![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্পের নামঃ মন।
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।
“প্লিজ ওপেন দ্যা ডোর।” বাক্যটা কলিংবেলে অনবরত বেজেই চলেছে। নূরী এসে দরজা খুলল। হাতে কিছু কাগজপত্র ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে মোটা ফ্রেমের চশমা পরিহিত একজন মধ্যবয়স্ক লোক তার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে বেশ ভদ্র মনে হচ্ছে। শার্ট ইন করা‚ চুলগুলো যেন মায়ের হাতে আঁচড়ানো। মাথায় তেল দিয়েছে তা বুঝা যাচ্ছে। কম্পানির লোকজন নাকি? কিন্তু সাধারণত কম্পানির লোকজন সন্ধ্যার পর আসে না। তারা তাদের ডিউটি পাঁচটার আগে বা বড়জোর সন্ধ্যার আগেই শেষ করে ফেলে। এখন ঘড়ির কাটা আটটা ছুঁইছুঁই। তবে এই লোকটা কে? আগে কখনো দেখেছে বলে মনে হচ্ছে না। অপরিচিত কাউকে দেখলে নূরী তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। পুলিশ হওয়া তার জীবনের লক্ষ্য। তাই ছোট থেকেই নিজের মধ্যে পুলিশি ভাবটা লালন করে যাচ্ছে। লোকটার কথায় নূরীর ধ্যান ভাঙলো। “আসসালামু আলাইকুম। এটা কি আহমেদ শরিফের বাসা?”
- জ্বি। কিন্তু আপনি কে?
- আমি আসাদ। ওর বাল্যকালের বন্ধু।
নূরী কিছুটা চমকালো। বাবার মুখে এই নামটা সে কখনো শুনেনি। অথচ লোকটা বলল সে তার বাবার বাল্যকালের বন্ধু। কেমন বাল্যকালের বন্ধু যে আজ পর্যন্ত ঘরেও আসেনি। তাহলে আজই-বা কেন এলো? নিশ্চয়ই কোনো ধান্দা আছে। নূরী তার বাবাকে ডাক দিলো। আহমেদ শরিফ এসে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে রইলেন। আসাদকে তিনি চিনতে পারছেন না। আসাদ মুচকি মুচকি হাসছে। বেশ রহস্যময় হাসি। নূরী চুপচাপ দুজনকেই পর্যবেক্ষণ করছে। আসাদ গাল ভর্তি উচ্ছ্বাস ও হাসি নিয়ে বলল, “চিনতে পারছিস না তাই তো? আমি কিন্তু ঠিকই তোকে চিনতে পেরেছি। মাথার সেই দাগটা এখনো আছে।” নূরী তার বাবার মাঝে অসস্তিবোধ দেখতে লাগল। আসাদ অট্টহাসি দিয়ে বলল, “আমি আসাদ। মোঘলগঞ্জের আসাদ। মনে পড়লো? আরে ব্যাটা যার সাথে যাত্রাপালা, জারিগান দেখতি। এখনো মনে পড়েনি? লতাদিদি………” আহমেদ শরিফের মস্তিষ্ক যেন এতক্ষণ পর কাজ শুরু করলো। সাথেসাথে হ্যাঁ হ্যাঁ বলে উচ্চ স্বরে চিত্কার দিয়ে উঠলেন, “আরে আসাদ, বন্ধু আমার! কতদিন পর!” বলে আসাদকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর ভেতরে নিয়ে গেলেন। তবে নূরীর মনে “লতাদিদি” শব্দটা গেঁথে রইলো। কে এই লতাদিদি? যার কথা শুনা মাত্রই বাবার স্মৃতিশক্তি ফিরে এলো। সোফায় বসতে বসতে আসাদের কাছে আহমেদ জানতে চাইলেন এখানের ঠিকানা কিভাবে পেল। জবাবে আসাদ বলল গ্রাম থেকে ঠিকানা সহ বিস্তারিত সব জেনেছে।
আসাদ ও আহমেদ শরিফ বাল্যকালের বন্ধু তবে তারা সমবয়সী নয়। আহমেদ শরিফ যখন মেট্রিক দিচ্ছিলেন তখন আসাদ হাইস্কুেলর গন্ডিতে পা রেখেছিল। একই গ্রামের একই স্কুলের। সেই সূত্রে তারা একত্রে যাওয়া আসা করতো। এতে তাদের সম্পর্ক বেশ ভালো হয়েছিল। এছাড়াও আসাদ শারীরিক দিক থেকে বড়দের মতো ছিল। ফলে তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বে রূপ নিতে দেরি হয়নি। দুজনে একত্রে মিলে দূরদূরান্তে