![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্পের নামঃ নিয়তির চাদর।
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।
পর্বঃ ০১
পাথরের মূর্তির ন্যায় জানালার দিকে তাকিয়ে বসে আছে নূরী। পাশে বসে আছে তার স্বামী আসাদ। বর্তমানে নূরী শোকে আছে। যার শান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আসাদের কাছে নেই। মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু অস্বাভাবিক মৃত্যু গুলো মেনে নেওয়া কষ্টকর। তাও আবার জন্মদাতা বাবার। সপ্তাহখানেক আগে একটা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে নূরীর বাবা গিয়াসউদ্দিন। এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় পুরো পরিবার শোকাহত হয়ে আছে।
- বলছিলাম যে কোথাও ঘুরে আসি।
আসাদের কথার কোনো জবাব দিলো না নূরী যেন সে শুনতেই পায়নি। আসাদ আবার বলল, “দেখো, আমি জানি তুমি এখন কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নাই। কিন্তু আমাদেরকে এই দুঃসময়টা কাটিয়ে উঠতে হবে। মৃত্যু তো জীবনেরই একটি অংশ।” আসাদ অনেক চেষ্টা করেও নূরীর মুখ থেকে কথা বের করতে পারলো না। অবশেষে হার মেনে প্রস্থান করলো। মাঝেমাঝে আমরা যা করতে পারি না তা একাকীত্ব করে দেয়। মাঝেমাঝে মানুষকে সময় দিতে হয়। যাতে সে তার দুঃসময়টা কাটাতে পারে। নূরীর ক্ষেত্রেও তাই হলো।
জীবনের এক নিষ্ঠুর নিয়ম হলো জীবন কারও জন্য থেমে থাকে না। সে চলতে থাকে তার আপন গতিতে। আমাদেরকেও সেই গতি অনুযায়ী চলতে হয়। বিগত কিছুদিন ধরে সংসারের যাবতীয় কাজ আসাদের মা জয়নব বিবি করছে। বাবা মা ও নূরীকে নিয়েই আসাদের এই ছোট সংসার। তবে আজ সকাল থেকে নূরীকে আগেরমতো দেখাচ্ছে। আজ নাস্তা নূরী বানালো। নূরীকে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে দেখে আসাদ বেশ খুশি হলো। সুযোগ বুঝে আসাদ রান্নাঘরে চলে এলো। নূরীকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে ভালোবাসার স্পর্শ দিলো। নূরী স্বাভাবিক চললেও তার মনটা থমথমে হয়ে আছে। অন্যান্য দিনের মতো লাজুক প্রতিক্রিয়া আজ দেখা দিলো না। বিষয়টা আসাদ বুঝতে পেরেও এড়িয়ে গিয়ে বলল, “কাপড়চোপড় গুছিয়ে রেখো। আমরা আজ কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে বের হবো।” নূরী না-সূচক ভাব নিয়ে আসাদের দিকে তাকাতেই আসাদ মিনতির স্বরে বলল, “প্লিজ লক্ষিটি মানা করো না।” নূরী যেন আসাদের এই আকুতির কাছ হার মেনে নিলো। হাসিমুখে নাস্তা করে আসাদ অফিসে চলে গেল। অফিস থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে বাসায় এলো। নূরী সবকিছু গুছিয়ে রেখেছে। আসাদের মা বেশ হাসিমুখে বললেন, “এটা খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছিস। এখন বউমার একটু অন্য পরিবেশ প্রয়োজন।”
ব্যাগপত্র নিয়ে বাসার নিচে নামলো আসাদরা। এগিয়ে দিতে তার বাবা মাও সঙ্গে আছে। সিএনজিতে উঠতে যাবে ঠিক তখনই একটা পুলিশের গাড়ি এসে তাদের সামনে থামলো। দুজন অফিসার নামলো। একজন এগিয়ে এসে আসাদের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, “হ্যালো আসাদ সাহেব, আমি সিআইডি অফিসার শরীফ। আপনারা বোধহয় কোথাও ঘুরতে যাচ্ছেন।” কিছুটা অবাক হয়ে আসাদ হাত মিলিয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমরা কিছুদিনের জন্য কক্সবাজার যাচ্ছি।”
- আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত যে আপনাদের যাওয়া হচ্ছে না।
বিস্মিত স্বরে আসাদ বলল, “কেন?”
