নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিখতে জানতে ও ছড়িয়ে যেতে চাই।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী

আমি বাপ্পী। জন্মস্থান বরিশাল। বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নামঃ জীবন গতি।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:২২

গল্পের নামঃ জীবন গতি।
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।

ব্যাগ হাতে নূরীকে দেখে আমজাদ অবাক হয়ে গেলেন। বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছেন আমেনাও।
আমজাদ - কি ব্যাপার মা? তুই এভাবে?
নূরী - চলে এসেছি।
- চলে এসেছি মানে?
- তুমি তো আমার বিয়ে দিয়েছিলে সরকারি চাকরির সাথে। এখন যেহেতু ওর চাকরি নেই। সেহেতু কোনো সম্পর্কও নেই।
- এসব কি বলছিস মা?
- ঠিকই তো বলছি। আমার বিয়ে তো আসাদের সাথে দাওনি। দিয়েছ ওর সরকারি চাকরির সাথে।
আমজাদ চুপ হয়ে গেলেন। নূরী আরও বললেন, “আমি তোমাকে হাজারবার বলেছিলাম অর্থ সম্পদ নয় চরিত্র দেখে আমার বিয়ে দিও। জীবনে তো এই একটা জিনিসই চেয়েছিলাম। তাও দিলে না।”
আমজাদ মাথা নিচু করে রইলেন। বিয়ের সময় নূরী বারবার বলেছিল আসাদ ছেলেটা ভালো নয়। অসত্‍, ঘুষখোর। কিন্তু আফজাল কোনো কথা শুনেনি।
- আজ তুমি পস্তাচ্ছো। অথচ সেদিন আমার কথার কোনো মূল্য দাওনি। কিন্তু এখন কি আর পরিস্থিতি বদলাতে পারবে?
নূরী বেরিয়ে যেতে লাগল। তার মা ডাক দিয়ে বললেন, “কোথায় যাচ্ছিস মা?”
- এসেছিলাম শুধুমাত্র তোমার স্বামীকে উপলব্ধি করাতে।

দুর্নীতির দায়ে আসাদকে তার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই নিয়ে তার পরিবারে হইচই চলছে। এখন আশেপাশের লোকজন তাদের দিকে আড়চোখে তাকায়। যারা আগে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতো এখন তারাও নাকছিটকাচ্ছে। তবে আসাদ এসব তোয়াক্কা করছে না। সে উর্ধ্বতন অফিসারদেরকে হাত করার চেষ্টায় আছে। সে আশাবাদী খুব শীঘ্রই এটার সমাধান বের করতে পারবে। তখন সবকিছু আবার পূর্বের মতো হয়ে যাবে।
নূরী রুম গুছাচ্ছে। আসাদ মাত্র বাহির থেকে ফিরেছে। তাকে বেশ উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে। নূরী বলল, “কোনো সমাধান এলো?”
- তোমাকে না একদিন বলেছি, ঘরে রান্নাঘর ব্যতীত অন্যকিছুর খবর জানার দরকার নেই।
আসাদের এমন কঠোর জবাব শুনে নূরী চুপসে গেল। বিয়ের পর থেকেই আসাদের এমন স্বভাবের সাথে নূরী পরিচিত।

মাসখানেক বাদে আসাদ আবার তার চাকরি ফিরে পেয়েছে। সময়ের সাথে পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়েছে। আশেপাশের মানুষজন আবার আগেরমত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা শুরু করেছে। কিছু মাস যেতে না যেতেই আসাদের পদের উন্নতি হয়েছে। এর কিছুদিন পরে আসাদ নতুন বাড়ি কিনেছে। নতুন বাইক কিনেছে। দিন যত যাচ্ছে আসাদের সম্পদের পরিমাণ ততই বাড়ছে। এই নিয়ে নূরীর মনে বেশ আক্ষেপ। কেননা এসবই অসত্‍ পথের উপার্জন। মাঝেমাঝে সে ভাবে অর্থ-সম্পদের প্রতি একটা মানুষের কত লোভ থাকতে পারে? হয়তো এর কোনো পরিধি নেই। তাইতো আসাদের মনের চাহিদারও শেষ নেই। এই নিয়ে নূরী কিছু বলতেও পারে না। প্রতিবারই আসাদ তাকে রান্নাঘরের মাঝে সীমাবদ্ধ করে দেয়।
গোলাকার চাঁদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আসাদ ধোয়া উড়াচ্ছে। কিছুক্ষণ পর নূরী ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। আসাদ বলল, “অনেক তো অপেক্ষা করলাম। এবার মনে হয় আমাদেরকে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।” নূরী কোনো জবাব দিলো না। চুপ করে রইলো। পরেরদিন তারা ডাক্তার দেখিয়ে এলো। দুদিন পর রিপোর্ট দিবে। নূরী জানে দুদিন পরেই তাকে এক তুফানের সম্মুখীন হতে হবে। তাই সে মনে মনে প্রস্তুতি নিতে লাগল।

