![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্পের নামঃ হৃদয় ভাঙন।
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।
- আমি যাবো না। কখনোই যাবো। ও আমার কাছে মাফ চাইবে তারপর আমি যাবো।
বেশ গর্জন ও তিরস্কারের সাথে কথাগুলো বললো নীরা। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন তার মা নূরী। আর নীরার বাবা আসাদুজ্জামান তো রীতিমতো রাগে ফুসছেন। মেয়ের এতো বড় স্পর্ধা? এতবার বুঝানোর পরেই সে নিজের কথাতেই অটল আছে। এক চুলও নড়ছে না। নূরী বললেন, “তুই না মা শিক্ষিত। তুই কি কিছুই বুঝিস না?”
- আমি সবই বুঝি মা। আর শিক্ষিত বলেই আমি অবলা নই। কি পেয়েছে ও? যখন খুশি গায়ে হাত তুলবে? আমি কি ওর বাসার কাজের বুয়া?
- কি যাতা বলছিস? সিফাত খুব ভালো ছেলে। ও নিজেই সকালে এসে আমাদের কাছে সব খুলে বলেছে। নিজের দোষ স্বীকারও করেছে।
- কই, আমার কাছে এসে তো দোষ স্বীকার করেনি।
- ও তো এর আগে কখনো এমন করেনি। কাল হয়তো রাগের মাথায় হাত তুলে ফেলেছে। সংসারে এমন টুকটাক হয়। মানিয়ে চলতে হয়।
- মানিয়ে তারাই চলে যারা অন্যের ঘাড়ে বসে খায়। আমি তো ওর ঘাড়ে বসে খাই না। আমি নিজে হাজার পঞ্চাশে আয় করি। তাহলে কেন ওর মারধর খেয়ে সংসার করব?
আসাদুজ্জামান গর্জন দিয়ে বললেন, “চুপ কর বেয়াদব। কতক্ষণ ধরে বুঝাচ্ছি। তবুও মুখে মুখে তর্ক।”
- দেখো বাবা, এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তুমি এই ব্যাপারে কিছু বলো না।
- কি বললি তুই?
আসাদুজ্জামান তেড়ে এলেন। নূরী সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন। বললেন, “পাগল হলে নাকি? এই বয়সে মেয়ে এসব মানায় নাকি?
- ওকে বলে দাও। আজকের মধ্যেই যেন সিফাতের কাছে ফিরে যায়। নয়তো খুব খারাপ হবে বলে দিচ্ছি।
আসাদুজ্জামান বেরিয়ে গেলেন। নীরা তার রুমে চলে গেল।
গতকাল রাতে একটা সামান্য বিষয় নিয়ে সিফাত ও নীরার মধ্যে ঝগড়া লেগে যায়। অফিস শেষে নীরার আসতে একটু লেইট হয়। তাই সিফাত হোটেল থেকে ভাত-তরকারি এনে খেয়ে নেয়। নীরা বাসায় আসার পর বলে, “তোমার অফিস শেষ হয় আটটায়। তবুও তুমি এতো লেইট করে ফিরো কেন? আমাকে প্রায়ই হোটেল থেকে এনে খেতে হয়। এসব আর ভালো লাগে না।”
- আমি ঘরের বুয়া না যে, তোমার জন্য সময়মতো রান্না করে রাখবো।
- আমি লক্ষ্য করেছি ওই ফ্ল্যাটটা কেনার পর থেকে দিনদিন তোমার কথার মাঝে রগচটা একটা ভাব আসছে।
- তোমার যদি এমনটা মনে হয় তাহলে আমার কিছু করার নেই।
- একদিন আমারও হাত উঠে যাবে। তখন কিছু করার থাকবে না।
- তোমার এতবড় সাহস তুমি আমাকে হুমকি দিচ্ছো?
- তুমি কিন্তু এখন বাড়াবাড়ি করছো।
- আমি বাড়াবাড়ি করছি? আমি?
