নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিখতে জানতে ও ছড়িয়ে যেতে চাই।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী

আমি বাপ্পী। জন্মস্থান বরিশাল। বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নামঃ নিয়তির চাদর।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:১৬

গল্পের নামঃ নিয়তির চাদর।
লিখেছেনঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।
পর্বঃ ০২

মরিয়মকে গ্রেফতার করে থানায় আনা হলো। আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে ডুকরে ডুকরে কেঁদে যাচ্ছে মরিয়ম। প্রশ্ন করার মতো সাহস যেন শরীফের মাঝ থেকে ফুরিয়ে গেছে। সে ভয় পাচ্ছে, মরিয়মের মুখ থেকে যদি কোনো তিক্ত সত্য বেরিয়ে আসে! অনেক সাহস জুগিয়ে শরীফ বলল, “এসব মায়াকান্না কেঁদে লাভ নেই। সত্য বললে ছাড় পেতে পারেন। অন্যথায় কঠিন শাস্তি পাবেন। আইনের এমন মারপ্যাঁচে ফেলবো যে জীবনেও সূর্যের দেখা পাবেন না।”
- স্যার গো, আমি কিছু করি নাই। সব সাইম করেছে।
“সাইম!” বিস্মিত হয়ে গেল শরীফ। তবে মন থেজে একটা চিন্তাও সরেছে। তার মনের মধ্যে থাকা সন্দেহের বীজ নষ্ট হয়েছে। এতে কিছুটা শান্ত হলো শরীফ।
একে একে সব বলতে লাগল মরিয়ম। দীর্ঘদিন ধরেই সাইমের সাথে তার অনৈতিক সম্পর্ক আছে। কিন্তু দুর্ঘটনার একদিন আগে তাদের এই সম্পর্কের ব্যাপারটা জেনে যায় গিয়াসউদ্দিন। মরিয়মের বাবা একটা সময় গিয়াসউদ্দিনের কর্মচারী ছিল। সেই সুবাদেই মরিয়মকে বাড়ি দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এই অনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপারটা মরিয়মের বাবাকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গিয়াসউদ্দিন। কিন্তু পরেরদিনই দুর্ঘটনায় মারা যান। সবকিছু শুনার পর শরীফ বলল, “সত্য ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তুমি আর সাইম মিলে পরিকল্পিতভাবে গিয়াসউদ্দিনকে হত্যা করেছ, তাই না?” কান্না জড়িত কণ্ঠে মরিয়ম বলল, “না স্যার। আমি কিছু করি নাই। আমি তো জানতামই না যে, সাইম মনে মনে এমন কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।”
মরিয়মকে গ্রেফতার করা হলো। সাইমের শারীরিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় গ্রেফতার করতে পারলো না। তাই হাসপাতালে দুজন কনস্টেবল পাহারায় রাখলো। তবে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সাইম থেকে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্যের সত্যতা জানার জন্য মরিয়মকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। এতে শরীফ বেশ বিড়ম্বনায় পড়লো।
সাইম ও মরিয়মের অনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপারে গিয়াসউদ্দিন জেনেছেন, এই কথাটা সাইম জানতোই না। কেননা সেদিন সকালে সাইমের সাথে মরিয়মের কোনো প্রকার যোগাযোগ হয়নি। শরীফ তাদের মোবাইলের বার্তা তালিকাও যাচাই করেছে। যোগাযোগের কোনো প্রমাণ পায়নি। যদি সাইমের কাছে কোনো কারণ না থাকে তবে সে কেন দুর্ঘটনার সিদ্ধান্ত নিবে? তাছাড়া এই দুর্ঘটনার কারণে সাইমের জীবনও আশংকাজনক ছিল। শরীফ এই মামলা সমাধানের একটা পথ পেয়েছিল কিন্তু এখন সেটা আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

