নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিখতে জানতে ও ছড়িয়ে যেতে চাই।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী

আমি বাপ্পী। জন্মস্থান বরিশাল। বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নামঃ সাক্ষাৎকার ও বিয়ে।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:২৬

গল্পের নামঃ সাক্ষাৎকার ও বিয়ে।
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।

ভার্সিটিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নূরী তৈরি হলো। ব্যাগপত্র গুছিয়ে তার বাবার কাছে এসে বলল, “বাবা, হাজার দুয়েক টাকা দাও।”
আফজাল শেখ অবাক হয়ে বললেন, “কি করবি টাকা দিয়ে?”
- বারে, আমার এংগেইজমেন্ট হয়েছে। বান্ধবীদের ট্রিট দিতে হবে না?
আফজাল শেখ এক নজর স্ত্রী পারুলের দিকে তাকালেন। পারুল ইশারায় দিয়ে দিতে বললেন। তাই আফজাল শেখ আর তর্কে গেলেন না। টাকা দিয়ে দিলেন। নূরী ভার্সিটিতে এলো। তাকে দেখতেই তার বান্ধবীরা ট্রিটের জন্য ঘিরে ধরলো। নূরী বলল, “দিব দিব। ক্লাস শেষে সবাই থাকিস।” অতঃপর ক্লাস শেষে ফুসকার দোকানে বসে বান্ধবীদের ট্রিট দিতে লাগল। সবাই আনন্দ সহকারে পেট পুরে খেতে লাগল। হঠাৎ মিনা বলল, “এই নূরী, ওটা আসাদ ভাইয়া না?” মিনা গতকাল নূরীর আংটি বদল অনুষ্ঠানে ছিল। আর আসাদ হলো নূরী হবু বর। নূরী সেদিকে তাকালো। হ্যাঁ, ওটা আসাদই। নূরীর হৃদ স্পন্দন বেড়ে গেল। কেন জানি আসাদকে দেখলেই তার এমন হয়। আসাদের ছবি দেখে যতটা না পছন্দ হয়েছে তারচেয়ে বেশি পছন্দ হয়েছে প্রথম সাক্ষাৎকারে। কি সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলে! তাছাড়া আসাদ দেখতে শুনতে সুদর্শন। যেমনক উঁচু-লম্বা তেমনই পেশীবহুল পুরুষ। নূরী তাকে দেখতেই পছন্দ করে ফেলে। তাই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।
মিনা সবাইকে বলল, “ওই দেখ দেখ নূরীর হবু বর। নিশ্চয়ই নূরীকে দেখতে এসেছে। বাহ কি প্রেম শুরু হয়েছে দেখলি।” সবাই হেসে উঠলো। নূরী লজ্জায় লাল হয়ে গেল। তার মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না। এর মাঝে ফারজানা বলে উঠলো, “চল, দুলাভাইকে ধরি। ফুটপাতের ফুসকা থেকে ফাইভস্টারে কিছু খাওয়াটা জমবে ভালো।” সবাই সাই দিলো। নূরী কিছু বলার আগে সবাই আসাদের কাছে চলে গেল। নূরী ঠাঁই হয়ে ফুসকার দোকানে দাঁড়িয়ে রইলো। আসাদকে তাদেরকে নিরাশ করেনি। পাশের রেষ্টুরেন্টে নিয়ে গেল। যা খুশি খেতে বলল। রেষ্টুরেন্টটা আসাদের পরিচিত।

নূরীর পাশে এসে দাঁড়ালো আসাদ। নূরী লজ্জায় তাকাতে পারছে না। আসাদ বলল, “আপনি একা দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আপনিও চলুন। কিছু খেয়ে নিবেন।” নূরী মাথা নিচু রেখেই বলল, “আমার ক্ষুধা নেই।”
- ঠিক আছে খেতে হবে না। কিছুক্ষণ গল্প তো করা যাবে নাকি?”
নূরীর হৃদস্পন্দন অসম্ভব গতিতে ছুটাছুটি করতে লাগল। তারও ইচ্ছে করছে আসাদের সাথে কিছু সময় কাটাতে। কিন্তু লজ্জা কিছু বলতে পারছে না। “আমি যাই। আমার টিউশন আছে।” নূরী কথাটা বলেই চলে গেল। আসাদের জবাবের অপেক্ষা করলো না। কাঁচের তৈরি রেষ্টুরেন্টের ভেতর থেকে নূরীর এই দশা দেখে তার বান্ধবীরা বেশ অবাক হলো। নূরীর মাঝে লজ্জা জিনিসটা তারা আজ পর্যন্ত দেখেনি। সচরাচর সে ছেলেদের সাথে চোখে চোখ মিলিয়ে কথা বলে। তার মাঝে ভয় বা জড়তা দেখা দেয় না। তবে আজ কি হলো?