- আমি গিয়াসউদ্দিন সাহেবের অ্যাক্সিডেন্ট নিয়ে তদন্ত করছি। তদন্তের সুবিধার্থে আপনাদের সহযোগিতা দরকার।
- কিন্তু ওটা তো দুর্ঘটনা ছিল।
- কি ছিল তা তদন্তে বের হবে। এই নিন আদালতের আদেশনামা। আপনারা কেউই আমার অনুমতি ব্যতীত শহরের বাইরে যেতে পারবেন না।
গিয়াসউদ্দিন, শহরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের একজন। নূরী তার একমাত্র মেয়ে। মেয়ের পছন্দ অনুযায়ীই তাকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। নূরী ভার্সিটি পড়াকালীন আসাদের প্রেমে পড়ে। তিন বছর সম্পর্কের পর তাদের বিয়ে হয়। আসাদ কর্মঠ ও সত্ ছেলে। তারওপর মেয়ে তাকে পছন্দ করে। এসব কারণে গিয়াসউদ্দিন এই বিয়েতে আপত্তি করেননি। তাদের বিয়ে হয়েছে দু বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আসাদ তার শ্বশুর থেকে কিছু নেয়নি। নূরীও তার বাবার কাছে কিছু চায় না। কেননা সে জানতো এতে আসাদের মনোভাবে আঘাত আসবে।
শরীফ তার সহকারী অফিসার সাজ্জাদকে নিয়ে গাড়ির তদন্ত রিপোর্ট পড়ছে। দুর্ঘটনার কারণ হলো গাড়ির ব্রেক ফেইল হয়েছিল। তারপর, সেদিন গাড়িতে চালক ব্যতীত আর কেউ ছিল না। অথচ গিয়াসউদ্দিনের পিএ মোজাফফর সবসময়ই তার সাথে থাকতো। চালক বেঁচে গেলেও গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছে। শরীফ আদালত থেকে গিয়াসউদ্দিনের লাশ উঠানোর জন্য অনুমতি নিলো।
শরীফের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছে আসাদ ও নূরী। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে ডাকা হয়েছে। টেবিলের এপাশে বসে আছে নূরী, ওপাশে শরীফ।
- আপনার বাবার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে ব্রেক ফেইলের কারণে। আমাদের সন্দেহ হচ্ছে এর পেছনে কেউ জড়িত আছে। আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়?
বেশ শান্ত স্বরে নূরী বলল, “না। আমার জানামতে বাবার সাথে কারও শত্রুতা ছিল না। তিনি খুব উদার মনের মানুষ ছিলেন। ঘরের চাকর-বাকরদের জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন।”
- আচ্ছা, ঘটনার দিন আপনি আপনার বাবার সাথে দেখা করেছিলেন। কারণটা জানতে পারি?
- আমি বাবার সাথে প্রায়ই দেখা করতে যেতাম। সেদিনও এমনি গিয়েছিলাম। নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছিল না।
- ঠিক আছে। আপনি এখন যেতে পারেন। যদি কোনো রকমের ইনফরমেশন পান তবে জানাবেন।
নূরী জ্বি বলে উঠে গেল। এবার শরীফের সামনে বসে আছে আসাদ।
- ঘটনার দিন আপনি আপনার শ্বশুরের সাথে দেখা করেছিলেন। কি কারণে তা কি জানতে পারি?
- কিছু দলিলের ব্যাপারে কথাবার্তা বলার জন্য তিনি আমাকে ডেকেছিলেন।
- কিসের দলিল?
- তার স্বয়-সম্পত্তির দলিল।
- আপনার নামে লিখে দিতে চেয়েছিলেন?
- তেমনটি নয়। তবে তার জায়গা-জমি, অর্থসম্পদ-ব্যাংক কোথায় কি আছে তা বলেছিলেন।
- আচ্ছা। তো এখন এই সব সম্পত্তির মালিক তো আপনি, তাই না?
