![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্পের নামঃ বৈবাহিক নিয়ামত।
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।
গল্পটা Nishi Chowdhuri & শিহাব ভাইকে, তাদের তৃতীয় বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে উত্সর্গ করা হলো। বিবাহবার্ষিকীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও দোয়া রইলো।
রাত দশটা বাজে। নিশি অনেকক্ষণ ধরেই দুয়ারের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। কলিংবেলের শব্দের অপেক্ষায় আছে। বেল বাজতেই দরজা খুলে দিবে। এই সময়ে তার স্বামী শিহাব ঘরে ফিরে। সে অত্যন্ত বদমেজাজি ও রাগী। তার রাগ যেন সবসময়ই নাকের ডগায় থাকে। গত দুই বছরে নিশি এটা হাড়ে হাড়ে বুঝেছে। বিয়ের প্রথমদিকে একদিন দরজা খুলতে দেরি হওয়ায় নিশিকে ভীষণ বকাঝকা করেছিল শিহাব। সেই থেকে নিশি এই সময়ে ঘরের দুয়ারের সামনেই থাকে।
বেল বাজতেই নিশি দরজা খুলে দিলো। শিহাব কিছুক্ষণ দুয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর দুয়েকটা কাশি দিলো। যেন গলা ঝেড়ে নিলো। মূলত সে একটা ব্যাপারে দ্বিধাবোধ করছে। তবে পরক্ষণেই হুজুরের কথা মনে পড়লো। “কোনো ভালো কাজে যদি মন বাধাগ্রস্ত হয়। তবে বুঝে নিতে হবে এই বাধাটা শয়তান দিয়েছে। তখন মনের সাথে যুদ্ধ করে ইমানকে দৃঢ় প্রমাণ করাই একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় কাজ।” কথাটা মনে হতেই শিহাব একটা বড় নিঃশ্বাস নিলো। মনে মনে বলল আমাকে পারতেই হবে। তারপর শিহাব বেশ ধীরস্থির ভাবে নিশিকে সালাম দিলো। এরপর আর দাঁড়ালো না। সোজা রুমের দিকে চলে গেল। মূলত সালামের ব্যাপারটা নিয়েই শিহাব এতক্ষণ মনে মনে যুদ্ধ করেছে। নিশি ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। সাধারণত এমনটা হয় না। ঘরে এসে শিহাব সোজা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়। কোনো কথা বলে না। সালাম তো দূরের ব্যাপার। নিশি নিজেকে সংবরণ করে ডিনার প্রস্তুত করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর শিহাব এলো। দুজনে মিলে ডিনার করতে বসলো। অন্যান্য সময় শিহাব মিনিট দশেকের মধ্যে খেয়েদেয়ে উঠে যায়। কোনো কথা বলে না। তবে আজ শিহাব প্লেটে ভাত নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। বারবার নিশির দিকে তাকাচ্ছে। দুজনের চোখাচোখি হতেই শিহাব আবার প্লেটে নজর ফিরিয়ে নিচ্ছে। নিশি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, “রান্না ভালো হয়নি?” অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে শিহাব বলল, “না না। রান্না খুব ভালো হয়েছে।”
- তাহলে খাচ্ছো না যে?