নূরী সাজগোজ করতে ব্যস্ত। তাকে সাহায্য করছে তার মামাতো বোন ঐশী। সাজগোজের কারণ হলো আজ সে আসাদের সাথে ঘুরতে যাচ্ছে। ব্যাপারটা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুজন দুজনকে একটু চিনুক জানুক। কিছুক্ষণ পর আসাদের গাড়ি চলে এলো। নূরী জড়সড় হয়ে আসাদের পাশের সিটে বসে আছে। তা দেখে আসাদ বলল, “আমাকে দেখে কি বাঘ মনে হচ্ছে? এভাবে জড়সড় হয়ে বসে আছেন যে?
- না মানে আগে কখনো গাড়িতে বসিনি তো তাই।
- আপনাকে কিন্তু খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
নূরী লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। পুরো দুনিয়ার সামনে নূরী চোখ রাঙিয়ে কথা বলতেও দ্বিধাবোধ করে না অথচ আসাদের চোখে তাকাতেও তার মাঝে বিভ্রান্ত তৈরি হয়। নূরী যেন নিজেকে নিজেই চিনতে পারছে না। গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। নূরী লক্ষ্য করলো যেখানে তাদের যাওয়ার কথা সেই স্থান পেরিয়ে এসেছে। তবুও আসাদ গাড়ি থামাচ্ছে না। নূরী কিছু বলল না। চুপচাপ বসে রইলো। ঘন্টাখানেক হয়ে গেল তবুও আসাদ গাড়ি থামাচ্ছে না। এবার নূরী বলল, “আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
- যাক আপনি কথা তো বললেন।
- মানে?
- মানে হলো আমি এতক্ষণ ইচ্ছে করেই থামাইনি।
- কেন?
- আমরা বের হয়েছি কথা বলতে। দুজন দুজনকে চিনতে ও জানতে। কিন্তু আপনি সেই তখন থেকেই নিশ্চুপ হয়ে আছেন। তাই আর গাড়ি থামাইনি।
নূরী হেসে উঠলো। বলল, “ঠিক আছে। এবার থামান। কোথাও বসি। গাড়িতে বসে তো কথা বলা উচিত না।”

নদীর ধারে থামলো তারা। চারদিকে কাশবন। তারা এক পাশে বসলো। দুজন আলাপ করতে লাগল। একে অপরকে জানতে লাগল। একে অপরের পছন্দ জানতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ গল্প করার পর আসাদ বলল, “সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আমাদের এখন উঠা উচিত।” নূরী ঘড়ির দিকে তাকালো। কিভাবে যে সময় চলে গেল বুঝতেই পারলো না। তার মনে হচ্ছে এইমাত্রই তো বসেছি। তার ইচ্ছে করছে আরও কিছুক্ষণ থাকতে। কিন্তু আসাদকে বলার সাহস পেল না। তাই উঠে পড়লো। নূরীর বাসার সামনে আসাদ গাড়ি থামালো। তারপর বলল, “একটা সুন্দর বিকেল উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।” নূরী হাসি দিয়ে নেমে পড়লো। আসাদও বেরিয়ে এলো। নূরী বাধা দিয়ে বলল, “আপনাকে আসতে হবে না।”
- আমার সঙ্গ বুঝি আপনার ভালো লাগে না?
নূরী আর কিছু বলল না। আসাদ তাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিলো।
রাতে প্রায় এগারোটা। খাওয়া দাওয়া করে নূরী ফোন নিয়ে বসলো। ভাবছে আসাদকে কল দিবে। কিন্তু কেন যেন দিতে পারছে না। নূরী কিছুটা অবাক হলো। বিকেলেই তো সে আসাদের সাথে মন খুলে কথা বলেছে। তবে এখন কিসের এতো সংকোচ? নূরী ভেবে পাচ্ছে তার এতো কবে হলো? পরক্ষণেই বুঝলো এই লজ্জা শুধুমাত্র আসাদের ক্ষেত্রেই কাজ করে। অনেক চেষ্টা করেও নূরী কল দিতে পারলো না। মোবাইল রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।