- আমি নই, নূরী।
- স্ত্রীর মানে আপনারও।
- দেখুন, আমি জানি যদি এই দুর্ঘটনাকে মারপ্যাঁচ করা হয়। তবে প্রথম সন্দেহ আমার দিকেই আসবে।
- বাহ! আপনি তো খুব বুদ্ধিমান।
- বুদ্ধি নয় সাধারণ জ্ঞান। কেননা ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ের সাথে প্রেম করে তাকে বিয়ে করে তাদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার নজির বহু আছে।
- যাকগে সে কথা। তবে একটা তথ্য আপনাকে দেই। আপনার শ্বশুরের সাথে দুর্ঘটনা নয় ঘটনা ঘটেছে। গাড়ির ব্রেক ফেইল করিয়ে এই ঘটনা সাজানো হয়েছে।
আসাদ হতবাক হয়ে শরীফের দিকে তাকালো। শরীফ আরও বলল, “আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়, যে এই কাজটা করতে পারে।” আসাদ না সূচক জবাব দিলো।
- ওকে ডিভোর্স দেওয়াই তোর জন্য ভালো।
- ছিঃ বাবা। তুমি এসব ভাবছো কি করে?
- আমি তোর সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যই বলছি। এই ছেলের সমস্যা আছে।
- বাবা! ও আমার স্বামী। এটা একান্তই আমাদের বৈবাহিক ব্যাপার। এখানে তোমার হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।
- কিন্তু মা!
- কোনো কিন্তু নয়। আমি এই ব্যাপারে আর কিছু শুনতে চাই না।
“কি ভাবছো?” আসাদের ডাকে নূরী তার চিন্তা থেকে বেরিয়ে এলো। এতক্ষণ সে তার বাবার সাথে হওয়া কিছু কথা নিয়ে চিন্তা করছিল। আসাদ বলল, “কিছু খেয়েছ?” নূরী অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আসাদ বলল, “দেখো, এমন করলে তোমার শরীর খারাপ করবে। তোমার যদি কিছু হয় তাহলে আমার কি হবে?” নূরী হাসি দিয়ে বলল, “চলো, আজ বাইরে খাব।” আসাদ হাসি দিলো।
অফিসের কাজগপত্র গুছাচ্ছে মোজাফফর। বেশ মোটাসোটা লোক। বয়সের ভার চেহারায় পড়েছে। “কেমন আছেন মোজাফফর সাহেব?” মোজাফফর চোখ তুলে তাকালো। শরীফকে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বলল‚ “আপনি হঠাত্ এখানে?”
- যেখানে অপরাধ সেখানেই তো পুলিশের বসবাস।
শরীফের কথা শুনে মোজাফফরের চোখেমুখে একপ্রকার আতংক বিরাজ করলো।
- কি ব্যাপার, আপনাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?
- না মানে আগে কখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি তো তাই।
- আগে কখনো খুন করেছিলেন?
- কি…কি…কি বলছেন এসব?
- মজা করলাম। দীর্ঘ দশ বছর ধরে আপনি গিয়াসউদ্দিন সাহেবের সাথে কাজ করছেন। অত্যন্ত সততার সাথেই কাজ করছেন। ছায়ার মতো গিয়াসউদ্দিন সাহেবের সাথে ছিলেন। তাহলে দুর্ঘটনার দিন তার সাথে ছিলেন না কেন?
- কিছু কাগজপত্র দিয়ে স্যার আমাকে উকিলের চেম্বারে পাঠিয়েছিলেন। নয়তো সেদিন আমিও স্যারের সাথেই থাকতাম।
- কি ধরণের কাগজপত্র?
- জায়গাজমি সংক্রান্ত। আপনি চাইলে আমু উকিল থেকে এনে দেখাতে পারি।
- প্রয়োজন নেই। সময় হলে আমিই বের করে নিব। আচ্ছা, তার কি কোনো শত্রু ছিল, ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত?