নীরা কিছুটা এগিয়ে এলো। আর ওমনি সিফাত তাকে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো। তাতে নীরা আরও ক্ষ্যাপে গেল। “তুমি আমার গায়ে হাত তুললে? এতবড় সাহস তোমার?” নীরা আবারও এগিয়ে এলো। সিফাত আরও একটা থাপ্পড় মেরে দিলো। দ্বিতীয়টা বেশ জোরেই দিলো। নীরা সোফায় আছড়ে পড়লো। সিফাত রুমে চলে গেল। সকালে উঠে নীরাকে দেখতে পেল না। তার কাপড়চোপড়ও দেখলো না। সিফাত বুঝে গেল যে, নীরা তার ওই ফ্ল্যাটে চলে গেছে। আজ সকালে সিফাত তাকে নিতে এসেছিল। কিন্তু নীরা যায়নি। উল্টো বলেছিল যদি জোরাজুরি করে তবে লোকজন ডাকবে। অপমান করাবে। তাই সিফাত তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর কাছে এসে ব্যাপারটা খুলে বলেছিল। তাই এখন নীরার বাবা মা তাকে বুঝাতে এসেছে। কিন্তু সে কিছুতেই রাজি হচ্ছে না।
বছর দুয়েক হয়েছে পারিবারিক ভাবে নীরা ও সিফাতের বিয়ে হয়েছে। দুজনেই গ্রাজুয়েট ও চাকরিজীবী। বিয়ের পর থেকে তারা সিফাতের বাবার দেওয়া ফ্ল্যাটে থাকছে। সম্প্রতি নীরা নিজের নামে একটি ফ্ল্যাট কিনেছে। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় সে ছোট থেকেই একটু বদমেজাজি। বিকালে সিফাতের বাবা খালেক ও মা রুমানা এলেন। কিছুক্ষণ পর সিফাতও এলো। দুই পরিবার মিলে একত্রে বসলেন। তবে নীরা তার রুম থেকে বের হয়নি।
আসাদুজ্জামান - আসলে আমার মেয়েটার রাগ একটু বেশি। ওর হয়ে আমি লজ্জিত।
খালেক - দোষ তো এই গর্দভের। কেউ স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে? তর্কবিতর্ক হবে মুখে। তাই বলে হাত তুলতে হবে কেন? মানলাম হাত তোলা হয়েছে। ব্যাপারটা কিছুক্ষণ পরেই মিটমাট করা উচিত ছিল। বউ কিভাবে ব্যাগপত্র নিয়ে চলে এসেছে? তখন তুই কই ছিলি?
সিফাত লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো।
খালেক - যা হওয়ার হয়েছে। আপনারা বউমাকে ডাকেন। এভাবে ঘরের বাইরে থাকলে লোকেও তো খারাপ বলবে।
নূরী এসে নীরাকে দরজা খুলতে বলল। নীরা রাজি হলো না। অনেক জোরাজুরির পর নীরা বের হলো।
নূরী - তোর শ্বশুর-শ্বাশুড়ী এসেছেন। উনাদের মান রাখিস। চুপচাপ সিফাতের সাথে চলে যা।
নীরা হনহনিয়ে সামনের রুমে এলো। সেখানে সবাই বসে আছে। নীরাকে দেখে খালেক বললেন, “মা, অনেক হয়েছে রাগ। এবার ফিরে চলো। যদি ওর বাসায় যেতে ইচ্ছে না করে তবে আমার বাড়িতে কিছু দিন থেকে যাও।”
- আমার নিজের ঘর থাকতে আমি আপনাদের ঘরে যাবো কেন?
নীরার এমন কথায় খালেক হকচকিয়ে গেলেন। সিফাতের রাগ আবার মাথা চড়া দিয়ে উঠলো। সে বলল, “নীরা, মুখ সামলিয়ে কথা বলো।” সিফাতের সাথে সুর মিলিয়ে আসাদুজ্জামান বললেন, “এই বুঝি শিক্ষার নমুনা? বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানিস না?”
নীরা তার লালচে গাল দেখিয়ে বলল, “মুখ সামলিয়েছি বলেই আজ আমার এই দশা।”
সিফাত - আমি তো স্বীকার করেছি আমার ভুল হয়েছে। সংসারে এমন টুকটাক হয়।
- তুমি পুরুষ বলে যখন তখন আমার গায়ে হাত তুলবে? কে দিয়েছে তোমাকে এই অধিকার?