আসাদ বাসায় এসেছে। তার হাতে রিপোর্টের কাগজপত্র। মুখের ভাব অত্যন্ত ক্ষিপ্র। নূরী বুঝলো আজ রাতটা তার জীবনের অন্যতম একটি কালরাত হতে যাচ্ছে।
- কি সমস্যা তোর? চুপ থাকবি না। আমার প্রশ্নের উত্তর দে। তোরে ওষুধ খেতে নিষেধ করছিলাম না? তবুও শুনলি না কেন? বাচ্চা তো তুই ইচ্ছে করে নিচ্ছিস না। কারণ কি?
নূরীর নীরবতা আসাদকে যেন আরও রাগিয়ে তুলল। টেবিলের ওপর রাখা ফুলদানিটা নূরীর দিকে ছুড়ে মারলো। সেটা নূরীর মাথায় এসে আঘাত করলো। সামান্য রক্তও বেরোতে লাগল। কিন্তু সেদিকে আসাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বরং সে এগিয়ে এসে নূরীকে বেশ কয়েকটা থাপ্পড় দিতে লাগল। নূরী বারবার কঁকিয়ে উঠছে। আর বলছে, “তুমি যতদিন অসত্‍ উপার্জন বন্ধ করবা না। আমি ততদিন সন্তান নিবো না।” নূরীর এই কথা শুনে আসাদের রাগ সব সীমা অতিক্রম করে ফেলল। রাগে ফুসতে ফুসতে আসাদ বলল, “কি বললি **, তোর এত বড় সাহস? আজ তোরে মেরেই ফেলবো।” এবার আসাদ তার পরনের বেল্ট খুলে নূরীকে আঘাত শুরু করলো। ও মাগো রে, ও আল্লারে এসব বলে কাঁদতে লাগল নূরী। আসাদ তার নির্যাতন চালিয়ে যেতে লাগল। শারীরিক নির্যাতন ধীরে ধীরে যৌন নির্যাতনে রূপান্তরিত হলো। নূরী মুখ বুজে সব সহ্য করে গেল।

মাথা নিচু করে বসে আছেন আমজাদ। আসাদ অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করে চলে গেল। রেখে গেল নূরীকে। মুখে ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নূরী। তার সারা মুখে নির্যাতনের ছাপ। নূরীর কাছে এগিয়ে আসতেই আমেনা কঁকিয়ে উঠলেন। “আল্লাহ! এ কি মানুষ নাকি জানোয়ার!” নূরীকে জড়িয়ে ধরে আমেনা কাঁদতে লাগলেন। “কি অবস্থা করছে আমার মেয়েটার! জানোয়ার একটা।”
নূরীর চেহারায় চোখ পড়তেই আমজাদ চমকে উঠলেন। এ যেন নূরী নয়, আমেনা; অতীতে যার চেহারায় আমজাদের নির্যাতনের ছাপ এভাবেই পড়তো।

