নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিখতে জানতে ও ছড়িয়ে যেতে চাই।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী

আমি বাপ্পী। জন্মস্থান বরিশাল। বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নামঃ কাল্পনিক অনুভূতি।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৫৬

গল্পের নামঃ কাল্পনিক অনুভূতি।
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।

দীর্ঘদিন পর; তবে কতদিন তা আমি জানি না। আমার ওখানে সময় বলতে কিছু ছিল না। তাই সময়ের কোনো হিসাব আমার নেই। যাইহোক অবশেষে আমি একত্রিত হলাম। এই অজানা সময়টা জুড়ে আমি দুই ভাবে বিভক্ত ছিলাম। আমার একভাগ ছিল বাবার পৃষ্ঠ দেশে। আরেক ভাগ ছিল মায়ের বক্ষপিঞ্জরে। অবশেষে আমি পরিপূর্ণ ভাবে একত্রিত হয়ে মায়ের কাছে এলাম। তাই আজ আমি অত্যন্ত খুশি। তবে আমি এই খুশি প্রকাশ করেছি কিছুদিন পর। মাকে জানিয়ে দিয়েছি যে, মা আমি তোমার কাছে এসেছি। খুব শীঘ্রই তুমি আমাকে স্পর্শ করতে পারবে। আমার অস্তিত্ব অনুভব করার পর মা কেমন যেন উদাস হয়ে গেল। তাকে বেশ চিন্তিত মনে হলো। কিন্তু কিসের চিন্তা তা আমি বুঝতে পারলাম না। তবে ঘন্টাখানেক পরেই আমি বুঝলাম, আমার আগমনে মা খুশি হয়নি। এই মুহূর্তে সে আমাকে চায় না। এতে আমি ভীষণ রাগ করলাম। এটা কেমন কথা? আমার আগমন তো সবার মাঝে আনন্দ বয়ে আনে তবে মা অখুশি কেন? আমি রাগ করে বসে রইলাম। বাবার অপেক্ষা করতে লাগলাম। ভাবলাম বাবা জানতে পারলে খুশি হবে। এবং মাকে বকবে। রাতে বাবা এলো। মা আমার ব্যাপারটা বাবাকে জানালো। আমি ভেবেছিলাম বাবা খুশি হবে। কিন্তু বাবাও মায়ের মতো অখুশি হয়ে গেল। সাবধানতা নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হতে লাগল। বাবা মাকে দোষারোপ করতে লাগল। তোমার সাবধান থাকা উচিত ছিল। মা বাবাকে দোষারোপ করতে লাগল। তোমার হুঁশ ছিল না কেন? অতঃপর তারা এক ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিলো। আমাকে খুন করার সিদ্ধান্ত। শুনেছি পৃথিবীতে নাকি সকল অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়। তবে এই অপরাধের কোনো শাস্তি নেই। কি অদ্ভুত এই দুনিয়ার নিয়ম!

সকাল সকাল বাবা ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে এসেছে। আমাকে খুন করার ওষুধ। মাও সাথেসাথে খেয়ে নিলো। আমি তাদেরকে শেষবারের মতো দেখে নিচ্ছি। এই আমার বাবা-মা; যাদের সাথে দেখা করার জন্য আমি হাজার কোটি শুক্রাণুকে পিছনে ফেলে এখানে এসেছি। মায়ের কাছে আসার জন্য আমাকে কতটা যুদ্ধ করতে হয়েছে তা কেবলমাত্র আমিই জানি। কিন্তু এত কিছু করে কি লাভ হলো? একরাশ দুঃখ নিয়ে নিস্তেজ হয়ে গেলাম। আমার দিকে ভয়ানক কিছু একটা এগিয়ে আসছে। যা আমাকে নিঃশেষ করে দিবে। তার থেকেও কষ্টের বিষয় আমার বাবা-মাই এটাকে পাঠিয়েছে। অনেকটাই কন্ট্রাক্ট কিলারের মতো। হঠাৎ আমার ছোট্ট মস্তিষ্ক আমাকে বলতে লাগল, কোটি শুক্রাণুকে পিছনে ফেলে এখানে এসেছিস কি হাতে হাত রেখে মরতে? আর যদি মরিস তবে এভাবে কেন মরবি? লড়াই করেই এখানে এসেছিস। লড়াই করেই এখান থেকে বিদায় হবি। অতঃপর আমি উঠে বসলাম। ভয়ানক এই জিনিসটার সাথে লড়তে লাগলাম। অনেকক্ষণ লড়াই করার পর আমি জিতলাম। এদিকে হঠাৎ মা গলগল করে বমি করলো। এতে তার শরীর ক্লান্ত হয়ে গেল। তাই ঘুমিয়ে পড়লো।