নূরীর অনার্স পরীক্ষার কিছুদিন পর বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলো। এক সপ্তাহ পরেই বিয়ে। বিয়ের বাজার করা শুরু হয়েছে। বেশ ধুমধাম করেই আয়োজন করা হচ্ছে। কেননা দুজনই তাদের পরিবারের একমাত্র সন্তান। পরিবারের সম্মতিতে আজ তারা দুজন একত্রে শপিং করতে বের হলো। দুজনে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করলো তবে নূরী কিছুই কিনলো না। তার পছন্দ হচ্ছে না। মূলত সে চাচ্ছে না শপিং শেষ হোক। শেষ হলেই হয়তো আসাদ চলে যাওয়ার কথা বলবে। তাই নূরী ঘুরছে শুধু। অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরি শেষে তারা একটা ক্যাফেতে বসলো। আসাদ বলল‚ “আপনি তো কিছুই কিনলেন না।”
- পছন্দ না হলে কিভাবে নিবো বলুন। আপনি বোধহয় বিরক্ত হচ্ছেন।
- আরে না না। আমি ঠিক আছি।
দুজনে দুটা ঠান্ডা জুস অর্ডার করলো। সাথে কিছু নাস্তা। জুসে চুমুক দিতে দিতে আসাদ বলল, “আপনার একটা জিনিস আমার খুব ভালো লেগেছে।”
- কি?
- আত্মনির্ভরশীলতা।
- বুঝলাম না।
- আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব দিয়ে আমার অফিসে, আমার এলাকায় খোঁজখবর নিয়েছেন। এমনকি আশেপাশের চায়ের দোকানও বাদ দেননি।
নূরী কাশতে শুরু করলো। সে মনে মনে বন্ধুগুলোকে গালমন্দ করতে লাগল। গোয়েন্দাগিরি বুঝি এভাবে করে? এখন তো ধরা পড়ে গেছি। নূরী বুঝতে পারছে না এখন তার কি বলা উচিত। আসাদ বলল, “কোনো সমস্যা নেই। বরং আমি এতে খুশিই হয়েছি। তা খোঁজখবর নেওয়ার পর আপনার মতামত কি?”
- একত্রে শপিং করছি এটাই তো মতামত। আসলে আপনি খুব মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন। যা ছেলেদের মুখে খুব একটা মানায় না। তাই নিজে কিছু খোঁজখবর নিলাম। আপনি কিছু মনে করেননি তো?
- একদম না। ভালোই করেছেন। তা আমার ব্যাপারে কোনো খারাপ রেকর্ড পেলেন?
- তা পাইনি। আচ্ছা আপনি এখন যেভাবে কথা বলছেন, আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, সময় দিচ্ছেন, আমাকে বুঝছেন। বিয়ের পরও কি এমন থাকবেন?
- এই প্রশ্নের জবাবে যেকোনো ছেলেই হ্যাঁ বলবে। তবে আমি বলব বিয়ে পর আপনিই উত্তর পেয়ে যাবেন।
- আসলে বিয়ের আগ পর্যন্ত সব ছেলেদের মুখেই এই মিষ্টান্ন ভাবটা থাকে। বিয়ে হতেই সেটা হাওয়া হয়ে যায়। এমনটা হতে আমি অনেক দেখেছি। আমার অনেক কাজিন ও বান্ধবীদের জীবনে এমন হয়েছে। যদিও তারা বলে এটা এডজাস্টমেন্ট।
- ওসব বাদ দিন। ভবিষ্যতেরটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে। আপাতত চোখ বন্ধ করুন।
আসাদের চোখে এক নজর তাকিয়ে নূরী চোখ বন্ধ করলো। কিছুক্ষণ পর আসাদ চোখ খুলতে বলল। নূরী দেখলো তার সামনে একটা প্ল্যাটিনামের তৈরি ডায়মন্ডের আংটি।
- স্যরি আমি এটা নিতে পারবো না।
- কেন? এটা তো আপনার জন্যই বানিয়েছি।

