নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীর মাটি থেকে যতদূর চেতনার বিস্তার

মহাজাগতিক

বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা, মতবিনিময়, আলোচনা শুনতে, করতে, পড়তে ভালোলাগে। নতুন নতুন ভাবনার সাথে পরিচিতি হতে পছন্দ। পছন্দ বন্ধুত্ব।

মহাজাগতিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

‍‍শয়তান' কি ‌আল্লাহ'র বিপরীত ??

১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৩০

ইবলিসকে দুনিয়াতে মুমিন ব্যািক্তদের প্রকাশ্য শত্রু হিসেবে পাঠানো হয়েেছ। আর আখেরাতে হাশরের মাঠে মানুষ ও জ্বীনের বিচারকাজ শেষে মৃত্যুকেও ধ্বংস করে দেয়া হবে। ইবলিসও জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

অত্যন্ত ভালভাবে লক্ষ্য করা দরকার যে, ‘ইবলিস’ শব্দের বিপরীত শব্দ ‘আল্লাহ’ -বিষয়টি এমন নয়। ‘ইবলিস’ শব্দের বিপরীত শব্দ ‘মুমিন’ হতে পারে। ‘ইবলিস’ এবং ‘মুমিন’ উভয়েই ‘আল্লাহ তায়ালার’ সৃস্ট ‘মাখলুক’ বা সত্ত্বা। ‘আল্লাহ’ -একাই এক জাত। ‘আল্লাহ’ একাই এক ‘জাতের’। ঐ জাতের আর কোনো কিছু (সত্ত্বা) থাকা সম্ভব নয়।

আল্লাহ জগতে ‘ইবলিস’ আর ‘মুমিন’ দুই জাতের দুই মাখলুককে পরস্পরের শত্রু হিসেবে দুনিয়াতে পাঠিয়ছেন। কেন পাঠিয়েছেন- সেটি ভিন্ন আলোচনা।

আরো বুঝে নেয়া দরকার যে, ইবলিস আল্লাহর ‘জাত’ বা সত্তাকে অস্বীকার করার কারণে ‘অভিশপ্ত’ হয় নাই। সে অভিশপ্ত হয়েছ। বস্তবাদীতা অনুশীলন করার কারণে। ইবলিস স্বয়ং জানে যে, তার নিজের সত্তা ‘আল্লাহর’ ইচ্ছার মুখােপক্ষী। এটা সে ‘অিভশপ্ত’ হওয়ার আগেও জানত এবং নিরবধি জানে ও স্বীকার করে। ‘আল্লাহর’ সাথে তার বিরোধের স্থানটি ভিন্ন…..

অতএব, ‘ইবলিস’ সত্তা বা ক্ষমতা কোনোদিক দিয়েই ‘আল্লাহ’ শব্দটির বিপরীত শব্দ নয়।

আল্লাহ আদমকে সৃস্টি করার পর যখন আযাযীলকে বললেন আদমকে সেজদা করতে, তখন আযাযীল তা করতে অস্বীকার করল এই যুক্তিতে যে, আদম মাটির তৈরী আর সে নিজে আগুনের তৈরী। আযাযীল ‘অভিশপ্ত’ হল….