- আমাদের স্যার অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। তার কোনো শত্রু থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না।
- নূরীর বিয়ে নিয়ে গিয়াসউদ্দিনের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? মানে একমাত্র মেয়ের বিয়ে এমন ছেলের সাথে দিলেন যার সাথে বংশীয় স্ট্যাটাস মানায় না।
- এই নিয়ে প্রথমে স্যার একটু অসন্তোষ ছিলেন। কিন্তু পরে আসাদ স্যারের সততা ও আচরণ দেখে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তাছাড়া ম্যাম সাহেবা তাকে ভালোবাসেন।
- ঠিক আছে। আজ আসি। প্রয়োজন হলে আবার আসবো।
ভ্যাকিউম ক্লিনার দিয়ে ঘর পরিষ্কার করছে মরিয়ম। তার নিত্যদিনের কাজের মধ্যে এটি একটি। এখন অবশ্য খুব একটা কাজ করতে হয় না। গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যুর পর বাড়িটা শূণ্য হয়ে গেছে। এখন আর কেউ আসে না। তবে তদারকির জন্য মাঝেমাঝে মোজাফফর আসে-যায়। গিয়াসউদ্দিনের বাসায় দেখাশোনার কাজ করে এই মধ্যবয়সী মহিলা।
“জুতা পরে এলে কোনো সমস্যা হবে?” মরিয়মকে উদ্দেশ্য করে বলল শরীফ। মরিয়ম মলিন মুখে জবাব দিলো, “আসুন। আসুন।” বাসায় প্রবেশ করতে করতে শরীফ বলল‚ “বাড়ির যাবতীয় কাজকর্ম তো আপনিই দেখেন‚ তাই না?
- হ্যাঁ।
- এত বড় বাড়ি দেখাশোনা একার পক্ষে সম্ভব হয়?
- বাড়ি বড় হলেও মানুষ তো নেই। স্যার তো সারাক্ষণ অফিসেই থাকতেন। লোকজন তো হঠাত্ হঠাত্ আসতো।
- উনার সাথে কারও ঝামেলা ছিল? কখনো ফোনে বা সরাসরি কারও সাথে ঝগড়া-বিবাদ করতে দেখেছেন?
- না স্যার। আমাদের সাহেব ঝগড়াঝাঁটিতে জড়াতেন না।
- দুর্ঘটনার দিন কোনো রকমের অস্বাভাবিক কিছু লক্ষণ করেছিলেন?
মরিয়ম কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে বলল, “না স্যার। অন্যদিনের মতো সেদিনও সাহেব নাস্তা করে অফিসের জন্য বের হয়েছিলেন।”
- ঠিক আছে। আজ আসি।
গিয়াসউদ্দিনের গাড়ির চালক সাইমের জ্ঞান ফিরেছে। তার জবানবন্দি নেওয়ার জন্য শরীফ হাসপাতালে এসেছে। সাইম তার জবানবন্দিতে কেঁদে কেঁদে বলল, “স্যার, সব আমার দোষ। দুর্ঘটনাটা আমার জন্যই হয়েছিল। সেদিন গাড়ি চালানোর সময় হঠাৎ আমার খুব ঘুম পেয়েছিল। তাই এই সর্বনাশ হয়েছে। আমার জন্যই সাহেবের জীবন গেল। আমাকে যা শাস্তি দিবেন আমি মাথা পেতে নিবো।” সাইম অঝোরধারায় কাঁদতে লাগল। শরীফ বাইরে এসে ডাক্তারকে নির্দেশ দিলো সাইমের রক্ত পরীক্ষা করার জন্য। সাইম বিগত দুই বছর থেকে গিয়াসউদ্দিনের গাড়ি চালায়। এমন অভিজ্ঞ চালকের হঠাৎ ঘুম আসার ব্যাপারটা অস্বাভাবিক।
নূরীর মনটা আবার বিষণ্ণতায় ভরে উঠলো। তার বাবার লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এমনটা নূরী কখনোই চায়নি। নূরীকে ভাবলেশহীন ভাবে বসে থাকতে দেখে আসাদ বলল, “চিন্তা করো না। আমি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেছি। দুদিনের মধ্যেই লাশ ফেরত দিবে।” আসাদের কথা শুনেও নূরীর মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি যেন সে জড় পদার্থ। আসাদ নূরীর পাশে বসলো। কবিতার সুরে বলল,