- তোমার ইচ্ছে হলে ঘরে আসিও। না হলে নাই।
সিফাত বেরিয়ে গেল। নূরী এগিয়ে এসেও থামাতে পারলেন না। সিফাতের পিছু পিছু তার বাবা মাও চলে যেতে লাগলেন। আসাদুজ্জামান থামালেন। নীরাকে তাদের সাথে যেতে বললেন। অনেক বুঝানোর পর নীরা তার মায়ের কথায় শ্বশুরের সাথে চলে গেল।
আট মাস পর,
নীরার বাবা মায়ের সামনে সিফাত বসে আছে। সকাল সকাল সে একাই এসেছে। নূরীর মনটা আনচান করছে। আবার কোনো সমস্যা হয়নি তো? সিফাত চায়ে দুয়েকটা চুমুক দিয়ে কাপটা টেবিলর ওপর রাখলো। তারপর বলল, “আমাকে একা দেখে আপনারা হয়তো চিন্তায় আছেন। চিন্তার কিছু নেই। আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই সেটা আপনাদেরকে জানাতে এসেছি। আমি আপনাদেরকে আমার বাবা মায়ের মতোই সম্মান করি। আমি আমার বাবা মাকেও জানিয়েছি।”
নূরী - কি সিদ্ধান্ত বাবা?
- দেখুন আম্মা, গত কয়েক মাস ধরে অনেক চিন্তাভাবনার পর আমি ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
নূরী আঁতকে উঠলেন। তার মনটা এমন কিছুর জন্যই আনচান করছিল। তিনি বললেন, “এসব কি বলছো বাবা? স্বামী স্ত্রীর মাঝে টুকিটাকি এসব হয়। তাই বলে কি এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়?”
- আমি অনেক ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশাকরি আপনারা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিবেন।
নূরী আরও কিছু বলতে চাইলেন। কিন্তু আসাদুজ্জামান থামিয়ে দিয়ে বললেন, “নীরার মতামত কি?”
- ওকে এখনো জানাইনি।
- ঠিক আছে। তোমরা যা ভালো মনে করো তাই করো।
সিফাত প্রস্থান করলো।
নূরী চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন, “তুমি এমন সিদ্ধান্তে সাই দিলে কিভাবে? তোমার উচিত ছিল সিফাতকে বুঝানো।”
- তোমার কি মনে হয়, ডিভোর্সের ব্যাপারটা সিফাতের একার? নীরার কোনো সম্মতি নেই? অথচ সিফাত সিদ্ধান্তের সমস্ত দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়েছে।
নূরী চুপ হয়ে গেলেন। কিছু বলার ভাষা তিনি পাচ্ছেন না। কেননা তার মন বলছে এসবের জন্য নীরাই দায়ী।
সিফাত আনমনে রাস্তায় হাঁটতে লাগল। তার মনে ভীষণ কষ্ট। সে কখনো ভাবেনি একদিন তাকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু আজ তাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো। সিদ্ধান্তটা সে সর্বপ্রথম নীরাকেই জানিয়েছে। গতকাল রাতে সে নীরাকে বলল, “নীরা, আমার মনে হয় তুমি আমি কেউই একত্রে সুখী নই। আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়াই উত্তম।” নীরা বেশ স্বাভাবিকভাবে জবাব দিয়ে বলল, “যদি তুমি সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকো। তবে আমার কোনো আপত্তি নেই। তা কবে যাবে উকিলের কাছে?” সিফাত ভেবেছিল আর যাইহোক ডিভোর্সের কথা শুনে নীরা রাজি হবে না। রাগারাগি করবে। অথচ সে খুব সহক ভাবেই রাজি হয়ে গেল। যেন সে মনে মনে এটার জন্য প্রস্তুতই ছিল। এমনিতেও গত আট মাস ধরে নীরার ব্যবহার ছিল অসহনীয়। এই কয়েকটা মাস দুজনে একত্রে বসে ভালোমতো কথাও বলেনি। নীরা রাত দশটার আগে বাসায় ফিরে না। ফিরেও খুব একটা কথা বলে না। ক্লান্তি ভাব থাকে। নিজের রান্না করে খেয়ে নেয় বা বাইরে থেকেই খেয়ে আসে। সিফাত হোটেল থেকে এনে খায়। সকাল সকাল নীরা