নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার আমি

দরদী নজরুল

মানুষ হতে চাই..........

দরদী নজরুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুন্দরবনের বর্তমান জীবন

২৭ শে জুন, ২০০৮ ভোর ৪:৫৫

২-৩ দিন আগে সংবাদপত্রে দেখলাম সুন্দরবন অন্চলে একটি বাঘকে গ্রামবাসীরা পিটিয়ে মেরেছে। অবশ্য যেদেশে মানুষের জীবনেরই নিরাপত্তা নেই, সেখানে বাঘ তো কোন ছার, তারপরও পৃথিবীর সুন্দরতম এই প্রাণীটি ও তার আবাসস্হল সম্পর্কে কিছু লিখতে ইচ্ছা করল।



সুন্দরবনের আশেপাশের মানুষ অনেক দিন ধরেই সুন্দরবন থেকে সম্পদ আহরন করে বেচে আছে। পরিকল্পিত উপায়ে এই কাজ করলে কোন অসুবিধা থাকার কথা ছিলনা। কিন্তু মানুষের অতিরিক্ত লোভ আজ এর ধ্বংসের কারন হয়ে দাড়াচ্ছে। বন বিনাশের কারনে বনে বাঘের খাদ্যাভাব দেখা দিলে ব্যাধ্য হয়েই তারা খাবারের জন্য লোকালয়ে নেমে আসে।



পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি হলো সুন্দরবন। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি সেখানে রয়েছে উদ্ভিদ ও প্রাণীদের এক অপূর্ব সমাহার। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে সুন্দরবনের অবস্খান। সমুদ্র উপকূল থেকে মূল ভূখণ্ডের দিকে ১২৩ কিমি পর্যন্ত এ বন প্রসারিত। পূর্ব-পশ্চিমে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬১ কিমি। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা­ এ পাঁচ জেলার মধ্যেই সুন্দরবন সীমাবদ্ধ। তবে অতীতে বরিশাল ও পিরোজপুর পর্যন্ত সুন্দরবনের বিস্তৃতি ছিল। বাংলাদেশে গর্ব করার মতো যেসব প্রাকৃতিক আধার ও স্খাপনা রয়েছে তার মধ্যে সুন্দরবন প্রধান। আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যের ক্ষেত্রেও এই বনের স্খান প্রথম সারিতে। ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ ঘোষণা করেছে।



সুন্দরবনে রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত ভাণ্ডার। দেশের মোট বনভূমির ৪৪ শতাংশই হচ্ছে এ স্রোতজ বনভূমি। উদ্ভিদ, পশু, সরীসৃপ, পক্ষী ও মৎস্য সম্পদের উর্বর ক্ষেত্র সুন্দরবন। ১৯০৩ সালে ডেভিড প্রেইন এখানে ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। এছাড়া আছে ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড এবং হরেক রকম গুল্মলতা। সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ হলো সুন্দরী। এ ছাড়াও গেওয়া, বাইন, কেওড়া, বালপাশা, নোনাঝাউ, গড়ান, সিউরা, ওড়া, কাঁকড়া, বাইন, ধুন্দল, আমুর, পশুর, খলসি, কিরপা, ভোলা, হেঁতাল, দারুল, গড়াইয়া, তাল ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে জন্মে। তাছাড়া ছন, কুম্ভিপাতা, গোলপাতা, মধু, মোমের পাশাপাশি ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য তৈরির সামগ্রীও সুন্দরবন থেকে সংগ্রহ করা হয়। দেশের মোট কাষ্ঠসম্পদের শতকরা ৬০ ভাগই সংগ্রহ করা হয় এই বিশাল বন থেকে। সুন্দরী কাঠের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৩ লাখ ঘনফুট। আনুমানিক ১ কোটির মতো সুন্দরী বৃক্ষ রয়েছে এ অরণ্যে।

সুন্দরবনে রয়েছে ৪৫০টি ছোট-বড় নদী ও খাল। এগুলোর মোট আয়তন প্রায় ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার। এ প্লাবন বনভূমি এলাকা স্বাদু পানি ও সামুদ্রিক লোনা পানির নানা প্রজাতির মাছ ও চিংড়ির প্রজনন ও লালন ভূমি হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশে প্রতি বছর উৎপাদিত মাছের পাঁচ শতাংশ জোগান দেয় সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরীয় উপকূল এবং এ বনের নদী, খাল, খাঁড়ি ও মোহনা। এখানে পানি থেকে আহরিত প্রাণী সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১২৪ প্রজাতির গভীর পানির মাছ, ৫৩ প্রজাতির অগভীর পানির মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ৭ প্রজাতির কাঁকড়া, ৩ প্রজাতির ব্যাঙ, ২ প্রজাতির শামুক, ৬ প্রজাতির ঝিনুক, ৪ প্রজাতির গলদা ও ৩ প্রজাতির কচ্ছপ। উল্লেখ্য, মৎস্যসম্পদের মধ্যে রয়েছে রূপচান্দা, লইট্যা, কোরাল, ইলিশ, ছুরি, লাক্ষ্যা, চিংড়ি, শাপলাপাতা, মেদ, কাইন, ফ্যাসা, সুরমা, পোয়া, হাঙ্গর, কৈ, করাত প্রভৃতি। বছরে প্রায় ১৫-২০ হাজার টন মাছ, ৩৬ হাজার টন চিংড়ি ও কাঁকড়া, সাড়ে ৭০০ টন ইলিশ ও ২০ কোটি চিংড়ির পোনা আহরিত হয় এখান থেকে।