নূরী তার হাতের সোনার আংটিটা দেখালো। যেটা এংগেইজমেন্টের দিন আসাদের মা দিয়েছিলেন। নূরী সেটা দেখিয়ে বলল, “আমি এতেই সন্তুষ্ট। এরচেয়ে বেশি দামী কিছু নেওয়া আমার আত্মসম্মানে বাধবে।”
- একটা কথা বলি? এই কয়েকদিনে আমি কি আপনার মনে আমার জন্য বিন্দুমাত্র অনুভূতি তৈরি করতে পেরেছি?
- কেন, আপনি কি কিছুই বুঝেন না? জানেন, আমি আজ কিছু পছন্দ করিনি কেন? শপিং শেষ হলেই তো আপনি চলে যাওয়ার কথা বলবেন। কিন্তু আমি তা চাই না। এতে কি আপনি কিছু বুঝতে পারছেন?
- বুঝলাম। তবে সেই অনুভূতির দাবি নিয়ে বলছি আমার এই উপহারটা গ্রহণ করুন।
নূরী কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “আপনিই পরিয়ে দিন।” আসাদ পরিয়ে দিলো। নূরীর হাত বারবার কাঁপছিল। নূরী লজ্জায় আসাদের দিকে তাকায়নি। আংটির দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনার পছন্দ খুব সুন্দর।”
- সেটা আমিও জানি। আমার পছন্দ চাঁদের চেয়েও সুন্দর।
নূরী আবারও লজ্জা পেল। তবে হাসির আড়ালে তা ঢাকা পড়লো। কিছুক্ষণ পর তারা উঠে পড়লো। বের হয়ে নূরী দাঁড়িয়ে রইলো। গাড়িতে উঠছে না। আসাদ বলল, “কি হলো উঠুন।”
- সামনে একটা ব্রিজ আছে। ওখান থেকে সূর্যাস্ত খুব সুন্দর দেখায়।
- দেখুন, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। আমাদের বাসায় যাওয়া উচিত।
- চলুন না দুজনে একত্রে আজকের সূর্যাস্তটা দেখি।
আসাদ না করতে পারলো না।

দুজনে মিলে ব্রিজের সামনে পথচারীর সাইডে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতে লাগল। তাদের মতো অনেকেই সূর্যাস্ত দেখতে এসেছে। সত্যিই ভীষণ সুন্দর একটি দৃশ্য। এমন একটা দৃশ্য এখান থেকে উপলব্ধি করা যায় তা আসাদ জানতোই না। সন্ধ্যা বেশ গাঢ় হয়ে এলো। আসাদ আবারও বাসায় ফেরার তাড়া দিলো।
- আপনি বাসায় যাওয়ার জন্য এতো পাগল কেন? বাসায় কি আপনার বউ আছে নাকি?
- একটা ঘটনা মনে পড়লো। আমার এক বিবাহিত বন্ধু আছে। সে তার বউয়ের ঘ্যানঘ্যানানির কারণে দশটার আগে বাসায় ফিরে না। অথচ তার ছুটি হয় সন্ধ্যায়।
- আপনিও বুঝি এমন করবেন?
- সেটা কিন্তু নির্ভর করবে আপনার ওপর।
- শুধু আমার ওপর?
- না। দুজনেরই ওপর। আচ্ছা এসব কথা পরেও হবে। এখন চলুন। সন্ধ্যার পর বাইরে থাকাটা ঠিক হবে না। পরিবারের লোকজন ব্যাপারটা খারাপ ভাবতে পারে।
- আমার বাবা মা আমাকে বিশ্বাস করে। আপনি কি নিজেকে বিশ্বাস করেন?
- বুঝলাম না। নিজের ক্ষেত্রে বাবা মায়ের উদাহরণ দিলেন। আর আমার ক্ষেত্রে উল্টাটা কেন?
- একটা ছেলে যখন নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। তখনই সে একটা মেয়ের বিশ্বাস ভঙ্গ করে।
- আপনি কিন্তু খুব ভালো ফিলোসফি দেন। আর হ্যাঁ আমি নিজেকে বিশ্বাস করি। আমার বাবা মাও আমাকে বিশ্বাস করে।
- তাহলে আজকের সন্ধ্যা পেরিয়ে যাক।