আমেনা চেয়েছিলেন আসাদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করতে। কিন্তু নূরী বাঁধা দেয়। সময়ের সাথে নূরীর চেহারায় থাকা নির্যাতনের দাগ মুছে গেল। কিন্তু মনের দাগ মুছেনি।
দুয়ারের সামনে আসাদ দাঁড়িয়ে আছে। তার চেহারায় নূরী সেদিনের মতো ভয়ানক রাগ দেখতে লাগল। কিন্তু আজ নূরী ভয় পাচ্ছে না। কেননা তার সামনে তার বাবা ঢাল স্বরূপ দাঁড়িয়ে আছেন। গতকাল আসাদের বাবা-মা এসেছিলেন নূরীকে নিয়ে যেতে। নূরীও যাওয়ার জন্য মনস্থির করেছিল। কিন্তু আমজাদ তাকে যেতে দেননি। আসাদের বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যে আমজাদ এক বাক্যে বলে দিয়েছেন, “যেই ছেলে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে জানে না, তার ঘরে আমার মেয়ে যাবে না।” আসাদ এটাকে অপমান হিসেবে ধরে নিয়েছে।
- আপনি কোন সাহসে আমার বাবা-মাকে অপমান করেছেন?
- তুমি চুপচাপ এখান থেকে চলে যাও।
- আপনি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন? ভালোয় ভালো নূরীকে আমার সাথে পাঠিয়ে দিন। নয়তো এর পরিণাম………
- ওসবের আমাকে দেখাইয়ো না। তুমি যা পারো করো। এখন যাও এখান থেকে।
আসাদ কিছুক্ষণ চিল্লাচিল্লি, গালাগালি ও হুমকি-ধমকি দিয়ে চলে গেল।

আমজাদ চেয়ারে বসে নীরবে চোখের জল ফেলছেন। অতীতে আমেনার প্রতি করা অমানবিক নির্যাতনের জন্য আজ তিনি মনে মনেই লজ্জিত হচ্ছেন। অতীতের কথাগুলো মনে হতেই তার অন্তর কেঁদে উঠছে। কতটা নিষ্ঠুর ছিলেন তিনি! কতটা পাষাণ! আসাদের মাঝে যেন তিনি তারই ছায়া দেখতে পান। আমেনার ডাকে তার ধ্যান ভাঙলো।
- কেঁদো না। সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।
- হ্যাঁ, যেমনটা হয়েছে আমাদের।
- কি বলছো তুমি?
- আমিও তো একটা সময় আসাদের মতোই ছিলাম। তোমার প্রতি অনেক অন্যায়, অবিচার করেছি। নির্যাতিন করেছি।
- তুমি হঠাত্‍ এসব নিয়ে ভাবছো কেন?
- কারণ আসদের মাঝে আমি নিজেকেই দেখতে পাচ্ছি।
- তুমি ওসব নিয়ে ভেবো নাতো। ওসব আমাদের দুর্দিন ছিল।
- তোমরা এত মহান কেন? কিভাবে পারো এত দুঃখ কষ্ট এক নিমিষেই ভুলে যেতে? কিভাবে পারো সবকিছু ভুলে গিয়ে আমাদের মতো পাষণ্ডদেরকে আপন করে নিতে?
আমেনা কোনো জবাব দিতে পারলো না। কিছু প্রশ্নের জবাব বাক্য দ্বারা হয় না। সময়ই এর জবাব দেয়। আমরা আমাদের অন্যায় বুঝতে পারি। কিন্তু দেরিতে। যেমনটা আজ আমজাদ তার অন্যায় বুঝতে পারছে।

হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছে আসাদ। ডাক্তার সাদেক এসে বলল, “অভিনন্দন আসাদ সাহেব।”
- কিসের জন্য?
- আপনি বাবা হতে চলেছেন তাই। গতকাল আপনার স্ত্রীকে নিয়ে আপনার শ্বশুর-শাশুড়ি এসেছিল। রিপোর্ট সব ঠিকঠাক আছে। তবে মেম সাহেবকে বলবেন একটু চিন্তা কম করতে। নয়তো সন্তানের ক্ষতি হবে।
আসাদ ধন্যবাদ জানিয়ে চলে এলো। আসাদ সিদ্ধান্ত নিলো সে আবার নূরীকে আনতে যাবে। কিন্তু আসাদের বাবা ও চাচারা নিষেধ করলো। তবুও আসাদ এলো। তাকে দেখে এবার আমজাদ রাগ প্রকাশ করলেন না। তবে খুশিও হলেন না। অন্যান্য দিন তো আসাদকে ঘরেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু আজ আপ্যায়নও করা হলো। আসাদের সামনে শরবত, নাস্তা ও ডিম ভাজি পরিবেশন করা আছে। আসাদ মনে মনে খুশি হলো। যাক অবশেষে তাদের রাগ ভেঙেছে। নাস্তা শেষ করতেই আমজাদ বললেন, “এবার তুমি আসতে পারো।” আমজাদের এই কথায় আসাদ তো অবাক হলোই, আমেনাও অবাক হলেন। তিনি এসে আমজাদকে বললেন, “কি করছো তুমি?”
- যা করছি ভেবেচিন্তেই করছি।
আমেনা আর কথা বললেন না। তিনি বুঝে গেলেন আমজাদ তার কথায় অনঢ় থাকবেন। আসাদ এগিয়ে এসে বলল, “দেখেন বাবা, আমি পুরানো সবকিছু ভুলে সম্পর্কটা আবার জোড়া লাগাতে চাই।”
- কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিও।
- আমি ওসবে যেতে চাচ্ছি না।
- যাও না। কেউ বাধা দিবে না।
- আপনি ওকে পাঠাবেন না?
- একবার বলেছি।
- ঠিক আছে। আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।
আমজাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর অনুমতি দিলেন।