৪,১৪৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট স্খলভাগে রয়েছে প্রাণিবৈচিত্র্যের ব্যাপক সমাগম। প্রাণিবিজ্ঞানী ড. রেজা খান ১৯৮৩ সালে একটি গবেষণাপত্রে এখানকার ৮ প্রজাতির উভচর, ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৬১ প্রজাতির পাখি ও ৪৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর কথা উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন পশুপাখির মধ্যে রয়েছে বাঘ, মায়াবী চিতল হরিণ, শূকর, বানর, সাপ, গুঁইসাপ, ভোঁদড়, বনবিড়াল, কুমির এবং নাম জানা-অজানা নানা প্রজাতির পাখি। প্রাণিকুলের মধ্যে সুন্দরবনের সর্ব প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও হরিণ। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী,এর বাংলাদেশ অংশে বাঘ রয়েছে ৫০০-৬০০ টি। ধারণা করা হয়, হরিণের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যাবে। কুমির রয়েছে দুই শতাধিক মতো।



দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো সুন্দরবন। এটা আসলে একের ভেতরে অনেক বন। এটি হলো দেশের দক্ষিণের ‘বিশাল সবুজ জানালা,’ প্রাকৃতিক ভারসাম্যের রক্ষক, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধ এবং বৃষ্টিপাতের নিয়ন্ত্রক। লাখ লাখ মানুষের জীবিকার্জনের মূল উৎস এই বন। পর্যটন শিল্প ও জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে এর অবদান অসীম। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, জাতীয় সম্পদ এ বনকে ধ্বংস করার অপতৎপরতা বহু দিন ধরেই চলছে। ব্যক্তিস্বার্থের মোহে রাষ্ট্রীয় সম্পদকে গ্রাস করা হচ্ছে।



চোরাকারবারি, বনদস্যু, জলদস্যু, ডাকাত, পশু শিকারি এবং এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী এখানে বনজসম্পদ লুণ্ঠনের অসৎ প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। ফলে সুন্দরবন হারিয়ে ফেলছে তার ঐতিহ্য। অগ্নিকাণ্ড, কাঠ পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য, অজ্ঞাত রোগের আক্রমণ প্রভৃতি কারণে ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে এ বন। অরণ্যের গভীরতা কমে যাওয়ায় পশুপাখির নিরাপদ আশ্রয়স্খলের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। চোরাকারবারিরা কাঠ কেটে বাইরে অবাধে বিক্রি করছে। তাদের প্রধান টার্গেট সুন্দরী বৃক্ষ। গত বছর একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১২ লাখ সুন্দরী গাছ মরে গেছে অজ্ঞাত রোগে। ২০ বছর যাবৎ সুন্দরীগাছের ‘আগা মরা’ রোগ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু সরকার এ সঙ্কট মোকাবেলায় কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সুন্দরী বৃক্ষ নি:শেষ হতে সময় লাগবে না। আর সবচেয়ে যেটা উদ্বেগজনক তা হলো, একটা গাছ কাটার ফলে অজান্তেই আরো অনেক গাছ ধ্বংস করে দিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। সেটাই হলো মূল সমস্যা। বনের পশুদের প্রতিও মানুষ আগ্রাসী হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়ত শিকারিরা পাইকারি হারে হরিণ শিকার করছে। বন কর্মকর্তারা উৎকোচের বিনিময়ে শিকারিদের এ সুযোগ দিচ্ছে। বনরক্ষীদের অগোচরেও অসাধু চক্র পশু শিকার করে থাকে। সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় যে কেউ সহজেই হরিণের গোশত সংগ্রহ করতে পারে।আলু ফালুদের বাগানবাড়ী থেকে হরিণ উদ্ধার তো সেদিনের ঘটনা। অভিজাত অনেকের বাড়ীতে এখনো খুজলে হরিণ পাওয়া যাওয়ার কথা।