এখানে সে অভিশপ্ত হল ‘আল্লাহ’ আস্বীকার করা বা আল্লাহর ক্ষমতায় অবিশ্বাস করার কারণে নয়। সে অভিশপ্ত হল তার ভ্রান্ত বস্তবাদী বিশ্বাসের কারণে। সে এই যুক্তিতে আদম কে সেজদা করতে চাইল না যে, আদম মািটর তৈরী অন্যপক্ষে সে নিজে আগুনের তৈরী। সে এই যুক্তি গ্রহণ করতে পারল না যে, আল্লাহ স্বয়ং যখন হুকুম করেছেন অতএব আদম নিশ্চয়ই আযাযীল অেপক্ষা উত্তম। সে যুক্তি খাড়া করল যে, ‘আগুন’ ‘মাটি’ অপেক্ষা উত্তম। তার গোয়াতৃুিম ও আত্মরম্ভিতা এটাই িছল যে, আগুন দহনশীল, উদ্ধগামী আর মাটি নরম ও নিম্নগামী। এভাবে বাহ্যদৃিস্টতে দেখাটাই তার কাছে বড় হয়ে দঁাড়াল ….. যেমনটি আমােদর আজকালকার বন্তবাদীদের দশা। (তাদের কাছে চোখের দেখাটাই সত্য)। এটাই ছিল ইবলিসের বস্তবাদী প্রকল্প। আল্লাহর হুকুমের শক্তিতে বিশ্বাস হারনোই তার ‘অভিশপ্ত’ হওয়ার কারণ। সে বুঝলো না মাটি দেখতে যেমনই হোক আর আগুন যত দাহ্যশক্তিগুণসম্পন্নই হোক আল্লাহ যখন হুকুম করেন তখন আগুন অেপক্ষা মাটি অবশ্যই শক্তিশালী। আর আজো তা প্রমাণিত হয়েই চলেছে। আগুন অেপক্ষা মাটিই শক্তিশালী। আগুন ব্যবহার করে আজ মাটির মানুষ সভ্যতা আর ভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলেছে।

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৪/-৬

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৪২

হাপিবয় বলেছেন: ভাল লাগলো।ধন্যবাদ।

২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৫০

মনির হাসান বলেছেন: ... ভ্রাতা ফিরোজ অবশ্যই ইব্লিস আল্লাহর বিপরীত নয় ... এটা একটা তর্ক বাতুলতা ।

... কিন্তু ইব্লিশের জায়গায় যখন আমি নিজেকে কল্পনা করি তখন মাঝে মাঝে মনে আল্লাহ তায়ালা শুধু শুধুই ইব্লিশের প্রতি একটা অবিচার করেছে ... আলোচ্য ঘটনার ক্ষেত্রে দয়াবান আল্লাহ'কে আরেকটু সহনশীলতার পরিচয় দেয়া উচিত ছিল ।

... আর ভাই ... আগুন, মাটি দুটোই আল্লাহর তৈরী, দুটোই পরস্পরের সম্পূরক ... তাই সেখানে তুলনামূলক আলোচনা ... নিতান্তই শ্রম অপচয় ।

... ভাল থাকবেন ।

৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৫৮

বেতাল বলেছেন: "আগুন অেপক্ষা মাটিই শক্তিশালী। আগুন ব্যবহার করে আজ মাটির মানুষ সভ্যতা আর ভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলেছে।" - আমি বুঝতে পারছি না, আপনার এই কথার সূত্র কোনটি। এটা ফিলোসোফিকেল কথা। আর, ইসলামে ফিলোসোফির কোনো অবস্থান নেই।

আপনার পোস্টটি যদি ফিলোসোফিকেল পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে দেখি, তার পরেও কনট্রিডিকশান থেকে যায়। মানে, আগুন বা মাটির শক্তিশালী'র হবার ইউনিটটি কি? কিভাবে এটা এসিউজম করে নিলেন।

পোস্টটি যদি ইসলামি দৃষ্টিকোন থেকে দেখি, তাতেও আরেক ফ্যাকড়া। পুরো লেখাটিই কেমন যেন ফেইরি ফেইলসের মতো হয়ে গেছে। লেখাটির সারমর্ম যদি ঠিক ধরি, তবে এরকম হয় যে, শয়তান ‌আল্লাহ'র বিপরীত নন। ফাইন। তাহলে, দুটি প্রশ্ন আসে,

১। শয়তানের বিপরীত কে?
২। আল্লাহ'র বিপরীত কে?

আশা করি, উত্তর দেবেন।

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৫৯

সীমন্ত ইসলাম বলেছেন: এটা এমনই একটা বিষয়, যেখানে ভিন্নমত প্রকাশ করার মতো কেউই নাই।

৫| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:০৪

গুপী গায়েন বলেছেন: "আল্লাহ আদমকে সৃস্টি করার পর যখন আযাযীলকে বললেন আদমকে সেজদা করতে, তখন আযাযীল তা করতে অস্বীকার করল এই যুক্তিতে যে, আদম মাটির তৈরী আর সে নিজে আগুনের তৈরী। আযাযীল ‘অভিশপ্ত’ হল…."

