![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্পের নামঃ লুকোচুরি।
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।
নূরী বেশ কিছুক্ষণ ধরে আসাদকে অনুসরণ করছে। প্রথম দেখাতেই খুব পছন্দ করে ফেলেছে আসাদকে। বিয়ের অনুষ্ঠানে নাকি অনেক প্রেম-ভালোবাসার শুরু হয়। এই কথাটা নূরী আগে বিশ্বাস করতো না। তবে আজ বিশ্বাস করছে। কেননা সে প্রেমে পড়েছে। আসাদের প্রেমে। আসাদের ব্যক্তিত্ব তাকে মুগ্ধ করেছে। সচরাচর বিয়ের অনুষ্ঠানে ছেলেদের নজর মেয়েদের দিকে থাকে। কিন্তু আসাদের নজর সেদিকে নেই। বরং কোনো মেয়ে কথা বলতে এলে সে শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক কথাই বলে।
নূরীর খালাতো বোনের বিয়ে হচ্ছে। আর বর আসাদের বন্ধু। অনেকক্ষণ ধরে সুযোগ খোঁজার পর অবশেষে নূরী আসাদকে একা পেল। নূরীর বান্ধবীরা তাকে সাহস দিয়ে পাঠালো। কেউ এদিকে এলে ইশারা দিবে। আসাদের কাছে এসে নূরী সাধারণ আলাপ-আলোচনা করতে লাগল। কোন পক্ষের, কতদিনের বন্ধুত্ব, কে কে এসেছে এসব। আসাদের কাছে প্রশ্নগুলো অবান্তর লাগলেও ভদ্রতার খাতিরে উত্তর দিচ্ছে। তবে নূরীও বুঝতে পারছে এতে আসাদ বেশ বিরক্ত হচ্ছে। তাই নূরী আর দেরি না করে মূল কথাটা বলল। “আপনাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে।” আসাদের মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দিলো না। তবে নূরী অপেক্ষাও করলো না। কথাটা বলেই দৌঁড়ে পালালো। অনুষ্ঠান শেষের আগ মুহূর্তে তাদের আবার দেখা হলো। নূরী বলল, “আপনার জবাব দিলেন না যে?”
- অবান্তর প্রশ্নের জবাব হয় না।
আসাদ চলে গেল। নূরী অবাক হয়ে গেল। তবে সে হাল ছাড়লো না। নূরীর তার কাজিনদের মাধ্যমে ব্যাপারটা আসাদের বন্ধুদের কাছে জানালো। অতঃপর আসাদের বন্ধুরা তাকে বুঝাতে লাগল যে, মেয়ে ভালো। যেমন শিক্ষিত তেমনই বংশগত মর্যাদা আছে। এছাড়াও রূপবতী ও গুণবতী। তবে আর কি চাই? আসাদ বলল, “তোরা তো সবই জানিস। আমার পেশা জানার পর কোনো বাবাই তার মেয়ে দিবে না। অথচ আমি এই পেশা অনেক ভালো আছি। অনেক ব্যাং অফিসাররা আমার পেছনে ঘুরে একাউন্ট করার জন্য। অথচ এই পেশার কারণে রিমিকে হারিয়েছি। আর কারও মায়ায় পড়তে চাই না।”
রিমি হলো আসাদের প্রথম ভালোবাসা। তাদের ব্যাপারটা রিমির বাবা জানার পর রিমিকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়। কারণ আসাদের পেশা তার কাছে অনিরাপদ লেগেছে। অনিরাপদ ভবিষ্যত্। আর কোনো বাবাই তার মেয়েকে অনিরাপদ ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে চায় না।
