![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্পের নামঃ প্রথম সাক্ষাৎ
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।
আসাদ মনের আনন্দে বাসার দিকে হেঁটে যাচ্ছে। আজ সে তার প্রথম উপার্জন হাতে পেয়েছে। সে একটা কোচিং সেন্টারে পড়ায়। সেখান থেকে গত মাসের সম্মানী পেয়েছে। এখন সে নূরীকে বলতে পারবে, “চলো ঘুরতে যাই।” আসাদের মনে আছে, প্রথম যেদিন সে নূরীকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেছিল সেদিন নূরী বলেছিল, “আপনি যেদিন নিজের টাকায় আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে পারবেন। সেদিন যাবো।” আসাদ সেদিন কিছু বলতে পারেনি। কারণ তখন সে অনার্স পড়ুয়া এক বেকার যুবক ছিল। উপার্জনের কোনো চিন্তা তার মাথাতেও ছিল না। অথচ তার মতো মেধাবী ছাত্ররা নিজের পকেট খরচটা টিউশনি করিয়ে চালায়। সেখানে আসাদ প্রতিদিনের হাত খরচটা তার বাবার কাছ থেকে নিতো। সেদিন নূরীর কথা আসাদের আত্মসম্মানবোধে এসে আঘাত করে। তারপরই উপার্জনের পথ খুঁজতে শুরু করে।
নূরী হলো আসাদের স্ত্রী। তাদের বিয়েটা পারিবারিকভাবেই হয়েছে। তাদের বাবারা পরস্পরের বন্ধু। একদিন নূরীকে দেখে আসাদের বাবার ভীষণ পছন্দ হয়ে যায়। পুত্রবধূ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। এই ব্যাপারে নূরীর বাবার সাথে আলাপ করলে তিনি জানান মেয়ে এখনো পড়ছে। তাছাড়া আসাদও তো পড়ছে। জবাবে আসাদের বাবা জানান শুধুমাত্র বিয়ে দিয়ে দুজনকে এক সুতোয় আটকে রাখবো। যাতে অন্য কোথাও পা না বাড়ায়। বিয়ের পরও পড়ালেখা চালিয়ে যাবে। পড়াশোনা শেষ হলে তখন সংসার গুছিয়ে দেওয়া হবে। ততদিন পরিবারের সাথেই থাকবে। অনেক চিন্তাভাবনার পর নূরীর বাবা এই প্রস্তাবে রাজি হন। এছাড়াও তিনি আসাদকে ছোট থেকেই চিনেন। ছেলে হিসেবে সে খুবই ভালো। অতঃপর পারিবারিকভাবে আয়োজন করে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। যদিও পাত্রপাত্রী দুজনেরই আপত্তি ছিল এই বিয়েতে। তাই বিয়ের পরও তারা নিজেদের মধ্যে খুব একটা যোগাযোগ রাখেনি। তবে সময়ের সাথে তারা একে অপরকে পছন্দ করা শুরু করেছে।
নূরীদের ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আসাদ। কলিংবেল বাজাতে দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই প্রথম সে নূরীদের বাসায় একা এসেছে। এর আগে বেশ কয়েকবার এসেছে তবে বাবা কিংবা মায়ের সাথে। আসাদ কিছুক্ষণ আগে নূরীকে ফোন করে বলেছিল, “আমি প্রথম বেতন পেয়েছি। এখন তো ঘুরতে যেতে পারি‚ তাই না?”
- আপনাকে এসে আমার বাবার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
এই কারণেই আসাদ এখানে এসেছে। কিন্তু সামনে এগোতে পারছে না। মনের মধ্যে এক ধরণের সংকোচ কাজ করছে। হঠাৎ পেছন থেকে নূরীর বাবার গলার স্বর পেয়ে আসাদ চমকে উঠলো।
- আরে আসাদ বাবা যে, কখন এলে?