শিহাব কোনো জবাব না দিয়ে দ্রুত খেয়ে উঠে পড়লো। এই পর্যায়ে সে তার মনের সাথে যুদ্ধ করে পেরে উঠলো না। মুখ ফুটে নিশির রান্নার প্রসংশা করতে পারলো না। বলতে পারলো না আমি তোমাকে এক লোকমা খাইয়ে দেই। কারণ এসব শিহাবের স্বভাবের বিপরীত। শিহাবের মনে হঠাৎ এসব ব্যাপার জাগ্রত হওয়ার পেছনে একটি কারণ আছে। আজ শিহাব যখন আছরের নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলো তখন মসজিদের হুজুর কিছু লোকদের নিয়ে কোরআন-হাদীসের আলোকে স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপারে আলোচনা করছিলেন। কি মনে করে শিহাব সেখানে বসেছিল। হুজুরের প্রতিটি কথা মনোযোগ সহকারে শুনেছিল। অতঃপর সে যা জানতে পারলো তাতে বিস্মিত হয়ে গেল। সে কল্পনাও করতে পারেনি তার ঘরে নিশির রূপে এত বড় একটি নিয়ামত আছে। অথচ এযাবৎ ধরে সে এই নিয়ামতের কদরই করেনি। সে জানতে পারলো স্ত্রীর সাথে অতিবাহিত করা প্রতিটি মুহূর্তের জন্য আমলনামায় নেকী দেওয়া হয়। স্ত্রীর জন্য হালাল পথে ব্যয় করলেও নেকী। এমনকি স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলেও নেকী। এরপর থেকেই শিহাব সিদ্ধান্ত নেয় সে এই নেকীগুলো মিস করবে না। অজস্র গুনাহের মাঝে এই নেকীগুলো হয়তো পরকালে কাজে আসতে পারে। তাই সে নিজের আচরণে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে।
নিত্যদিনের রুটিন অনুযায়ী শিহাব ফজরের নামাজ শেষে জগিংয়ে বের হলো। ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নাস্তা করতে বসলো। শিহাব জগিংয়ের থেকে ফেরার সময় সিদ্ধান্ত নিয়েই এসেছে যে, আজ নিশির রান্নার প্রসংশা করবেই করবে। বেশ কিছুক্ষণ মনের সাথে যুদ্ধ করার পর শিহাব বলল, “আজকের ডালটা খুব মজা হয়েছে।” তা শুনে নিশি বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। এর আগে কখনোই শিহাব এমন কিছু বলেনি। শিহাব রুটির টুকরো ডালের সাথে মিশিয়ে নিশির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “তুমি খেয়ে দেখো।” এবার নিশি ভীষণ লজ্জা পেল। ক্ষুধা নেই বলে দৌড়ে রান্নাঘরে চলে গেল। শিহাব মনে মনে হাসলো। অফিসে যাওয়ার সময় শিহাব সালাম দিয়ে বেরিয়ে গেল।
নিশি সবকিছু গুছিয়ে টিভি দেখতে বসলো। আজ তার টিভিতে মন বসছে না। শিহাবকে নিয়ে ভাবছে। হঠাৎ মানুষটার কি হলো? সে তো কখনো এমন করে না। গত দুই বছর ধরে নিশি যে শিহাবকে চিনে এসেছে সে অত্যন্ত বদমেজাজি লোক। অথচ গতকাল থেকে সে এক ব্যতিক্রম শিহাবকে দেখতে পাচ্ছে। তবে নিশি এই স্বভাবকে তুফান আসার আগের নীরবতা ধরে নিলো।
আজ শিহাব বেশ কয়েকবার নিশিকে ফোন দিয়েছে। নিশি সময়মতো খেয়েছে কিনা, ঘুমিয়েছে কিনা এসবের খবর নিয়েছে। প্রতিটি কলের সময় নিশির অন্তর ধুকপুক করেছিল। ভয়ে গলার স্বর ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। কেননা সাধারণত শিহাব প্রয়োজন ব্যতীত ফোন করতো না। আজ আটটা বাজতেই শিহাব ঘরে উপস্থিত হলো। তা দেখে নিশি অবাক হলো। সময় ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করতে মোবাইল, দেয়াল ঘড়ি দুটাই দেখলো। সময় তো ঠিকই আছে। তবে আজ শিহাব তাড়াতাড়ি আসলো কেন? নিশি আজ ঘর একেবারে সাজিয়ে গুছিয়েই রেখেছে। তার মনে ভয় কাজ করছে। শিহাব কোনো খুঁত পেলেই হয়তো বড় ঝগড়া বাধিয়ে দিবে। খাবার গরম না পেলে শিহাব রাগারাগি করে। তাই নিশি নয়টার পর রান্না করে। শিহাব সবসময়ই দশটায় ঘরে ফিরে। তবে আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছে। নিশি তাড়াতাড়ি রান্না বসিয়ে দিলো। শিহাব সোফায় বসে আছে। সাধারণ শিহাব কোণার সোফায় বসে। তবে আজ মধ্য সোফায় বসেছে। যেখান থেকে রান্নাঘরে থাকা নিশিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। নিশি যতোবারই তাকিয়েছে শিহাবকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছে। এতে নিশি লজ্জাও পাচ্ছে আবার ভয়ও পাচ্ছে। রান্না শেষে নিশি একটু বিশ্রাম নিতে বেডরুমে গেল। কিছুক্ষণ পর শিহাবও এলো। নিশি বলল, “কিছু লাগবে?” শিহাব কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। ঘনঘন শ্বাস নিলো। তারপর নিশির দিকে এক বান্ডিল কাঁচের চুড়ি দিয়ে বলল, “নীরা বলেছে, তোমার নাকি কাঁচের চুড়ি ভীষণ পছন্দ। তাই আনলাম।” নীরা হলো নিশির ছোট বোন। নিশি কিছুক্ষণ শিহাবের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বলল, “তুমি হঠাৎ এমন করছ কেন?”
