নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিখতে জানতে ও ছড়িয়ে যেতে চাই।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী

আমি বাপ্পী। জন্মস্থান বরিশাল। বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নামঃ পারিবারিক ঢাল।

১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৩৭

গল্পের নামঃ পারিবারিক ঢাল।
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।

একটা মিটিং শেষ করে আসাদ তার কেবিনে এসে বসলো। মেজাজটা তার ভীষণ বিগড়ে আছে। অনেকদিন পর তার রাগন্বিত রূপ দেখল অফিসের কর্মকর্তারা। সকাল সকাল আসাদের উর্ধ্বতন স্যার তাকে ভীষণ বকাবকি করেছে। বলেছে, “আপনি যদি অফিস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তবে আমাকে অন্য অপশন নিয়ে ভাবতে হবে।” আসাদ তার অফিস কলিগদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ভাব নিয়ে চলে। কিন্তু এতে বেশ কয়েকজন নিজের কাজে ফাঁকিবাজি শুরু করেছে। ফলে গতমাসের প্রজেক্টে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে আসাদ। এই নিয়ে উর্ধ্বতন অফিসার বেশ বকাবকি করলো। তাই আসাদও সব রাগ কলিগদের ওপর ঝেড়েছে। এছাড়াও বর্তমানে আসাদের মানসিক অবস্থা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না।
দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রামের জন্য চেয়ারে বসে একটু হেলান দিলো। এমন সময় মোবাইল বেজে উঠলো। নিয়াজের স্কুল থেকে ফোন এসেছে। তারা জানালো প্রায় দুইঘণ্টা ধরে নিয়াজ স্কুলের অফিস রুমে বসে আছে। এখনো তাকে কেউ নিতে আসেনি। এটা জানতেই আসাদ রওনা দিলো। পথিমধ্যে বেশ কয়েকবার নূরীকে ফোন করলো। কিন্তু রিসিভ হলো না। আসাদ স্কুলে এসে নিয়াজকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। নিয়াজ রাগ করে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।
- স্যরি বাবা, তোমার মা যে আসেনি সেটা আমি জানতাম না। নয়তো আরও আগেই আসতাম।
নিয়াজ কোনো জবাব দিলো না। আসাদ বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও নিয়াজের রাগ ভাঙাতে পারলো না।

আসাদ বাসায় এলো। নূরী দরজা খুলল। নূরীর সাজগোজ দেখেই বুঝা যাচ্ছে বাইরে থেকে মাত্রই ফিরেছে। নিয়াজের ব্যাগ নেওয়ার আগেই সে ছুটে ভেতরে চলে গেল। নূরী তাকে ডেকেও ফেরাতে পারেনি।
- কি হয়েছে ওর? রেগে আছে কেন?
- কোথায় গিয়েছিলে?
- শপিংয়ে। কেন, তোমাকে তো মেসেজ করে বলেছি।
আসাদ বেশ বিরক্ত ও রাগ নিয়ে বলল, “তুমি কবে দায়িত্ববান হবে? নিয়াজের স্কুল ছুটি হয় একটায় সেটা কি তোমার মনে ছিল?
- আমি তো পূরবীদের সাথে শপিংয়ে গিয়েছিলাম। তোমাকে তো মেসেজ দিয়ে জানিয়েছিলাম। তুমি দেখোনি?
- প্রায় তিনটা ঘন্টা কেটে গেছে। তোমার কি একটাবার নিয়াজের খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে হয়নি?
- আমি তো ভেবেছি নিয়াজ তোমার সাথে।
আসাদের রাগ চরম সীমায় পৌঁছে গেল। নূরীর দিকে হাত উঠিয়েও শেষ মুহূর্তে থেমে গেল। তারপর অত্যন্ত রাগী দৃষ্টিতে নূরীর দিকে তাকিয়ে রইলো। নূরী ভয় ও বিস্ময়ের সাথে আসাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আসাদ বলল, “আমি আর নিতে পারছি না। আমাকে মুক্তি দাও। আজ আমি একটা কথা ক্লিয়ার বলে দিচ্ছি। আমি যদি রাতে এসে তোমাকে এই ঘরে দেখি। তবে আমিই ঘর থেকে চলে যাব।
নূরীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আসাদ বেরিয়ে গেল।