- এই তো আংকেল‚ এইমাত্র।
- আহা! কতবার বলেছি, আংকেল না, বাবা কিংবা শ্বশুর বলবে। এখন তো তুমি আমারও ছেলে।
আসাদ মাথা দুলালো। দরজা খুলে নূরীর মা আসাদকে দেখে খুশিতে যেন আত্মহারা হয়ে গেলেন। তাকে সাদরে ভেতরে আনলেন। তার জন্য শরবত বানিয়ে আনলেন। নূরী আড়াল থেকে এক নজর আসাদকে দেখে আবার নিজ রুমে চলে গেল। আসাদকে দেখলেই কেন যেন তার মনের মধ্যে এক ধরণের অস্থিরতা কাজ শুরু করে। হৃদপিণ্ড অগণিত গতিতে ছুটাছুটি শুরু করে। এসবের কারণ কি তা নূরী জানে না। তবে মনের এই অনুভূতি গুলো তার বেশ ভালোই লাগে।
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর অবশেষে আসাদ মনের কথা বলেই ফেলল।
- বাবা, যদি আপনি অনুমতি দিতেন তবে আমি কাল নূরীকে নিয়ে একটু ঘুরতে যেতে চাই।
আসাদের এই কথা শুনে নূরীর বাবা-মা একে অপরের দিকে তাকালেন। তারপর নূরীর বাবা হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললেন, “হ্যাঁ, হ্যাঁ অবশ্যই নিয়ে যেতে পারো।” অতঃপর সামান্য নাস্তা-পানি করে আসাদ হাসিমুখে বেরিয়ে পড়লো। সে বাসায় চলে এলো। প্রথম উপার্জন দিয়ে সে তার বাবার জন্য একটা পাঞ্জাবি আর মায়ের জন্য শাড়ি এনেছে। নূরীকেও একটা শাড়ি দিয়ে এসেছে।
নূরী সাজগোজ করতে ব্যস্ত। তার মা তাকে সাহায্য করছেন। আসাদের দেওয়া শাড়িটা পরেছে নূরী। তার মা তাকে সুন্দর করে গুছিয়ে দিচ্ছেন। সেই সাথে নানারকম উপদেশও দিচ্ছেন। জামাইয়ের সাথে এই প্রথম ঘুরতে যাচ্ছিস। বেশি কথা বলবি না যাতে বাচাল ভাবে। আবার মুখ গোমরা করেও থাকবি না। মুখে হাসি হাসি ভাব রাখবি এতে জামাইয়ের মন ভালো থাকবে। এমন নানারকম উপদেশ দিচ্ছেন নূরীর মা। আর নূরী শুধু হু হা করে যাচ্ছে।
এদিকে আসাদ তার আলমারিতে থাকা সবচেয়ে ভালো পাঞ্জাবিটা পরেছে। হাতে ঘড়ি পরেছে। শরীরে সুগন্ধি সেন্ট দিয়েছে। বের হওয়ার সময় আসাদের বাবা ঠাট্টা করে বললেন, “আজকের আসাদকে তো চিনাই যাচ্ছে না। এত পরিপাটি আসাদকে তো আমি কখনো দেখিনি।” এই কথা বলে তিনি হাসতে লাগলেন। আসাদ লজ্জা পেল। তার মা স্বামীকে ধমক দিয়ে বললেন, “চুপ করো তো। ছেলেটা প্রথম বউমার সাথে ঘুরতে যাচ্ছে। একটু পরিপাটি হয়ে না গেলে চলে? যা বাবা, সাবধানে যা।” আসাদ যেতে লাগল। তার বাবা তাকে কিছু টাকা দিলেন। কিন্তু আসাদ নিলো না। বলল‚ “বেতনের টাকা দিয়েই হয়ে যাবে।” তিনিও জোরাজুরি করলেন না। ছেলের এই মনোভাবে তিনি খুশি। যথাসময়ে নূরীর বাসায় চলে এলো আসাদ। তারপর হালকা নাস্তা করে নূরীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। তারপর একটা রিকশায় উঠলো। মিনিট বিশেকের পথ। রিকশা চলছে তার চালকের গতিতে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে দুজনেই চুপ করে আছে। আসাদ বুঝে উঠতে পারছে না কিভাবে কথা শুরু করবে। আর নূরী লজ্জায় মুখ খুলতে পারছে না। তাদের বিয়ের বয়স সাত মাস হলেও দুজনে আজকের আগ পর্যন্ত একাকী সময় কাটায়নি। এছাড়াও তারা পূর্ব পরিচিত ছিল না। হুট করেই যেন দুটি পাখিকে দুই বন থেকে এক খাঁচায় আবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই দুজনের মাঝেই এক প্রকার জড়তা কাজ করছে। এই জড়তা প্রকৃত ভালোবাসার।