পৃথিবী-সেরা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের একমাত্র ও শেষ আশ্রয়স্খল সুন্দরবনেও তারা হুমকির সম্মুখীন। বাঘের চলাফেরা, প্রজনন ক্রিয়া, বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশে বারবার বিঘí সৃষ্টি করছে বিভিন্ন শক্তি। বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৮৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ৫৩টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। তা ছাড়া ১৯৯১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ১৭টি বাঘের চামড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। পুলিশ বা অন্যান্য বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে গুপ্তভাবে কত যে শিকার ও পাচার হয়েছে, তার পরিসংখ্যান কারো জানা নেই। আর একটি রিপোর্ট মতে, স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি ১২০টি বাঘ হত্যা করা হয়েছে। বাঘের চামড়া ও হাড় আন্তর্জাতিক বাজারে খুবই মূল্যবান। তাই চোরাকারবারিরা এগুলো বিদেশে পাচার করছে। সরকার সুন্দরবনের তিনটি এলাকাকে বন্য প্রাণীর জন্য অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে। কটকার ৫,৪৩৯ হেক্টর, হিরণ পয়েন্টের ১৭,৮৭৮ হেক্টর এবং মান্দারবাড়িয়ার ৯,০৬৯ হেক্টর নিয়ে এ অভয়ারণ্য এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এসব জায়গায় প্রাণীরা নিরাপত্তা পাচ্ছে না নরপিশাচদের হাত থেকে।



সুন্দরবনে অতীতে বহু প্রজাতির বিরল প্রাণীর উপস্খিতি ছিল, যেগুলো কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বুনো মহিষ, বারশিঙ্গা, পারাহরিণ, ছোট ও বড় এক শৃঙ্গি গণ্ডার, চিতাবাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক আগেই। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে কানঠুঁটি, সাদা মানিকজোড়া, গগনবেড়, বোঁচা হাঁস, জলার তিতিরসহ বিভিন্ন পাখি। এখন বাঘ ও হরিণ নিধনের যে উৎসব চলছে তাতে এরা অস্তিত্ব কত দিন টিকিয়ে রাখতে পারবে, বলা যায় না। তাই অনিশ্চিত ও অশুভ ভবিষ্যৎ থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে এখনই যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ খুব কঠিন কাজ নয়। ট্রাংকুলাইজার গান সহ কিছু বনরক্ষীর ব্যাবস্হা থাকলে হয়ত বাঘ যদি কখনো লোকালয়ে বেরি হয়ে আসে, তাহলে বাঘ দ্বারা ঘটিত প্রানহাণী রোখা সম্ভব, বাঘটিকেও বাচানো সম্ভব। সরকারের এদিকে নজর দেয়া উচিত। আর দেশের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান গুলোরও টিএসসি দখল করে এ্যাড দেবার চিন্তা বাদ দিয়ে সুন্দরবনের জন্য কিছু করে কর্পোরেট দায়িত্ব পালন করা উচিত।



সূত্র: (ইন্টারনেট ও বিভিন্ন পত্রিকা)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুন, ২০০৮ ভোর ৬:২৫

শয়তান বলেছেন: চমৎকার প্রবন্ধ

২৮ শে জুন, ২০০৮ রাত ২:১০

দরদী নজরুল বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২৭ শে জুন, ২০০৮ দুপুর ২:৫৬

ফারহান দাউদ বলেছেন: অপ্রিয় হলেও সত্য, জাতীয় সম্পদ এ বনকে ধ্বংস করার অপতৎপরতা বহু দিন ধরেই চলছে। ব্যক্তিস্বার্থের মোহে রাষ্ট্রীয় সম্পদকে গ্রাস করা হচ্ছে।
হ্যাঁ,আমরা নিজের পায়ে নিজে বরাবরই কুড়াল মেরে এসেছি,সুন্দরবন আর বাদ যাবে কেন?

২৮ শে জুন, ২০০৮ রাত ২:১১

দরদী নজরুল বলেছেন: ধন্যবাদ সময় করে পড়ার জন্য।

৩| ২৮ শে জুন, ২০০৮ রাত ২:২৫

নেমেসিস বলেছেন: সুন্দরবনের কথাতে বন খেকো ওসমানের কথা মনে পরলো । আমি অবাক সরকার জনগনের ট্যাক্সের পয়সা দিয়া ঐসব চোর কে বন এর সংরক্ষক বানায় কিভাবে ?

আমাদের কারোর মাঝেই কি সত্যিকারের দেশপ্রেম কোনদিনও তৈরি হবে না ?

৪| ২৮ শে জুন, ২০০৮ ভোর ৫:১৯

আশরাফ মাহমুদ বলেছেন: তথ্যবহুল লেখা। সোজা প্রিয়তে।

৫| ২৮ শে জুন, ২০০৮ ভোর ৫:২৩

রন্টি চৌধুরী বলেছেন: ভাল পোষ্ট।
প্রিয় পোষ্ট হিসেবে অন্তভুক্ত হল।

২৮ শে জুন, ২০০৮ বিকাল ৫:৩৫

দরদী নজরুল বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।

৬| ০৫ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ৯:২৮

মেহরাব শাহরিয়ার বলেছেন: দারুণ পোস্ট

৭| ০৯ ই জুলাই, ২০০৮ ভোর ৫:২০

আকাশচুরি বলেছেন: সময় উপযোগী পোস্ট
+++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.