থানায় ছুটে এসেছে আসাদ-নূরী। হাজতের ওপাশে থাকা মরিয়মের দিকে তেড়ে গেল। হাজতে থাকার কারণে মরিয়মের কাছে কাছে পৌছাতে পারলো না নূরী। রাগ ও কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল, “ছিঃ মরিয়ম ছিঃ তোমাকে তো আমি বড় বোনের মতো দেখতাম। আর তুমিই কিনা এমন কাজ করলে?”
- বিশ্বাস করেন ম্যাম সাহেবা, আমি কিছুই করি নাই। সাইমের মনোভাব আমি জানতামই না।
- তোমার মতো মহিলার সাথে কথা বলতেও ঘৃণা হচ্ছে। আমি তোমাকে ছাড়বো না। ফাঁসির ঝুলিতে ঝুলাবো।
আসাদ এগিয়ে এসে নূরীকে নিয়ে গেল। তারা শরীফের রুমে এলো।
- আসুন আসুন।
নূরীঃ আপনি মরিয়ম ও সাইমের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করুন।
- তারা অপরাধী হলে শাস্তি পাবেই। এই নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না।
আসাদ বিস্মিত স্বরে বলল, “এটা তো একদম পরিষ্কার যে সত্য ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারাই এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে।”
- কুয়াশা আর রহস্য যত ঘন হয় ততই অস্পষ্ট হয় ওপাশের সবকিছু।
নূরীঃ মানে কি?
- আপাতত কিছুই না। সময় হলে জানতে পারবেন।

শরীফের মনোযোগ সাইমের দিকে থাকার মাঝেই আরেকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে গেল। মোজাফফর শহর ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু দশ লক্ষ টাকা সহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। এই খবরটা পেয়ে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে শরীফ নিজেই। মোটা মানুষ যখন ভয়ার্ত থাকে তখন তার চেহারা সত্যিই দেখার মতো হয়। যেমনটা বর্তমানে মোজাফফরের হয়ে আছে। ভয়ের কারণে পুরো শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। চেহারা লাল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এক্ষুণি কেঁদে দিবে। শরীফের বিশ্বাসই হচ্ছে এমন মানুষ এইরকম কাজ করতে পারে। শরীফ বলল, “আপনাকে এই অবস্থায় পাবো এটা আমি কখনো ভাবিনি। আপনার হাতে তো কোটি কোটি টাকাও এসেছিল। তখন তো পালাননি। তবে আজ এই সামান্য টাকা নিয়ে পালাতে গেলেন কেন? আর টাকাগুলো আপনি পেলেন কোথায়? কে দিয়েছে? গিয়াসউদ্দিনের দুর্ঘটনার পেছনে কি আপনার হাত রয়েছে? অনেক তো হলো লুকোচুরি। এবার সত্যটা বলুন।”
মোজাফফর ভয়ার্ত স্বরে বলল, “আমি সত্যি বলছি স্যার, সাহেবের এক্সিডেন্টের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।”
- তাহলে টাকা নিয়ে পালাচ্ছিলেন কেন?
- যেদিন দুর্ঘটনা হয়েছিল, সেদিন সাহেব আমাকে এই টাকাগুলো দিয়েছিলেন। বলেছিলেন তিনি ফোন দিয়ে জানাবেন এগুলোর ব্যাপারে। এই টাকাগুলোর ব্যাপারে কেউই জানতো না। তাই আমি লোভে পড়ে গিয়েছিলাম।
- গিয়াসউদ্দিন এর আগে কখনো এমন করেছিলেন?
- মাঝেমাঝে তিনি আন-অফিশিয়াল কাজ করার জন্য এসব করতেন।
- যেমন?
- বিভিন্ন সময় অনেককে ঘুষ দিতে হতো। তখন তিনি এভাবে টাকা দিতেন।
- এই ক্ষেত্রে তিনি যোগাযোগ করতেন কিভাবে?
- তার একটা গুপ্ত নাম্বার আছে সেটা দিয়ে।
গিয়াসউদ্দিনের গুপ্ত সিমের কল লিস্ট চেক করলো শরীফ। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে তিনি একটা অপরিচিত নাম্বারে কথা বলেছিলেন। কিন্তু নাম্বারটা বর্তমানে বন্ধ। নাম্বারের যাবতীয় তথ্যও ভুয়া। শরীফ চিন্তায় পড়লো। এই টাকাগুলো দিয়ে গিয়াসউদ্দিন কি করতে চেয়েছিলেন? কাউকে ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন? কিন্তু কাকে এবং কেন?

