো এখানের সবচেয়ে বদমেজাজি লোকটাও নূরীর চটপটে কথা শুনেও স্যরি মেডাম, স্যরি মেডাম বলতে বলতে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলেছিল।
নূরীর ফোনটা বেজে উঠলো।
- হ্যাঁ বলো।
- কোথায় তুমি?
- আর কোথায়, এখনও স্টেশনে।
- ট্রেন আসেনি?
- তুমি এতো বোকা বোকা কথা বলো কেন? ট্রেন এলে কি আমি স্টেশনে বসে থাকতাম?
- কখন আসবে কিছু জানো?
- আবার সেই বোকার মতো কথা। আমি কিভাবে জানবো? আমি কি স্টেশন মাস্টার? তুমি ফোন রাখো। আমি পরে ফোন দিবো।
নূরী ফোন রেখে দিলো। অপরপ্রান্ত থেকে কথা বলছিল তার স্বামী আসাদ। নূরী তাকে খুব একটা তোয়াক্কা করে না। সবসময়ই একটু মেজাজ দেখিয়ে কথাবার্তা বলে। বিয়ে হয়েছে তাই একত্রে থাকছে, অনেকটাই এমন ভাব নূরীর মাঝে। আসাদের প্রতি তার কোনো অনুভূতি কাজ করে না। তারওপর ইদানিং ধরে আসাদ সন্তানের ব্যাপারে তাগিদ দিচ্ছে। কিছুদিন আগে একটা বিরাট বড় টেন্ডার পাওয়ায় নূরী ভীষণ খুশি ছিল। যেদিন নূরী খুব বেশিই খুশি থাকে সেদিন আসাদের সাথে একান্তে বেশ সময় কাটায়। বাকি সময় দুজনে আলাদা রুমে থাকে। তাদের বিশাল বড় বাড়িতে রুমের অভাব নেই। সেদিন সুযোগ বুঝে আসাদ বলেছিল, “এবার আমাদের সন্তান নেওয়া উচিত।”
- তোমার কি মনে হয়, আজ আমি খুশি তাই বলে তুমি যা বলবে মেনে নিবো?
- বাবা মাও নাতি নাতনীর মুখ দেখতে চাচ্ছে।
- আমি বুঝি না, স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপারে বাবা-মা কেন নাক গলায়? আর শোনো, আমার সামনে এখনও অনেক পথ পাড়ি দেওয়ার বাকি আছে। আমি চাই না এখন কোনো ঝামেলা কাঁধে নিতে। তাছাড়া আমি এখন বৈবাহিক জীবন উপভোগ করতে চাই।

ঝকঝক শব্দে ট্রেন তার আগমনের বার্তা জানিয়ে দিলো। নূরীর ড্রাইভার তার ব্যাগপত্র যথাস্থানে পৌঁছে দিলো। ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট। ট্রেন ভ্রমণ নূরীর একটা কৌতূহল। কম্পানির নানান কাজে দেশ বিদেশে বেশিরভাগই বিমানে ভ্রমণ করে সে। তাই সুযোগ পেলে মাঝেমাঝে ট্রেনেও চড়ে। সিটে বসতেই তার নজর সামনে বসে থাকা নিধির দিকে পড়লো। দীর্ঘদিন পর প্রাণ প্রিয় বান্ধবীকে দেখে চিনতে তার মোটেও কষ্ট হলো না। তবে নূরী বাকিদের মতো উত্তেজিত হয়ে হইহুল্লোড় করলো না। ওসব অনুভূতি নূরীর মধ্যে নেই। সাবলীল ভাবে বলল, “আরে নিধি না? কতদিন পর?” নিধি অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে তাকালো। চোখের পলক ফেলতেই নিধর চোখে ছলছল করা জল নূরীর দৃষ্টিগোচর হলো।
- কি ব্যাপার তুই কাঁদছিস কেন?
- ও কিছু না। চোখে কিছু গেছে বোধহয়।
- আমাকে বোকা বানাচ্ছিস?