অবশেষে আসাদ-নূরীর পথচলা শুরু হলো। আসাদ তার বন্ধুদের জোরাজুরিতেই বাধ্য হলো নূরীর সাথে জড়িয়ে পড়তে। শুরু আবেগটা নূরীর দিক থেকে একপাক্ষিক ভাবে চললেও ধীরে ধীরে আসাদের মাঝেও আবেগ জন্মায়। সেও নূরীর মায়ায় জড়িয়ে পড়ে। যত সময় গেল দুজনের মধ্যে ভালোবাসা ততোই ঘনীভূত হলো। বন্ধু মহলে তারা এখন সেরা জুটি নামেও পরিচিত। দেখতে দেখতে দুটা বছর কেটে গেল।
বর্তমানে নূরী ও আসাদ বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছে। নূরীকে কিছুটা উদাসীন দেখাচ্ছে। কি সমস্যা তা জানতে আসাদ জিজ্ঞেস করলো। জবাবে নূরী বলল, “আমার অনার্স শেষ। বাবা আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য পাত্র দেখছে। আমি বাবাকে তোমার কথা বলতে চাই। যদি জিজ্ঞেস করে ছেলে কি করে তখন আমি কি জবাব দিব? বেকার ছেলের হাতে কোন বাবা তার মেয়ের হাত দিবে, বলো তো।”
- হা হা হা। কি যে বলো না তুমি! কে বেকার? আমি এমজেবি কোম্পানিতে ম্যানেজার। এই দেখ আমার কার্ড।
নূরীর চোখ কপালে উঠে গেল। আসাদ যে চাকরি করে তা নূরী আজ পর্যন্ত শুনেনি। আসাদের মুখে কখনো শুনেনি অফিসে আছি, মিটিংয়ে আছি, ব্যস্ত আছি এসব বলতে। এছাড়াও আসাদকে কখনোই সে অফিশিয়াল শার্ট-প্যান্টে দেখেনি। নূরী অবাক হয়ে বলল, “কই, তুমি তো আমাকে কখনো বলোনি।”
- আরে এটা বলার কি আছে?
- তাহলে তো আর কোনো বাধা নেই। আমি বাবাকে তোমার ব্যাপারে আজই বলব।
নূরীর ঘর জুড়ে নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেছে। যার একমাত্র কারণ নূরীর প্রেম। তার বাবা বিশ্বাসই করতে পারছেন তার মেয়ে এমন একটি কাজ করেছে। নূরীর মামা অনেক বুঝিয়ে রাজি করালেন। নূরীর বাবা রাজি হলেন তবে কিছুদিন সময় নিলেন। যাচাইবাইয়ের জন্য একদিন হুট করেই নূরীর বাবা আসাদের অফিসে দেখা করলেন। নানাভাবে যাচাইবাছাই করলেন। সবকিছু মনমতো হওয়ায় বিয়েতে দ্বিমত করলেন না। অতঃপর পারিবারিক দেখা-সাক্ষাৎ পর্ব শুরু হলো। এই দুনিয়াতে আসাদের আপন বলতে শুধু তার বড় ভাই ও ভাবী আছে। কিন্তু চাকরির কারণে তারা অন্য শহরে থাকে। তবে আসাদের বিয়ের আলাপ-আলোচনা করতে চলে এলো। তারপর কথাবার্তা বলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করলো। সময়মতো বেশ ধুমধাম করেই নূরীর বিয়ে হলো।
রাত একটা বাজে। অন্যরুমে এসে আসাদ ল্যাপটপে কাজ করছে। নূরী বেডরুমে ঘুমাচ্ছে। তবে কিছুক্ষণ পর উঠে এলো। আসাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি বুঝি না রাত একটার সময়ও কিসের এত কাজ? মানুষের অফিসের একটা সময় থাকে। তোমার তো কিছুই নেই।”
- বড় পদে থাকলে কাজের কোনো নির্ধারিত সময় থাকে না। এই যে বাড়িটাতে থাকছি। এটা তো এমনি এমনি আসেনি। দিনরাত পরিশ্রম করেই তো এনেছি।