আমার প্রশ্ন এর আগের একটা ঘটনা নিয়ে। আযাযীল লাওহে মাহফুজ এ রক্ষিত কোরআন শরীফে ইবলিশের নাম পড়ে আল্লাহর কাছে জানতে চেয়েছিল, এই হতভাগ্য ইবলিশ টা কে। জবাবে আল্লাহ বলেছিলেন সময় হলে সেটা জানা যাবে।

এই বিষয়ে আপনার কি বক্তব্য?

তবে যারা আল্লাহ ও ইবলিশ কে বিপরীতে দাঁড় করাবার কোন যুক্তি নেই। কারণ সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টির মাঝে তুলনা চলেনা; কোন ভাবেই না। ধন্যবাদ।

৬| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:০৮

গুপী গায়েন বলেছেন: বেতাল বলেছেন "আমি বুঝতে পারছি না, আপনার এই কথার সূত্র কোনটি। এটা ফিলোসোফিকেল কথা। আর, ইসলামে ফিলোসোফির কোনো অবস্থান নেই।"

@ বেতাল: ইসলাম ফিলোসফি নয় এটা বলার আগে আপনার মনে হয় ফিলোসফির সংজ্ঞাটা ভাল ভাবে জানা দরকার। সেটা জেনে আসুন।

৭| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:১৬

সততার আলো বলেছেন: মাটির গলনাংক কত তা কি কেউ জানেন? জানলে জবাব দিন।

লোহাও আগুনে গলানো যায়, কিন্তু মাটি নয়।

৮| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:১৯

সততার আলো বলেছেন: আমি ট্রিপল এইচকে আছাড় দিতে পারি না, অথচ বলি আমি তার চেয়ে শক্তিশালি। হাস্যকর না?

৯| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:২২

বিষাক্ত মানুষ বলেছেন: সারু ভাই নিকি !!

১০| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:২৪

সততার আলো বলেছেন:
১। শয়তানের বিপরীত কে?
২। আল্লাহ'র বিপরীত কে

"হে নবী বলুন আল্লাহ এক। তিনি পরঅনির্ভরশীল। তার কোন সন্তান নেই, বা তিনিও কারও সন্তান নেই। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।"
-সুরা ইখলাস

সমকক্ষতা যেখানে নেই সেখানে বিপরীতের প্রশ্নই আসে না। আর শয়তান হলো মূলত একটা জ্বীন। জ্বীনের বিপরীতে অবশ্যই মানুষ। শয়তানের সাথে যুদ্ধ করে বেচে থাকাই বড় জিহাদ।

১১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৩১

গুপী গায়েন বলেছেন: সততার আলো বলেছেন: মাটির গলনাংক কত তা কি কেউ জানেন? জানলে জবাব দিন।

@ সততার আলো : একটু যুক্তি দিয়ে কথা বলুন যাতে কেউ প‌্যাঁচে ফেলে মজা না পায়। নিজেকে কেন অন্যের কাছে হাস্যস্পদ করে তোলেন।

প্রথম কথা হচ্ছে মাটি মৌলিক পদার্থ নয়। বিভিন্ন মৌলের সমন্বয়ে গঠিত এবং এদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা গলনাঙ্ক আছে। এই অনেক মৌলের মাঝে লোহাও একটা। আছে সিলিকা, আরও কত কি।

লোহা ও মাটির গলনাঙ্কের তুলনা টা এখানে লাগসই না।

তাই আপনার উদাহরণ টা পাল্টা যুক্তি হিসেবে ভাল যুক্তি না।

১২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৩৪

মনির হাসান বলেছেন: সততার আলো বলেছেন: "জ্বীনের বিপরীতে অবশ্যই মানুষ। শয়তানের সাথে যুদ্ধ করে বেচে থাকাই বড় জিহাদ।"

