![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্পের নামঃ একজন দাউনি।
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।
অন্ধকার রুমে হাত পা মুখ বাধা অবস্থায় দুটি চেয়ারে মুখোমুখি হয়ে বসে আছে এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা কায়সার খন্দকার ও অভিনেত্রী রুপা খান। আজ দুইদিন ধরে তাদেরকে এখানে বেধে রাখা হয়েছে। তারা বুঝেই উঠতে পারছে না, কেন তাদেরকে আটক করা হয়েছে? কেননা এই দুইদিনেও কেউ তাদের সামনে আসেনি। কোনো কিছু দাবিও করেনি। তবে আটকে রাখার কারণ কি? ক্ষুধার যন্ত্রণায় তাদের শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। আশেপাশে কারও উপস্থিতিও বুঝা যাচ্ছে না। ক্ষুধার যন্ত্রণাতেই মরে যাবে এমনটা ভাবছে তারা। তৃতীয় দিন সকালে একজন মুখোশধারী ছেলে এসে তাদের সামনে খাবার রাখলো। তারপর তাদের হাত ও মুখ খুলে দিয়ে কিছুটা দূরে হাতে একটা পিস্তল নিয়ে বসলো। কায়সার বলল, “কি চাও তুমি?” সাথেসাথেই মুখোশধারী লোকটা গুলি করলো। আর হাতের ইশারায় খাওয়ার নির্দেশ দিলো। রুপা একটা চিত্কার দিলো। পরক্ষণেই খাওয়া শুরু করলো। ক্ষুধার জ্বালায় যেন তারা সভ্যতা ভুলে গেছে। খাবার মুখের মধ্যে একের পর এক পুড়ে দিচ্ছে আর গিলছে। অথচ এরা উচ্চ সমাজের লোক। খাবার অত্যন্ত নম্রতার সাথে খায়। কিন্তু আজ সবকিছু ক্ষুধার সামনে তারা যেন ভুলে গেছে। খাওয়া শেষে লোকটা চলে গেল। হাতের বাধন খোলা থাকায় তারা আস্তেধীরে নিজেদেরকে চেয়ারের বাধন থেকে আলাদা করলো। কায়সার অনেক চেষ্টা করেও দরজা খুলতে পারলো না। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে মেঝেতে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ পর রুপা ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগল। কায়সার চুপচাপ বসে আছে। সে কখনো কল্পনাও করেনি রুপার সাথে এভাবে একটি আবদ্ধ রুমে সময় কাটাতে হবে। রুপালি পর্দায় তাদের প্রায়শই দেখা হয় তবে কেউ কারও সাথে প্রয়োজন ব্যতীত কথা বলে না। কেননা বিশ বছর পূর্বেই তাদের পথ পৃথক হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের বন্ধন থেকে একটি কাগজে দুজনের দুটি সইয়ে তারা আলাদা হয়ে গিয়েছিল। রুপালি পর্দায় দর্শকদের মনোরঞ্জন করলেও নিজেদের জীবনে অনেকেই অসুখী। তারই একটি উদাহরণ হয়েছিল কায়সার-রুপা।
চতুর্থ দিনে রুমে আরও দুজনকে আনা হলো। তাদেরকেও চেয়ারের সাথে বাধা হলো। এতদিন যাবত্ কায়সার-রুপা কিছু না বুঝলেও আজ কিছুটা বুঝতে পারলো। কেউ তাদেরকে তাদের অতীতের পাপের শাস্তি দেওয়ার জন্য এখানে একত্রিত করেছে। রুমে যে নতুন দুজনকে আনা হয়েছে তারা হলো ইমা ও জাবেদ। কায়সার যখন রুপালি পর্দায় একের পর এক সফলতা পাচ্ছে তখন ইমার সাথে তার পরিচয় হয়। ইমার আবেগ ভরা কথা, ন্যাকামী ভরা আচরণ এসবের মায়াজালে জড়িয়ে পড়ে কায়সার। ইমার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিল তত্কালীন অনেক অভিনেতা-পরিচালক। তবে কায়সারের সুবাদেই রুপালি পর্দায় তার আগমন ঘটে। দুজনের বেশ কিছু কাজ দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। ফলে দুজনের কাজ আরও বৃদ্ধি পায়। সেই সুবাদে দুজনের চলাফেরাও