আবার তাড়াতাড়ি চলে যায়। বন্ধের দিন নীরা তার ফ্ল্যাটে গিয়ে বান্ধবীদের সাথে সময় কাটায়। সিফাত খবরও নিয়েছে অফিসে নীরার সাথে কারও সম্পর্ক আছে কিনা। কিন্তু এমন কোনো তথ্য সে পায়নি। এতকিছুর পরেও সিফাত শুধুমাত্র বাবা মায়ের কথা চিন্তা করে নীরার সাথে সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল। কিন্তু গতকাল রাতেই সব শেষ হয়ে গেল। নীরার মনের মধ্যে তাকে নিয়ে বিন্দুমাত্র অনুভূতি নেই। এক ছাদের নিচে থেকেও তারা বহুদিন ধরে কাছে আসে না। এক ঘরে থেকেও তাদের মধ্যে দুটা মিনিট কথা হয় না। মনে হয় দুটো অপরিচিত মানুষ এক ঘরে আছে। অপরিচিতদের মধ্যেও তো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু তাদের মাঝে সেটাও নেই। যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে দুটো মানুষের একত্রে থাকার কোনো মানে হয় না।
ডিভোর্স পেপারে সই করে সিফাত ও নীরা উকিলের রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
- অবশেষে আমরা আলাদা হয়েই গেলাম তাই না? আচ্ছা তোমার কি মনে হয়, আমরা আলাদা আজ হয়েছি? না, যেদিন তুমি আমাকে না বলেই ফ্ল্যাট কিনেছিলে। সেদিনই আমরা আলাদা হয়ে গেছি। এখানে তোমার নারীবাদী মনোভাব বলবে, সবকিছুতেই কি স্বামীকে জিজ্ঞেস করতে হবে? নিজের স্বাধীনতা বলতে কি কিছু নেই? স্বাধীনতা তো অবশ্যই আছে। কিন্তু দুটো মানুষ যখন একত্রে চলা শুরু করে তখন তারা সবকিছুতেই নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে। যা তুমি করোনি। আমার বাসাকে তুমি কখনোই নিজের ভাবতে পারোনি। সংসার তো দূরের কথা। তবে তুমি অনেক ভালো মেয়ে। আমি ভেবেছিলাম তুমি অন্য কারও সাথে জড়িয়ে পড়েছ তাই আমার সাথে এমন করছো। কিন্তু তুমি কারও সাথেই জড়াওনি। শুধুমাত্র তোমার ইগো ও বদমেজাজি স্বভাবের কারণে আমাদের সংসার টিকলো না। তুমি হয়তো ভাবছো এই কথাগুলো আমি আজ কেন বলছি। আসলে তোমার দেওয়া কোনো কিছুই আমি নিজের কাছে রাখতে চাই না। আর এই কথাগুলো তোমার দেওয়া অবহেলা থেকে তৈরি হয়েছে। হ্যাঁ, কিছু ভুল আমারও ছিল। কিন্তু তুমি আমাকে সেগুলো সঠিক করার সুযোগ দাওনি। নিজেকে পরিবর্তন করতে পারলে ভবিষ্যতে সুখে সংসার করতে পারবে। আমার দোয়া ও শুভ কামনা রইলো। ভালো থেকো।
সিফাত চলে গেল। নীরা চুপচাপ শুধু শুনেছে। কোনো পাল্টা জবাব দেয়নি। কেননা ডিভোর্স তো হয়ে গেছে। এখন অহেতুক তর্ক করার ইচ্ছে তার নেই।
নীরা ঘরে পা রাখতেই আসাদুজ্জামান হুংকার দিয়ে বললেন, “একদম ভেতরে আসবে না। এখানে কারও সাথে তোমার সম্পর্ক নেই। ভবিষ্যতে কখনো এখানে আসবে না।” নীরা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “মা, এটা কি আমার ঘর নয়?” আসাদুজ্জামান তার স্ত্রীকে হুংকার দিয়ে বললেন, “তুমি ভেতরে যাও।”
নূরী - শুনো না আমি বলছি ………
আসাদুজ্জামান - তুমি কি ভেতরে যাবে নাকি ঘর ছেড়ে যাবে?
নূরী আর কথা বাড়াননি। চুপচাপ ভেতরে যেতে লাগলেন। নীরা ডাক দিয়ে বলল, “মা, তুমি তো বাবাকে বুঝাও।”
“আমি আমার স্বামীর অবাধ্য হতে পারব না। শিক্ষির নই তবে স্বামীর কদর বুঝি।” নূরী ভেতরে চলে গেলেন। আসাদুজ্জামান তার মেয়েকে বললেন, “তুমি তোমার ফ্ল্যাটে চলে যাও। এটা তোমার ঘর না।”
- ভালো খুব ভালো। এখন সিফাত তোমাদের আপন হয়ে গেছে আর আমি পর?
