নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিখতে জানতে ও ছড়িয়ে যেতে চাই।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী

আমি বাপ্পী। জন্মস্থান বরিশাল। বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নামঃ সিক্স ইয়ার রিস্টার্ট।

২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:০৪

গল্পের নামঃ সিক্স ইয়ার রিস্টার্ট।
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।

আসাদ গোসল সেরে বের হলো। তার সামনে দিয়েই নূরী রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিলো। আসাদ তাকে জড়িয়ে ধরলো। আকস্মিক এই ঘটনায় নূরী হকচকিয়ে গেল। তবে মুচকি হাসি দিয়ে বলল, “তা জনাব, সারাক্ষণ রোমান্স করলেই হবে? অফিসের সময় যে পেরিয়ে যাচ্ছে সেই খেয়াল কি আছে?”
- ঘড়িটা বন্ধ হয়ে যাক। আমি সারাক্ষণ তোমার মাঝে ডুবে থাকতে চাই।
- হয়েছে আর রোমিও হতে হবে না। এবার যাও প্রস্তুত হও। তবে সাবধান। সিমি-রিমি যেন না জাগে। তাহলে কিন্তু তোমার খবর আছে।
নূরীকে ছেড়ে দিয়ে আসাদ খুব সাবধানতার সাথে রুমে পদার্পণ করেছে। তবুও রিমি জেগে গেল। আসাদের হৃদস্পন্দন যেন রিমির কানে বাতাসের গতিতে পৌঁছে যায়। তাইতো আসাদের উপস্থিত সবসময়ই বুঝে যায়।
-মেয়ের সম্পর্ক বুঝি এমনই হয়। রিমিকে জাগতে দেখে আসাদ মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকার ইশারা দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, “কাঁদিস না মা। তোর মা জানতে পারলে আমার খবর আছে।” তিন বছরের রিমিও যেন বাবার কথা বুঝলো। চুপচাপ শুয়ে রইলো। তার পাশে ঘুমন্ত অবস্থায় আছে তার জমজ বোন সিমি। আসাদ চুপচাপ প্রস্তুত হতে লাগল যেন সিমি না জাগে। কিন্তু তা আর হলো না। সিমিও জেগে গেল। আর সাথেসাথেই কান্না শুরু করলো। এই মেয়েটা একদম মা পাগলী। নূরীকে কাছে না পেলেই কেঁদে উঠে। আসাদ এগিয়ে এসে তাকে থামানোর অপচেষ্টা করতে লাগল। সে জানে সিমিকে চুপ করানো তার পক্ষে সম্ভব না। অতঃপর কিছুক্ষণের মধ্যেই নূরী হাজির। বড় বড় চোখে আসাদের দিকে তাকিয়ে আছে। অসহায় ভঙ্গিতে আসাদ বলল, “সত্যিই বলছি আমি একটুও শব্দ করিনি।”

ছয়টি মার্সেডিস এসে মহল্লার সামনে থামলো। এতে মহল্লাবাসী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এই মহল্লায় এর আগে কখনো এত দামী গাড়ি নিয়ে কেউ আসেনি। কেননা এখানে উচ্চবিত্তশ্রেণীর কেউ থাকে না। সবাই খেটে খাওয়া নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ। গাড়ি থেকে এমদাদ ও মিলন নামলো। তাদের সাথে বেশ কিছু সিকিউরিটি গার্ডও নামলো। কিছু গার্ড গাড়ির সাথেই রইলো। আর কিছু তাদের সাথে বিল্ডিংয়ের ভেতরে গেল। তারা চার তলায় এসে কলিংবেল বাজালো। আজ আসাদের অফিস বন্ধ। তাই সে সামনের রুমে বসে রিমি-সিমির সাথে খেলছে। আর নূরী রান্নাঘরে বিরিয়ানি রাধছে। কলিংবেলের শব্দ পেয়ে আসাদ দরজা খুলল। অপরিচিত লোকজনদের দেখে আসাদ প্রশ্নবোধক স্বরে বলল, “কাকে চাই?”
আসাদের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এমদাদ ও মিলন সোজা রুমে ঢুকে পড়লো। তারপর নূরীর নাম ধরে ডাকতে লাগল। আসাদ হতভম্বের মতো তাকিয়ে রইলো। সে ভাবতে লাগল নূরীকে এরা কিভাবে চিনে? নূরী ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। অবাক দৃষ্টিতে সে কিছুক্ষণ এমদাদ ও মিলনের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর কাঁদো কাঁদো স্বরে দুটি শব্দ উচ্চারণ করলো। যা শুনে আসাদ আরও বিস্মিত হয়ে গেল। শব্দ দুটি হলো, বাবা-ভাইয়া।