নূরী কিছুক্ষণ সোফায় বসে রইলো। রাগে সে ফুসছে। আসাদের এমন রুক্ষ ব্যবহার সে মেনে নিতে পারছে না। নূরী তার মা ইয়াসমিনকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানালো। তার মা বলল নাতিকে নিয়ে চলে আসতে। কিছুদিন দূরে থাকলে আসাদ এমনিতেই সোজা হয়েছে যাবে। বিয়ের পর থেকেই নূরী যেকোনো প্রয়োজনে তার মায়ের দ্বারস্থ হয়। মায়ের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ীই কাজ করে।
নূরী তার ব্যাগপত্র সব গুছাতে লাগল। এমন সময় তার বাবা জামান ফরিদের ফোন এলো।
- এসব কি শুনছি মা?
- তোমাদের জামাইয়ের মাথা নষ্ট হয়েছে।
- এখন তুই কি করছিস?
- এইতো ব্যাগ গুছালাম। চলে আসবো।
- স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসবি?
- কিছুদিন দূরে থাকলে ওর মাথাটা ঠিক হবে।
- আজীবনই তো তোর মায়ের কথা শুনলি। এবার আমার একটা কথা শুন।
- কি কথা বাবা?
- এভাবে ঘর ছেড়ে এলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
- তাহলে কি করব? রাতে ও ঘরে এলে আরেকটা তামাশা করবে। সোসাইটিতে মান-সম্মান নষ্ট হবে। তারচেয়ে বরং এখন চলে আসি। ওর মাথা ঠান্ডা হলে পরে সব ঠিক হবে।
- আগে আমার কথাটা শুন।
- আচ্ছা বল।
- তোর শাশুড়িকে ফোন করে সব বল। উনিই একটা ব্যবস্থা করবেন।
- কি বলো বাবা? আমি এটা পারব না।
- কেন পারবি না? সবকিছু যদি মাকে জানাতে পারিস তাহলে শাশুড়িকে জানাতে দ্বিধা কিসের? তিনিও তো তোর মায়ের মতো।
- না মানে …… আসলে ……
- তোর মাঝে এই দ্বিধাবোধ কেন জেগেছে তা কি একবারও ভেবেছিস? এর জন্য তুই-ই দায়ী। একবার নিজের অন্তরটাকে জিজ্ঞেস করে দেখ। নিজের মায়ের কথা শুনে শুনে তোর অবস্থায় কোথায় এসেছে তা তুই একবার চিন্তা কর। তারপর আমার কথাটা ভেবে দেখিস। বাকিটা তোর ইচ্ছা।

বেশ রাত করে আসাদ ঘরে ফিরলো। ঘরের ভেতরে নূরীর উপস্থিতি নেই দেখে মনে মনে বেশ খুশি হলো। মানসিক ভাবে আসাদ ভীষণ ক্লান্ত। সোফাতেই শুয়ে পড়লো। পরেরদিন সকালে উঠে আসাদ বেশ কিছুক্ষণ শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে রইলো। পানির প্রতিটি ফোঁটার সাথে নিজের সিদ্ধান্ত গুলো সাজিয়ে নিচ্ছে। গোসল শেষে আসাদ যেন এক নতুনরূপে বের হলো। উজ্জীবিত ও আনন্দিত। গোসল করতে করতে নিজের বানানো নতুন রুটিন অনুযায়ী কাজ শুরু করে দিলো। শুরুতেই বেডরুমে থাকা নূরী ছবি আলমারিতে রেখে দিলো। তারপর নিজের খাবার নিজে তৈরি করলো। রান্নাঘরের কোথায় কি আছে তা আসাদ ভালো করেই জানে। কেননা মাঝেমাঝে সকালের খাবারটা সে নিজেই বানাতো। রান্না শেষে ঘর দুয়ার নিজে পরিষ্কার করল। তারপর অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে পড়লো। এসব আসাদ এজন্যই করেছে যাতে কোনো ভাবেই নূরীর অভাব মনের মধ্যে না উঠে। অফিসে এসে অফিশিয়াল ব্যস্ততা কাটিয়ে পার্সোনাল ব্যস্ততায় জুড়ে গেল আসাদ। নূরী ও তার পরিবারের সমস্ত নাম্বার ব্লক করে দিলো। এমনকি প্রতিটি সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকেও ব্লক করে দিলো।