- আরে না।
- বিয়ে হয়েছে শুনেছিলাম।
- হুম। দেড় বছর হয়েছে।
- তাই তো চোখে জল। স্বামী কষ্ট দেয় তাই না? মারে-টারে নাকি? হিউম্যান রাইটার্স ও বেশ কিছু নারী সংগঠনের সাথে আমার বেশ পরিচয় আছে। তুই শুধু বল, ব্যাটাকে একদম টাইট করে দিবো।
- আরে না না। কি যা-তা বলছিস? উনি এমন না।
- আরে বাহ উনি? তোকে ভালোই হাতে রেখেছে দেখি। আমাকে দেখ, আমারটা আমার কথা ছাড়া এক পাও নড়ে না।
নিধি হাসলো, “তোকে তো একদম বিদেশী মেমের মতো লাগছে।”
- হাহাহা। আর তোকে একেবারে দেশী গৃহিণী। যে তার স্বামীর কথায় উঠবস করে।
- আমার কথা ছাড়। কি করছিস আজকাল?
নূরীর কথার মাঝে পাশ থেকে একটা বাচ্চা কান্না শুরু করলো। চিকন সুরে বিকট কান্না। যা শুনে নূরী বলল, “উফফ কি অসহ্য! এই ঝামেলার জন্য আমি বাচ্চাকাচ্চা পছন্দ করি না।” নূরী দেখলো নিধি এক ধ্যানে বাচ্চাটির তাকিয়ে আছে। তার মনের মধ্যে সন্তান নিয়ে লালিত অনুভূতি গুলো দোলা দিতে লাগল।
- কিরে কি দেখছিস ওভাবে?
- কত সুন্দর বাচ্চাটা, তাই না?
- সুন্দর না ছাই। একটা বাড়তি ঝামেলা। তাই তো এখনও বাচ্চাকাচ্চা নেইনি। আমার বরটাও খুব চালাক। বাচ্চা দিয়ে আমাকে হাত করতে চায়। আমি কি আর হাতে আসার মোয়া? হাহাহা।

নূরীর ফোনটা বেজে উঠলো।
- তোমাকে না বলেছি আমি ফোন করবো। তবে কেন তুমি ফোন করলে?
- এমনিই। তা কতদূর এলে?
- ট্রেনে উঠেছি। আর ঘন্টা তিনেক লাগবে।
- তারচেয়ে ভালো হতো গাড়িতে চলে আসতে।
- কি করবো না করবো তাও কি তুমি বলবে? এসব ন্যাকা স্বভাব আমার ভালো লাগে না। এখন ফোন রাখো।
নূরী ফোন রেখে বলল, “দেখলি তো কেমন ঝাড়লাম। হাহাহা।”
জানালার দিকে তাকিয়ে নিধি বলল,
- একবারও কি ভেবেছিস, এই একই চিন্তা যদি আমাদের মায়েরা করতেন তাহলে আজ আমাদের অবস্থান কোথায় হতো?