নদীর ধারে কাশফুলের বাগান। এর পাশে সরু পাকা রাস্তা। এখানে মানুষজন হাঁটাহাঁটি করে কিংবা একপাশে বসে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে সময় কাটায়। নদীর পাড়ে বসে হিমেল বাতাস উপভোগ করে। এখানে আসা অধিকাংশরাই যুগল হয়। তেমনই এক যুগল আজ আসাদ-নূরী। তারা একপাশে বসে আছে। বের হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তারা কথা বলেনি। আসাদ বুঝলো এই নীরবতা তাকেই ভাঙতে হবে। তাই নীরবতা কাটাতে আসাদ বলল‚ “পরিবেশটা পছন্দ হয়নি?” নূরী মাথা দুলালো। তবে বুঝার উপায় নেই হ্যাঁ বলল নাকি না। আসাদ বলল, “ও আচ্ছা পছন্দ হয়নি। তো কোথায় যাবেন বলুন।”
- না না এখানেই ঠিক আছি।
- তাহলে বুঝি আমাকে পছন্দ হয়নি।
- আমি তো তা বলিনি।
- আপনার নীরবতা আমাকে সেটাই বুঝাচ্ছে।
- জ্বি না। আপনি ভুল বুঝছেন। আসলে আমি কথা কম বলি।
- প্রিয় মানুষদের সাথে সবাই মন খুলে কথা বলে। আমি হয়তো আপনার প্রিয় হতে পারিনি।
নূরী কোনো জবাব দিলো না। আসাদ মাথা নিচু করে নিলো। কিছুক্ষণ পর নূরী নিঃশব্দে আসাদের হাতে হাত রাখলো। এতে আসাদের মনে আনন্দের স্রোত বইয়ে গেল। সে নূরীর হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো।
সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল। আসাদের হাত ধরে নূরী হেঁটেই যাচ্ছে। দুজনের মুখে এখন কথার ফুলছড়ি। তাদের মধ্যকার জড়তা কেটে গেছে। এখন সেখানে ভালোবাসা স্থান নিয়েছে। নূরী তার দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন গল্প বলে যাচ্ছে। আসাদও টুকিটাকি তার কথা বলছে। হঠাৎ তাদের সামনে ইন্সপেক্টর জয়নাল উপস্থিত হলেন। তিনি এই শহর থেকে প্রেম-ভালোবাসার নামে যে কলংক চলছে তা দূর করার জনে উঠেপড়ে লেগেছেন। দিনের আলোতে এই জায়গাটা যতটা সুন্দর‚ রাতের অন্ধকারে ঠিক ততোটাই বিশ্রী। গত সপ্তাহ তিনি এই জায়গা থেকে বেশ কিছু যুবক-যুবতীকে নোংরামি করতে হাতেনাতে ধরেছেন। তারপর থানায় নিয়ে তাদের অভিভাবকদের ডেকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। আজও একই কাজ করলেন। আসাদ-নূরী সহ আরও বেশ কিছু যুবক-যুবতীকে ধরে থানায় নিয়ে এসেছেন।
নূরী ভয়ে কুকড়ে আছে। তার চেহারা ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে আছে। এই বুঝি কেঁদে দিবে। জীবনে কখনোই সে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি। ধরে আনা সব যুগলকে ক্রমানুসারে নিজ কক্ষে ডাকছেন ইন্সপেক্টর জয়নাল। অবশেষে আসাদ-নূরীর ডাক পড়লো। জয়নলা বললেন, “এই ছেলে কিসে পড়ো?” আসাদ আমতা আমতা করে জবাব দিলো, “মাস্টার্সে।” এবার জয়নাল নূরীকে বললেন, “আর তুমি?” ভয়ে নূরীর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। তা দেখে আসাদ বলল, “ও এবার এইচএসসি দিয়েছে।”
- তোমাকে তো জিজ্ঞেস করিনি।
- আসলে স্যার, ও একটু ঘাবড়ে আছে তাই আমিই বললাম।
- তারমানে তোমার মাঝে কোনো ভয়ভীতি নেই।
- আসলে স্যার ………
- হয়েছে হয়েছে। আর কীর্তিকলাপ শুনাতে হবে না। তোমাদের বাবা-মাকে ডাকো।
- কিন্তু কেন স্যার?