যাত্রাপালা দেখতে যেতো, মেলায় যেতো, নৌকা বাইচ দেখতে যেতো, নদীতে একত্রে সাতার কাটতো। বেশ গাঢ় বন্ধুত্ব ছিল তাদের মাঝে। তবে এই বন্ধুত্ব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। আসাদের বাবার ট্রান্সফার হওয়ায় তারা শহরে পাড়ি জমায়। আর আহমেদ শরিফ তার বাবার কৃষি হাল ধরতে গ্রামেই থেকে যায়। মেট্রিকের রেজাল্ট বের হতে না হতেই বিয়ের পিড়িতেও বসে যায়। যত দ্রুত বিয়ে হয় ঠিক ততোই দ্রুত নূরী জন্ম নেয়। নূরী জন্ম নিতেই যেন আহমেদ শরিফের ভাগ্য আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। কৃষিতে তার ব্যাপক মুনাফা হয়। হাতে মোটা অংকের টাকা জমা হতে থাকে। বছর পাঁচেক যেতেই সে শহরে এসে কাঁচামালের ব্যবসা শুরু করে। ভাগ্য সেখানেও তার সহায় হয়। ব্যবসা জমজমাট হতেই সে তার পরিবারকে শহরে নিয়ে আসে। তারপর থেকে নূরী শহরেই লেখাপড়া করতে থাকে। মাঝেমাঝে আহমেদ শরিফ গ্রামে গিয়ে সবকিছুর তদারকি করে আসে। অন্যদিকে আসাদও বেশ নাম অর্জন করেছে। শহরে এসে ভালো স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। পড়ালেখাও মন দিয়ে করেছে। তার লক্ষ্যই ছিল বাবার মতো সরকারি চাকুরিজীবী হবে। সেই লক্ষ্যে দিনরাত এক করে পড়েছে। সফলতার সিঁড়ি একের পর এক ডিঙিয়ে পেরোচ্ছিলোই ঠিক তখনই সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তার বাবা-মা মারা যান। বাবার সরকারি পেনশন ও নিজের উপার্জন দিয়ে আসাদ যথাযথভাবে তার বিসিএস শেষ করে। বর্তমানে সে সচিবালয়ে কর্মরত আছে। বেশ মোটা অংকের বেতন। সেই সাথে ক্ষমতা তো আছেই। এতসবের মাঝেও এখন পর্যন্ত আসাদ বিয়ে করেনি। এই তথ্যটায় বেশ বিস্মিত হলেন আহমেদ শরিফের পরিবারের সবাই। জীবনের গল্প করতে করতে রাত এগারোটা বেজে গেল। এই সুযোগে নূরীর মা জাহানারা মাংস-পোলাও রান্না করে ফেলেন।
খাবার টেবিলে বসেছে সবাই। খেতে খেতে আহমেদ শরিফ বললেন, “যদি সময়মতো বিয়ে করতি। তাহলে আজ আমার মেয়ের মতো তোরও ছেলেমেয়ে থাকতো। এখন তো বুড়ো হয়ে গেছিস। বউ পাবি বলে মনে হয় না।” আহমেদ শরিফ হেসে উঠলেন। জাহানারা খোচা মেরে চুপ করতে বললেন। কিন্তু আহমেদ শরিফ হেসেই যাচ্ছেন। জাহানারা বাটি থেকে মাংসের টুকরো নিয়ে আসাদের প্লেটে দিতে লাগলেন। কিন্তু আসাদ বাধা দিয়ে বললেন, “না ভাবী আর দিয়েন না।” সাথেসাথে আহমেদ শফিক চেঁচিয়ে উঠে বললেন, “কিসের ভাবী? তুই তো অবিবাহিত। তোর মুখে ভাবী ডাক শোভা পায় না।” আবারও হেসে উঠলেন তিনি। জাহানারা আবারও চোখ রাঙানি দিলেন। আসাদ নিম্নস্বরে বললেন, “সচিবালয়ে চাকরি পাওয়ার কিছু মাস পর বিয়ের পিড়িতে বসার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু অভিভাবক বিহীন হওয়ায় সুপাত্রী পেলাম না। একটার সাথে বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরে জানতে পারি মেয়ে ও তার পরিবারের চোখ আমার পদ ও অর্থের দিকে। তাই পিছিয়ে আসি। এরপর আর বিয়ের দিকে পা বাড়ানোর সাহস হয়নি। মাঝেমাঝে একাকীত্ব গ্রাস করে। তবে কাজের চাপে নিজেকে ব্যস্ত রাখি। মনে মনে শান্ত্বনা দিয়ে বলি এইতো ভালো আছি।” আসাদের কথা শুনে নূরী ব্যতীত সবার মন ভারী হয়ে উঠলো। নূরী তার স্বভাবসুলভ সবকিছুতেই সন্দেহ খুঁজে। আসাদকে আশ্বস্ত করে আহমেদ শরিফ বললেন, “তুই কোনো চিন্তা করিস না। তোর বিয়ে একেবারে যোগ্য পাত্রীর সাথেই দিব। এই দায়িত্ব আমার।” খাবার শেষে আসাদ চলে গেল। তবে যাওয়ার আগে ব্যাগ থেকে উপহার বের করে সবাইকে দিলো। আহমেদ শরীফের জন্য পাঞ্জাবি-পায়জামা, জাহানারার জন্য শাড়ি ও নূরীর জন্য সেলোয়ার-কামিজ।