বাড়তে থাকে। এতে তাদেরকে নিয়ে পত্রিকা-ম্যাগাজিনে নানারকম গুঞ্জন উঠতে শুরু করে। ফলে রুপার সাথে কায়সারের মতবিরোধ শুরু হয়। ধীরে ধীরে সংসারে অশান্তি শুরু হতে থাকে। তখন তাদের তিন বছরের একটি বাচ্চা ছিল। তাদের এই ঝগড়াবিবাদ দিনদিন বাড়তেই থাকে। মানসিক যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে কায়সার রাতভর ঘরের বাইরে থাকতো। বন্ধু মহলে গিয়ে মদের নেশায় ডুবে থাকতো। তবে একটা সময় তাদের সংসার ভেঙেই গেল। যখন কায়সার জানতে পারলো রুপার সাথে জাবেদের ঘনিষ্ঠতার কথা। কায়সার কোনো জবাবদিহি করেনি। রুপাও কোনো জবাব দেয়নি। দুজনেই হাসিমুখে আলাদা হয়ে গেল। কোর্ট নির্দেশ দিলো সন্তান ছয় মাস কায়সারের কাছে আর বাকি ছয় মাস রুপার কাছে থাকবে। কিন্তু সময়ের সাথে সন্তানের ওপর থেকে দুজনেরই যেন মায়া উঠে গেল। তাই বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলো। আলাদা হওয়ার প্রায় দুই বছর পর কায়সার এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর মেয়েকে বিয়ে করে তার সাথে সংসার শুরু করে। এখন পর্যন্ত সেখানেই স্থায়ী আছে। রুপাও দুবাইয়ের এক ধনী বিত্তশালীর সাথে সুখেই আছে। তাদের জীবনের সবকিছুই ভালো ছিল। শুধুমাত্র এই চারটা দিন ছাড়া।
রুমে একটা ঘড়ি আছে। ঘড়ির কাটা পাঁচটার দিকে আসতেই দরজা খুলে একজন প্রবেশ করলো। চেয়ার নিয়ে তাদের সামনে বসলো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর উঠে সবার মুখের বাধন খুলে দিলো। কিন্তু ছেলেটার হাতে গুলি থাকায় কারও মুখ দিয়ে ভয়ে কথা বেরোচ্ছে না। ছেলেটি বলল, “কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন। তবে একে একে। লেডিস ফার্স্ট।”
ছেলেটি রুপার দিকে ইশারা দিলো। রুপা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তবে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে বলল, “আমাদেরকে কেন আটকিয়ে রেখেছন? আপনার কত টাকা চাই বলেন? আমরা ব্যবস্থা করে দিবো। কথা দিচ্ছি পুলিশকে কিছু জানাবো না।”
- সময়ের মূল্য দিতে পারবেন? ভালোবাসার মূল্য দিতে পারবেন? কখনোই পারবেন না। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনীও এসবের মূল্য দিতে পারবে না।
রুপা কিছু বলতে চাইলো কিন্তু ছেলেটির ইশারায় চুপ হয়ে গেল। এবার ইমাকে বলার ইশারা দিলো। ইমা ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, “আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ। আমি………” কান্নার কারণে ইমার কথা মুখের মধ্যেই আটকে গেল। ছেলেটা উঠে দাঁড়ালো। বলল, “আপনারা ভয়ে আছেন। তাই ঠিকমতো কিছু বলতে পারছেন না। আমি আগামীকাল সকালে আবার আসবো। ততক্ষণে মনের কথাগুলো সাজিয়ে নিন।” ছেলেটা চলে গেল।
রাতে ঠিক সময়ে খাবার চলে এলো। খাবার খেয়ে নিলো সবাই। শারীরিকভাবে কিছু ভারসাম্য ফিরে এলেও মনের ভারসাম্য এখনো নড়বড়ে আছে। চার দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে চারজন বসে আছে। কায়সার বলল, “তোমাদের কি মনে হয়, আমাদের চারজনকে বন্দী করার পেছনে কারণ কি?”
রুপা - কিছুই তো বুঝছি না।
কায়সার - একদম সহজ একটি ব্যাপার।
ইমা - কিভাবে সহজ? তুমি কিছু বুঝতে পেরেছ?