“জীবন বিচিত্র,
মনের মধ্যে প্রেম চিত্র
বিত্ত গহনে বাঁধা আমি
আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে শুধুই তুমি।”
নূরী তার মাথাটা আসাদের কাঁধে রেখে চুপচাপ কবিতা শুনতে লাগল। নূরী বুঝে না এই মানুষটা তার পাশে থাকলে তার সকল বিষণ্ণতা দূর হয়ে যায়। আসাদকে ভালোবাসার অন্যতম একটি কারণ হলো সে নূরীর মন খারাপ দেখতে পারে না। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে মন ভালো করে দেওয়ার। অথচ আসাদের এই গুনটা কখনোই গিয়াসউদ্দিনের চোখে পড়েনি।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সন্দেহজনক কোনো তথ্য আসেনি। সড়ক দুর্ঘটনার কারণেই গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে। সাইমের রক্ত পরীক্ষা থেকেও কোনো তথ্য আসেনি। রক্তে কোনো কিছু মিশে থাকলেও তার প্রমাণ এতদিন থাকে না। ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে জানা যায় যে, গাড়িটা সাপের মতো আঁকাবাঁকা হয়ে চলছিল। তারপর হুট করেই দুর্ঘটনার স্বীকার হয়েছিল। হয়তো সাইম সত্য বলেছে। ঘুম আসার কারণেই গাড়িতে তার নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তবে হঠাৎ এই ঘুম আসার পেছনে কারণ কি? ব্যাপারটা কি স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক? সাইমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে রাতে প্রায়ই সে দেরিতে ঘুমায়। কিন্তু কখনো গাড়ি চালানোর সময় ঘুম আসেনি। তবে বিপদ তো সবসময় আসে না। নানারনম ব্যাখ্যায় কেইসটা জটিল থেকে জটিল হয়ে উঠছে শরীফের কাছে। কিন্তু সে হাল ছাড়ছে না। এর সমাধান করেই ছাড়বে।
ময়নাতদন্ত শেষে আসাদদের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হলো। লাশ পুনরায় দাফন করা হলো।
“কোনো তথ্য পেয়েছেন?” আসাদের জবাবে শরীফ কিছুটা নিরাশ হয়ে বলল, “না।”
- আপনি অহেতুক লাশটা নিয়ে টানাহেঁচড়া করলেন।
- আপনার এই প্রশ্নের জবাব খুব শীঘ্রই দিব।
টেবিলে বসে একটা ডাকাতির মামলার তথ্য দেখছে শরীফ। এমন সময় সাব ইন্সপেক্টর সাজ্জাদ ফোন করলো।
- হ্যাঁ, সাজ্জাদ বলো।
- স্যার, আপনার কথামতো আমি গিয়াসউদ্দিনের বাড়িতে নজর রাখছিলাম। মরিয়ম বাড়ির পেছন গেইট দিয়ে চুপিসারে বের হয়ে হাসপাতালে এসেছিল। সেখানে ঘণ্টাখানেক থেকে আবার বাসায় গিয়েছে।
- হাসপাতাল! কেন গিয়েছিল?
- অ্যাবরশনের জন্য।
“কি!” শরীফ বিস্মিত হয়ে গেল। কেননা বছরখানেক ধরে মরিয়মের স্বামীর সাথে তার পারিবারিক সমস্যা চলছে। তার স্বামী গ্রামে থাকে। আর মরিয়ম এখানে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় মরিয়ম এসব বলেছিল। এক অজানা ভয় শরীফের মধ্যে কাজ শুরু করলো। মরিয়মের অ্যাবরশনের পেছনে কারণ কি? এই পাপের দায়ভার কার? যেই মানুষটাকে শরীফ এত সম্মান করে তার প্রতি এখন ঘৃণা জন্মাবে নাতো? যাইহোক না কেন সত্যের মুখোমুখি তো হতেই হবে।
চলবে …………
©somewhere in net ltd.