দশ টাকার বাদাম কিনে খেতে খেতে দুজনে হাঁটতে লাগল। হঠাৎ তিনজন ছিনতাইকারী ছুরি হাতে তাদের সামনে দাঁড়ালো। যা আছে সব বের করে দিতে বলল। আসাদ ভয়ে ভয়ে তার মানিব্যাগ, ফোন বের করতে লাগল। তা দেখে নূরী অবাক হয়ে বলল, “এটা কি করছেন আপনি? ওদেরকে মারার পরিবর্তে আপনি সব দিয়ে দিচ্ছেন কেন?”
- আপনি একটু চুপ থাকুন।
ছিনতাইকারী গুলো ছুরি ঘুরাতে ঘুরাতে চেঁচিয়ে বলল, “ওই তাড়াতাড়ি দে। নইলে কিন্তু ঢুকাই দিমু।” আসাদ তার মানিব্যাগ ও ফোন দিয়ে ভয়ে ভয়ে বলল, “আর কিছু নাই ভাই।”
- আপার গুলো দিতে বল। নইলে কিন্তু ……
নূরী - নইলে কি করবি তোরা?
আসাদ - আহা! তর্ক করছেন কেন? দিয়ে দিন।
আসাদ নিজেই নূরীর ব্যাগ নিয়ে ওদেরকে দিয়ে দিলো। নূরী বাধা দিয়েও আসাদকে থামাতে পারলো না। তবে এতেই ছিনতাইকারীরা ক্ষান্ত হয়নি। তাদের নজর নূরীর আংটির দিকে পড়লো।
- আংটি খুল। নইলে কিন্তু আঙ্গুল কাইট্টা নিয়া যামু।
আসাদ - না ভাই। না ভাই। আংটিও দিচ্ছি। একটু দাঁড়ান।
আসাদ আংটি দিতে বলল। নূরী রাজি হলো না। বলল, “কখনোই না। এটা আমাদের ভালোবাসার প্রথম উপহার।”
- আমি আরও কিনে দিবো। তবুও দিয়ে দিন।
- আপনি ওদেরকে আর নিজেকে দেখেছেন? ওদের দুটার সমান আপনি। এতবড় পেশিবহুল শরীর কিসের জন্য? শুধুই শো অফ নাকি এসব?
- আরে ধুর! আপনি কিসের সাথে কি মিলাচ্ছেন?
ছিনতাইকারী তিনটা নূরীর দিকে এগিয়ে এলো। নূরী অগ্নি দৃষ্টিতে আসাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। এরপর যা ঘটলো তা দেখে আসাদ নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ছিনতাইকারী তিনটা মাটিতে চিতপটাং হয়ে পড়ে আছে। নূরী তিনজনকেই মেরে ধরাশায়ী করে ফেলল। ছিনতাইকারী তিনটা “ও মাগো” বলে কোঁকাতে লাগল। নূরী তার ওড়না ও ব্যাগ নিয়ে হাঁটা দিলো। আসাদ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর মানিব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে দ্রুতবেগে নূরীর পেছন পেছন চলে এলো।

