![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিক্ষামন্ত্রী সমীপে-
তানজীনা ইয়াসমিন চৌধুরী॥
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম
নাহিদ স্যার,
কোনও দৈব প্রক্রিয়ায় এ
চিঠি যদি আপনার চোখে পড়ে,
হাজারো ব্যস্ততা স্বত্ত্বেও
যদি পুরো লেখাটিতে কষ্ট করে একটু
চোখ বোলাতে পারেন, অনুধাবন করেন-
ধন্য হয়ে যাব!
স্রষ্টার অপার মহিমা, বাংলাদেশের
মতো তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল এক
দেশের গরিব মানুষের ট্যাক্সের পয়সায়
পরিচালিত সরকারি স্কুল থেকে শুরু
করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত
সনাতন পদ্ধতিতে পড়ালেখা শেষ
করে উন্নত দেশে এসে গবেষণা ও
চাকরি করে যাচ্ছি। খুব কাছ
থেকে গভীরভাবে এদের উন্নতির
কারণগুলি যৎসামান্য
বুঝতে পেরেছি এবং আরও গভীর
পর্যবেক্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
আর দশজন প্রবাসী বাঙালীল মতোই
যা কিছু ভাল তাই দেখে 'আমার দেশেও
কি এমনটা হতে পারে না'
প্রশ্নটা ঘুরে ফিরে আসতেই থাকে।
সেই বোধ থেকেই
আপনাকে লিখতে বসেছি।
বহু প্রাচীন প্রবাদ শিক্ষাই জাতির
মেরুদণ্ড। এই শিক্ষা অবশ্যই টেক্সট
বইয়ের শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
একটা দেশ ও জাতির উন্নতির কিছু
বেসিক মানদণ্ড থাকে- ন্যায়
নীতিবোধ, নিয়মনিষ্ঠা, আইনের
প্রতি শতভাগ শ্রদ্ধা, যা শিশুকাল
থেকেই সবাই শিখে বেড়ে ওঠে।
'প্রতিটি শিশুই এক একটি ফুল, তার
স্বতন্ত্র মহিমায় ভাস্বর।
গোলাপকে যেমন রজনীগন্ধার
সঙ্গে তুলনা করা যাবে না,
তেমনি গাঁদার সঙ্গে শাপলার
তুলনা চলে না। তাই
গোলাপকে গোলাপের মতোই
প্রস্ফুটিত হতে দাও,
শাপলাকে শাপলার মতো।
প্রতিটি শিশুকে তার নিজস্ব রূপ, রস,
গন্ধের সম্পূর্ণতায় বিকশিত হতে দাও!'
কিন্ত আমার আশঙ্কা,
সেরা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষার দুঃস্বপ্ন
দিয়ে স্কুলজীবন শুরু করার পর স্কুলের
প্রথম দিন থেকেই ক্লাসের প্রথম
সারির ছেলেটার সঙ্গে স্রেফ ক্লাস
পারফরম্যান্সে পিছিয়ে থাকা,
এমনকি গ্রামের
স্কুলে অর্থনৈতিকভাবেও
পিছিয়ে থাকে ছেলেটাকে স্যারের
তীর্যক দৃষ্টি থেকে মুখ লুকানোর
চেষ্টা ধীরে ধীরে ব্যাকবেঞ্চার
বানিয়ে ফেলে। এবং এমন
হাজারো উপসর্গ আমাদের সেই বেসিক
বোধটা অঙ্কুরেই শেষ করে দেয়।
আমি নিজে, এমনকি আমার ছেলেরাও
দেশে এমন অভিজ্ঞতা দিয়েই
স্কুলজীবন শুরু করেছি। তাই
অভিজ্ঞতা ও তাগিদ দুটোই একেবারেই
নিজস্ব। পত্রিকা থেকে ধার করা নয়।
উন্নত অনেক দেশেই উন্নত
শিক্ষা ব্যবস্থার বহু উদাহরণ আছে।
কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতায়
যে দেশে আছি তার উদাহরণটাই
প্রস্তাবনা হিসেবে তুলে ধরছি যা আমার
কাছে খুব সরল এবং পরিপূর্ণ মানুষ
গড়ে তোলার জন্য ভীষণ উপযুক্ত
মনে হয়েছে।
প্রথমেই বলি পরীক্ষার কথা।
যা আমাদের শিশুদের মূর্তিমান
আতঙ্ক। জাপানে বাচ্চাদের হাই
স্কুলে (১০ম শ্রেণিতে) ভর্তি হওয়ার
মান যাচাই পরীক্ষাই 'প্রথম পরীক্ষা'।
এখানে প্রথম
পরীক্ষা বলতে 'প্রতিযোগিতামূলক
পরীক্ষা' কিংবা প্রথম 'বোর্ড পরীক্ষা'
শুধু নয়। স্রেফ বার্ষিক/অর্ধবার্ষিক
পরীক্ষার প্রথম বড় পরীক্ষাও সেই
প্রথম।
আমার শুধুই
জানতে ইচ্ছে করে দেশে আজকের
শিশুদের মনে ঠিক কেমন
ভাবনা খেলা করে?