নূরী বসে বসে টিভি দেখছে। এতক্ষণ সে দুয়ারে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা শুনছিল। আসাদের আগমনের বার্তা পেতেই টিভি দেখতে বসলো যেন আসাদের আসাতে তার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জন্মায়নি।
- ব্যাগ গুছিয়ে নাও।
- তুমি? কখন এলে?
- নাটক বন্ধ করো। এতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছিলে। তোমার পায়ের শব্দ আমি শুনেছি।
নূরী চুপ হয়ে গেল। তার চোখ ছলছল করতে লাগল। আসাদ এসে নূরীর হাত দুটো ধরে বলল, “প্লিজ আর অভিমান করে থেকো না। একটাবার সন্তানটার কথা তো ভাবো।”
- সন্তান? সন্তান তো ভালোবাসার প্রতীক হয়, তাই না? কিন্তু এই সন্তান তো তোমার নির্যাতনের প্রতীক।
- ওসব পুরানো কথা বাদ দাও তো।
- কিভাবে বাদ দিবো বলতে পারো? আমি তো সেদিন আমার স্বামী দ্বারাই একপ্রকার ধর্ষিত হয়েছিলাম। এই ব্যাথা কিভাব ভুলা যায়, একটু বলবা?
আসাদ লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, “আমি সেদিনের জন্য অনুতপ্ত। তবে কথা দিচ্ছি, আর কোনোদিন তোমার সাথে ওমন করব না।
- সেই সুযোগ তুমি পাবে না।

আসাদ শত চেষ্টা করেও নূরীকে ফেরাতে পারেনি। আসাদের আকুতিতে তার বাবা-মা ও মামারা বেশ কয়েকবার এসেছিলেন ব্যাপারটার মিমাংসা করতে। এক পর্যায়ে আমজাদের সুর নরম হলেও নূরী রাহি হয়নি। দেখতে দেখতে ডেলিভারীর সময় চলে এলোব নূরীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো। আসাদও এসেছে। নূরীর কাছ থেকে দূরে থাকলেও আসাদ নানান ভাবে তার খোঁজখবর রেখেছে। প্রায় ছয় ঘন্টার যুদ্ধের পর নূরী এক মেয়েকে জন্ম দিলো। আসাদ বেশ খুশি হলো। কিছুক্ষণ পর নূরীকে কেবিনে আনা হলো। একে একে সবাই দেখা করলো। আসাদ যখন এলো তখন সবাই বেরিয়ে গেল। মেয়ের দিকে তাকিয়ে আসাদ বলল, “একদম আমার মতো হয়েছে।”
- মা হিসেবে দোয়া করি আমার মেয়ে যেন তোমার মতো না হয়।
- এখনো কিসের অভিমান? মেয়ে জন্ম দিয়েছ ছেলে নয়।
- কি বললে তুমি? মেয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে? ও আচ্ছা ছেলে হয়নি তাই বংশ প্রদীপ নিয়ে ভাবছো? তুমি কখনোই মানুষ হবে না।
- হ্যাঁ আমি তো অমানুষ। থাকো তুমি মানুষ হয়ে।
আসাদ হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল।