আমি বেঁচে আছি। এই খবরটা আমার বাবা-মা কেউই জানে না। তারা ভেবেছে তাদের কন্ট্রাক্ট কিলার আমাকে শেষ করে দিয়েছে। অথচ আমার নিঃশ্বাস এখনো চলছে। আমার উপস্থিতি মা বুঝতে পারছে না। কেননা আমি চুপচাপ বসে আছি। কোনো সাড়াশব্দ করছি না। কারণ বাবা-মায়ের প্রতি আমার ভীষণ রাগ জমে আছে। সময় যতো যেতে লাগল আমার আকার ততোই প্রকাশিত হতে লাগল। না চাইতেও আমার অস্তিত্ব মা আবার বুঝে গেল। সেদিন বাবার সাথে মায়ের ভীষণ ঝগড়া হলো। বাবার মতে মা ইচ্ছে করেই আমাকে দুনিয়াতে আনতে চাচ্ছে। তাই সেদিন ওষুধ খায়নি। মা এই কথাটা অস্বীকার করছে। স্পষ্ট বলেছে এই মুহূর্তে সেও আমাকে চায় না। অতঃপর তারা ডাক্তারের শরণাপন্ন হলো। আমাকে খুন করার জন্য দুজনেই উঠেপড়ে লেগেছে। গতবার তো আমি লড়াই করে বেঁচে গেছি। কিন্তু এবার কি করব বুঝতেছি না। এতসব আধুনিক জিনিসপত্রের সামনে আমি কিভাবে জিতবো?
ডাক্তারটা খুব ভালো। প্রাথমিক অবস্থায় ডাক্তার বাবা-মাকে কিছুক্ষণ বুঝালো। সন্তান যেহেতু এসেই গেছে তখন নিয়ে নেওয়াই ভালো হবে। কিন্তু মা-বাবা তাদের সিদ্ধান্তে অটল। অতঃপর অ্যাবরশনের প্রস্তুতি নিলো। কিছুক্ষণ চেকআপ করার পর ডাক্তার জানালো অ্যাবরশন সম্ভব নয়। সময় পেরিয়ে গেছে। এই কথা শুনে আমি খুশি হলাম। তবে আমার বাবা-মা সন্তুষ্ট হলো না। তারা অন্যকোনো উপায় আছে কিনা তা জানতে চাইলো। ডাক্তার জানালো কোনো উপায় নেই। অ্যাবরশন করাতে গেলে জীবনের ঝুঁকি আছে।