নূরী তার বাবা-ভাইয়ের সাথে মন খুলে আলাপ করছে। কখনো কাঁদছে তো কখনো হাসছে। আসাদ চুপচাপ তা দেখছে। পাঁচ বছর আগের কথা। আসাদ সেদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলো। পথিমধ্যে অবচেতন অবস্থায় পড়েছিল নূরী। তাকে ঘিরে বেশ ভীড় জমা হয়েছিল। কিন্তু কেউই তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। আসাদ তাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। পরেরদিন নূরীর জ্ঞান ফিরেছিল। আসাদ অফিস শেষে হাসপাতালে এসে জানতে পারলো নূরী তার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। নূরী কেবলমাত্র বাবা-মা, ভাই ও নিজের নাম বলতে পেরেছিল। ঠিকানা বা অন্যকিছু বলতে পারেনি। নূরী সুস্থ হওয়ার পর আসাদ তার সম্মতিতে তাকে নিজের মেসে নিয়ে এসেছিল। তার মেসের পাশের বিল্ডিংয়ে মেয়েরা থাকতো। তাদের সাথেই নূরীর থাকার ব্যবস্থা করেছিল। আসাদ প্রতিনিয়ত তার খবরাখবর রাখতো। প্রায় বিকালে দুজনে এক সাথে আড্ডা দিতো। সময়ের সাথে নূরী ও আসাদের মাঝে ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল। তাই আসাদ তাকে বিয়ে করেছিল। তারপর সংসার শুরু করেছিল। তাদের সংসার জীবনে আরও আলো ছড়িয়ে পড়েছিল সিমি-রিমির আগমনে। তাদের মাঝে ভালোবাসার কোনো কমতি নেই।

রাতের খাবার খেয়ে ছাদে এসেছে এমদাদ ও মিলন। এমদাদ বলল, “নূরীর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিলি?”
- হ্যাঁ, গাজীপুরে আমরা যে নতুন প্রজেক্ট করছি, দুলাভাইকে ওখানের ম্যানেজার বানিয়ে দিবো।
- তুই কি সবকিছু মেনে নিয়েছিস?
মিলন তার বাবার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর বলল, “অর্থ-আভিজাত্যের গর্বে কোনো নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করো না। আমাদের তো এটা ভেবে সন্তুষ্ট হওয়া উচিত, নূরী বেঁচে আছে এবং একটি সুন্দর জীবনযাপন করছে। একবার ভাবো, যদি ও কোনো ভুল মানুষের হাতে পড়তো তবে কি হতো।।”
এমদাদ একটু গম্ভীর হলো। তা দেখে মিলন আরও বলল, “আসাদ ছেলে হিসেবে খুবই ভালো। তাই তো নূরীকে বিয়ে করেছে। অন্যকেউ হলে অপব্যবহার করতে পারতো। তুমি ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবেই মেনে নাও।”

আসাদের ঘরের আসবাবপত্র ট্রাকে তোলা হচ্ছে। একদল শ্রমিক এই কাজ করছে। নূরী আনন্দের সাথে তার কাপড়চোপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র গুছাচ্ছে। আজ তারা এই ঘর, মহল্লা ছেড়ে চিরতরে চলে যাচ্ছে। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই ঘর ও মহল্লা জুড়ে। তবুও যেতে হচ্ছে। এই নিয়ে আসাদের মন কিছুটা বিষণ্ণ হয়ে আছে। তবে নূরীর মুখে হাসি দেখে আসাদ সেই বিষণ্ণতা প্রদর্শন করলো না।
ঢাকা শহরের এক আলিশান বাড়ির সামনে আসাদরা নামলো। একে একে আসবাবপত্র সব নামানো হলো। তারপর একটা রুমে রাখা হলো। পাশেই একটা বিল্ডিংয়ের কাজ হচ্ছে। ওটা শেষ হলে আসবাবপত্র সেখানে নেওয়া হবে।