- লজ্জা করে না? একেতো তোমরা সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করছ। যেখানে সেখানে কুকর্ম করছ। তারওপর আবার বলছ কেন?
- আপনি ভুল বুঝছেন স্যার। আমরা স্বামী-স্ত্রী।
- তাই বুঝি খোকা?
- জ্বি স্যার।
- তো বাবা-মাকে ডাকতে কিসের আপত্তি?
- আসলে স্যার, বাবা-মাকে থানা ডাকলে ব্যাপারটা ভালো দেখাবে না। এতে ওর বাবা-মা আমাকে ছোট ভাববে।
- চুপ বেটা। তাড়াতাড়ি অভিভাবক ডাক। নয়তো আজ জেলের ভাত খাবি।
এবার নূরী কেঁদে দিলো। আসাদও ভয়ে আঁতকে উঠলো। কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। কনস্টেবলকে ঘুষের ইঙ্গিত দিয়ে আসাদ ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে চাইলো। কিন্তু তাও হলো না। কনস্টেবল জানালো এই ইন্সপেক্টরের জন্য তাদের ঘুষ বন্ধ। অতঃপর উপায় না পেয়ে আসাদ তার বাবাকে সব জানালো।
আসাদের বাবা ও চাচা থানায় এলেন। তাদের কাছ থেকে আসাদ-নূরীর বিয়ের প্রমাণ পাওয়ার পর জয়নাল বেশ অবাক হলেন। বললেন, “আপনাদের কপাল ভালো মেয়ের বয়স আঠার। নয়তো আজ বাপ-বেটা দুটাকেই একত্রে জেলের ভাত খাওয়াতাম। তাড়াতাড়ি ছেলে ও বউকে নিয়ে বিদান হোন। আর ওদেরকে বলে দিবেন ভবিষ্যতে ঘুরতে বের হলে যেন সন্ধ্যার আগে ঘরে ফিরে যায়।” অতঃপর তারা থানা থেকে বেরিয়ে এলেন। আসাদের বাবা হাসতে লাগলেন। তা দেখে তার ভাই হাসির কারণ জানতে চাইলেন। জবাবে আসাদের বাবা বললেন, “এই প্রথম বৌমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো আমার ছেলেটা। আর ইতিহাস বানিয়ে ফেলল। সবাই বিদায় নেয় পার্ক থেকে আর ও বিদায় নিচ্ছে থানা থেকে। হা হা হা।” আসাদের ভীষণ রাগ উঠলো। তবে কিছু বলল না। কিছুদূর সামনে আসার পর আসাদের বাবা বললেন‚ “যা বৌমাকে বাসায় দিয়ে আয়। পারবি তো দিয়ে আসতে নাকি আবার আমাকে থানায় আসতে হবে। হা হা হা।” আসাদ কোনো জবাব না দিয়ে নূরীর হাত ধরে তাকে নিয়ে রাস্তা পারাপার করে রিকশায় উঠলো। কিছুদূর যাওয়ার পর নূরী বলল, “বাবার সামনে আপনি আমাকে ওভাবে টেনে নিয়ে এলেন কেন?”
- দেখলে না বাবা কি সব বলছিল।
- ঠিকই তো বলেছে।
- তুমিও?