- কেমন করছি?
- এই যে এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছ এসবের কারণ কি?
- স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা দেখাবো নাতো কাকে দেখাবো? কেন, তোমার কি এতে আপত্তি আছে?
- ভয় হচ্ছে। এতো ভালোবাসা দেওয়ার পর যদি আবার পাল্টে যাও। তখন তো আমি সহ্য করতে পারবো না। এরচেয়ে বরং আগের আচরণেই আমি অভ্যস্ত আছি।
শিহাব এগিয়ে এসে নিজ হাতে নিশিকে চুড়ি গুলো পরিয়ে দিয়ে বলল, “ইনশাআল্লাহ আমি এমনই থাকবো।” নিশির চোখ ছলছল করতে লাগল। শিহাব বলল, “কেঁদো না। তাহলে কিন্তু আর কিছু আনবো না।” নিশি চোখের জল মুছে শিহাবকে জড়িয়ে ধরলো। শিহাব পরম মমতার সাথে নিশির চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। শিহাব একটা জিনিস বুঝলো যে, মনের অজান্তেই সে এতদিন নিশির সাথে খুবই রুক্ষ ব্যবহার করে এসেছে। তাই তাও নিশি বলল সে আগের আচরণেই অভ্যস্থ আছে। শিহাবের মনে অনুশোচনাবোধ কাজ করলো। যার সাথে সম্পর্ক মধুর রাখা উচিত তার সাথেই সে রুক্ষ সম্পর্ক রেখেছে।
শিহাবের কোলে মাথা রেখে বারান্দায় বসে আছে নিশি। আজ আকাশে চাঁদ নেই। তারাও দেখা যাচ্ছে না। মেঘে ছেয়ে আছে আকাশ। তবুও পরিবেশটা নিশির খুব ভালো লাগছে। যার একমাত্র কারণ শিহাব। স্বামীকে কাছে পেলে প্রতিটি মেয়ের মনেই এই আনন্দ কাজ করে। শিহাবের এই পরিবর্তনে নিশি ভীষণ খুশি। এখন সে মন খুলে শিহাবের সাথে সবকিছু ভাগাভাগি করতে পারে। কোনো জড়তা কাজ করে না। প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে নিশি আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে। এমন স্বামী পাওয়া তো সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
জুমার নামাজ শেষে এসে শিহাব বলল, “চলো, আজ কোথাও ঘুরতে যাই।” অন্য সময় হলে নিশি চুপচাপ কথা মেনে নিতো। কিন্তু এখন সেও মত প্রকাশ করতে পারে। নিশি বলল, “আমরা গত সপ্তাহেও ঘুরে এসেছি। শুধু ঘুরাঘুরি করলেই হবে? বাজেটের দিকে খেয়াল দিতে হবে না?”
- ওসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।
- তুমি আমার সাথে সময় কাটাতে চাচ্ছো, তাই তো?