“বলছিলাম যে, তুমি এবার বাবার অফিসের দায়িত্বটা বুঝে নাও।” হঠাৎ নূরীর কথা শুনে আসাদ কিছুটা চমকে উঠলো। কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বলল, “তুমি তো জানোই আমি কখনোই ওসবে আগ্রহী ছিলাম না।”
- এতদিন আমি তোমাকে এই ব্যাপারে কিছু বলিনি। কিন্তু মোজাফফর আংকেলের ব্যাপারটা জানার পর আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছি না। বাবার তৈরি এই প্রতিষ্ঠানের ওপর হাজারো শ্রমিক-কর্মজীবী নির্ভরশীল হয়ে আছে। নির্ভর হয়ে আছে তাদের পরিবার। আমরা যদি এখনো দায়িত্ব না নেই তবে সুবিধাবাদীরা লুটপাট করে সব লণ্ডভণ্ড করে দিবে। তুমিই বলো এই দায়িত্বটা কি আমাদের না? এই সম্পদের সংরক্ষণ কি আমাদের কর্তব্য না?
নূরীর যুক্তির সামনে পরাস্ত হয়ে আসাদ রাজি হলো। পরেরদিন সকালে আসাদ অফিসে যোগ দিলো। বেশ ধুমধাম করেই স্বাগত জানালো অফিস কর্মকর্তারা। প্রথমদিন নূরীও সাথে ছিল। অফিস শেষে দুজনে একত্রে বাসায় ফিরলো।
“এত বড় দায়িত্ব আমি একা সামলাতে পারবো না।” আসাদের কথা শুনে নূরী হেসে বলল, “তুমি চিন্তা করো না। আমি তোমার পাশে আছি। তাছাড়া কোনোকিছু একদিনে হয় না।”

সকালে অফিসের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে আসাদ-নূরী। এমন সময় ইন্সপেক্টর শরীফ এসে হাজির হলো।
- কি ব্যাপার, আপনি এই সকাল সকাল?
- বলেছিলাম না শীঘ্রই আপনার প্রশ্নের জবাব দিবো। আপনার বাবার খুনিকে খুঁজে বের করেছি।
- কে?
- সাইম ও মরিয়ম।
- এটা তো জানতামই।
শরীফ সব খুলে বলল। সাইম ও মরিয়মের অনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপারে জেনে যাওয়ায় সাইম পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। কিন্তু প্রথমে সে খুব চতুরতার সাথে সত্য এড়িয়ে গেছে। এতে শরীফও বিড়ম্বনায় পড়েছিল। কিন্তু ঘরের সিসিক্যামেরায় দেখা যায় দুর্ঘটনার দিন সকালে সাইম লুকিয়ে লুকিয়ে গিয়াসউদ্দিন ও মরিয়মের কথাবার্তা শুনেছিল যখন গিয়াসউদ্দিন এই ব্যাপারে মরিয়মকে শাসাচ্ছিলেন। এতে প্রমাণ হয় যে‚ সাইম ব্যাপারটা জেনেছিল। তাই দুর্ঘটনার আড়ালে গিয়াসউদ্দিনকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছে। সাইমকে সিসি ফুটেজ দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সে বলে গিয়াসউদ্দিনের খুন করার চিন্তা তার মাথায় এসেছিল। কিন্তু এক্সিডেন্টটা সে ইচ্ছে করে করেনি। তবে পুলিশের কাছে খুনের কারণ ও প্রমাণ থাকায় মামলাটি সেখানেই সমাপ্তি করা হলো। সবকিছু বলার পর শরীফ উঠে দাঁড়ালো এবং বলল, “এবার আমি আসি।” যাত্রাপথে বাধা দিয়ে নূরী বলল, “একটা প্রশ্ন জানার ছিল। আমরা কেউ মামলা করিনি। তবে আপনি সবকিছু নিজে নিজে করলেন কেন?” মুচকি হাসি দিয়ে শরীফ বলল, “আমি আজ ইন্সপেক্টর হতে পেরেছি আপনার বাবার জন্য। তিনি একটা এতিমখানার অর্ধেক খরচ বহন করেন। আমি সেই এতিমখানার-ই একজন এতিম। আসলে এটা যে একটস খুন তা আমার জানা ছিল না। কিন্তু আমি উনার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারিনি। বলতে পারেন অনেকটাই জিদের বশে এই কেইসটা আমি চালিয়েছি। কিন্তু ফলাফল যে এমন হবে তা ভাবতেও পারিনি। উনাকে আমিও খুব ভালোবাসি। মরিয়মের অ্যাবরশনের কথা জানার পর আমি প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কোনো বিভত্‍স সত্য বেরিয়ে আসে কিনা সেই ভয়ে ছিলাম। কিন্তু পরিশেষে তেমন কিছুই হয়নি। অনেক কথা হলো। আজ আসি।” শরীফ চলে গেল। নূরী বিস্মিত হয়ে তার পথের দিকে চেয়ে রইলো। নূরীর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। তার বাবার এই মহত্‍ কাজটার ব্যাপারে সে নিজেও জানতো না।

বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে আসাদ। মনের সাথে যুদ্ধ করছে সে। সত্যটা নূরীকে বলা উচিত কিনা তা নিয়েই এই যুদ্ধ। আসাদের অস্বস্তি দেখে নূরী বলল, “কি ব্যাপার তুমি এমন করছো কেন?”
- আমি তোমার কাছে একটা সত্য লুকিয়েছি।
- এখন ঘুমাও তো।
- সত্য না বলা পর্যন্ত আমার ঘুম আসবে না।
আসাদের দিকে ফিরলো নূরী। কপালে হাত বুলিয়ে বলল, “বলতে হবে না। আমি জানি। তবুও তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কখনো কমবে না।” একটা ঢেকুর গিললো আসাদ। তারপর ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, “তুমি কিভাবে জানলে?”
- ওই ডাক্তার বাবার পরিচিত। তিনিই সত্যটা আমাকে জনিয়েছেন। দেখো, সন্তান হলো আল্লাহর নিয়ামত। আল্লাহ-ই যদি সেই নিয়ামত না দেন। তবে বান্দার সাধ্য আছে কি? আল্লাহ হয়তো অন্যকিছু চান।
আসাদ ভেতরে ভেতরে মুষড়ে গেল যেন কিছু একটা তাকে গিলে খাচ্ছে। নূরী আরও বলল, “এই পৃথিবীতে এখন তুমি ব্যতীত আমার আর কেউ নেই। আমি চাই তুমি আমাকে তোমার সবটা দিয়েই ভালোবাসো। আমি যে তোমার ভালোবাসার বড্ড কাঙ্গালী।”
আসাদ চুপচাপ নূরীকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো। খুব শক্ত করে।

থানার হাজত থেকে বেরিয়ে আসছে মোজাফফর। জামিনের কাগজগুলোতে চোখ বুলাতে বুকাতে শরীফ বলল, “বুঝলাম না,আপনি তার জামিন করালেন কেন?” নূরী শীতল গলায় বলল, “বাবার পর এই মানুষটাই আমাকে আগলে রেখেছিল। তাছাড়া আমি জানি উনি কেমন মানুষ। উনি যেটা করেছেন সেটা সাময়িক লোভের ফল। আমি চাই না উনি বাকি জীবনটা অন্ধকার কারাগারে কাটাক। আমি উনাকে মাফ করে দিয়েছি। বাবা থাকলেও আজ এই কাজই করতেন। আপনি শুধু জামিনের শর্তটা উনাকে জানিয়ে দিবেন।”
- এটা তো আপনিও জানাতে পারেন।
- আমি উনার মুখোমুখি হতে পারব না।
- আমি আজ আপনার মাঝে গিয়াসউদ্দিন সাহেবকে দেখতে পাচ্ছি। সত্যিই আপনি তারই মতো উদার। শুনেছি এতিমখানার পুরো দায়িত্ব আপনি নিয়েছেন।
- আমি চাই ওখান থেকে একেকজন শরীফ হয়েই বের হোক।
নূরী গাড়ির দিকে হাঁটা দিলো। গাড়ি এসে বসলো। মোজাফফর গাড়ির কাছে এসে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে দুই হাত জোড় করলো। নূরী সরল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তারপর গাড়ি চালিয়ে চলে গেল। শরীফ বলল, “তো মোজাফফর সাহেব এবার কি করবেন?”
- জীবনের ভাগ-দৌড়ের শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। এবার বাকি জীবনটা গ্রামেই কাটাবো।
- সিদ্ধান্ত ভালো ছিল। তবে আপনার জন্য একটা ভালো চাকরি আছে। আর আপনি না করতে পারবেন না।
শরীফের দিকে অবাক দৃষ্টিকে তাকালো মোজাফফর। শরীফ একটা খাম হাতে দিয়ে থানার ভেতরে চলে গেল। খাম খুলে মোজাফফর দেখলো গিয়াসউদ্দিনের কোম্পানিতেই সহকারী ম্যানেজার হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মোজাফফর খামটি ধরে অঝোরধারায় কাঁদতে লাগল। থানার মধ্য থেকে এই দৃশ্য দেখে শরীফের মনটাও কেমন যেন মুচড়ে উঠলো।