ফ্ল্যাটবন্দি কম্পিউটার, কার্টুনে মুখ
গুঁজে ইংলিশ মিডিয়ামের মাঠহীন
ইনডোর গেইমসে ফার্মের মুরগির
মতো বেড়ে ওঠা আর ফাঁস
হওয়া প্রশ্নপত্রে উত্তর
দেওয়া বাচ্চাগুলোর বোধগুলোই
না জানি কেমন!
এর আগে প্রাইমারি পর্যায় (১ম - ৬ষ্ঠ
শ্রেণি) পর্যন্ত কোনও পরীক্ষাই নেই।
স্কুলে বাচ্চারা একটি কোরাস গায় যার
কথাগুলো বাংলায় সাজালে দাঁড়ায়-
'প্রতিটি শিশুই এক একটি ফুল, তার
স্বতন্ত্র মহিমায় ভাস্বর।
গোলাপকে যেমন রজনীগন্ধার
সঙ্গে তুলনা করা যাবে না,
তেমনি গাঁদার সঙ্গে শাপলার
তুলনা চলে না। তাই
গোলাপকে গোলাপের মতোই
প্রস্ফুটিত হতে দাও,
শাপলাকে শাপলার মতো।
প্রতিটি শিশুকে তার নিজস্ব রূপ, রস,
গন্ধের সম্পূর্ণতায় বিকশিত হতে দাও!'
নিয়মিত ক্লাসের পড়ার পাশে আদব-
কায়দা, সামাজিক রীতিনীতি, আইন
মেনে চলা, ঘর ঝাড়ু মোছা, টয়লেট
ক্লিনিং, মাঠ- জিমনেশিয়াম
পরিষ্কার, রান্না, সূচিকর্ম, কাঠের
কাজ, ফুলদানি-পাত্র রং করার কাজ
থেকে শুরু করে পিয়ানো, বাঁশি,
বাস্কেটবল, ফুটবল- সব শেখানো হয়।
প্রথম যেদিন আমার ছেলেদের
প্রাইমারি স্কুলে দাফতরিক এক
প্রয়োজনে গিয়ে ক্লাস ওয়ানের (৬ বছর)
বাচ্চাকে দেখলাম জানুয়ারির
তুষারপাতের
মধ্যে ঠাণ্ডা পানিতে ভেজানো ন্যাকড়া দিয়ে বারান্দা মুছছে–
বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম!
আরও অবাক হয়েছিলাম দেশে যেই কাজ
আমি নিজে কোনওদিন করিনি,
এখানে আমার ছেলেরা এই কাজ করছে।
অথচ একদিনও বাসায় গিয়ে অভিযোগ
অনুযোগের কথা তাদের মনে হয়নি!
এজন্যই কিনা বলে বাঁশ কাঁচা থাকতেই
নোয়াতে হয়। কাজেই আমি অবশ্যই
আশা রাখি, আজকে এইসব নিয়ম
বাংলাদেশে প্রতিটি স্কুলে চালু
হলে বাচ্চারা আমার ছেলেদের মতোই
এসব কাজ তাদের দায়িত্ব হিসেবেই
মেনে নেবে।
পত্রিকায় ২০১১ সালে আঘাত
হানা সুনামির আশ্রয়কেন্দ্রের অভুক্ত,
শীতার্ত, পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুদের
একা একা খাবারের
লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার সংগ্রেহের
জন্য ধৈর্য ও সততার কথা অনেকেই
জেনেছেন।
শপিং মল খালি পড়ে ছিল। ওয়েস্টার্ন
দেশে এমন ক্ষেত্রে ব্যাপক
লুটতরাজে সয়লাব হয়ে যায়। টোকিওর
ফুকুশিমার সব দোকানের সব কিছু
তেমনি পড়েছিল- অভুক্ত, শীতার্ত
মানুষও তাতে হাত দেয়নি!