নূরী আর কিছু বলল না। বিয়ের পর থেকেই নূরী এটা দেখে এসেছে। রাত জেগেও আসাদ ল্যাপটপে কাজ করে। শুরু নূরী একটু সন্দেহ করতো। কিন্তু ধীরে ধীরে সন্দেহ দূর হয়ে গেল। কারণ নানান সময় আসাদকে তার বিদেশী ক্লাইন্টের সাথে কথা বলতে দেখেছে। তাছাড়া আসাদ সারাক্ষণই দ্রুতগতিতে টাইপ করতে থাকে। মনিটরের ওপর শুধু লেখা আসা যাওয়া করে। ফেসবুক বা অন্যকোনো সামাজিক মাধ্যমের কিছু দেখেনি নূরী। সে বুঝে আসাদ এত কাজ নিজেদের ভালো থাকার জন্যই করছে। তাই তো বিয়ের কিছু মাস পরেই পুরানো ফ্ল্যাট ছেড়ে এই আলিশান বাড়িতে উঠেছে। চারিদিকে গাছ আর মাঝে লাল সবুজের এই দুইতলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল বাড়ি।
সকাল আটটা বাজে। আসাদ অফিসের জন্য প্রস্তুত হয়ে নাস্তার টেবিলে এলো। নূরীও নাস্তা নিয়ে হাজির হলো। বিরক্ত মিশ্রিত স্বরে বলল, “তুমি এই চাকরিটা ছেড়ে দাও। এত চাপ ভালো না।” আসাদ হাসি দিলো। নূরী রাগে গজগজ করতে করতে আরও বলল, “রাত দুইটা-তিনটা অবধি কাজ করো। আবার সকাল আটটায় অফিসে যাও। এমন চলতে থাকলে একদিন অসুস্থ হয়ে পড়বে। তখন আমার কি হবে?”
- তুমি চিন্তা করো নাতো। আমার কিচ্ছু হবে না।
আসাদ নাস্তা খেয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যেতে লাগল। এমন সময় নূরী ডাক দিয়ে বলল, “মানুষ এক ভুল কতদিন করে?”
- আবার কি করলাম?
- টাই পরবে কে? তোমার অফিসে না, টাই ছাড়া এলাউ না।
আসাদ এসে নূরীর কাছে দাঁড়ালো। বলল, “তাড়াতাড়ি পরিয়ে দাও।” নূরী মুচকি হাসি দিয়ে আসাদকে টাই পরিয়ে দিলো। নূরী বুঝে আসাদ এই ভুলটা ইচ্ছে করেই করে। যাতে সে আসাদকে টাই পরিয়ে দেয়। আসাদ বেরিয়ে পড়লো।
নূরীর ভয় হয়, এত কাজের চাপে যদি আসাদের কিছু হয়ে যায়। তাহলে তার কি হবে? তারওপর তাদের ঘরে নতুন অতিথি আসতে চলেছে। হ্যাঁ, নূরী প্রেগন্যাট। যদিও খবরটা এখন পর্যন্ত আসাদকে জানানো হয়নি। গতকাল রাতেই নূরী রিপোর্ট পেয়েছিল। সারপ্রাইজ দিয়ে আসাদকে এই খুশির খবর দিবে বলে ঠিক করেছে।
ডিনারে আসাদের প্রিয় তরকারি রান্না করলো নূরী। নিজেও বেশ সুন্দর করে সাজলো। নূরীকে দেখেই আসাদ বিমোহিত হয়ে বলল‚ “অপূর্ব লাগছে তোমায়।” নূরী লাজুক হাসি দিলো। টেবিলে বসে আসাদ তৃপ্তির সাথে খেতে লাগল। নূরী মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করছে। খেতে খেতে আসাদ বলল, “যেই মেয়েটা প্রথম দেখাতেই একটা ছেলেকে প্রপোজ করতে পারে সেই মেয়ে আজ এতো ভাবছে? সত্যিই অবাক করার বিষয়।” নূরী আমতা আমতা করতে লাগল। আসাদ বলল, “আচ্ছা শুনো, একটা খুশির খবর আছে।”
- তোমার প্রমোশন হয়েছে?
- হ্যাঁ। কিন্তু তুমি কিভাবে বুঝলে?
- সাধারণত ছেলেদের কাছে প্রমোশনই খুশির খবর।
- হ্যাঁ, এখন আমার দায়িত্ব অনেক বেড়েছে। এত বড় দায়িত্ব পালন করা মুখের কথা নয়।
- তোমার ওপর চাপ আরও বাড়বে তাই না?