বেশ কিছুদিন চলে গেল। আসাদকে আসতে বললেও ব্যস্ততার কারণে সে আসতে পারছে না। তবে সে কথা দিয়েছে আগামী শুক্রবার আসবেই। বৃহস্পতিবার রাতে ঘুমানোর সময় আহমেদ শরিফ বেশ গম্ভীর হয়ে শুয়ে শুয়ে পাখার দিকে তাকিয়ে আছেন। যখন তিনি চিন্তিত হোন এমনটাই করেন। এটা জাহানারাও জানেন। তাই তিনি বললেন‚ “কি নিয়ে এত ভাবছো?”
- আমি আসাদের বিয়ের ব্যাপারে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিদ্ধান্তটা সবাই কিভাবে নিবে তা নিয়েই ভাবছি।
- কি সিদ্ধান্ত?
- আমি আসাদের সাথে নূরীর বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জাহানারা চমকে উঠে বললেন‚ “কি যাতা বলছো? নূরী মাত্র এইচএসসি দিলো। তাছাড়া আসাদ তো তোমার বন্ধু। এটা কিভাবে সম্ভব?”
- আরে ধুর ওসবে কিছু আসে যায় না। এই বিয়ে হলে দুজনের উপকার হবে। আসাদ যে সমস্যার আছে আমিও ঠিক একই সমস্যায় আছি। আসাদ সুপাত্রী পাচ্ছে না। আর আমি সুপাত্র পাচ্ছি না। নূরীর জন্য অনেক পাত্র পাওয়া যাবে। কিন্তু সবার নজর থাকবে আমাদের সম্পত্তির দিকে। কেননা নূরী আমার একমাত্র মেয়ে।
জাহানারা কোনোমতেই রাজি হলেন না। তাতে অবশ্য আহমেদ শরিফ খুব একটা তোয়াক্কা করলেন না। সকাল হতেই ঘরের মধ্যে বোমা বিস্ফোরিত হলো। নূরীকে জানানোর পর সে তো রেগেমেগে আগুন হয়ে উঠলো। “এটা কিভাবে সম্ভব বাবা? সে তোমার বন্ধু। মানে আমার কাকা।” এমন যুক্তি দিলো নূরী। আহমেদ শরিফ ধমক দিয়ে বলেন, “চুপ। ও কি আমার মায়ের পেটের ভাই নাকি? ও ছেলে হিসেবে যেমন নম্র তেমনই ভদ্র। লাখে খুঁজেও এমন পাত্র পাওয়া যাবে না।” নূরী তার মায়ের কাছে গেল। কিন্তু সেখানেও কোনো ফল পাওয়া গেল না। কেননা তিনি স্বামী ভক্ত। স্বামীর উর্ধ্বে কথা বলেন না। নূরী রাগে-দুঃখে নিজেকে রুম বন্দী করলো। সকাল গড়িয়ে বিকাল হতেই জাহানারার সুর বদলে গেল। তিনিও এখন স্বামীর সুরে সুর মিলিয়ে বলছেন, “পাত্র ভালো। একটু বয়স্ক হলেও সমস্যা নেই। তোর বান্ধবীদের বিয়ে দেখিসনি? আজকাল এমনই হয়।”
রাতে আসাদ এলো। নূরীর চেহারায় রাগের পাশাপাশি সাজগোজের ভাবও আছে। খাবার টেবিলে হরেকরকমের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। আসাদ বলল, “আরে ভাবী এসবের……” ভাবী বলার সাথেসাথেই আহমেদ শরিফ চিত্কার করে বললেন, “চুপ। কিসের ভাবী? তুই এখনো অবিবাহিত।” আসাদ কিছুটা আঁতকেই উঠলো। তবে জাহানারা পরিবেশটা সামলে নিলেন। খাবার শেষে নূরী তার রুমে চলে গেল। সময় বুঝে কথাটা জাহানারাই শুরু করলেন। সব শুনে আসাদ লাফিয়ে উঠে বলল, “এটা কিভাবে সম্ভব? নূরী আমার বন্ধুর মেয়ে।”
- আরে গাধা তাতে কি? রক্তের সম্পর্ক তো নেই। তাছাড়া আমাদের নবিজীও তাঁর বন্ধু আবু বকর (রাঃ) এঁর মেয়েকে বিয়ে করেছেন।
- কিন্তু লোকে কি বলবে?