সততা ভাই ... এই জীন - ভূতের লগে যুদ্ধ আর কতদিন ।
জীবন'ও কাউরে শুনিনাই ... কেউ কোনো জীনের (বা ভূতের) গায়ে টোকা পর্যন্ত দিতে পারছে ... মাঝখান দিয়া এইসব জিহাদে খালি কতগুলা মানুষ মারা পড়ে ।

১৩| ১৭ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:০৬

সত্যান্বেষী বলেছেন: শয়তান এবং আল্লাহর আন্ত:সম্পর্ক জানতে হলে আরজ আলীর 'শয়তানের জবানবন্দী' পড়ুন।

১৪| ১৭ ই নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ৭:২২

কানা বাবা বলেছেন:
কিচু কওয়ার রুচি হৈলো না...
মাইনাচ্...

১৫| ১৭ ই নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ৭:৫৯

মিন্‌নত করি বল কেলাডা চার বলেছেন: এইখানে অনেক জিন/ভূত বিশেষজ্ঞ দেখতে পাচ্ছি। আমার একটা জিন পোষার খুব শখ। আযাযীল টাইপের হোমরাচোমরা জিন হলে ভালো হয়। কেউ কি কোন পরামর্শ দিতে পারেন?

@সততার আলোঃ আপনার এবং ট্রিপল এইচ-এর গলনাংক কতো? না জানা থাকলে আসেন, বের করে দেয়ার চেষ্টা করি।
@গোপী গায়েনঃ সততা আলো কখনো নিজেকে হাস্যস্পদ করে তুলেন না। এই কষ্ট থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহতালা উনাকে বাইডিফল্ট হাস্যস্পদ করে পাঠিয়েছেন।

১৬| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৫

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: মহাজাগতিকের পোস্টের প্রেক্ষিতে :

মহাজাগতিক আমার একটি পোস্টে নিচের মন্তব্য (আলোচনা) করেছিলেন। পরবর্তীতে দেখলাম তিনি পোস্ট আকারে এটি দিয়েছেন (আমার ব্লগে)। তারও পরে তিনি মন্তব্যটি আবার আমার আরেকটি পোস্টে দিয়েছিলেন এবং আমার কাছে জবাব চেয়েছেন। সামওয়ারে নতুন এসেছি...অবাক হলাম, তিনি পোস্টটি এখানেও দিয়েছেন। ইন্টার পরীক্ষা-পরবর্তী কোচিং এর ব্যস্ততার জন্য এ সম্বন্ধে লিখতে বসতে পারিনি। এ ধরনের লেখা আমি এড়িয়ে চলি। কেন তাও আলোচনা করবো। তারপরও মহাজাগতিকত যখন জবাব চেয়েছেন...



" বাহ্যদৃষ্টিতে দেখাটাই তার কাছে বড় হয়ে দাঁড়াল ….. যেমনটি আমাদের আজকালকার বস্তুবাদীদের দশা। (তাদের কাছে চোখের দেখাটাই সত্য)। এটাই ছিল ইবলিসের বস্তুবাদী প্রকল্প।"

এখানে 'চোখের দেখাটাই সত্য'- শব্দগুলো সত্যিই যন্ত্রণাদায়ক। প্রথমে ঠিক করতে হবে চোখের দেখা কি, চোখ কিভাবে কাজ করে, চোখ নামক যান্ত্রিক কৌশল যে বাস্তবতা সৃষ্টি করছে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু? সেটি কি বাস্তব নাকি অবাস্তব প্রতিচ্ছবি (মরুভূমিতে মরীচিকা) এবং বাস্তবতার সংজ্ঞা ও সত্য বলতে কি বুঝছি...।