নূরী রীতিমতো অবাক হলো।
- জানিস, একটা নারী পরিপূর্ণ হয় কিসে? স্বামীর ভালোবাসায়‚ সন্তানের হাসিতে। যখন স্বামী তাকে ভালোবেসে কাছে টানে তখন সে পরিপূর্ণ হয়। যখন সন্তান তাকে মা বলে ডাক দেয়, তখন সে পরিপূর্ণ হয়। ভালোবাসার মতো যদি কেউ না থাকে তবে এই জীবনের মূল্য কি? জীবন তখনই অর্থবহ হয় যখন কেউ আমাদের জন্য চিন্তা করে, আমাদের জন্য দোয়া করে, আমাদের জন্য অপেক্ষা করে। ভালোবাসা কি, তা আমি আমার বাবা মাকে দেখেই শিখেছি। মা কখনো আমাদের সামনে বাবাকে উচ্চ বাক্যে কথা বলেননি। বাবা যতোই রাগুক তিনি শান্ত ছিলেন। বিয়ের সময় আমার মা আমাকে বলেছিলেন, সবসময় পানির মতো থেকো। যখন যে আকার ধারণ করা প্রয়োজন তখন তা করো। কঠোর হইয়ো না। এতে সংসারে অশান্তি হবে।

নিধির থেকে বিদায় নিয়ে নূরী ট্রেন থেকে নেমে পড়লো। চোখ মেলে এদিক সেদিক তাকাতেই আসাদকে দেখতে পেল। সাথেসাথে তার কানে নিধির কথা বেজে উঠলো। “তুই ভাগ্যবতী তাই তোর স্বামী তোর চিন্তা করে। এটা সব মেয়ের কপালে জুটে না। স্বামীর ভালোবাসা কেবলমাত্র ভাগ্যবানেরাই পায়।”
বাসায় এসে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়লো নূরী। রাতে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়লো। বারবার কানে বাজতে লাগল, “স্বামীর ভালোবাসা খুব ভাগ্যবানেরাই পায়।” নূরীর ঘুম ভেঙে গেল। ঘড়িতে ১২টা বাজে। বুঝলো যে ঘুম হয়নি। পাশে আসাদকে দেখলো না।
পাশের রুমে বিছানায় শুয়ে বই পড়ছে আসাদ। দরজাটা খুলে যাওয়ায় তার নজর সেদিকে গেল। নূরী এসেছে। সাধারণত ভ্রমণ শেষে ক্লান্ত থাকায় নূরী তার কাছে আসে না। এমনটা এর আগে কখনো হয়নি। নূরী রাতের পোশাক পরেছে। চেহারায় সাজগোজের আবির্ভাব বুঝা যাচ্ছে। চুল গুলো ছড়িয়ে রেখেছে। আকর্ষণীয় হতে যা কিছুর প্রয়োজন সবই আছে। আসাদ কিছুটা বিস্মিত হলো।
- তুমি! ঘুম হয়নি?
জবাব না দিয়ে নূরী তার পাশে এসে হেলান দিয়ে বসলো। ছোট্ট করে বলল, “তুমি কি আমার ওপর রাগ?”
- না তো। রাগ কেন হবো?
- এই আমি সারাক্ষণ তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করি।
- কই, আমার তো তা মনে হয়নি।
কিছুক্ষণ চুপ থাকলো নূরী। সে চুপ থাকলেও তার ইন্দ্রিয় ভাব চুপ নেই। ইতোমধ্যে আসাদের কাঁধে মাথা রেখেছে। হাত আসাদের বুকে পরশ বুলাচ্ছে। আজ আসাদ বেশ চমকাচ্ছে। চমকাবারই কথা। যা এত বছরে হয়নি তা হঠাৎ হলো। এতে চমকানোটা স্বাভাবিক। নূরী কিছু বলল না। তার শরীর ক্লান্তির সাথে পেরে উঠলো না। কখন যে আসাদের বুকে ঘুমিয়ে পড়েছে তা নিজেও জানে না।

ভালোবাসা আমাদের চারদিকে ভ্রমণ করে বেড়ায়। সুনজরের কারণে আমরাই তা দেখতে পাই না। এতদিন নূরীও পারেনি। তবে আজ পারছে। তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর মাঝে যে ভালোবাসা দৃশ্যমান তা আজ তার চোখে পড়ছে। মাছের সবচেয়ে ভালো অংশটা স্বামীকে দেওয়া, পানির গ্লাস এগিয়ে দেওয়া, স্বামীর খেদমত করা, গল্প করা এসব যেন নূরীর চোখে বারবার পড়ছে। আসাদের সাথে সে এমন ব্যবহার কখনোই করেনি। নূরীর বাবার বাড়ি খুব কাছেই। একটা প্রয়োজনীয় কাজে সেদিকে গেল। ফিরতি পথে বাবা মায়ের সাথেও দেখা করলো। সেখানেও আজ সে ভালোবাসা দেখতে পেল। "ওগো" শব্দটা যেন আজ তার কানে বারবার বাজছে। অথচ জন্মলগ্ন থেকেই সে এই শব্দ শুনে আসছে। তার বাবা মায়ের মাঝে যে ভালোবাসা, সম্মান আছে তা তার ও আসাদের মাঝে নেই; এটা সে আজ বারবার অনুভব করছে।
নিজের রুমে ঢুকে আসাদ কিছুটা অবাক হলো। নূরী ওয়ারড্রবে কাপড়চোপড় রাখছে।
- কি ব্যাপার?