আসাদের-নূরীর বৈবাহিক সম্পর্কটা শুরুতে ভালোই ছিল। পারিবারিক ভাবে তাদের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের খুব অল্পদিনের মধ্যে নূরী সকলের মন জয় করে নিয়েছিল। এভাবে সবকিছু ভালোই চলছিল। কিন্তু নিয়াজ জন্মের পর নূরীর মাঝে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আগে পরিবারের সবকিছুই সে করতো। কিন্তু নিয়াজ জন্মের পর তার কাজ ব্যতীত কোনো কিছু করতে পা বাড়ায় না। যদিও সেটার প্রয়োজন হয় না। আসাদের মা লাইলা সবই নিজে করেন। তবুও নূরীর একরোখা স্বভাব আসাদের চোখে পড়ে। কিছুদিন পর নূরী আলাদা ফ্ল্যাট নেওয়ার জন্য আসাদকে চাপ দিতে শুরু করে। আসাদ সরাসরি না জানিয়ে দেয়। সে বলে দেয় পরিবারের সাথেই থাকবে। ব্যস শুধু হয় সংসারে অদৃশ্য অশান্তি। কোনো ঝগড়া নেই, বিবাদ নেই তবুও ঘরের মধ্যে শান্তি নেই। নূরী কারও সাথে ঠিকমতো কথা বলে না, নিয়াজ কাঁদলেও তাকে ধরে না, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে সারাক্ষণ কাজ করতে থাকে, এসব আচরণে নূরীর মনোভাব লাইলা বুঝতে পারেন। অতঃপর স্বামীর মাধ্যমে আসাদকে নতুন ফ্ল্যাট উপহার দিয়ে তাদেরকে আলাদা করে দেন। প্রথমে আসাদ যেতে দ্বিমত পোষণ করে। কিন্তু মায়ের কথায় পরিশেষে বাধ্য হয়। বিগত দুই বছর ধরে আসাদ তার অফিসের সন্নিকটেই এক ফ্ল্যাট থাকছে। যেখান থেকে তার বাবা-মায়ের বাসা ঘন্টা তিনেকের পথ।

নাস্তার টেবিলে মনমরা হয়ে বসে আছে নূরী। খাবার সামনে তবুও খিদে নেই। ইয়াসমিন মেয়েকে তাড়া দিয়ে বললেন‚ “কি হলো? খাচ্ছিস না কেন?” জামান বলে উঠলেন, “মাথায় চিন্তা থাকলে কি মুখে খাবার যায়?”
- মেয়েটাকে তুমি একদম সহ্য করতে পারছো না। কি সমস্যা তোমার‚ হু?
- আমার কোনো ……
- উফফ! তোমরা থামবে?
ইয়াসমিনঃ মা, তুই একদম চিন্তা করিস না। দেখিস আসাদ কিছুদিনের মধ্যেই তোকে নিতে আসবে।

নূরী উদাস মনে বারান্দায় বসে আছে। নিয়াজ এসে বলল, “মা, আমরা বাবার কাছে কবে যাব?”
- এই তো বাবা, খুব শীঘ্রই।
- বাবাকে ফোন দাও না। আমি কথা বলব।
- বাবা এখন ব্যস্ত আছে। পরে ফোন দিব। তুমি যাও রুমে গিয়ে খেলো।
নিয়াজ চলে গেল। নূরী মোবাইল হাতে নিয়ে ভাবতে লাগল ফোন করবে কিনা। অনেক চিন্তাভাবনার পর ফেসবুকে গেল। কিন্তু আসাদের আইডি খুঁজে পেল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর নিশ্চিত হলো আসাদ তাকে ব্লক করেছে। রাগের মাথায় নূরী কল দিলো। কিন্তু সেখানেও নট রিচেবল। এবার নূরীর রাগ আরও বেড়ে গেল। ব্যাপারটা সে তার মাকে জানালো। ইয়াসমিন বললেন এসব ভয় দেখানোর পদ্ধতি। এর কিছুদিন পর এক দুপুরে যা হলো তাতে নূরী সহ তার বাবা-মা হতবাক হয়ে গেলেন। ডাকপিয়ন এসে একটা চিঠির খাম দিয়ে গেছে। যেখানে উল্লেখ আছে নূরীর কাছ থেকে আসাদ ডিভোর্স চেয়েছে। সেই সাথে নিয়াজকে নিজের কাছে রাখার নোটিশও আছে। ডিভোর্স পেপার হাতে নিতেই নূরী কান্নায় ভেঙে পড়লো। তার বাবা-মা তাকে শান্ত্বনা দিয়েও থামাতে পারছে না। কাঁদতে কাঁদতেই নূরী ব্যাগপত্র সব গুছালো। নিয়াজও বারবার কেঁদে কেঁদে জিজ্ঞেস করলো মা তুমি কাঁদছ কেন? নূরী কোনো জবাব দিলো না। তবে ইয়াসমিন বলল তোমার বাবা কাঁদিয়েছে। এদিকে আসাদের সাথে নূরীর পরিবারের কেউই যোগাযোগ করতে পারছে না। আসাদের অফিসে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।