আমার উপলব্ধি ম্যাট্রিক্সের মতন স্থূল চলচিত্রের কাহিনীর মর্ম বুঝেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, বার্কলে থেকে বার্ট্রান্ড রাসেল পর্যন্ত পড়াশোনার তার দরকার নেই। সময়ের মতনই বাস্তবতার সংজ্ঞা বিভ্রান্তিকর। সুতরাং শুধুমাত্র চোখের দেখা নয়, আমরা প্রশ্ন করতে পারি স্পর্শ, ঘ্রাণ, অনুভূতি, শ্রবণ- এককথায় পঞ্চইন্দ্রিয়লব্ধ যেকোন জ্ঞানের গ্রহনযোগ্যতা সম্বন্ধে। এক্ষেত্রে পৃথিবীর প্রত্যেকটি সৃষ্টির বাস্তবতার তাদের জন্য সমান সত্য। কিংবা সমান মিথ্যা।

বাদুড়ের পৃথিবী যেমন সুপারসনিক শব্দভিত্তিক বাস্তবতার ওপর সৃষ্ট কিংবা তেলাপোকার দর্শন যেমন সুপারজিশন ও এপোজিশন প্রতিবিম্বের ফলে সৃষ্ট তার নিজস্ব বাস্তবতাভিত্তিক তেমনি আমাদের নিজস্ব বাস্তবতাও সীমাবদ্ধ। তথাপি ভাষাভিত্তিক হেত্বাভাস ছাড়াই আমরা এই সিদ্বান্তে আসতে পারি যে বাদুর কিংবা তেলাপোকার পৃথিবীর চেয়ে আমাদের পৃথিবী অনেক বেশি যৌক্তিক (এখানে আমি বাস্তবের পরিবর্তে যৌক্তিক শব্দটি ব্যবহার করেছি, কারণ বাস্তবতা শব্দটি বিতর্কিত)। তাহলে আমরা ঈশ্বর (সাময়িকভাবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রসঙ্গে মন্তব্য করা হতে বিরত থাকতে পারি) এবং আমাদের মর্ধ্যবর্তী অনেক কল্পিত প্রজাতি পেতে পারি যারা আমাদের থেকে আরো যৌ্ক্তিকভাবে জগত উপলব্ধি করতে পারেন যদিও আমরা সম্ভাব্য কুতর্ক এড়ানোর জন্য এক্ষেত্রে ধরে নেবো সে প্রজাতিটি উন্নত হতে হতে অবশ্যই স্যার আর্থার সি ক্লার্কের ভবিষ্যদবাণী অনুযায়ী ঈশ্বরের পর্যায়ে চলে যাবেনা।

চতুর্পাশ্বের অন্যান্য প্রজাতির দিকে তাকিয়ে এখন আপনি (বিবর্তনবাদে বিশ্বাসী হন আর নাই হন) স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে সাম্প্রতিক কয়েক শতাব্দীতে এই সমস্ত প্রজাতির তুলনায় একমাত্র হোমো স্যাপিয়েনস নামধারী প্রজাতিটিই অঙ্গসংস্থানগতভাবে পরিবর্তনের চেয়ে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বেশি উন্নত হয়েছে ('উন্নতি' শব্দটি সমস্যা সৃষ্টি করলে আমরা যৌক্তিক শব্দটি ব্যবহার করতে পারি)।

তাহলে শেষপর্যন্ত আমরা সিদ্বান্তে আসতে পারি যে ঈশ্বর আর মানুষের মাঝে যে সমস্ত প্রজাতি আছে, মানুষ ধাপে ধাপে তাদেরকে অতিক্রম করছে (যদিও সে ঈশ্বরের পর্যায়ে পৌঁছাবার পূর্বেই মহাপ্রলয় হবে কিনা তা আলোচনাবহির্ভূত)। যেহেতু কালের পরিক্রমায় সে আরো বেশি যৌক্তিক হচ্ছে সেহেতু যে মহাবিশ্বকে সে একসময় বর্তমানের সাপেক্ষে তেলাপোকার চোখেই দেখেছিল, যৌক্তিকভাবে উন্নতির প্রেক্ষিতে সে তার আরো ডিটেইলড্ প্রতিচ্ছবি বা ইমেজ দেখছে। আমরা এই বিস্তৃততর প্রতিচ্ছবিকে একটু ঘুরিয়ে বলতে সঠিকতর প্রতিচ্ছবি যদিও পরবর্তী প্রতিচ্ছবি সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই কিন্তু সম্ভাব্যতা তত্ত্বের সাহায্যে বলতে পারি তা হবে আরো বেশি ডিটেইল্ এবং এক্ষত্রে সম্ভাব্যতার মান এক ধরে নেয়া যায় কারণ সময়ের অগ্রগতির সাথে প্রত্যেকটি বস্তুর ধারণাই আরো বেশি ডিটেইলড হচ্ছে।