- হ্যাঁ তা তো বটেই।
- আমি বলি কি, এত চাপ নেওয়ার দরকার নেই।
- আমাকে যে এই চাপ নিতেই হবে। আমাকে যে পৃথিবীর সেরা বাবা হতে হবে।
- মানে? কি বলছো তুমি?
- তুমি কি চাও না আমি সেরা বাবা হই?
নূরী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। যেই কথাটা বলার জন্য সে এত আয়োজন করেছে সেই কথা আসাদ আগে থেকেই জানে। কিন্তু কিভাবে? নূরী বলল, “তুমি কিভাবে জানলে?”
- আলমারিতে লুকানো রিপোর্ট আমার হাতে পড়েছিল।
পরিকল্পনা নষ্ট হওয়ায় নূরী মন খারাপ করে চলে গেল। আসাদও পিছু পিছু গেল। এই অভিমান যে তাকে ভাঙাতেই হবে।
ঘরজুড়ে আনন্দের স্রোত বয়ে গেল। পরিবারের লোকজনকে ডেকে ছোট পরিসরে অনুষ্ঠান করা হলো। আসাদের ভাই-ভাবী, নূরীর বাবা-মা ও বড় ভাই এসেছে। সবাই মিলে বেশ আনন্দ উদযাপন করলো। নূরীকে নিয়ে যেতে চাইলো তার মা। তবে নূরী গেল না। জানালো আর কিছুদিন পর যাবে। তারাও জোর করলো না। প্রতিটি মেয়েই চায় এই সময় তার স্বামীর পাশে থাকতে। তবে কিছু মাস পর নূরী তার মায়ের কাছে চলে গেল। কেননা এই সময় তার পরামর্শ ও পরিচর্যা দরকার। যা তার মাকে দ্বারাই সম্ভব।
একটা রাজপুত্র জন্ম দিলো নূরী। নাম রাখা হলো আহাদ। ঘর জুড়ে আনন্দের সীমা রইলো না। নূরী তার বাবা-মায়ের সাথেই থাকতে লাগল। আসাদ প্রায়ই এসে দেখে যায়। একদিন আসাদ বলল‚ “এবার বাসায় চলো। আর কতদিন এভাবে উনাদের ওপর বোঝা হয়ে থাকবে?”
- এসব তুমি কি বলছো? আমি আমার বাবার কাছে থাকছি এতে বোঝার কি আছে?
- তবুও বিয়ের পর বাপের বাড়ি থাকা ঠিক না।
- জানি। আমিও থাকতে চাই না। কিন্তু আপাতত আহাদের জন্য এটাই প্রয়োজন।
আসাদ আর কিছু বলল না। ব্যাপারটা সেও বুঝে। আজ যদি তার মা বেঁচে থাকতো তাহলে নূরী তাদের সাথেই থাকতো।
কিছু কেনাকাটার জন্য নূরী শপিংমলে এসেছে। আসাদকে এক রেষ্টুরেন্টে দেখে সে অবাক হলো। অথচ সকালেও বলেছিল অফিসে আছে। নূরী তাকে ফোন দিলো।
- কি করছো?
- তোমাকে মিস করছি।
- কেন, অফিসে বুঝি কাজ নেই?
- তোমাকে মিস করাই আমার বড় কাজ।
- কোথায় তুমি? আশেপাশে এত শব্দ হচ্ছে কেন?