কায়সার - আমাদের অতীত এর জন্য দায়ী।
জাবেদ - অতীত দায়ী মানে? আমি কিছু বুঝলাম না।
কায়সার - এসব ঢং এখন বাদ দে। তোর জন্য আমার আর রুপার সংসার তছনছ হয়েছিল। আর তুই কিছুই বুঝছিস না?
জাবেদ - মুখ সামলে কথা বলো। তুমি যা শুনেছিল তা সম্পূর্ণ ভুল। রুপার সাথে আমার কোনো অবৈধ সম্পর্ক ছিল না। আমরা শুধুমাত্র বন্ধু ছিলাম। আর তুমি আমাকে দোষারোপ করছ কোন মুখে? নিজে তো ইমার সাথে ফস্টিনস্টি করে বেরিয়েছ।
কায়সার রাগে উঠে দাঁড়ালো। জাবেদের দিকে তেড়ে যেতে লাগল। জাবেদও উঠে দাঁড়ালো। তবে রুপা এসে কায়সারকে থামিয়ে দিলো। বলল, “এত বছর পুরানো ঘটনা নিয়ে এখন কিসের এতো রাগ? আমাদের ভাবা উচিত কিভাবে এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।” কায়সার শান্ত হয়ে বসলো। সে ভাবতে লাগল তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে কার মনে ক্ষোভ আছে? ইমার কি কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিল? থাকলেও সেটার রেষ এত বছর পরে কেন আসবে?
পরেরদিন সকালে মুখোশধারী লোকটা রুমে এলো। সাথেসাথেই কায়সার ও জাবেদ তার ওপর ঝাপিয়ে পড়লো। কিন্তু লোকটার সাথে পেরে উঠলো না। কিভাবে পারবে, পেছনে যে আরও পাঁচ-ছয়জন আছে তা তো কারও জানাই ছিল না। পুনরায় তাদেরকে চেয়ারে বাধা হলো। তারপর লোকজন চলে গেল। থেকে গেল শুধু প্রথম লোকটা।
- আপনারা এত বোকা তা আমার জানা ছিল না। আপনারা কিভাবে ভাবলেন যে আপনাদের ওপর নজরদারি চলছে না? এই রুমে যে সিসিক্যামেরা আছে তা বোধহয় ভাবতেও পারেননি, তাই না? যাইহোক আজ আপনাদের শেষ দিন। এখানে কিংবা পৃথিবীতে। আজ আমি আপনাদের সাথে একটা খেলা খেলব। যাস্ট ট্রুথ। সত্য বললে এখান থেকে রেহাই নয়তো জীবন থেকেই রেহাই।
জাবেদের পায়ে একটা গুলি করলো লোকটা। তারপর বলল, “এটা হচ্ছে অগ্রিম সতর্কবার্তা। যে মিথ্যা বলবে পরবর্তী গুলি তার বুকে মারা হবে। এবার শুরু করা যাক।”
লোকটা উঠে দাঁড়ালো। জাবেদকে প্রশ্ন করলো, “তো জাবেদ উদ্দিন, আপনি কোন ধরণের মেয়েদেরকে নিশানা বানান। কিভাবে তাদেরকে ফাঁদে ফেলেন? আহা! মিথ্যা বলার চিন্তাও করবেন না। যা বলার সত্যই বলবেন। কেননা সত্যটা আমি জানি।” জাবেদ ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। তবে লোকটার প্রশ্ন শুনে সে বেশ ঘাবড়ে গেল। আতংকিত চোখে বাকিদের দিকে তাকালো। লোকটা হুংকার দিয়ে বলল‚ “আমার হাতে সারাদিন নেই। তাড়াতাড়ি বলুন। নয়তো……” গুলি তাক করতেই জাবেদ বলা শুরু করলো।
জাবেদ - যেসব মেয়েদেরকে তাদের স্বামীরা যথেষ্ট পরিমাণ সময় দিতে পারে না, আমি তাদেরকেই আমার নিশানা বানাই। কেননা এদের মাঝে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়। সেই শূন্যতা পূরণ করতে এদের অবচেতন মন একটা সঙ্গী খুঁজে। আমি সেই স্থান পূরণ করি।