রাতের আঁধার পেরিয়ে সূর্য জেগে উঠেছে। জেগে উঠেছে আসাদও। জানালার কাছে এসে ভাবছে এক সত্য এখনো তার বুকে দাফন হয়ে আছে। নূরীকে সেই সত্যই বলতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। আসাদ জানতে পেরেছিল নূরী যেন আসাদকে ডিভোর্স দেয় সেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন গিয়াসউদ্দিন। কেননা গিয়াসউদ্দিন জেনেছিলেন আসাদ বাবা হতে পারবে না। নূরীকে হারানোর মতো কষ্ট সে সহ্য করতে পারবে না। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় গিয়াসউদ্দিনকে সরিয়ে দেওয়ার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই দুর্ঘটনার আগেরদিন রাতে এসে গাড়ির ব্রেক নষ্ট করে দেয়। এই সত্য আসাদের বুকে লুকিয়ে আছে। আসাদ জানে না গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যুর ব্রেকফেইলের জন্য হয়েছে নাকি সাইমের পরিকল্পনায়? তবে আসাদ জানে গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যুর জন্য সে নিজেও দায়ী আছে।

সময়ের স্রোতে অনেক কিছু বদলে গেছে। এখন আসাদ পুরো কোম্পানির দায়িত্ব একাই বহন করে। মোজাফফর তার সহকারী হিসেবে আছে। যদিও প্রথমে সে মোজাফফরকে বিশ্বাস করতে পারেনি। তবে নূরী বলেছে মোজাফফরের মতো মানুষ হয়। যেটা হয়েছে সেটা লোভের পরিণাম। এবং এর ফল সে ভোগ করেছে। ভবিষ্যতে এমনটা করার সাহস করবে না।
আসাদ স্যুট-বুট পরে রেডি হচ্ছে। আজ অফিসে তার চার বছরপূর্তি উপলক্ষে একটা সেমিনার আছে। নাস্তা করে আসাদ বের হলো। গাড়ির কাছে এলো। নূরী এগিয়ে এসে বলল, “তুমি সবকিছুর প্রস্তুতি নাও। আমরা সময়মতো চলে আসবো।”
নূরীর কোলে থাকা জয়ের গালে চুমো দিয়ে আসাদ বলল, “আসি বাবা।” নূরী টাটা দেওয়ার কথা বলল। জয় টাটা দিলো। আসাদ চলে গেল। জয়কে কোলে নিয়ে নূরী ভেতরে আসতে লাগল। মোজাফফর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নূরী বলল, “কি দেখছেন কাকা?”
- আজ যদি সাহেব বেঁচে থাকতেন তবে এই দৃশ্য দেখে খুব খুশি হতেন।
নূরী সরল মুখে বলল, “বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো এই দৃশ্য দেখা যেত না।” মোজাফফর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। নূরী ঠিকই বলেছে গিয়াসউদ্দিন বেঁচে থাকলে এই দৃশ্য দেখা যেত না। কেননা তিনি চেয়েছিলেন আসাদকে এই দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দিতে। যার কারণ আসাদ বাবা হতে অক্ষম। এই উদ্দেশ্যেই এক সিরিয়াল কিলারের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। অ্যাডভান্স হিসেবে মোজাফফরের মাধ্যমে দশ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু মোজাফফর বিষয়টা নূরীকে জানায়। কেননা নূরীকে সে ছোট থেকে মানুষ করেছে। মেয়েটাকে সে খুব ভালোভাবেই বুঝে। আসাদকে ছাড়া নূরী জীবন্ত লাশ হয়ে যাবে তা মোজাফফর ভালোভাবেই জানতেন। সত্য জানার পর নূরীও এক ভয়ানক সিদ্ধান্ত নেয়। গিয়াসউদ্দিনকেই সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। আর এতে মোজাফফরও একটা ভূমিকা পালন করে। টাকা নিয়ে পালানোর নাটক করে পুলিশের ধ্যান ঘুরিয়ে রাখে। দুর্ঘটনার দিন সকালে নূরীই সাইমের চায়ে ঘুমের ওষুধ মিশিয়েছিল। ফলে এক্সিডেন্টটা ঘটেছিল।

এক সত্য লুকিয়ে আছে আসাদের মাঝে। এক সত্য নূরীর মাঝে। অপরদিকে পুলিশের কাছে উন্মোচন হয়েছে অন্য সত্য। হয়তো নিয়তিই আসাদ-নূরীকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আর ফাঁসিয়ে দিয়েছে সাইম-মরিয়মকে। কথায় আছে, নিয়তির খেলা বোঝা বড় দায়। কাউকে বাঁচায় তো কাউকে ফাঁসায়।

সমাপ্ত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.