সুতরাং একসময় যার ব্যাখ্যা বাহ্য দৃষ্টিতে পাই নি, তার ব্যাখ্যা হয়তো ভবিষ্যতে কখনো পাবো- এরকম যুক্তি দেন ধর্মীয় পন্ডিতরা। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যায়, ধর্মের মর্মবাণী হল- প্রয়োজনে তোমার নিজস্ব বাস্তবতাকে তুমি পুরোপুরি অস্বীকার কর; তবুও বিশ্বাস রাখো ধর্মের প্রতি। ইসলামের দাজ্জাল অনেকটা এই তত্বের উপরই প্রতিষ্ঠিত। শুধুমাত্র চোখের দেখা নয়, দাজ্জাল সমস্ত মানবইন্দ্রিয়কে আঘাত চালাবে ঈমাণহারা করার জন্য, তারপরও বিশ্বাস রাখতে হবে!

শেষ পর্যন্ত আমি যা প্রতিষ্ঠিত করলাম তা হল, (বর্তমান) চতুর্মাত্রিক বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করে কেউ যদি ইসলামে দৃড়বিশ্বাস রাখে তবে ইসলামের হাজার হাজার ফাটল (নৈতিক, গাণিতিক, তত্ত্বীয় ইত্যাদি) দেখালেও সে বলবে এসব বস্তুবাদী প্রকল্প, ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞাণ যার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নাতীত নয় যেমনটি ডক্টর ক্যাম্পবেল করেন যখন ডক্টর জাকির নায়িক হাজার হাজার মানুষের সামনে বাইবেলের নানান গোঁজামিল দেখানোর পরও তিনি বলেন, 'এ ঈশ্বরের বাণী, তাই আমি অসঙ্গতি দেখেও বিশ্বাস রাখি।'- ঈমাণের কী তেজ!

ধর্মীয় ইবলিশ-আদম-হাওয়াকেন্দ্রিক গালগল্প নিয়ে তাই দিন-রাত বিতর্ক চালিয়েও কোনকিছু প্রমাণ হবে না। নাস্তিক বলবে, মানুষ খারাপ কাজ করে প্রবৃত্তির তাড়নায়, আস্তিক যাকে আখ্যা দেবে শয়তান।

"ইবলিসকে দুনিয়াতে মুমিন ব্যক্তিদের প্রকাশ্য শত্রু হিসেবে পাঠানো হয়েছে।"

মুমিন অর্থ যার ঈমাণ আছে (ইসলামের উপর)। তার মানে যাদের ঈমান নেই তাদেরকে ইবলিশ ততটা 'দাগা' দেয় না? এজন্যই বর্তমান দুনিয়ায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজীরা সুদের ব্যবসা, পতিতাবৃত্তি, চুরি, ডাকাতি, বোমাবাজি, রাহাজানি, ধর্ষণ বেসমেল্লাহ্ বলে বেশ ভালোই চালিয়ে যাচ্ছে? অপরদিকে অবিশ্বাসীদের মধ্যে মানবিক গুনাবলী তুলনামূলকভাবে বেশি যেহেতু তাদের পেছনে ইবলিশের লাগার প্রয়োজন নেই? মানবিক গুনে গুনান্বিত বরিশালের প্রাতিষ্ঠাণিক শিক্ষার দিক দিয়ে অশিক্ষিত (কিন্তু স্বশিক্ষিত) কৃষক আরজ আলীর ভাষায় শয়তানের নিজের কথা মনে পড়ে গেল আপনার এই মন্তব্যে :