এখানে বাচ্চাদের টয়লেট ক্লিনিংয়ের
একটা বিশেষ দিক উল্লেখ না করলেই
নয়- পুরাতন টুথব্রাশ দিয়ে ইউরিনাল,
কমোডের কোনায় জমে থাকা ময়লাও
পরিষ্কার করানো হয় যেন
সে নিজে কোনোদিন টয়লেট
অপরিচ্ছন্ন রেখে অর্থাৎ টয়লেট টিস্যু
দিয়ে সব পরিষ্কার না করে টয়লেট
ত্যাগ না করে।
ক্লাস টিচারদের তদারকিতেই সব কাজ
তারা করে। শিক্ষক দেখবেন সব ঠিক
মতো হলো কিনা, কিন্তু শিক্ষক
নিজে হাত লাগাবেন না। তাতে শিশুর
আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি তৈরি হবে।
টিফিন পিরিয়ডে রোস্টার
ডিউটিতে বাচ্চারা কিচেন
থেকে বিশাল বিশাল
ট্রলি ঠেলে খাবার
ক্লাসরুমে নিয়ে গিয়ে পরিবেশন
এবং খাবার শেষে শ্রেণিকক্ষ
পরিষ্কার করে ট্রলি কিচেনে ফেরত
দিয়ে যায়। বয়স
অনুযায়ী একেবারে ডায়েট চার্ট
মেনে সুষম খাদ্য সঠিক ব্যালান্স
করে লাঞ্চের মেন্যু সেট করা হয়।
জুনিয়র হাইস্কুলে (ষষ্ঠ–নবম শ্রেণি)
সারা বছর ৩ মাসে একবার করে সব
বিষয়ে ক্লাস টেস্ট জাতীয়
পরীক্ষা নেওয়া হয়। তাতে পাশ-
ফেলে কিছুই যায় আসে না। রিপোর্ট
কার্ড বাসায় যাবে- অভিভাবক বাচ্চার
মেধার মান উন্নত
করতে চাইলে বাচ্চাকে আবার
পরীক্ষা দেওয়াবে কিংবা স্পেশাল
কোচিং ক্লাসে (জুকো) পাঠাবে।
সব প্রাইমারি স্কুল (১ম-৬ষ্ঠ শ্রেণি),
সব জুনিয়র হাইস্কুল (৭ম-৯ম শ্রেণি)
একই মানের ।
নির্দিষ্ট এলাকার শিশু সংশ্লিষ্ট
এলাকার স্কুলে পড়তে বাধ্য
এবং সেটা ২০/২৫ মিনিটের হাঁটার
দূরত্বে থাকতে হবে। কারণ, জুনিয়র
হাইস্কুল পর্যন্ত
হেঁটে স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক!
কাজেই আমাদের দেশের
মতো উত্তরায় থাকা শিশুকে ২
ঘণ্টা ধরে যানজটে বসে স্কুলে যেতে হবে না।
একটা ছোট্ট প্রাইমারি পর্যায়ের
ইংরেজি স্কুলেও ১০০টা শিশুর জন্য
রোজ ১০০ গাড়ির জ্যাম
লেগে যাবে না। আর ছোটবেলা থেকেই
ওমুক স্কুলে চান্স পেতেই হবে-এই জোর
জবরদস্তি, কোচিংয়ে ছুট, আর চান্স
না পেলে তুলাধুনোর আতঙ্কের বালাইও
নেই।
আমাদের দেশে একা শিশু
হেঁটে স্কুলে যাওয়ার মতো সুরক্ষিত সব
জায়গা নয়। কাজেই স্কুলের বাস
কিংবা ভ্যান রিকসায় এই সমস্যার
সমাধান হতে পারে। যেহেতু ছোট্ট
গণ্ডির ভেতরেই যাত্রাপথ সীমাবদ্ধ
থাকবে, তাই বাস
ধরতে শিশুকে কাকভোরে উঠতে হবে না।
মা-বাবারও তাদের গাড়ির ড্রাইভার
ঠিক সময়ে আসবে নাকি এই টেনশন
নিয়ে দিন শুরু করতে হবে না।
হাইস্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার
আগেই মান যাচাই পরীক্ষা হবে যার
যার নিজের জুনিয়র হাইস্কুলেই।
শিক্ষামন্ত্রণালয়
থেকে কর্মকর্তারা আসবেন কেবল।
এই পরীক্ষার ফল
দেখে কর্মকর্তারা নির্ধারণ
করে দেবেন কোন ২টা স্কুলে এই
শিক্ষার্থী সুযোগ করে নিতে পারবে।
প্রথমে ১টি সরকারি,
১টি বেসরকারি স্কুলে পরীক্ষা দেবে।
সুযোগ না হলে আরো ২টা। অর্থাৎ
সর্বোচ্চ ৪টা (২টা সরকারি,
২টা প্রাইভেট)
স্কুলে পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে যাবে।
এক্ষেত্রে শিক্ষকদের রায় শতভাগ
মিলে যাওয়ার দক্ষতার
ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় দায়বদ্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও
ভর্তি পরীক্ষার একই নিয়ম। শিক্ষক
এবং কর্মকর্তারাই মান যাচাই
করে রায় দিতে পারবেন তার
শিক্ষার্থী কোথায় যাবে, কোথায় নয়।
একইভাবে প্রথমে ২টা,
পরে না হলে আরও ২টা- সর্বোচ্চ
৪টা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে।
অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষকের রায়ে মন
মতো বিশ্ববিদ্যালয় না পেয়ে পরের
বছর আবার মান যাচাই
পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়।
অর্থাৎ, বাংলাদেশের
মতো সারা বাংলা ঘুরে ঘুরে পরীক্ষার
ফর্ম নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার
হ্যাপা নেই।
ছোট ছোট বাসা, জায়গা বাঁচাতে প্রচুর
কলোনি প্যাটার্নের
সারি সারি বাড়ি। কিন্তু পার্কের পর
পার্ক, স্কুলে মাঠের পর মাঠ।
শিক্ষার্থীদের শারীরিক
কাঠামো ছোট থেকেই মেদহীন
পেটানো ঝরঝরে আলস্যবর্জিত
করে তুলতে ছকে বাঁধা নিয়মেই
শারীরিক কসরত ও এ জাতীয় কর্মকাণ্ড
রুটিন বেঁধে করানো হয়।
যা তারা শতায়ু হয়েও মেনে চলে। কারণ
এদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এসব গ্রন্থিত
হয়ে যায়।
স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়
সমস্ত স্কুলের সব
শিশুকে ৪টি গ্রুপে ভাগ করা হয়।
সবাইকে অংশগ্রহণ করতেই হবে। কিন্তু
প্রতিটি ইভেন্টেই জয় পরাজয় গ্রুপ
পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। ব্যক্তিগত
অর্জন দিয়ে একজনকে আঙুল দিয়ে 'ও
সেরা' 'ও দুর্বল' এমন ক্লাসিফিকেশনের
সুযোগই থাকে না। এভাবে ছোট থেকেই
টিমওয়ার্কে অভ্যস্ত করে তোলা হয়
তাদের। যেন কর্মক্ষেত্রেও একজন দুর্বল
হলে টিম জেতানোর
স্বার্থে অন্যরা সাহায্য করবে,
ভাববে কিভাবে তার ইম্প্রুভাইজেশন
করা যায়।
The Last Samurai
ছবিটিতে জাপানিদের উৎকর্ষতার
উদ্দেশ্যে US Captain Algren
চরিত্রটির উক্তি ছিল 'From the
moment they wake they devote
themselves to the perfection of
whatever they pursue. I have never
seen such discipline!'
আমাদের
শিক্ষা ব্যবস্থা পারফেকশনিস্ট
জাপানিদের মতোই হতে হবে এমন
প্রস্তাবনা আমি রাখিনি। আগেই
বলেছি উন্নত দেশে এমন অজস্র
অনুকরণীয়-অনুসরণীয় ব্যবস্থা যুগ যুগ
ধরে চালু আছে। তাই আমার আকুলতা,
আমাদের নীতি নির্ধারকরা এমন
কোনও ব্যবস্থা বেছে নিলে আমাদের
শিশুগুলোর অন্তরের ঘুমন্ত ভবিষ্যৎ
শিশুর পিতাগুলো প্রাণ পেত।
স্যার, সত্যি বলছি, প্রথম যখন
দেশে জিএসসি, পিএসসি পরীক্ষা চালু
হলো- উচ্ছ্বসিত হয়েছিলাম! কারণ,
আমাদের দেশে কিছু
পেশা আছে যেখানে পঞ্চম শ্রেণি,
অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদপত্র
লাগে আবেদনকারীর ন্যূনতম
যোগ্যতা হিসেবে। যুগান্তরে স্রেফ
টিপসই কিংবা নাম দস্তখত
করতে জানা প্রার্থীও প্রায়শই
দক্ষিণার জোরে এই সনদ জোগাড়
করে নিতে পারতো। সেই অনৈতিক
সুযোগটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে! খুবই
উপযোগী পদক্ষেপ!