- কই, কিছু না তো।
আসাদ আর কিছু বলল না। নূরী তার কাপড়চোপড় গুছিয়ে রাখলো। সে যা কিছু করতে লাগল তাতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সে রুম পরিবর্তন করে আসাদের রুমে আসছে। প্রয়োজনীয় যা কিছুর দরকার হয় তা সবই সে এই রুমে নিয়ে এসেছে। এবং সবকিছু নিজের হাতেই এনেছে। চাকরদের ডাকেনি। হঠাৎ নূরীর এমন পরিবর্তন দেখে আসাদ বারবার চমকাচ্ছে।

হালকা গোলাপী রঙের শাড়ি পরেছে নূরী। আঁচল মেঝেতে গড়িয়ে আছে। ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে খুব সাজছে। আসাদ বই হাতে নিয়ে বসে থাকলেও তার চোখ বারবার সেদিকে যাচ্ছে। নূরীর উদ্যোম পিঠ যেন এই রাতের অন্ধকারকেও আলোকিত করে তুলছে। নূরী উঠে এলো। চুলে চিরুনি আচড়াতে আড়াতে বলল, “পড়ছো নাকি দেখছো?”
- পড়তে হলে দেখতেও হয়।
নূরী মুচকি হাসি দিলো। আসাদ বুঝলো যে সে ধরা পড়েছে। তার বুকে নূরী মাথা রেখে আধশোয়া দিলো। তারপর বলল, “তুমিও খরচ করো না, আমিও করি না। তাহলে এত টাকার পেছনে ছুটে লাভ কি?”
- বুঝলাম না।
- টাকা খরচের জন্য একজন তো দরকার তাই না?
- শপিং করা শুরু করো।
- তুমি তো জানোই আমি মিতব্যয়ী।
- কি বুঝাতে চাচ্ছো একটু খুলে বলো।
আসাদের মুখোমুখি হয়ে তাকালো নূরী। লাজুক ভঙ্গিতে বলল, "ধরো, কেউ যদি তোমাকে বলে, বাবা আমার এটা খাবো, ওটা খাবো, তুমি কি তাকে না করতে পারবে? কেউ যদি আমাকে বলে, মা আমার আমার এই খেলনা লাগবে, ওই খেলনা লাগবে। তবে কি আমি না করতে পারবো? পারবো না। তখন তুমিও তাকে কিনে দিবে। আমিই তাকে কিনে দিবো। এতে খরচ শুরু হবে।” আসাদ টিপটিপ চোখে নূরীর দিকে তাকালো। নূরীও তার দৃষ্টি আসাদের দিকে স্থির রেখেছে। তাদের দু'জোড়া চোখ নিমিষেই এক হয়ে গেল।

সময় তার গতিতে পেরিয়ে গেল। পৃথিবী গোল তাই এখানে অনেক পরিচিত মুখই বারবার মুখোমুখি হয়ে যায়। আজ পাঁচটা বছর পর নিধির সাথে আবার মুখোমুখি হলো নূরী। সময় বদলালেও পরিস্থিতি তাদেরকে এক করেছে। আবারও সেই ট্রেম ভ্রমণ। নূরীর কোলে তিন-সাড়ে তিন বছরের একটা ফুটফুটে শিশু। তা দেখে নিধি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এ এক অপরূপ দৃশ্য। এজন্যই বোধহয় বলা হয়, বন্যরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। এবার নূরীর শরীর জুড়ে রয়েছে শাড়ি। বেশ সুন্দর করেই সে শাড়ি সামলিয়েছে। তার সাথে আসাদও আছে। নিধি বসে আছে দক্ষিণ দিকে। আর তারা বসলো উত্তর দিকে। নিধির ডাকেই নূরীর দৃষ্টির পড়লো। পাশের যাত্রীকে অনুরোধ করে তারা নিধির পাশে চলে এলো। দুজনে মিলে গল্পে জুড়ে গেল। আসাদ শুধু হা হু করে যাচ্ছে। নিধি জানতে পারলো কোলের শিশুটার নাম ইহান। ইহানের কান্না থামাতে কিছুক্ষণ বাদে আসাদ তাকে নিয়ে উঠে পড়লো।