জাবেদ থামতেই বন্দুকধারী লোকটা বলে উঠলো, “তো আপনার এই ফাঁদের একটি অংশ ছিল রুপা খান, তাই না?” জাবেদ চুপ করে রইল। তা দেখে লোকটি জাবেদের অপর পায়ে আরেকটি গুলি করল। আর বলল, “আমার প্রশ্নের জবাব সাথে সাথে দিতে হবে।” গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে জাবেদ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। এটা দেখে লজ্জা ও ঘৃণায় রুপা মাথা নিচু করে ফেলল। কায়সারের সাথে বিয়ের পর যখন রুপা একাকীত্ব অনুভব করেছিল তখন জাবেদ তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। রুপা সেটাকে বন্ধুত্ব মনে করেছিল। কিন্তু এখন বুঝতে পারল সেটা ছিল একটি চক্র মাত্র।
এবার লোকটা ইমার দিকে গেল। তাতেই ইমা ভয়ে কেঁপে উঠলো।
- ইমা, খুব সুন্দর একটা নাম। অথচ আপনি কতটা কুৎসিত তা আমি ভালো করেই জানি। এবার আপনি বলুন আপনার কারণে এ পর্যন্ত কয়টা সংসার ভেঙেছে?
ইমা আমতা আমতা করতে করতে বলল, “সঠিক জানা নেই তবে ছয়-সাতটা হবে।”
- মাত্র? ছয় সাত সংখ্যাটা খুব ছোট দেখায়, তাই না? কিন্তু এই ছোট সংখ্যার সাথে কতগুলো মানুষ জড়িয়ে থাকে তা কখনো হিসাব করেছেন? সংসার তো শুধুমাত্র স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই হয় না‚ বাবা-মা ভাই-বোন সন্তান সবাইকে নিয়ে একটি সংসার। সেই হিসেব করলে আপনি অজস্র মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছেন। এবার বলুন আপনি কিভাবে জাল ফেলতেন?
- নিজের রূপ ও সৌন্দর্য দিয়ে আমি খুব সহজেই পুরুষদেরকে আকৃষ্ট করি।
- হ্যাঁ হ্যাঁ তবে এক্ষেত্রে আপনি কিছু বিশেষ মানুষদেরকেই টার্গেট করেন, তাই না?
ইমা বুঝলো যে, এই লোকটা তার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানে। তাই এর সামনে মিথ্যা বলা মানেই মৃত্যুকে নিমন্ত্রণ দেওয়া। ইমা মাথা দুলিয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমি বিবাহিত পুরুষদেরকে আমার টার্গেট বানাই। কারণ এদের মন স্ত্রীর কাছে স্থির থাকে না। পরনারীর স্পর্শ পাওয়ার জন্য ভেতরে ভেতরে বেশ আনন্দিত থাকে। যার ফলে এদেরকে ফাঁদে ফেলা খুব সহজ। এতে নিজের কাজটাও খুব সহজে আদায় হয়ে যায়।”
- ক্যারিয়ারের যে উচ্চ পর্যায়ে আপনি এসেছেন তার পেছনে এসবই দায়ী, তাই না?
ইমা মাথা দোলালো।
লোকটা চেয়ারে বসে পড়লো। দরজা খুলে কিছু লোক এসে জাবেদ ও ইমাকে নিয়ে গেল। ইমা যেতে না চাইলেও তাকে টেনে নিয়ে গেল। রুমে এখন শুধু মাত্র তিনজন কায়সার, রুপা ও বন্দুকধারী লোকটা। এবার বন্দুকধারী লোকটা তার মুখোশ উন্মোচন করলো। মুখোশের আড়ালের লোকটাকে দেখে কায়সার ও রুপা দুজনেই বিস্মিত হয়ে গেল। এ তো তাদের ছেলে রায়হান। দুজনে একসাথে বলল, “রায়হান! তুই?”