- তা তো তুমি বুঝোই।
- আগে লান্স করে নাও। তারপর দেখা যাবে।
লান্স শেষে দুজনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলো। তারপর নিশি দুই কাপ কফি ও লুডুর কোর্ট আনলো। বলল, “আজকের বিকালটা এভাবেই কাটিয়ে দিব। ঠিক আছে?” শিহাব হাসি দিলো। অতঃপর দুজনে লুডু খেলা শুরু করলো। কারচুপি, দুষ্টামির মধ্য দিয়ে দুজনের সময়টা বেশ দারুণ ভাবেই কেটে গেল।
শিহাব ইদের ছুটিতে নিশিকে নিয়ে বাড়ি এলো। বাবা মায়ের সাথে বেশ আনন্দেই ইদটা অতিবাহিত করলো। শিহাবের খিটখিটে স্বভাবে পরিবর্তন দেখে তার বাবা-মা খুশি হলো। এই ব্যাপারে নিশিকে তার শ্বাশুড়ী বলল, “তুমি সত্যিই লক্ষি মেয়ে। ছেলেটাকে শুধরে দিয়েছ।” নিশির শ্বশুর বলল, “এজন্যই তো এমন মেয়ে দেখে ছেলেটাকে বিয়ে দিয়েছি। নিশি মা, যে কতটা লক্ষি তা তো আমি জানতামই।” নিশি শুধু সরল হাসি দিলো। সে তো জানেই শিহাবের এই পরিবর্তনের পেছনে তার বিন্দুমাত্র অবদান নেই। তবুও সবার মতো নিশিও খুশি।
ইদের দিন বিকালে নিশিকে নিয়ে শিহাব শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এলো। বাবা-মা ও বোনকে কাছে পেয়ে নিশি ভীষণ খুশি হলো। নিশির মুখে হাসি দেখে তারাও খুশি। নিশির বিয়ের পর এই প্রথম তারা নিশির মুখে হাসি দেখলো। শিহাবের বদমেজাজি স্বভাবের কারণে শুরুতে নিশি তার বাবা-মায়ের ওপর কিছুটা রাগ ছিল। সে সবসময়ই বলতো কেন তারা ছেলের পুরো বৃত্তান্ত না জেনে তাকে বিয়ে দিয়েছে? তবে এসব অভিযোগ এখন আর নেই। তাই তো সে খুশি।
রাতে ডিনারে বসলো সবাই। শিহাব খেতে লাগল। নিশি কিছু তরকারি শিহাবের প্লেটে জোর করেই দিয়ে দিলো। তা দেখে প্রথমে নিশির মা কিছুটা ভয় পেয়েছিল। এই বুঝি শিহাব ধমক দিবে। কিন্তু শিহাব কিছুই বলেনি। বরং না না করেও খাওয়া শুরু করেছে। এই দৃশ্য দেখে নিশির বাবা বেশ খুশি হলো। তবে নিশির বোন নীরা বেশ অবাক হলো। তার চোখে প্রথম দিনের একটা দৃশ্য ভেসে উঠলো। সেদিনও সবাই খেতে বসেছিল। নানান পদের রান্না হয়েছিল। মেয়ের জামাই প্রথমবার এসেছিল বলে কথা। নিশি তার মায়ের ইশারায় শিহাবের প্লেটে ইলিশ মাছের মাথা দিচ্ছিল। শিহাব বাধা দিয়ে বেশ রুক্ষ ভাষা বলেছিল আমার লাগলে নিয়ে নিবো। তোমার দিতে হবে না। সেদিনই সবাই বুঝেছিল শিহাব বেশ রুক্ষ স্বভাবের মানুষ। কিন্তু আজকের শিহাবের সাথে সেদিনের শিহাবের কোনো মিল পেল না নীরা।
ছাদের এসে বাগানের ফুলগুলো দেখছে নিশি। এই বাগান তার তৈরি। তবে তার অনুপস্থিতিতেও নীরা বেশ ভালোই যত্নে রেখেছে। কিছুক্ষণ পর নীরাও ছাদে এলো।
- আপু, তুই কিভাবে দুলাভাইকে হাত করলি। আমাকেও একটু শিখিয়ে দে। কিছুদিন পর তো আমাকেও এই পথে যেতে হবে।
- বাহ! বিয়ে করার খুব শখ হয়েছে বুঝি?