সারারাত নূরী ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলো। সিদ্ধান্ত নিলো এই বিয়ের ব্যাপারে বাবাকে না করে দিবে। একটা ভীতুর সাথে সে সংসার করতে চায় না। সকালে নূরী তার বাবার কাছে এলো। আফজাল শেখ মোবাইলে কথা বলছেন। ফোন রেখেই তিনি নূরীকে ডাক দিলেন।
- গতকাল আসাদের সাথে কি করেছিস তুই?
নূরী অবাক হয়ে বলল, “মানে?”
- আসাদ বিয়ের তারিখ পেছাতে চাচ্ছে। এর মানে বুঝিস?
নূরীর রাগ আকাশ ছুঁয়ে গেল। সেই সাথে অবাকও হলো। বিয়ে ভাঙার কথা তার নিজের। সেখানে আসাদ বিয়ে পেছাতে চাচ্ছে? কিন্তু কেন? সে আসাদের অফিসে এসে দেখা করলো।
- একদম সরাসরি সত্য বলুন। আপনি এই বিয়েটা করতে চাচ্ছেন না তাই না?
- হ্যাঁ।
- কিন্তু কেন?
- দেখুন, আমি ঘরে গৃহিণী চাই। কোনো লড়াকু নারী নয়।
- ও আচ্ছা, এই ব্যাপার? আপনার কি মনে হয় না আপনি কাউকেই বিয়ে করার যোগ্য না।
- এক্সকিউজ মি!
- রাখেন আপনার এক্সকিউজ। যেই ছেলে একটা মেয়েকে নিরাপত্তা দিতে অক্ষম। তার বিয়ের করার যোগ্যতা আছে নাকি?
- আপনার বোধহয় আমার ভার্সিটি থেকে খোঁজখবর নেওয়া উচিত ছিল। আমি ওই ছিনতাইকারীদের সাথে কোনো ঝামেলা করিনি শুধুমাত্র আপনার জন্য। নয়তো ওরকম কয়েকটার জন্য বাম হাতের থাপ্পড়ই যথেষ্ট।
- কে কি পারে তা গতকালই বুঝা গেছে। আর হ্যাঁ ধন্যবাদ আপনাকে। কারণ আমি নিজেই চাচ্ছি না আপনাকে বিয়ে করতে। কাপুরুষ কোথাকার!
নূরী উঠে চলে গেল।

নির্ধারিত সময়েই তাদের বিয়ে হলো। বাসরঘরে আসাদ এলো। নূরীর পাশে বসলো। নূরী বলল, “বিয়েটা কেন করলেন?”
- সেদিন আপনার একটা ব্যাপার আমার খুব ভালো লেগেছে। আপনি ছিনতাইকারীদেরকে আংটি দিতে চাননি কারণ ওটা ছিল আপনাকে দেওয়া আমার প্রথম উপহার। এই যে প্রিয় জিনিসকে আঁকড়ে ধরে রাখার একটা টান। এটা আজকালকার মেয়েদের মধ্যে খুব কমই আছে।
নূরী মিষ্টি একটা হাসি দিলো। আসাদ বলল, “আপনিও তো বলেছিলেন এই বিয়ে করবেন ন। তবে কেন করলেন?”
- আপনারও কিছু ব্যাপার আমার খুব ভালো লেগেছে। ঘরে গৃহিণী চান, আর সেদিন আপনি আপনার সবকিছু ছিনতাইকারীদের দিয়ে দিচ্ছিলেন আমার নিরাপত্তার কথা ভেবে। একটা ছেলে যখন একটা মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে এতটা ভাবে। তখন তাকে বিয়ে করাই যায়।
আসাদ একটু সংকোচনজনিত ভাবে বলল, “ইয়ে মানে আপনার হাতটা একটু ধরতে পারি?” নূরী তার হাতটা আসাদের হাতে দিয়ে বলল, “জ্বি অবশ্যই। এই হাত কখনো ছাড়বেন না কিন্তু। আর হ্যাঁ এখন থেকে আর আপনি-আপনি নয়। আমরা দুজনই দুজনকে তুমি করে বলব। ঠিক আছে? নাকি আপত্তি আছে?”
- কি যে বলেন …… ইয়ে মানে বলো। আপত্তি কিসের! এই হাত কখনোই ছাড়বো না। তুমিও কথা দাও কখনো এই হাত আমার থেকে দূরে সরাবে না।
নূরী একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আসাদের কাছে এসে তার হাতটা আরও শক্ত করে ধরলো। হাতে হাত রেখে দুজনে চোখের ভাষা পড়তে শুরু করলো। পিনপতন নীরবতা দু'জোড়া চোখের মাঝে। হাত দুটো মৃদু কাঁপছে দুজনের স্পর্শে। মনের মাঝে অজস্র ভালোবাসার অনুভূতি দোদুল্যমান।

সমাপ্ত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.