নূরী বাসায় চলে এলো। সঙ্গে তার বাবা-মা ও নিয়াজ আছে। বাসায় একটা মেয়েকে দেখে নূরীর মাথায় আগুন ধরে গেল।
- এই মেয়ে কে তুই?
- আগে কন আমনে কেডা? কারে চান?
- কতবড় সাহস! আমার ঘরে থেকে আমাকেই বলা হচ্ছে আমি কে?
- আমনেরে তো আমি এহানে জীবনেও দেহি নাই।
নূরী ঘরে ঢুকতে চাইলে মেয়েটা চিল্লাচিল্লি শুরু করে। ফলে সামনের ফ্ল্যাটের মহিলা বেরিয়ে আসেন। তিনি জানান নূরী হলো আসাদের স্ত্রী। আর মেয়েটার নাম সীমা; কাজের মেয়ে। নূরী সোজা বেডরুমে এলো। বেডরুমের ছবিটা না দেখে সে আবারও কান্না শুরু করলো। তা দেখে ইয়াসমিন বলল, “আহা! থাম তো। এত ভেঙে পড়লে চলে? আগে ও আসুক তারপর কথা বলব।” নূরী কাঁদতে কাঁদতে বলল, “মা, এটা ও কিভাবে পারলো? আমার কথা কি ওর একবারও মাথায় আসেনি? আমি কিভাবে বাঁচবো সেটা কি একবারও ভাবেনি?”
- চিন্তা করিস নাতো। তোর বড় মামা হাইকোর্টের উকিল। ডিভোর্স বললেই হয়ে গেল নাকি? বিয়ে কি ছেলে খেলা?
ইয়াসমিনের কথা শুনে জামান বললেন, “তুমি কি চাও এসব নিয়ে মেয়েটাকে আদালতে পাঠাতে?”
- আসাদ তো সেটাই চাচ্ছে। ও কি ভেবেছে? আদালতের নোটিশ দেখলেই আমরা ভয় পেয়ে যাব? লড়তে আমরা ভালোভাবেই জানি। এটা এবার ওকে বুঝিয়ে দিব।
জামান আর কথা বাড়ালেন না। কিছু সময় পর নূরীকে একা পেয়ে জামান এসে বললেন, “একটা কথা বল তো। তুই কি আসাদের সাথে সংসার করতে চাস?”
- এটা কেমন কথা বাবা? আমার চোখের ভাষাও কি তুমি বুঝ না?
- আসাদকে তো তুই ভালো করেই চিনিস। ও যে সিদ্ধান্ত নেয় তা সেটাতেই অটল থাকে। তবে ওর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ক্ষমতা শুধুমাত্র একজনের আছে। এই ব্যাপারে আমি তোকে আগেও বলেছি।

রাতে যথাসময়ে আসাদ বাসায় ফিরলো। নূরীকে দেখে ভীষণ রেগে গেল।
- তুমি এখানে কোন সাহসে? কোর্টের নোটিশ পাওনি? এক্ষুণি বেরিয়ে………
আসাদের কথা শেষ হওয়ার আগেই তার মা লাইলা বলে উঠলেন, “এসব কি আসাদ? কেউ স্ত্রীর সাথে এভাবে আচরণ করে? আমি কি তোকে এই শিক্ষা দিয়েছি?” আসাদ তার মাকে দেখে ভীষণ অবাক হলো। আসাদ বুঝলো যে নূরীই সব জানিয়েছে। ডিভোর্সের ব্যাপারটা আসাদ কাউকে জানায়নি। আসাদ চুপ হয়ে গেল। লাইলা এগিয়ে এসে আরও বললেন, “বিয়েটা ছেলেখেলা নয়। ডিভোর্সের মতো একটা জঘন্য পদক্ষেপ নিতে তোর কি একবারও বুক কাঁপেনি? কমপক্ষে ছেলেটার কথা ভাবতি।”
- তুমি জানো না মা, আমি কতটা চাপের মধ্যে পড়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।
- মানলাম বউমা ভুল করেছে। কিন্তু সেটা তুই আমাদেরকে জানাতে পারতি। নাকি আমাদেরকে এখন আর প্রয়োজন মনে হয় না? দূরে থাকি বলে পর করে দিয়েছিস?
- এভাবে বলছ কেন মা? আমি তো আজও তোমার অনুমতি ছাড়া কিছু করি না।
- তাহলে এমন একটি সিদ্ধান নেওয়ার পূর্বে আমাকে জিজ্ঞেস করতি।
- আমার ভুল হয়ে গেছে মা।
- এসব যাতে ভবিষ্যতে আর না শুনি। তোরা যদি এমন করতে থাকিস তাহলে নিয়াজের কি হবে ভাবতে পারছিস? ও তো মানসিক সমস্যায় ভুগবে।
আসাদ মাথা নিচু করে নিলো। লায়লা বললেন, “যা হাতমুখ ধুয়ে আয়। ভাত দিচ্ছি।” আসাদ ভেতরে চলে গেল।