- আগে ছিল না। তবে তোদের দুজনকে দেখে ভীষণ শখ জেগেছে। আমারও তো ইচ্ছে করে কেউ একজন আমাকে কেয়ার করুক, ভালোবাসুক, মূল্য দিক, আদর করুক।
- ইঁচড়েপাকা হয়েছিস কবে থেকে?
- হা হা হা। বল না, কিভাবে দুলাভাইকে হাত করলি।
- আমি কিছুই করিনি। সে নিজ থেকেই এমন হয়েছে।
- ঠিক আছে। না বলতে চাইলে জোর করবো না। তবে কথাটা মনে রাখবো। হুহ!
একটা ভেংচি কেটে রাগ দেখিয়ে নীরা চলে গেল।
কিছুদিন পর তারা আবার শহরে ফিরলো। এক বিকালে শিহাব কিছু ফুল গাছ নিয়ে এলো। তা দেখে নিশি বলল, “এসব কেন?”
- নীরা বলেছে বাগান নাকি তোমার খুব পছন্দ। তোমাদের বাড়ির বাগানটা তোমারই বানানো। এটা তো ভাড়া বাসা। ছাদে বাগান করা যাবে না। তবে বারান্দায় তো কিছু ফুল গাছ লাগানোই যায়। তাই নিয়ে এলাম।
নিশি অপলক দৃষ্টি তাকিয়ে রইলো। এই মানুষটা হঠাৎ করেই যেন তার বুকের মাঝে জমে থাকা সব ভালোবাসা নিশির প্রতি উজাড় করে দিচ্ছে। বিগত দুই বছরেও নিশি যেটুকু ভালোবাসা পায়নি। এই কিছু মাসে তারচেয়ে বহুগুণ পেয়েছে। যেন শিহাব সুদে আসলে সব ভালোবাসা ফেরত দিচ্ছে। নিশি গাছ গুলো বারান্দায় সাজিয়ে রাখলো। তারপর তাতে পানি দিলো। দুই কাপ চা বানালো। শিহাব ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় এলো। নিশি চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। অথচ শিহাব চুপচাপ তাকিয়ে আছে। নিশি মুচকি হাসি দিয়ে বলল, “ওভাবে তাকিয়ে না থেকে চা-টা খেয়ে নাও। নয়তো ঠান্ডা হয়ে যাবে।”
শিহাব কিছু না বলে উঠে চলে গেল। নিশি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর শিহাব একটা বড় কাপ আনলো। তাতে শিহাবের চা ঢাললো। তারপর নিশিরটাও ঢাললো। নিশি বলল, “আরে আরে কি করছো? ওটা আমি খেয়েছি।”
- দুজনে এক কাপে খেলে তোমার কোনো আপত্তি আছে?
নিশি মুচকি হাসি দিলো। শিহাবও পাল্টা হাসি দিলো। তারপর এক কাপেই দুজনে চা পান করতে লাগল। নিশি লক্ষ্য করলো শিহাব কাপের সেই স্থানেই চুমুক দিচ্ছে যেখানে নিশি দিচ্ছে। নিশির মাঝে ভীষণ ভালোলাগা কাজ করতে লাগল। নিজের চারপাশে ভালোবাসা অনুভব করতে লাগল
ঘরের মধ্যে বেশ তোড়জোড় চলছে। কোরবানীর ইদ বলে কথা। নিশি রুটি বানাচ্ছে। শিহাব কোরবানীর মাঠে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। এরমধ্যেই রুটি বানানী শেষ করতে হবে নিশি। কেননা শিহাব মাংস নিয়ে আসার পর ভাগ-বন্টনের কাজও আছে। তারওপর রান্নাবান্নাও। কিছুক্ষণ পর শিহাব চলে এলো। ভাগ-বন্টন সে নিজেই করতে লাগল। নিশিকে রান্না বসিয়ে দিতে বলল। গরুর কলিজা ভুনা ও পায়া শিহাবের খুব প্রিয়। নিশি আপাতত কলিজা ভুনা করলো। আর পায়াও বসিয়ে দিলো। পায়া হতে সময় লাগে। রাতে তারা পায়া খেয়ে বসলো। শিহাব বলল, “আসো আজ এক প্লেটে খাই।” নিশিও স্বাচ্ছন্দ্যে রাজি হলো। দুজনে মিলে এক প্লেটে খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে নিশি রান্নাঘরে গিয়ে ধোয়ার কাজ শেষ করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর এসে দেখলো তার রেখে যাওয়া হাড্ডিটা শিহাব চুষছে। নিশি বলল, “ইয়াক! তুমি এটা কি করছো? ওটা আমি খেয়েছিলাম।”
- তাই তো চুষছি। স্ত্রীর রেখে যাওয়া হাড্ডি চুষতে লজ্জা কিসের?