দেখতে দেখতে বেশ কিছু মাস হয়ে গেল। আসাদরা পাশের বিল্ডিংয়ে উঠেছে। তবে তার পুরানো আসবাবপত্র স্টোর রুমেই তালাবদ্ধ আছে। এই ফ্লাটের সবকিছুই নতুন। সবই নূরীর বাবার দেওয়া। আসাদ এখন তাদের কোম্পানির ম্যানেজার পদে আছে। কোনো কিছুর অভাব নেই। তবুও ইদানিং আসাদের মনে শান্তি নেই। তার মনে একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। নূরী যদি তার স্মৃতি হারিয়েই থাকে তবে বাবা-ভাইকে চিনলো কিভাবে? এমনতো নয় যে, নূরীর স্মৃতিশক্তি ফিরে এসেছে। এমন হলে তো সে আসাদকে চিনতে পারতো না। আসাদের কাছে সবকিছু অস্পষ্ট লাগছে যেন কুয়াশার চাদরে সবকিছু ঢেকে আছে।
নূরী লক্ষ্য করেছে এখানে আসার পর থেকে আসাদ উদাসীন হয়ে থাকে।
- ওখানের কথা খুব মনে পড়ছে, তাই না?
নূরীর কথায় আসাদ কিছুটা চমকে উঠলো। আমতা আমতা করে বলল, “ও কিছু না। আস্তেধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।” একটা শুষ্ক হাসি দিয়ে সিমি-রিমিকে নিয়ে নূরী শুয়ে পড়লো। দুই পাশে দুজন। মধ্যখানে নূরী। আসাদের কাছে এই দৃশ্যটা সৌরজগত মনে হয়। যেখানে নূরী সূর্য, সিমি-রিমি গ্রহ-নক্ষত্র।

সূর্যের আলো চোখে পড়তেই নূরী ঘুম থেকে জেগে উঠলো। এক নজর আশেপাশে তাকালো। তার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে। সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো লাগছে। নূরী আস্তেধীরে বিছানা ছেড়ে নেমে এলো। রুম থেকে বের হতেই সিমি-রিমিকে দেখে ছুটে এসে তাদেরকে জড়িয়ে ধরে অজস্র চুমো দিতে লাগল। যেন বহুদিন পর তাদেরকে দেখেছে। মিলন এগিয়ে এসে মোবাইল বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এই নে আসাদ ফোন দিয়েছে।” নূরী অবাক দৃষ্টিতে মিলনের দিকে তাকিয়ে রইলো। যেন সে মিলনের কথা বুঝতে পারেনি। রিমি ফোনটা কেড়ে নিলো। তারপর বাবা বলতে বলতে অন্যদিকে চলে গেল। সিমিও বাবা বলতে বলতে তার পিছু নিলো। নূরী কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। তারপর রিমির কাছে গেল। আড়চোখে মোবাইলের স্ক্রিনে থাকা চেহারাটা দেখে নিলো। আসাদকে দেখে তার মধ্যে কোনো অনুভূতি জন্মালো না। এমন সময় এমদাদ এলেন। নূরী ছুটে এসে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। এমদাদ শান্ত স্বরে বলল, “কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?” নূরী কোনো জবাব দিলো না। শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। যেন বহুদিন পর সে তার বাবাকে কাছে পেয়েছে।

নূরী খোলা আকাশে নিচে ছাদে বিষণ্ণ মনে বসে আছে। তার মনে অজস্র প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছু সমীকরণ মিলছে না। আসাদকে সে চিনতেই পারছে না। আসাদকে নিয়ে তার কোনো কিছুই মনে পড়ছে না। অথচ সিমি-রিমি সারাক্ষণ ফোনে আসাদকে বাবা-বাবা বলে ডাকে। তবে নূরীর স্পষ্ট মনে আছে সিমি-রিমি তারই সন্তান। তাদেরকে জন্ম দেওয়ার সেই বেদনাদায়ক সময়টা তার মনে আছে। মনে আছে জমজ মেয়ে দুটোকে দেখার পর তার সব বেদনা কিভাবে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। অথচ আসাদের ব্যাপারে কিছুই মনে নেই। তবে নূরী এই ব্যাপারটা কাউকে বুঝতে দেয়নি। সে আসাদের সাথে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলে যাচ্ছে। এমদাদ বলেছে আসাদ গত দুই বছর ধরে লন্ডনের অফিস দেখাশোনা করছে। এই তো এক মাস আগে এসেছিল। কিছুদিন থেকে আবার চলে গেছে। সামনে ছুটি পেলে আবার আসবে। কিন্তু নূরীর হিসাবে একটা জিনিস মিলছে না। যা নিয়ে সে বেশ অস্বস্তিতে আছে।
নূরী জিদ করে বসেছে। আসাদ বিদেশ থেকে না এলে সে কিছুই খাবে না। আসাদের সাথে তার কিছু কথা আছে। এমদাদ-মিলন অনেক বুঝালো যে, আসাদ এভাবে হুট আসতে পারবে না। ওখানে তার অনেক কাজ আছে। কিন্তু নূরী কিছুই শুনতে রাজি না। অবশেষে আসাদ জানালো সে আগামী সপ্তাহেই রওনা দিবে। এতে নূরী কিছুটা শান্ত হলো।