- ধুর তোমার লোক! লোকের কথা কি আসে যায়? লোকের কাজই তো বলা।
বেশ ধুমধাম করে নূরী ও আসাদের বিয়ে হয়ে গেল। বিদায়ের সময় নূরী একগাদা রাগ নিয়ে তার বাবাকে বলল, “আমি আর এই ঘরে পা রাখবো না।” নূরীর বাবা হেসে বললেন‚ “যাক তাহলে বিপদ থেকে পুরোপুরি বাঁচলাম। হা হা হা।”
বাসরঘরে আসাদ কাছে আসতেই নূরী বলল, “কাছে আসবেন না। যেদিন আপনার সব বন্ধুর বিয়ে হয়ে যাবে। সেদিন কাছে আসবেন। নয়তো ভবিষ্যতে দেখা যাবে আমার মেয়েটার সাথে আপনার কোনো বন্ধুর বিয়ে দিতে হচ্ছে।” আসাদ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। নূরী আরও বলল, “আর শুনুন, আমাদের কোনো ব্যাপার আপনার বন্ধু অর্থাৎ আমার বাবাকে জানাবেন না। একদম না। নয়তো খুব খারাপ হবে বলে দিল্মম।”
আসাদ হাসি দিলো।
- এমন হ্যাবলার মতো হাসবেন না। যান ঘুমান।
- আমি বিছানা ছাড়া ঘুমাতে পারি না।
- তাহলে চুপচাপ শুয়ে পড়ুন।
আসাদ চুপচাপ শুয়ে পড়লো। নূরীও চুপচাপ শুয়ে পড়লো। সারারাত ধরে নূরীর ঘুম হয়নি। অথচ আসাদ নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। নূরী কিছুক্ষণ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কি অদ্ভুত মানুষটা! বাসররাতে স্ত্রীকে পাশে রেখে কেউ এভাবে ঘুমায়? কোনো অনুভূতি নেই নাকি? গাধা একটা। নূরী কিছুক্ষণ বিড়বিড় করে ঘুমিয়ে পড়লো।
রাতের অন্ধকার দূর করতে ভোরের সূর্য উঠলো। এপার্টমেন্টের সবাই একে একে এসে নূরীকে অভিনন্দন জানাতে লাগল। পুরুষ বিভাগ থেকে সবাই শুভ কামনা জানিয়ে চলে গেল। তবে নারী বিভাগ থেকে অনেকে নূরীর সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো। তুমি অনেক ভাগ্যবতী, এমন ছেলে আজকাল হয় না, আমার একটা মেয়ে থাকলে ওকেই আমার জামাই বানাতাম। এমন সব কথায় নূরী বেশ হতবাক হলো। এই বুড়োর সাথে কেউ মেয়ে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে থাকে? এপার্টমেন্ট জুড়ে আসাদের প্রশংসার ফুলছড়ি। নূরী বুঝলো সত্যিই আসাদ একটা ভালো ছেলে।
কিছু একটা খোঁজার উদ্দেশ্যে নূরী এই ড্রয়ার সেই ড্রয়ার দেখতে লাগল। হঠাৎ একটা ড্রয়ারে কক্সবাজারের দুটা টিকিট পেল। আজকের তারিখ। নূরী বুঝলো বিয়ে নিয়ে আসাদ অনেক কিছুই প্ল্যান করেছিল। কিন্তু সবই নূরীর জন্য থেমে আছে। কেননা বাসররাতে সে স্ত্রীর মতো আচরণ করেনি। টিকিট গুলো হাতে নিয়ে ভাবতে লাগল আসাদ একটু বয়স্ক ঠিকই তবে মনের দিক থেকে খুব ভালো। যার প্রমাণ এই এপার্টমেন্টবাসী। এছাড়াও আসাদ যদি ভালো না হতো তবে নূরীর বাবা কখনোই তার হাত আসাদের হাতে দিতেন না। নূরী ভালোভাবেই জানে তার বাবা তাকে কতটা ভালোবাসেন।
নূরী ব্যাগ গুছাতে লাগল। তা দেখে আসাদ বলল, “এভাবে যাওয়াটা ঠিক হবে না। শরিফ মনে কষ্ট পাবে।” নূরী চট করে ঘুরে দাঁড়ালো। কোমড়ে হাত দিয়ে রাগি দৃষ্টিতে বলল, “খবরদার আর কখনো আমার বাবার নাম ধরে ডাকবে না। উনি এখন তোমার শ্বশুর। ওসব বন্ধু বন্ধু খেলা শেষ বলে দিলাম।”
- বাপরে! তোমার এত রাগ কেন? এসব ওর প্রশ্রয়েই হয়েছে, তাই না?