- ওটা তোমাদের দেওয়া একটা অভিশাপ ছিল। আমার বর্তমান নাম দাউনি। আন্ডারওয়ার্ল্ড জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম। আর এই দাউনির জন্মদাতা তোমরাই। তোমাদের অবহেলা, ঘৃণা এই দাউনিকে জন্ম দিয়েছে। আমার কথা বাদ দাও। তোমাদের কথা শুনি। তোমরা তো এখন বেশ সুখেই আছো। অবশ্য সুখে থাকারই কথা। এই সুখের জন্যই তো দুজনে আলাদা হয়েছিলে। ভুলে গিয়েছিলে নিজেদের সন্তানকেও। তো মিস্টার কাউসার, আপনি এখনো গভীর রাতে বারে পড়ে থাকেন কেন? আপনি তো এখন অনেক টাকা পয়সার মালিক, জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আপনার পরিচালনায় সামনের মাসে দেশের সবচেয়ে বড় বাজেটের মুভি মুক্তি পেতে যাচ্ছে। এতসবের মাঝেও আপনি কি হতাশায় ভুগছেন? কষ্টে আছেন? ও হ্যাঁ! শুনেছি আপনার বড় ছেলেটা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, মেয়েটা আপনার অমতেই তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে লিভটুগেদারে থাকছে। ছোট ছেলেটা একটা মেয়েকে রেপ করেছে। এই নিয়ে আপনাকে অনেক ঝামেলার মধ্যে যেতে হচ্ছে। আহহ! সত্যিই আপনি তো বড্ড অসুখী। তবে মানতে হবে আপনি খুব ভাগ্যবান। আপনার দ্বিতীয় স্ত্রীও আপনাকে খুব ভালোবাসে।
দাউনি এবার রুপার দিকে এলো, “দুবাইয়ের ধনাঢ্য ব্যক্তি সাথে দেশ বিদেশে ঘুরে ফিরে করে বেশ সুখেই আছেন, তাই না? সুখে তো থাকবেনই। সুখের জন্যই তো নিজের ছেলেকে ভুলে গিয়ে দ্বিতীয় বিয়েটা করেছেন। কিন্তু আমি শুনেছি আপনি নাকি রাতে ঘুমাতে পারেন না? আলিশান বাড়িতে আরামদায়ক বিছানাতে আপনার ঘুম আসে না কেন? স্বামীকে নিয়ে ভাবেন? সে অন্য কোন নারীর সাথে ব্যস্ত এই কষ্ট আপনাকে কুড়ে কুড়ে খায়? কিন্তু এটা তো আপনার জন্য নতুন কিছু না। প্রথম স্বামীর ক্ষেত্রে এমন হয়েছে তাহলে দ্বিতীয়টাকে ডিভোর্স দিলেন না কেন? অর্থের লোভে? তবে মিস্টার কায়সার থেকে আপনার ভাগ্য ভালো। আপনার ছেলে দুটো খুবই ভালো।”
দাউনি উঠে দাঁড়ালো। আপনাদের মতো দুচারটা সেলিব্রেটিকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া এই দাউনির জন্য কিছুই না। কিন্তু আমি আপনাদেরকে জীবিত ছেড়ে দিব। যাতে বাকি জীবনটা অনুশোচনায় পুড়ে পুড়ে মারা যান। শুধু মনে রাখবেন, সেই ছোট্ট রায়হানের হত্যাকারী আপনারা। আজকের এই দাউনির জন্মদাতাও আপনারা। যেখানে সন্তানকে পথ দেখানো বাবা-মায়ের দায়িত্ব। সেখানে আপনারা নিজেরাই বিপথে ছিলেন। কখনো কি খবর নিয়েছিলেন ছেলেটা কেমন আছে? কি করছে? কখনোই করেননি। আপনারা শুধু নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আপনাদের অবহেলা ও ভালোবাসার থেকে বঞ্চিত হতে হতে এই দাউনি জন্ম নিয়েছে। আপনাদের সাময়িক সুখ-রাগ-ইগোর জন্য আমার মতো দাউনিরা জন্ম নেয়।” কথাগুলো শেষে দাউনি উঠে চলে গেল। পেছনে রয়ে গেল কায়সার ও রুপা। সত্যিই তো এই দাউনিকে তারাই জন্ম দিয়েছে। তাদের অবহেলায় এই দাউনি জন্ম নিয়েছে। এমন ভাবেই জন্ম নিচ্ছে হাজারো দাউনি।
সমাপ্ত।
©somewhere in net ltd.