পরিশেষে আমি বেঁচে গেলাম। আমার আগমনের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। সবাই এসে অভিনন্দন জানিয়ে গেল। দাদা-দাদী, নানা-নানী ভীষণ খুশি। সবাই খুশি শুধুমাত্র আমার বাবা-মা ছাড়া। তারা মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে রাখলেও অন্তর থেকে অখুশি। এখন আর আমার ভয় নেই। আমাকে খুন করার কোনো উপায় তাদের হাতে নেই। তাই আমিও নিজের অস্তিত্বের জানান বেশি করে দেই। কিছুক্ষণ পরপর খেতে চাই। তাই মাকেও ঘনঘন এটা সেটা খেতে হয়। মাঝেমধ্যে একটু নড়াচড়া করি। ফলে মা প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। মাঝেমাঝে তো রাগ করেই নড়াচড়া করি। একদিন তো আমার নড়াচড়ার পরিমাণ এত বেশি ছিল যে, মা কেঁদেই দিলো। কেঁদে কেঁদে বলল উফফ আর পারছি না। তুই এত নড়াচড়া কেন করছিস রে? মায়ের কষ্ট দেখে আমার খুব খারাপ লাগল। এরপর থেকে আমি প্রয়োজন ব্যতীত নড়াচড়া করি না। ইদানিং বাবা নিয়মিত আমার খোঁজখবর রাখে। মাকে উপদেশ দেয় পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি খেতে। নিয়মিত চেকআপ করাতে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ ভালোই লাগে। কষ্ট, আনন্দ ও অপেক্ষার সাথে দিনগুলো কেটে গেল। আজ আমার আগমনের সময় হয়েছে। মা ও আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এই ডাক্তাররা খুবই খারাপ। তারা আমাকে মায়ের পেট কেটে বের করতে চায়। অথচ আমি স্বাভাবিক ভাবেই পৃথিবীতে আসার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু ডাক্তাররা নানারকম রিপোর্ট দেখিয়ে মিথ্যে বলছে আমার নাকি অবস্থা ভালো না। নরমাল ডেলিভারিতে মায়ের জীবনের ঝুঁকি আছে। তাই বাবা অপারেশনের জন্য রাজি হলো। অতঃপর নাড়ীর বাধন ছিড়ে আমি দুনিয়াতে এলাম। দুনিয়াতে আসতেই আমার মাঝে ভয় ঢুকে গেল। মা-বাবা কি আমাকে আবার খুন করার প্রচেষ্টা চালাবে? তারা তো এতদিন নিরুপায় ছিল। আমাকে খুন করার মতো কোনো উপায় তাদের হাতে ছিল না। কিন্তু এখন তো আমি তাদের হাতের মুঠোয়। এই ছোট্ট শরীর নিয়ে তাদের সাথে লড়াইও করতে পারবো না। এই ভয়ে আমি কিছুক্ষণ কাঁদলাম।

বেশ কিছুক্ষণ পর আমাকে মায়ের কাছে স্থানান্তর করা হলো। আমি মনে মনে ঘাবড়ে আছি। এই বুঝি মা আমাকে মারবে। কেননা পেটে থাকতে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছিলাম। মায়ের কোলে এসেও আমি চুপ করে রইলাম। ভয়ে নড়াচড়াও করছি না। আমাকে কোলে পেতেই মা আমার কপালে, গালে চুমো দিলো। তারপর নানীর ইশারায় আমাকে দুগ্ধ পান করাতে লাগলো। তখন আমার মনে হলো আমার সবচেয়ে নিরাপদ স্থান এটাই। মায়ের কোল-ই আমার জন্য নিরাপদ স্থান। এখানে থাকলে কোনো বিপদ আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না। কিছুক্ষণ পর বাবা এলো। আমি আবারও ভয় পেলাম। এই মানুষটাও এক সময় আমাকে খুন করতে চেয়েছিল। বাবা এসে সর্বপ্রথম মায়ের সুস্থতার কথা জিজ্ঞেস করলো। তারপর আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমি ভয় ও নির্ভয় দুটোতেই আছি। মায়ের কোলে তাই নির্ভয়। বাবা এগিয়ে আসছে তাই একটু ভয়। অবশেষে বাবা আমার মাথায় খুব আদর করে হাত বুলিয়ে দিলো। আমার অন্তর জুড়ে প্রশান্তি বইলো। আমি মুচকি হেসে দিলাম। তা দেখে বাবা-মাও মুচকি হেসে দিলো। এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে আমার বাবা-মাকে। অথচ আমার আগমনে তারা কেউই খুশি হয়নি। কিন্তু আজ তাদের সমস্ত খুশি আমাকে ঘিরে। আমিও অতীত ভুলে নতুন ভাবে শ্বাস নিতে লাগলাম। আমি বুঝলাম তারাই আমার সব। তারাই আমার আপনজন। তারা আমাকে ভীষণ ভালোবাসে। আমি তাদেরকে ভীষণ ভালোবাসি।

সমাপ্ত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.