নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিখতে জানতে ও ছড়িয়ে যেতে চাই।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী

আমি বাপ্পী। জন্মস্থান বরিশাল। বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নামঃ আমি নূরী ও আমার ফেসবুক।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:২০

গল্পের নামঃ আমি, নূরী ও আমার ফেসবুক।
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।

রুমে ঢুকে খুব সতর্কতার সাথে বারান্দায় চলে এলাম। আশাকরি নূরী আমাকে লক্ষ্য করেনি। কেননা এই সময়ে একটা মেয়ের দৃষ্টি নিচুই থাকে। তার দৃষ্টি না উঠিয়ে দেওয়া পর্যন্ত সে দৃষ্টি উঠায় না। লজ্জা ও নার্ভাস কাজ করে। এটা খুবই স্বাভাবিক। অচেনা অজানা পরিবেশে হঠাৎ এলে নার্ভাসনেস কাজ করে। নতুন বধূ বলে কথা। আমি বারান্দায় এসে চুপ করে চেয়ারে বসে পড়লাম। অবশেষে না চাইতেও বিয়েটা করতে হলো। শুধুমাত্র মায়ের আকুতিতে রাজি হয়েছি। সেদিন যখন বাবা বলেছিলেন, “আমার এই বয়স নাতি-নাতনী নিয়ে দৌড়ানোর বয়স। অথচ আমি তোর বিয়ের জন্য দৌড়াচ্ছি।” সেদিন আমি জমে থাকা রাগ ও ক্ষোভ নিয়ে বলেছিলাম, “প্রয়োজনের সময়েই যখন বিয়ে দাওনি। তো এখন আর নাতি-নাতনী দেখতে হবে না।” বাবা কিছু বলতে চাইছিলেন। কিন্তু আমি সুযোগ না দিয়েই চলে এসেছিলাম। রাতে মা এসে যখন মিনতির সুরে বিয়ের কথা বলেছিলেন তখন আর না করতে পারিনি। ফলে আজ বিয়েটা করেই ফেললাম। নূরী হলো আমার বিবাহিত স্ত্রী।

বয়সটা তখন আমার পঁচিশ। তখন আমি ছুটছিলাম ক্যারিয়ারের পেছনে। অর্থ-সম্পদ, ব্যাংক ব্যালেন্সের এমন নেশা ধরেছে যে বিয়ের কথা মাথাতেই আসেনি। এসবের পেছনেই কাটিয়ে দিয়েছি দশটা বছর। আজ আমি পঁয়ত্রিশের কোঠায়। তবুও বিয়ের জন্য ভাবিনি। তবে মায়ের জন্য বিয়েটা করতে হয়েছে। কিছুদিন আগে মা অসুস্থ হয়েছিলেন। চেকআপের পর ডাক্তার বলেছিলেন মাকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে। আমরা সেটাই করেছি। ঘরে কাজের বুয়া রেখেছি। কিন্তু তাতেও মানুষের স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি হয়নি। ডাক্তার জানালেন সেবা-যত্নের প্রয়োজন। তখন সবাই আমাকে বিয়ে করতে বললেন। অবশেষে অনেক চিন্তাভাবনা করে বিয়ের জন্য রাজি হই। ব্যস এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ে সম্পূর্ণ। একবার মনে হয়েছিল এসবই কোনো পরিকল্পনা নয় তো?
নূরী ও আমার বয়সের ব্যবধান কমপক্ষে দশ বছর হবে। ও মাস্টার্স পাস করেছে। দেখতে শুনতে ভালো ও বুঝদার। ঘরের বড় বউ হিসেবে পারফেক্ট। ওহ! বলাই হয়নি আমার এক ভাই ও এক বোন আছে। আমিই সবার বড়।