সিমি-রিমি আনন্দের সাথে খেলছে। বাবাকে কাছে পেলে প্রতিটি সন্তানই এমন আনন্দিত হয়। আসাদ দুদিন আগেই দেশে ফিরেছে। তবে নূরীকে খুব একটা খুশি দেখাচ্ছে না। কেমন যেন বিষণ্ণ হয়ে আছে। অথচ আসাদকে দেশে আনার জন্য সে খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে এই দুদিন আসাদ রাতটা কাটিয়েছে এমদাদ ও মিলনের সাথে ব্যবসায়িক আলাপ করতে করতে।
বাইরে গেটের সামনে হইচই চলছে। এতে ঘরের সবাই বেরিয়ে এলো। নূরী যা দেখলো তাতে সে স্তব্ধ হয়ে গেল। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আসাদ। অথচ তার পাশেও আসাদ। একই চেহারার দুটো লোক! গেটের সামনে থাকা আসাদের চোখ নূরীর দিকে পড়লো। ওমনি সে দারোয়ানকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে চলে এলো। কিন্তু কিছুদূর সামনে আসতেই তার পা থমকে গেল। একি! নূরীর পাশে তারই চেহারার একজন দাঁড়িয়ে আছে। আসাদ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পরেই হইচই শুরু করলো। সে নিজেকে নূরীর স্বামী বলে পরিচয় দিতে লাগল। কিন্তু এমদাদ-মিলন বলছে এটা ছদ্মবেশী কেউ। সিকিউরিটি গার্ড এসে আসাদকে বেধড়ক মার শুরু করলো। আসাদ তবুও চিত্‍কার করে বলছে, “নূরী আমি তোমার স্বামী। তুমি আমার স্ত্রী। সিমি-রিমি আমাদের সন্তান।” বাড়ির মধ্যে এক হুলস্থুল কান্ড চলতে লাগল। নূরী চুপচাপ তাকিয়েই রইলো। কিছু বলছে না। এরমধ্যে পুলিশ চলে এসেছে। তারা আসাদকে নিয়ে যেতে লাগল। এমদাদা-মিলনকে উদ্দেশ্য করে আসাদ বলল, “এই বুঝি ছিল তোদের মনে? তাই আমাদেরকে এখানে এনেছিস?” এবার নূরীকে উদ্দেশ্য করে আসাদ বলল‚ “তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। এই পাষণ্ড লোকগুলোর কুচক্রের ফাঁদে আমাদের ভালোবাসার সংসার এলোমেলো হয়ে গেল। তবে তোমার কাছে আমার শেষ আবদার, সিমি-রিমি ও আমাদের অনাগত সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করিও।” পুলিশ আসাদকে টেনে গাড়িতে উঠালো। এতক্ষণে নূরী মুখ খুলল। পুলিশকে থামতে বলল। তারপর সে এগিয়ে এলো আসাদের কাছে। বলল, “এইমাত্র কি বললেন আপনি? কিসের অনাগত সন্তান?” বেদনাভারাক্রান্ত কণ্ঠে আসাদ বলল, “এক মাস আগে একদিন তুমি বলেছিলে তুমি কনসিভ করেছ। আমরা খুবই আনন্দিত ছিলাম। কিন্তু তোমার এই বাপ-ভাইয়ের ষড়যন্ত্রে হঠাৎ করেই সব বদলে গেল।” নূরী কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। অবশেষে তার সমীকরণ মিলেছে। নূরী তার বাবার দিকে তাকিয়ে তারপর বলল, “বাবা, তুমি বলেছিলে আসাদ এক মাস আগে দেশে এসে আবার চলে গিয়েছিল। যার ফলে আমার একটা হিসাব মিলছিল না। আমি গর্ভবতী। অথচ আমার স্বামী কিছুদিন আগেই এসেছিল। তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব? কিন্তু এই আসাদ এই খবরটা জানে। অথচ এই কথাটা আমি এখন পর্যন্ত কাউকে বলিনি।” নূরী তার বাবা-ভাইয়ের সামনে বসে পড়লো। ছলছল চোখে বলল, “আমার মস্তিষ্কে সিমি-রিমিকে নিয়ে অনেক স্মৃতি আছে। কিন্তু আসাদকে নিয়ে কিছুই নেই। নিশ্চয়ই আমার সাথে তোমরা কিছু একটা করেছ। আমার জীবনটা নিয়ে ছিনিমিনি খেলো না। তোমরা তো জানো, তো বলে দাও কে আমার স্বামী।”