- জ্বি আমিও। আমাদের উচিত ছিল সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসা।
- আমি তো তোমার সাথে আরেকটু……
- কি আরেকটু?
- কিছু না।
নূরী তার ঠোঁট বাকিয়ে নিঃশব্দে হাসলো। আসাদের অসম্পূর্ণ কথা সে সম্পূর্ণই বুঝেছে। কেননা মনে মনে সেও এটা চাচ্ছিলো। তাই তো ঘর ফেরার নাম সে নিজেও নেয়নি।
রিকশা নূরীর বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো। আসাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তারপর নূরীকে বলল, “এসে পড়েছি। নামো।” কিছুক্ষণ চুপ থেকে নূরী বলল, “সামনে এক মামা ফুসকা বানায়। খুব মজা। আপনি খাবেন?” আসাদ রাজি হয়ে গেল। এতে নূরীর সাথে আরও কিছুক্ষণ সময় কাটাতে পারবে। দুজনে একত্রে ফুসকা খেতে লাগল। বেশ সময় নিয়েই তারা ফুসকা খেল। এই সময়টা জুড়ে তাদের মাঝে খুব একটা কথা হয়নি। কেননা আশেপাশে মানুষজনের বেশ ভীড়। তবে একে অপরের চোখে বেশ কিছুক্ষণ ডুবে ছিল যেন চোখে চোখে মনের ভাষা আদানপ্রদান করছে। খাওয়া শেষে তারা নূরীর বাসার দিকে হাঁটতে লাগল। খুবই ধীরগতিতে। কিছুক্ষণ পর নূরী বলল, “আপনি এমন চুপচাপ-ই থাকেন নাকি আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয় না?”
- না না তা নয়। তোমার সাথে কথার বলার জন্যই তো এসেছি।
- হা হা। তাই বুঝি? তো চুপচাপ কেন?
- আসলে ওই ব্যাপারটার পর কিছু বলার মতো পাচ্ছি না।
- ওসব ভুলে যান। ওটা নোংরা আধুনিকতার ফল। যাইহোক ফুসকা কেমন হয়েছে?
- ভালোই।
- আমি কিন্তু খুব ভালো বিরিয়ানি রাঁধতে পারি।
- টেস্ট না করালে কিভাবে বুঝবো?
- এইতো মুখে খই ফুটেছে।
নূরী হাসি দিয়ে কথাটা বলল। আসাদও মুচকি হাসি দিলো। নূরী বলল, “তো আমার হাতের বিরিয়ানি যদি টেস্ট করতে চান তবে যত দ্রুত সম্ভব চাকরি জোগাড় করুন।”
- তোমার বিরিয়ানি বুঝি খুব দামী?
- জ্বি হ্যাঁ।
- আশাকরি দুয়েক বছরের মধ্যেই তোমার হাতের বিরিয়ানি খেতে পারবো।
- এসে পড়েছি।
আসাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “হুম্ম। বিদায়ের ক্ষণ এসে পড়েছে।”
- আজ তাহলে আসি।
- সামনের শুক্রবার আবার বের হবো ঠিক আছে?
- জ্বি না।
- তবে কবে?
- মাসখানেক পর।
- তা হবে না। আমার বউকে নিয়ে আমি যখন খুশি তখন বের হব।
- বাহ! এতক্ষণ মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছিল না। আর এখন অধিকারও দেখাচ্ছেন?
“কেন, অধিকার দেখানোর অধিকার কি আমার নেই?” এই কথা বলে আসাদ দুয়েক কদম সামনে এলো। নূরী একটু পিছিয়ে গিয়ে বলল, “এই খবরদার! এটা পাবলিক প্লেস।” আসাদ হাসি দিলো। নূরীও পাল্টা হাসি দিয়ে চলে গেল। আসাদ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর হাঁটা দিলো নিজ গন্তব্যে। আর ভাবতে লাগলো চাকরি নামক এই সোনার হরিণ কবে সে হাতে পাবে? আর কবে নূরীর হাতের বিরিয়ানি খেতে পারবে?
সমাপ্ত।
©somewhere in net ltd.