রাতের খাবার খেয়ে সবাই নিজ নিজ রুমে চলে গেল। লায়লার রুমে এলো নূরী।
- কিছু বলবা মা?
- আমি আগে যা করেছি তার জন্য অত্যন্ত লজ্জিত। আমি বুঝতে পারিনি। আপনার জন্য আমার সংসারটা বেঁচে গেল।
- পাগল মেয়ে! সংসার না হয় তোমার। কিন্তু পরিবার তো আমারও। আমি থাকতে পরিবার এলোমেলো হতে দিব না।
- আপনি সত্যিই অনেই ভাগ্যবতী যে আসাদের মত আদর্শবান ছেলে পেয়েছেন। কেননা আজকালকার ছেলেরা তো বউয়ের কথায় উঠেবসে। অথচ আসাদ এমন না। তার কাছে আপনার স্থান সবার উপরে।
নূরী চলে গেল। লায়লা মনে মনে বলল আসাদ কেন ভালো হবে না? তার শরীরে তো জাবেদ শিকদারের রক্ত বইছে। একদা লায়লাও নূরীর মতো ছিল। সংসার বিভক্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু জাবেদের দৃঢ়তা ও পিতামাতার প্রতি অগাধ ভক্তির জন্য লায়লা সফল হয়নি। তবে এতে লায়লা এখন খুশি। কেননা তখন সে ভুলটা না বুঝলেও পরে বুঝতে পেরেছিল। জাবেদের রক্তই তো আসাদের মাঝে বহমান।

আসাদ শুয়ে পড়লো। নূরী এসে তার পাশে বসলো।
- এখনো রাগ করে আছ?
- তোমার কি বিন্দুমাত্র লজ্জা শরম নেই? কোন মুখে তুমি মাকে ডেকেছ? অতীতে কি করেছ তা কি ভুলে গেছে?
- সংসার বাঁচাতে আমি সব করতে রাজি।
- একটা কথা বলি স্মরণে রেখো। যেই মেয়ে অন্যের বুদ্ধিতে সংসার করে তার সংসার টিকে না।
- ওভাবে বলো না। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো কিভাবে? আচ্ছা তোমার কি একবারও আমার কথা চিন্তায় আসেনি? এভাবে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিলে?
- পরিস্থিতি মাঝেমাঝে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। এই যে এখন তুমি কত বুঝদারের মতো কথা বলছো। অথচ কিছুদিন আগেও তোমার মাঝে অহংকার ভরপুর ছিল। এর ফলেই আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।
নূরী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর আসাদের বুকে মাথা রেখে বলল, “আমি চেষ্টা করব নিজেকে শুধরানোর।”
- সেটাই যেন হয়। এতেই শান্তি।
আসাদের বুকে মাথা রেখে নূরী শুয়ে পড়লো। ভাবতে লাগল আজ যদি তার শাশুড়ি এগিয়ে না আসতো তাহলে হয়তো আসাদের বুকে আর কখনোই মাথা রাখা হতো না। অথচ নূরী তার শাশুড়ির সাথে অনেক অন্যায়-অবিচার ও দুর্ব্যবহার করেছিল। তবুও তিনি নূরীর সংসার বাঁচাতে এগিয়ে এলেন। হয়তো এজন্যই বাবা-মাকে পরিবারের ঢাল বলা হয়।

সমাপ্ত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.