নূরী নীরবে চোখের জল ফেলতে লাগল। কিছুক্ষণ পর ভাবলো কার জন্য সে চোখের জল ফেলছে? এই মানুষটার জন্য চোখের জল ফেলা মানে বৃথা। নূরীর বাবা-মা এলেন। নূরী দ্রুত চোখের জল মুছে ফেলল। আমেনা বললেন, “জামাইকে কি বলেছিস যে ওভাবে রেগে চলে গেল?” নূরী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “বাবা, তুমি শীঘ্রই ডিভোর্স পেপার রেডি করো।” আমজাদ কিছু বলতে যাবেন এর আগেই আমেনা তার স্বামীকে জানালেন নূরীর সাথে তার কিছু ব্যক্তিগত কথা আছে। আমজাদ রুম থেকে বেরিয়ে এলেন। আমেনা এসে নূরীর কাছে বসলেন। তারপর বলতে লাগলেন, “মেয়েদের জীবনটাই হলো মানিয়ে নেওয়ার জীবন। যদি তুই মানিয়ে নিতে পারিস তবেই আগামীতে একটা সুখের সংসার দেখা দিবে। হয়তো ততক্ষণে তোর মনের ইচ্ছা, অভিলাষ গুলো উড়ে যাবে কিন্তু সন্তানরা একটা সুন্দর পরিবার পাবে। আমাকেই দেখ, আমি তোর বাবার কত অত্যাচার সহ্য করেছি তা আমিই জানি। আমার শ্বাশুড়ী তো আমাকে উঠতে বসতে নির্যাতন করতেন। তোকে জন্ম দেওয়ার পর তো অত্যাচারের মাত্রা আরও ব্বড়ে গিয়েছিল। তবুও আমি সংসারের দিকে তাকিয়ে সব মুখ বুঝে সহ্য করেছি। মানিয়ে নিয়েছি সবকিছুর সাথে। ফলাফল তোর সামনেই। যদি আমি সংসার না করতাম তাহলে আজ তোর স্থান কোথায় হতো তা আল্লাহই ভালো জানেন। মা হিসেবে বলছি তুই আসাদের কাছে ফিরে যা। সংসারটা ঠিকমতো সাজা। আসাদ হয়তো অত্যাচারী, রাগী। তবে ছেলে ভালো। নয়তো এতদিনে অন্য একটা বিয়েও করে ফেলতে পারতো।”

ঘন্টা দুইয়েক পর আসাদ আবার ফিরে এসেছে। ধপাস করে দরজা খুলে নূরীর কেবিনে প্রবেশ করেছে। কেবিনে তখন নূরীর বাবা মা ও কাজিনেরা ছিল। আসাদকে দেখে আমেনা সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে এলেন। দরজা বন্ধ হতেই নূরী বলল, “আবার কেন এসেছ?” আসাদ হুংকারের সাথে বলল, “তোমার শেষ সিদ্ধান্ত কি? এখান থেকে আমার সাথে ফিরবে নাকি বাপের বাড়ি যাবে?”
- মেয়ে জন্ম দিয়েছি ছেলে নয়।
আসাদ ধীর পায়ে নূরীর কাছে এলো। পাশে থাকা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “তখন ওসব রাগের মাথায় বলেছি। মেয়ে ছেলে বুঝি না। ও তো আমার কলিজার টুকরো।”
- আমরা এক শর্তেই ফিরবো।
- আমি সব মানতে রাজি।
- অসত্‍ পথ ছাড়তে হবে। প্রয়োজনে ওই চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করো। টাকা পয়সা লাগলে আমি বাবাকে বলে জোগাড় করে দিব। তবুও আর ঘুষ নয়।
- বাহ! কি নীতি! একদিকে বললে ঘুষ না খেতে। অন্যদিকে যৌতুক নেওয়ার বুদ্ধি দিলে।
- জ্বি না। ওটা যৌতুক নয়। সময়মতো বাবাকে ফেরত দিতে হবে।
- শ্বশুর বাড়ির কোনো কিছু আমি ফেরত দেই না। এই যে এত মূল্যবাদ সম্পদ তার মেয়েকেই নিয়ে এসেছি। ফেরত তো দিব না। তাই তো বারবার ফিরে আসি।
নূরী হেসে উঠলো। আসাদও মুচকি হাসি দিলো। তবে তাদের নতুন অংশ কেঁদে উঠে নিজে অস্তিত্বের জানান দিলো।

সমাপ্ত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.