- অফিসে আজ ইন্টারভিউ তো তাই।
নূরী আর কিছু বলল না। স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই ফোন রাখলো। নূরী বেশ কিছুক্ষণ ধরেই আসাদের ওপর নজর রাখলো। আসাদ একাই বসে রইলো। ওদিকে নূরীর মা ফোন দিয়ে জানালো আহাদ উঠে গেছে। তাই নূরী চলে এলো।
পরেরদিন হুট করেই নূরী তার বাবার বাসা থেকে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলো। নূরীর মা আরও কিছুদিন থাকতে বলল। কিন্তু নূরী থাকলো না। আসাদও খুশি মনে এসে তাকে নিয়ে গেল। ঘরে এসে আসাদ বলল, “অবশেষে আমার ঘরটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তোমাদেরকে ছাড়া ঘরটা শুধুমাত্র চার দেয়াল মনে হচ্ছিলো।”
সন্দেহ এমন একটা বীজ, যা একবার মনের মধ্যে জন্মালে তা আগাছার মতো বৃদ্ধি পেতেই থাকে। নূরীর মনেও সন্দেহ বাড়তে লাগল। সে আসাদের পেছনে তার এক ছোট ভাইকে লাগালো। তারপর জানতে পারলো আসাদ বাসা থেকে বের হয় ঠিকই কিন্তু অফিসে যায় না। এক বন্ধুর বাসায় যায়। নূরীর মনে অজানা ভয় কাজ করতে লাগল। তবে কি আসাদ তার সাথে প্রতারণা করছে? এই ব্যাপারে আসাদকে কোনো প্রশ্ন করলো না নূরী। আরেকটু যাচাইবাছাই করতে লাগলো।
আজ সকালে নূরীর মা এসেছে। জরুরী ভাবে নূরী-ই ডেকেছে। তবে আসাদকে বলা হলো দেখতে এসেছে। কিছুক্ষণ পর আসাদ অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেল। আহাদকে তার নানীর কাছে রেখে আসাদের পিছু পিছু নূরীও বের হলো। আসাদ একটা এপার্টমেন্টে ঢুকলো। নূরী সেখানের সিকিউরিটি গার্ডকে কিছু টাকা দিয়ে বেশ কিছু তথ্য নিলো। আসাদ এখানে বিগত কয়েক মাস ধরে আসা যাওয়া করে। আসাদ প্রতিদিনই এই সময়ে আসে আর সন্ধ্যায় চলে যায়। যার ফ্ল্যাটে যায় তার নাম রাজিব। সে তার স্ত্রী ও বোনকে নিয়ে থাকে। আসাদের আসা-যাওয়ার ব্যাপারটা রাজিবও জানে। অধিকাংশ সময় রাজিব নিজেও ঘরে থাকে। নূরী বেশ চিন্তায় পড়লো। সে ভাবতে লাগল আসাদ এখানে এসে কি করে? যেহেতু রাজিব তার স্ত্রী ও বোনকে নিয়ে থাকে সেহেতু এখানে অবৈধ কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে এমনও হতে পারে যে, অর্থের লোভে রাজিব তার বোনকে দিয়ে আসাদকে ফাসিয়েছে। কেননা আসাদের কাছে বেশ অর্থ সম্পদ আছে। বিয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত নূরী কোনো অভাব অনটন দেখেনি। এছাড়াও নূরীর বাবা আসাদের বাড়ি ঘর দেখেই রাজি হয়েছিল। নূরী সেখান থেকে চলে এলো।
প্রতিদিনের মতো রাত আটটায় আসাদ ঘরে ফিরলো। নূরী সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ সবকিছুর ফয়সালা করবে। খাওয়া দাওয়া শেষে নূরী বেশ শান্ত ভঙ্গিতেই জিজ্ঞেস করলো, “একটা কথার সত্য জবাব দিবে?” আসাদ হেসে বলল, “আমি তোমাকে কোনটা মিথ্যা বলেছি?”
- তুমি কিসের জব করো?
- এমজেবি কোম্পানিতে।
- প্রতিদিন সকাল সকাল অফিসে যাও, তাই না?
- হ্যাঁ।
- তোমার অফিস কি সিপি কলোনির ১৯ নাম্বার রোডের ৬নং বিল্ডিংয়ে?
নূরীর কথা শুনে আসাদের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। সে বুঝলো যে নূরীর কাছে সত্য প্রকাশিত হয়েছে। এখন আর লুকানো সম্ভব না। আসাদ স্বাভাবিকভাবেই বলল, “দেখো নূরী, আমি তোমাকে সত্য বলতেই ………”
- ধরা পড়লে সবাই এই কথাই বলে। তুমি শুধু আমাকে এটা বলো ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে তুমি কি করো?