গোটা এক জেনেরেশন মেধাশূন্য
হয়ে যাচ্ছে বাবা-মা, শিক্ষক আর
প্রশাসনের নিজেদের 'মুখ' রক্ষার্থে!
সবার একটাই চাওয়া– 'চির উন্নত মম
শির'। সেই শির উন্নত হতে যত অনৈতিক
পথের কাছেই শির নত হোক না কেন!
রেজাল্টটাই যে দেখছে সবাই! কিন্ত
মেধা? জ্ঞানার্জন? সব অসার!
কয়েকবছর ঘুরেই দ্বিগুণ
কষ্টে কুঁকড়ে গেলাম যখন জানলাম আর
সব প্রাতিষ্ঠানিক বোর্ড পরীক্ষা ও
চাকরির পরীক্ষার মতো পিএসসিতেও
প্রশ্নপত্র আউট হয়েছে। হতবাক
হয়ে গেলাম কিছু শিক্ষক/মা-বাবারাই
জোগাড় করে দিচ্ছেন ছেলে মেয়েদের
এসব প্রশ্ন! উত্তরপত্র বিলি হয়েছে-
সম্মিলিতভাবে বাচ্চারা গোল বৈঠক
করে উত্তর দিচ্ছে!
গোটা এক জেনেরেশন মেধাশূন্য
হয়ে যাচ্ছে বাবা-মা, শিক্ষক আর
প্রশাসনের নিজেদের 'মুখ' রক্ষার্থে!
সবার একটাই চাওয়া– 'চির উন্নত মম
শির'। সেই শির উন্নত হতে যত অনৈতিক
পথের কাছেই শির নত হোক না কেন!
রেজাল্টটাই যে দেখছে সবাই! কিন্ত
মেধা? জ্ঞানার্জন? সব অসার!
আমার শুধুই
জানতে ইচ্ছে করে দেশে আজকের
শিশুদের মনে ঠিক কেমন
ভাবনা খেলা করে?
ফ্ল্যাটবন্দি কম্পিউটার, কার্টুনে মুখ
গুঁজে মাঠহীন ইনডোর গেইমসে ফার্মের
মুরগির মতো বেড়ে ওঠা আর ফাঁস
হওয়া প্রশ্নপত্রে উত্তর
দেওয়া শিশুগুলোর বোধগুলোই
না জানি কেমন!
অথচ ফাঁস
হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেবে বলে সারা বছর
গায়ে বাতাস লাগিয়ে উড়ে বেড়ানোর
কিংবা অন্য কোনও কো-
কারিকুলামে প্রতিভা ঝালাইয়ের
একদণ্ড সময়ও কিন্তু তাদের নেই।
পুরো স্কুল জীবন শেষ করছে পরীক্ষার
যুদ্ধে জিততে কোচিং, টিউটর,
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন, সৃজনশীল প্রশ্ন-
ইত্যাকার চাপে ঘোড়ার পেটে হাত-
পা বাঁধা জকির মতো এক অমানবিক
দৌড়ে!
'আজ যে শিশু পৃথিবীর আলোয় এসেছে,
আমরা তার
তরে একটি সাজানো বাগান চাই।'
রেনেসার গানটা বারবার বেজে উঠুক।
বড় বড় মানুষেরা লিখছেন।
প্রাতঃস্মরনীয় জাফর স্যার কচ্ছপের
কামড়ের মতো কামড়ে ধরেছেন। ভাল
কিছুর আশায় উন্মুখ আছি। এই অচলায়তন
আপনাকে ভাঙতেই হবে স্যার!
দীর্ঘ লেখাটি পড়ার অসীম ধৈর্যের
জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক: সাবেক রিসার্চ ফেলো, কিউশু
বিশ্ববিদ্যালয়, ফুকুওকা, কিউশু, জাপান।
বিভাগীয় প্রধান, বিজনেস
প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্ট, স্মার্ট
সার্ভিস টেকনোলজিস কো.
লিমিটেড, জাপান।
[email protected]
©somewhere in net ltd.