- জানিস, আমি আবার মা হতে চলেছি। তোকেই আগে জানালাম। ওকে বাড়ি গিয়ে সারপ্রাইজ দিবো।
- অভিনন্দন।
- আমার এই সুখী জীবনে তোর অবদান অনেক। সেদিন তুই না বুঝালে আমি হয়তো আজও এই সুখ থেকে বঞ্চিত থাকতাম। সত্যিই রে মাতৃত্বের সুখ সবচেয়ে বড় সুখ। ও যখন অস্পষ্ট মুখে মাম…মাম করে তখন নিজেকে খুব সুখী মনে হয়। স্বামীর ভালোবাসা পেয়ে আমি সত্যিই ভাগ্যবতী। তা তোর কি খবর? বাচ্চাকাচ্চ নিয়েছিস?
নিধির মুখ উদাস হয়ে গেল। নূরী হাসি দিয়ে বলল,
- দুলাভাই বুঝি এখনও ক্যারিয়ার নিয়ে ছুটছে? একটা বুদ্ধি আছে। শুন………
- যাহ, তুই না বড্ড বেশি ফাজিল হয়েছিস।
নূরী হেসে উঠলো। "বুদ্ধিটা প্রয়োগ করে দেখিস। বিফল হবি না। হাহাহা।”
আসাদ চলে এলো।
- তুমিই ধরো। আমার কাছে থামছে না।
নূরী ছেলেকে কোলে নিলো। ওলে আমাল বাবাটা, মাকে ছাড়া বুঝি ভালো লাগে না। আব্বু পঁচা। এমন নানা ধরণের কথা বলতে লাগল। নিধি চুপচাপ দেখতে লাগল। তার ভালো লাগছে। ভীষণ ভালো লাগছে। মাতৃত্বের সুখ তার কপালে না জুটলেও, তার কথায় অন্যের ভাগ্যে জুটেছে এটাও তো একপ্রকার সুখ। সবার জীবনে যে সুখ আসতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। মাঝেমাঝে অন্যের সুখের মাঝেই নিজের সুখ দেখে নিতে হয়। নিধি তা-ই করছে।
জীবনের পথচলার মধ্যে অনেক সময় অন্যের উপদেশে আমাদের জীবন বদলে যায়। কিন্তু তাদের জীবন বদলায় না। যেমন ছিল তেমনি থাকে।

সমাপ্ত।

যার অনুপ্রেরণায় লেখালেখির জগতে আমার পদার্পণ।
যার মাধ্যমে আমি লিখতে শুরু করেছি।
যার কারণে আমি শব্দের জাল বুনতে শিখছি।
যার থেকে আমি প্রতিনিয়ত শিখছি।
যে সর্বদা আমায় প্রেরণ দেয়।
যে আমায় পথ প্রদর্শিত করে।
যে আমায় সাহস দেয়।
সে আমার আইডল।
সে আমার বোন।
আজ তাঁর জন্মদিন।
Nishi Chowdhuri (রাত্রির আম্মু) [১২ এপ্রিল]
দোয়া করি তোর জীবন সুখে শান্তিতে ভরে উঠুক। অনেক অনেক সুখী হ। আল্লাহ তোকে পরিবার পরিজন সহ ভালো ও নিরাপদ রাখুক। ঘরে থাক। নিরাপদ থাক।
শুভ জন্মদিন আইডল। শুভ জন্মদিন আপু।
এই বিশেষ উপলক্ষে নিম্নের গল্পটা তোকে উত্‍সর্গিত করলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.