- তুমি যা ভাবছো তা কিছুই না। আমি তোমাকে ধোকা দেইনি।
নূরী রাগন্বিত স্বরে বলল, “প্রশ্নের জবাব দাও। আমার মাথা গরম হলে কিন্তু সবকিছু তছনছ করে ফেলব।” নূরী রাগে ফুসতে লাগল। আসাদ এগিয়ে এসে নূরীর কাছে বসলো। তার হাতটা ধরে বলতে শুরু করলো। আসাদ বলে যাচ্ছে আর নূরী শুনে যাচ্ছে। আসাদ যত বলছে নূরী ততই অবাক হচ্ছে। আসাদ যা বলছে তার সারমর্ম হলো, সে একজন ফ্রিল্যান্সার। এই পেশার কারণে তার প্রথম ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি। সেই থেকে আসাদ প্রেম-ভালোবাসা থেকে দূরে সরে যায়। পুরোদমে ফ্রিল্যান্সিংয়ে ডুবে যায়। এর কিছু বছর পর নূরীর সাথে তার পরিচয় হয়। শুরুতে বন্ধুদের চাপে রিলেশন শুরু করলেও পরে নূরীর মায়াজালে একেবারে বন্দী হয়ে যায়। প্রথম ব্যর্থতায় আসাদ এটা ভালোভাবেই বুঝেছে যে, কোনো মেয়ের বাবাই একজন ফ্রিল্যান্সারের সাথে মেয়ের বিয়ে দিবে না। তাই আসাদ তার এক বন্ধুর সাথে মিলে পরিকল্পনা করে। নিজেকে সেই বন্ধুর অফিসের ম্যানেজার হিসেবে প্রদর্শন করে। নূরীর পরিবারের সবাই জানে আসাদ এমজেবি কোম্পানির ম্যানেজার। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে একজন ফ্রিল্যান্সার। এজন্যই সে রাত জেগে কাজ করে। আর নূরীকে বলে বিদেশী ক্লাইন্টের সাথে মিটিং। এই মিথ্যেটাকে বাঁচিয়ে রাখতে আসাদ নিয়মিত অফিসের সময়ে বের হয়। আর রাজিবের বাসায় গিয়ে সময় ঘুমিয়ে সময় কাটায়। কারণ রাজিবও টুকিটাকি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে।
সবকিছু শুনার পর নূরী চুপ করে রইলো। আসাদ বলল, “তোমার যদি এখনও বিশ্বাস না হয় তবে রাজিবের বাসায় গিয়ে সত্যতা যাচাই করতে পারো।” নূরী উঠে দাঁড়ালো। তারপর বলল, “কাল থেকে কারও বাসায় যাওয়ার দরকার নেই। ঘরেই থাকবা।”
- আমি ঘরে থাকি এটা জানলে তোমার বাবা তো ভাববে চাকরি চলে গেছে। তখন তো আরেক দুঃশ্চিন্তা।
- ওসব আমি দেখে নিবো।
- কিন্তু সারাক্ষণ ঘরে থেকে কি করবো?
নূরী মুচকি হাসি দিয়ে বলল, “ঘুমাবে আর আমাকে সময় দিবে।” আসাদ দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল, “সরাসরি বললেই পারো যে, আমার সঙ্গ দরকার।”
- আমি তো সরাসরিই বললাম। আর এটা তো আমার অধিকার।
- জ্বি মহারানী।
নূরী হাসি দিয়ে বলল, “তুমি বোসো। আমি দুই কাপ চা নিয়ে আসছি।” আসাদ মাথা দুলালো। নূরী রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো। আসাদ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। তার মন থেকে বিশাল এক পাথর নেমে গেল। এতদিন ধরে এই মিথ্যা বুকের মাঝে বহন করে চলেছিল। সত্য বলতে চেয়েও সংসার এলোমেলো হওয়ার ভয়ে বলতে পারেনি। আজ সত্য বলে সব লুকোচুরির অবসান করেছে। এখন আর লুকোচুরি করতে হবে না। তাছাড়া আপনজনদের সাথে লুকোচুরির পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। যা আসাদ চায় না। শুধু শুধুমাত্র শান্তি চায়।
সমাপ্ত।
©somewhere in net ltd.