আসাদুজ্জামান দরজা আটকিয়ে দিলেন। নীরা কিছুক্ষণ চিল্লাচিল্লি করে চলে গেল। আসাদুজ্জামান ভেতর রুমে এলেন। নূরী কাঁদছে।
- কিসের জন্য কাঁদছো? মেয়ের মতো তোমারও আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছে নাকি?
- এসব কি বলছো তুমি? এত বছরের সংসারে এই বুঝি তুমি চিনলে?
- তাহলে এই কান্নাকাটি কেন?
- কাঁদছি এজন্যই যে আমি নীরাকে যথাযথভাবে মানুষ করতে পারিনি। মা হিসেবে আমি ব্যর্থ।
- সন্তান যদি অন্যায় করে তবে সেটা বাবা মায়ের ওপর আসবে কেন? কোনো বাবা মা-ই সন্তানকে অন্যায় করতে শেখায় না। সন্তান তাদের মূল্যবোধের অভাবে অন্যায় করে। এখানে বাবা মায়ের দোষ নেই।
নূরী চোখের পানি মুছে বললেন, “আমি খুশি যে আমি উচ্চশিক্ষিত নই। এই যদি হয় উচ্চ শিক্ষার নমুনা তবে আমি ধিক্কার জানাই এই শিক্ষাকে।”
- দোষ শিক্ষারও নয়। দোষ ওর মূল্যবোধের।
দশ বছর পর,
নীরা তার দ্বিতীয় বিয়েতে এখন পর্যন্ত স্থায়ী আছে। তার দ্বিতীয় স্বামী রাকিব, একটা মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে জব করে। দুজনেরই ব্যাংক ব্যালেন্স ভরপুর। ঘরে কোনো কিছুর অভাব নেই। তাদের একটা ছেলেও আছে। সময়ের সাথে আসাদুজ্জামানের রাগও কমেছে। তবে আগেরমতো কথাবার্তা বলেন না। নীরা এখন মাঝেমাঝে বাবার বাসায় যাতায়াত করে। আজ নীরা তার স্বামী সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে ডিনার করতে এসেছে। বাবা মায়ের কিছু কিছু ব্যাপার ইদানিং নীরার চোখে ভীষণ ভাবে দাগ কাটে। তার বাবা যখন কাশে তখন তার মা পানির গ্লাস এগিয়ে দেন, খেতে বসলে জোর করে হলেও মাংসের টুকরো বাড়িয়ে দেন, খাওয়া শেষে গামছাটা এগিয়ে দেন এসব ব্যাপার নীরার দৃষ্টিতে পড়ে। অথচ তার বাবা কিছুই করেন না। নাতো মাকে মাংস বেশি খাওয়ার জন্য জোর করেন নাতো গ্লাস এগিয়ে দেন। তবুও দুজনের মধ্যে এক অদ্ভুত ভালোবাসা কাজ করে। এই ভালোবাসাটার অভাব নীরা খুব অনুভব করে। রাকিবকে কিছু এগিয়ে দিতে হয় না। সে নিজ থেকেই নিয়ে নেয়। রাতে নীরা দেরি করে ফিরলেও রাকিব তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে না। শুধু বলে আজ কাজের চাপ বেশি ছিল নাকি? ছেলেটাকে বুয়া দেখাশোনা করে তাই ছেলের মাঝে কেমন যেন একটা দূরত্ব কাজ করে। ছোটবেলায় নীরা যেমন তার বাবার সাথে কথা বলতো ছেলেটা তার সাথে তেমন কথা বলে না। তবে নীরার সংসার একদম পরিপাটি। যেমন সংসার সে চেয়েছিল ঠিক তেমন সংসারই পেয়েছে। রাকিবের সাথে তার ঝগড়াবিবাদ হয় না। একটা পারফেক্ট সংসার যাকে বলে। তবুও তার মাঝে শান্তি নেই। মনে কেমন যেন একটা কষ্ট তাড়া করে বেড়ায়। যার সমাধান নীরা আজও খুঁজে পায়নি।
সমাপ্ত।
©somewhere in net ltd.