'যে ব্যক্তি কাফেরের ঔরসে জন্মলাভ করে, সে তো জন্মসূত্রেই কাফের এবং সে নানাবিধ বেসরা কাজ (মূর্তিপূজা) ইত্যাদি করে থাকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে আমার দাগা দেওয়া ছাড়াই। তাকে তার কৃতকর্ম বাধা দানের অর্থ হয় অসত্কাজে অর্থাত পাপকাজে বাধাদান করা। আল্লাহ তো কারো অসত্কাজে আমাকে বাধা দিতে বলেন নি। তাই আল্লাহর আদেশ মেনেই আমি কোন বিধর্মীকে দাগা দেই না। অর্থাত আমার অস্তিত্বের উপর যাদের ঈমান নেই, তাদের আমি দাগা দেই না, এমনকি তাদের সত্কাজেও না। তাইতো বর্তমান দুনিয়ায় ঈমানদারদের চেয়ে বেঈমানদারগণই সত্কাজ করেন বেশি।

"আমাকে যেমন সকল মানুষকে দাগা দিতে হয় না, তেমন সকল জায়গায় আমি সমভাবে অবস্থানও করি না। বিশ্বাসীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনা মন্দির ও ধর্মধামেই আমাকে সময় কাটাতে হয় বেশি। কেননা ওগুলোই হচ্ছে আমার প্রধান কর্মকেন্দ্র।" [আরজ আলী মাতুব্বর রচনাসমগ্র ১, শয়তানের জবানবন্দি, পৃষ্ঠা : ১৮৭]

অবশ্য এই মানবিক গুনাবলী নিয়েও ধর্মীয় পন্ডিতরা ভ্রুকুটি করেন, তাদের বক্তব্য, একজন নাস্তিক বা বিধর্মী যতই ভালো কাজ (যেমন : ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান, গরীবদের সেবা করা, অসুস্থকে সহায়তা করা ইত্যাদি) করুক না কেন প্রকৃত মানবিক গুনাবলী তার মাঝে বিকশিত হবে না যদি না সে মুসলমান হয়। অথচ এই সব নাস্তিক (রবীন্দ্রনাথ, তেরেসা, নাইটিঙ্গেল, রাসেল ইত্যাদি ) যেসব ভালো কাজ করেছেন সেসব ব্যাপারে আল্লাহ ব্যবস্থা কি নিবেন- এ প্রশ্নে তারা অস্বস্তিবোধ করেন। আমি খুবই বিস্মিত হই একজন নাস্তিক তার সারাটা জীবন মানুষের জন্য বিলিয়ে দেবার পরও (ইতিহাসে এরকম মানুষগুলো দুর্লভ নন) মুসলিম পন্ডিতরা বলেন, তারপরও তাদের মাঝে সঠিক গুনাবলী বিকশিত হয়নি ইসলামী নীতির আদলে নিজকে গড়ে না তোলার কারণে। এ ধরনের মানুষগুলো থেকে তারা বরং তুলনামূলকভাবে Prefer করেন সেই সকল মুসলিমদের যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েও যত কুকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

শয়তানের তত্ত্বটাই এমন যে ইসলাম সত্যিই বিপাকে পড়ে যায়। কাফেরদের শয়তান দাগা দেয় না কারণ তারাতো দোযখে যাবেই। শয়তান দাগা দেয় শুধু মুসলিমদের যার তাত্পর্যই হল মাদার তেরেসা, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া বিন লাদেন, মওদুদী, মতিউর রহমান নিজামীরাই শয়তানের নিকট বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আল্লাহর উপর তাদের বিশ্বাস এখনও আছে! অর্থাত তেরেসা, নাইটিঙ্গেলদের কর্মের কোন মূল্যই নাই আল্লাহর কাছে। কিন্তু সেইটা আবার কেমন করে হয়? এই জায়গায় কেমন জানি অস্বস্তি লাগে ধর্মান্ধ-ধর্মহীন সবারই । ধর্মীয় পন্ডিতরা বিপাকে পড়ে যান। কারন আল্লাহ আবার বলেছন, যে মানুষের সেবা করে সে প্রকারান্তরে তাঁরই সেবা করে।