নূরীর ডাকে আমার চিন্তাভাবনায় ছেদ পড়ল।
“তোমার কমনসেন্স নাই? রুমে নতুন বউ রেখে তুমি এখানে হাওয়ার সাথে রোমান্স করছ।” নূরীর এমন ব্যবহার দেখে আমি থতমত খেয়ে গেলাম। মনেই হলো না সে এই ঘরের নতুন বউ। আমি এক নজর তার দিকে তাকালাম। চাঁদের আবছা আলোতে নূরীর রূপ যেন চাঁদকেও হার মানাচ্ছে। ভালোবাসার ভয়ে আমি বেশিক্ষণ তাকালাম না। উঠে রুমে চলে এলাম। পিছু পিছু নূরীও এলো। আমি শুয়ে পড়লাম।
“তোমার ফেসবুক আইডি দাও তো। রিলেশন স্ট্যাটাস চেঞ্জ করব।”
আমি একটু বিরক্ত নিয়ে বললাম,"আসাদুর রহমান।"
নূরী আতকে উঠে বলল, “কি! দুদিন আগে এই নামের একজন আমাকে বাজে মেসেজ দিয়েছিল।” আমি এবার ধপাস হয়ে উঠে বসলাম। মেয়েদের মেসেজ দেওয়া তো দূর রিকুয়েস্টও পাঠানোর সময় পাই না। লিস্টে যে কয়জন আছে তারা সবাই পরিবারের সদস্য।
“দেখি, মোবাইলের লক খুলো। যদি আইডিটা তোমার হয় তবে এক্ষুণি আব্বু-আম্মুকে ডেকে বিচার দিব।”
আমি লক খুলে দিয়ে চুপ করে রইলাম। নূরীর মুখে দুষ্ট হাসি দেখতে পাচ্ছি। কেন জানি হাসিটা ভালো লাগছে। কিন্তু আমি দৃষ্টি সরিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর নূরী বলল, “যাক, অবশেষে আমার রিলেশন স্ট্যাটাসটা চেইঞ্জ হলো। বন্ধুবান্ধব সবার রিলেশন স্ট্যাটাস্ব অভিনন্দন, শুভ কামনা লিখতে লিখতে আমি বিরক্ত হয়ে উঠেছিলাম। এবার ওরা আমারটাতে লিখুক।”
আমি কাঁথা মুড়া দিতে লাগলাম। তখনই নূরীর চিত্‍কারে লাফিয়ে উঠলাম।
- কি হলো?
- এই দেখ, দেখ, চাঁদটা কত সুন্দর, তাই না?
জানালা দিয়ে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। আমি বললাম, “তাই বলে চিল্লাতে হবে?”
- তো কি করব? তুমি ঘুমাচ্ছ কেন?
- রাতে মানুষ ঘুমায়। আর আমিও মানুষ।
- কিন্তু আজ আমাদের মধুচন্দ্রিমা।
- মানে?
এবার নূরী মাথা নিচু করে লাজুক কণ্ঠে বলল, “বাসররাত।”
আমি নড়েচড়ে বসলাম। কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। তারপর আবারও ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়লাম। নূরী আবারও ডেকে তুলল। বলল, “খুব তো বলতে সব ভালোবাসা স্ত্রীকে উজাড় করে দিবে। তবে এখন ঘুমানোর জন্য বেকুল হয়ে গেছ কেন?” আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, “আমি তোমাকে এসব কবে বললাম?”
নূরী আমার মোবাইলের স্ক্রিনটা আমার দিকে ফেরালো। যেখানে আমার দেওয়া এক যুগ আগের একটি স্ট্যাটাস ভেসে আছে। স্ট্যাটাসটা, “ভালোবাসা সব জমিয়ে রাখছি। জীবনসঙ্গীনীকে পেলেই সব উজাড় করে দিব।” পোস্টটি দেখে আমি বললাম, “ফেসবুকে মানুষ এমন অনেক কিছুই দেয়।”
- তাহলে এটা কি মেয়ে পটানোর জন্য দিয়েছিলে?
- না। এমনিই দিয়েছিলাম।
- এই পোস্টটিও কি এমনিই দিয়েছিলেন?
আমি আবার মোবাইলের দিকে তাকালাম।
“উপরে কালো আকাশ, তারমাঝে উজ্জ্বল চাঁদ, আশপাশ নির্জন, পাশে প্রিয় মানুষ। এসব মিলিয়ে তৈরি হয় একটি সুন্দর মুহূর্ত।”
- এসব দেখিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছো?
- বারান্দায় চলো। ওখানের পরিবেশটা এমনই।
- দেখো এসব অনেক আগের কথা। তখন উঠতি বয়স ছিল। তাই এসব পোস্ট দিতাম। বাস্তবতা ভিন্ন।
কিছুক্ষণ পর নূরী আবারও আরেকটি স্ট্যাটাস দেখালো। যেখানে লিখেছি, “দেহের বয়স বাড়ে, মনের বয়স নয়।”
“ধুর! যতসব ঝামেলা। চলো বারান্দায়।” এই কথা বলে উঠে বারান্দায় এলাম। নূরীও সঙ্গে এলো। দুজনে মিলে বসে আছি। এই মেয়ে যে আমাকে হাত করার চেষ্টা করছে তা আমি বুঝতে পেরেছি। যেভাবেই হোক এই মেয়ের হাতে আসা যাবে না।

কিছুক্ষণ বারান্দায় বসে আমি বললাম, “এবার তাহলে ঘুমাতে চলো?”
- হুম চলো।
যাক বাঁচলাম। কেননা আমার চোখ দুটো বারবার মনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নূরীর দিকে যাচ্ছিল। চাঁদের আলোতে নূরীকে আরও ভয়ানক সুন্দরী দেখাচ্ছিল। রুমে এসেই আমি শুয়ে পড়লাম। ওমনি নূরী আবার ডাক দিলো। আমি আবারও উঠে বসলাম।
- এবার কি হয়েছে?
আবারও নূরী আমাকে মোবাইলের স্ক্রিন দেখালো। এবারের পোস্ট দেখে আমার ইচ্ছে করছে নিজের গালে নিজেই কষে চড় মারি। এমন পোস্টও আমি দিতাম? পোস্টটি, “প্রিয় ফিউচার বউ যা ঘুমানোর এখনই ঘুমিয়ে নাও। বিয়ের পর কিন্তু আমি ঘুমাতে দিব না। কারণ আমি যে নিশাচর।”
নূরী বলল, “আপনি না নিশাচর?”
- ধুর! ওসব ভুয়া। এডিট করা যায়।
- কোনো এডিট না। আর এটা কি?
এবারের পোস্ট দেখে আমিই ভীষণ লজ্জা পেলাম। পোস্ট, “ভাবতেছি, বিয়ের পর একটা ফুটবল টিম বানাবো। তারপর চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতবো। আমি হবো কোচ আর বউ হবে সহকারী কোচ।” আমি জ্ঞান হারানোর ভান করে মাথায় হাত ধপাস করে শুয়ে পড়লাম। এই জ্ঞান রেখে আর লাভ নেই। অতীতে আমি এত আবেগী ছিলাম? হায়রে ফেসবুক তুই আমারে শেষ করলি। টিপটিপ চোখে দেখলাম নূরীও জ্ঞান হারানোর ভান করে আমার বুকের ওপর ধপাস করে শুয়ে পড়লো। এতে আমি কিছুটা বৃথা পেয়েছি। তবুও চুপ করে রইলাম। তবে নূরীকে বুকে পেয়ে ভালোই লাগছে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম এই জ্ঞান আর ফিরাবো না।

সমাপ্ত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.