সত্য জানার পর আসাদ-নূরী দুজনই বিস্মিত হয়ে গেল। নূরীর একটি সমস্যা আছে। যাকে ডাক্তাররা “সিক্স ইয়ার রিস্টার্ট” নাম দিয়েছে। প্রতি ছয় বছর পর নূরীর মস্তিষ্ক থেকে অতীতের সবকিছু মুছে যায়। শুধুমাত্র রক্তের সম্পর্ক ব্যতীত আর কিছুই তার স্মরণে থাকে না। আসাদ যখন নূরীকে পেয়েছিল তখন নূরীর আঠারো বছর ছিল। ছয় বছরের এই নীতি অনুসারে সে নিজের অতীতের সবকিছু ভুলে গিয়েছিল, রক্তের সম্পর্কিত মানুষগুলো ব্যতীত। নূরীকে পুনরায় খুঁজে পাওয়ার পর মিলন একটি পরিকল্পনা এঁকেছিল। এই ব্যাপারে প্রথমে এমদাদকেও কিছু জানায়নি তবে পরে জানিয়েছিল। তারা হিসাব করেছিল নূরী চব্বিশ বছর হতে আর কিছু মাস বাকি। এরপর নূরী আবার সবকিছু ভুলে যাবে। আসাদকেও ভুলে যাবে। যেহেতু আসাদের সাথে নূরীর রক্তের সম্পর্ক নেই। তবে সিমি-রিমিকে ভুলবে না। কেননা এরা তারই সন্তান। অতঃপর মিলন একজনের সাথে চুক্তি করে। চুক্তিটা হলো লোকটা আসাদ সেজে কিছুদিন নূরীর সাথে কথাবার্তা চালিয়ে যাবে। পরে নানারকম ঝগড়াবিবাদ করে সম্পর্কের অবসান করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী চুক্তিবদ্ধ সেই লোকের চেহারা প্লাস্টিক সার্জারি করে আসাদের হুবহু চেহারায় রূপান্তর করা হয়। এটা শুধুমাত্র সিমি-রিমির জন্য করা হয়। কেননা নূরী ভুলে গেলেও সন্তানরা তো তাদের বাবাকে ভুলবে না। নূরীর চব্বিশ বছর পূরণ হতেই যখন সে সবকিছু ভুলে গেল, তখনই মিলন ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে আসাদকে সরিয়ে দিলো। গুন্ডারা আসাদকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। তবে ভাগ্যক্রমে আসাদ বেঁচে যায়।

অনুতপ্ত স্বরে মিলন বলল, “আমি লজ্জিত। আমাকে ক্ষমা করে দে বোন।”
নূরী উঠে দাঁড়ালো। তারপর আসাদের হাত ধরে বলল, “আমি এখনো জানি না আসল সত্য কি। তবে আমার বিশ্বাস তুমি আমাকে ঠকাবে না। তুমি যেদিকে যাবে আমি তোমার সাথে সেদিকেই যেতে রাজি। তবুও এই মানুষরূপী শয়তানগুলোর সাথে আমি থাকবো না। প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো।”
দুই মেয়েকে দুজনে কোলে নিলো। তারপর একে অপরের হাত ধরে বেরিয়ে পড়লো। তাদের গন্তব্য অজানা। তবে পথ ভালোবাসার।

সমাপ্ত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.