নিশি কিছু না বলে চলে গেল।
শিহাবের বুকে চুল ছড়িয়ে দিয়ে মাথা রেখে শুয়ে আছে নিশি। শিহাব সেই খোলা চুলে বিলি কাটছে। দুজনের মধ্যে চলছে নীরব ভালোবাসা। কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভেঙে নিশি বলল, “একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে?”
- হুম বলো।
- তোমার এই পরিবর্তনের পেছনে কারণ কি? আমি তো কখনো তোমার রুক্ষ ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ করিনি। তবে হঠাৎ এতো পরিবর্তন হলে কেন?
শিহাব শান্ত ভঙ্গিতে বলতে লাগল, “একদিন মসজিদে এক হুজুরের কাছ থেকে জেনেছি স্ত্রী যে কতবড় নিয়ামত। তুমি কি জানো, আমি তোমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি, তোমার জন্য এক পয়সা ব্যয় করলে, তোমার সাথে একত্রে খেলে, সময় কাটালে, তোমার মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখলে এসব কিছুতেই সওয়াব আর সওয়াব। এবার তুমিই বলো সুযোগ থাকতেও আমি কেন এই সওয়াব গুলো মিস করব?” একটু থেমে শিহাব আরও বলল, “তাছাড়া এসবে সংসারে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। উদাহরণ দেখো। আমার আগের রুক্ষ ব্যবহারের কারণে তুমি দুয়ারের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে যাতে দরজা খুলতে দেরি না হয়। ওটা ছিল ভয়। আর এখনো তুমি দাঁড়িয়ে থাকো। এটা হচ্ছে ভালোবাসার অপেক্ষা। আগে একই ঘরে থেকেও আমরা কেমন যেন পৃথক ছিলাম। কিন্তু এখন এক। এটাই তো সংসারের সুখ-শান্তি।” নিশি বড় বড় চোখে শিহাবের দিকে তাকালো। তারপর বলল, “সওয়াব কি শুধু তুমিই পাও, আমি পাই না?”
- এই যে তুমি আমার জন্য, এই সংসারের যা যা করো সবকিছুতেই সওয়াব পাও। কেননা এটা হালাল।
- তখন হাড্ডির খেতে দেখে তুমি ইয়াক করেছ। তুমি কি জানো, আমাদের নবীজি (সাঃ) তাঁর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) এঁর চোষা হাড্ডি চুষতেন। আয়েশা (রাঃ) মগের যেখানে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতেন নবীজি (সাঃ) ঠিক সেই জায়গাতেই মুখ লাগিয়ে পানি পান করতেন। আর নবীজি (সাঃ) যা করতেন তা করা আমাদের জন্য সুন্নত।
নিশি এবার ব্যাপারটা বুঝলো। বলল, “ঠিক আছে। তবে এসব আবার সবার সামনে করো না।”
- সব ভালোবাসার প্রদর্শন কি সবার সামনে দেওয়া যায়? কিছু ভালোবাসা শুধুমাত্র একান্তে।
নিশি কিছুটা শব্দ করে হাসলো। সত্যিই এই কয়েক মাসে তাদের মধ্যে ভালোবাসা অনেক অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। নিশি বুঝলো, ইসলাম মেনে চললে কোথাও অশান্তি থাকে না। ইসলামের প্রতিটি পদক্ষেপে আছে শান্তি। মেনে চললেই তার ফল পাওয়া যাবে। আজ নয়তো কাল।
সমাপ্ত।
©somewhere in net ltd.