- ওর মানে কি? উনার বলো। বলো।
- হ্যাঁ হ্যাঁ উনার উনার।
আসাদ ভয়ার্ত চেহারা দেখে নূরী মনে মনে হাসি দিলো। এতক্ষণে আসাদের হাতের কাগজের দিকে তার দৃষ্টি পড়লো।
- হাতে ওটা কি?
- বন্ধুদের লিস্ট।
- লিস্ট দিয়ে কি করছো? দাওয়াত করবে নাকি?
- দেখলাম যে আমার সব বন্ধুদেরই বিয়ে হয়ে গেছে। তুমিই তো রাতে বলেছিলে।
এবার নূরী খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
- রাগী মেয়েদের হাসি বুঝি সুন্দর হয়!
- বুড়ো হয়েছ কিন্তু মনের ভাব যায়নি।
- আমি মোটেই বুড়ো হইনি। তাছাড়া বয়স দিয়ে কি হয়, মনটাই মূখ্য। বাদ দাও এসব। ব্যাগ গুলো রেখে দাও। আমি সময় করে তোমাকে ওর মানে আমার শ্বশুরের বাসায় নিয়ে যাব।
- আমি তো সেখানে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গুছাইনি। আমরা কক্সবাজার যাব। অহেতুক টিকিট গুলো নষ্ট হবে কেন?
আসাদ মুখ ভর্তি হাসি দিলো। নূরী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আসাদের মধ্যে এখনো একটা বাচ্চা-বাচ্চা ভাব রয়েছে। নূরী বলল, “তুমিও সব গুছিয়ে নাও”
অতঃপর তারা কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ বিচে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে নূরী ও আসাদ রুমে ফিরলো। নূরী গোসল সেরে চুল মুছতে লাগল। এমন সময় আসাদের কল এলো। মোবাইল ড্রেসিং টেবিলে থাকায় নূরী নামটা স্পষ্টই দেখতে পেল। তার বাবার কল। আসাদ ফোন রিসিভ করতে এলো। নূরী বলল, “স্পিকার অন করে কথা বলো।” আসাদ কলটা রিসিভ করে স্পিকার অন করলো। শফিক বললেন, “কিরে চোর? চুপিচুপি কক্সবাজার চলে গেলি? একবার জানালিও না।” আসাদ একবার আড়চোখে নূরীর দিকে তাকালো। নূরী রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শফিক আরও বললেন, “কিরে কথা বলছিস না কেন?” আসাদ আমতা আমতা করতে লাগল। নূরী ফোনটা নিয়ে বলল, “এসব কি বাবা? তুমি ওর সাথে এভাবে কথা বলো কেন? ও তো তোমার জামাই। কেউ জামাইয়ের সাথে এভাবে কথা বলে?”
- ইয়ে মানে আসাদ…জামাই…ভালো থাকো। রাখি।
শফিক ফোনটা রেখে দিলেন।
নূরী ফিক করে হাসি দিয়ে বলল, “বন্ধু বন্ধু খেলা একদম বন্ধ বলে দিলাম।”
- নিষ্ঠুর তুমি। দুই বন্ধুকে আলাদা করে দিলে।
- তোমার বন্ধু শুধু আমি। আর কেউ না।
- কিন্তু আমি তো বুড়ো।
- পেটে একটা ঘুষি দিয়ে ভুড়ি বের করে দিব। আর কখনো নিজেকে বুড়ো বলবে না। তুমি আমার ইয়াং কচি বর।
- তাই বুঝি? তাহলে এসো বুকে এসো।
নূরী আর দেরি করলো না। আসাদের বুকে নিজেকে সমার্পণ করে দিলো। এখানেই যে তার শান্তি ও সুখ। কেননা মানুষটার মন একদম খাঁটি। এমন মানুষ পাওয়া তো দুষ্কর। রত্ন পেয়েও অবহেলা করার মতো বোকা নূরী নয়।
.
সমাপ্ত।
©somewhere in net ltd.