"আখেরাতে হাশরের মাঠে মানুষ ও জ্বীনের বিচারকাজ শেষে মৃত্যুকেও ধ্বংস করে দেয়া হবে।"

'মৃত্যু' একটি পার্থিব শব্দ; মানুষের সাপেক্ষে বিদ্যমান- যা ইবলিশ, ফেরেশতা বা আল্লাহর সাপেক্ষে কাজ করবে না (অন্তত আল্লাহর সাপেক্ষে নয়)। যেহেতু দেহ নশ্বর, আত্না অবিনশ্বর- সেহেতু হাশরের মাঠে মানুষ বর্তমানের মত দেহবিশিষ্ট হবে না। সুতরাং নতুন সেই আকৃতির সাপেক্ষে 'মৃত্যু' শব্দটার অর্থ কি? (ইসলামী সুফীজম তথা তরীকত দেহ এবং আত্না ছাড়া মানুষের ভিন্ন একটি সত্তার অস্তিত্বের কথা বলে- 'বরযখ'। সেটি দিয়ে যদি ব্যাখ্যা করতে চান তবে আলোচনা আরো জটিল হবে!) এ কি ছেলে/মেয়ে ভুলানো কিছু রূপক আর ধোঁয়াশাময় কাল্পনিক গালগল্প নয়? (আমি শুধুমাত্র এ দিয়েই কোন সিদ্বান্তে আসছি না।)

"আরো বুঝে নেয়া দরকার যে, ইবলিস আল্লাহর ‘জাত’ বা সত্তাকে অস্বীকার করার কারণে ‘অভিশপ্ত’ হয় নাই। সে অভিশপ্ত হয়েছ। বস্তবাদীতা অনুশীলন করার কারণে। ইবলিস স্বয়ং জানে যে, তার নিজের সত্তা ‘আল্লাহর’ ইচ্ছার মুখােপক্ষী। এটা সে ‘অিভশপ্ত’ হওয়ার আগেও জানত এবং নিরবধি জানে ও স্বীকার করে।"

ইবলিশ যদি আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করেই নেয় তাহলেইতো প্যাঁচ লাগে (যা খোলার জন্য আবার প্রয়োজন গভীর ধর্মীয় উপলব্ধি!)। আপনি আমার মূল ভাবনার উপরই আলোকপাত করেন নি।

****শয়তানের এত সূক্ষ্ণ বুদ্ধি, এমন ‘চতুর’ আর ‘বুদ্ধিমান’ সে যে তার সূক্ষ্ণ কুবুদ্ধি দিয়ে সে জ্ঞাণী-গুণী অনেক ঈমানদার ব্যক্তিকেও প্রায় ‘ধোঁকা’ (পথচ্যূত) দিয়ে ফেলেছিল…ইতিহাসে এর প্রচুর নজির আছে পরবর্তী ঈমানদারদের সাবধান করে দেবার জন্য, এত সূক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন শয়তান কি 'বুঝতে' পারে না যে সে আসলে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার মহাপরীক্ষার একটা অংশমাত্র? সে কি ‘জানে’ না যে, একদিন সে নিজে নিক্ষিপ্ত হবে মহাধ্বংসের (জাহান্নাম) মুখে?’

...আমি বিশ্বাস করি কাল সকালে সূর্য উঠবে, তেমনি ধার্মিকও বিশ্বাস করে ইবলিশ অস্তিত্বমান, ‘একদিন’ সে ধ্বংস হবে আল্লাহ কর্তৃক…কিন্তু ইবলিশ কি তা ‘জানে’ না? ইবলিশের ক্ষেত্রে ‘জানা’ শব্দটা ব্যবহার করাটা কি সঠিক? নাকি আল্লাহর সাপেক্ষে শুধু ‘বিশ্বাস’-ই আছে, কোন ‘জানা’ নেই? তবে কি বলতে হবে ইবলিশ ‘বিশ্বাস’ করে না? ইবলিশ কি ধার্মিকের চিন্তা-চেতনায় (মানুষের চিন্তায় ইবলিশের যাতায়াত ইসলাম নিশ্চিত করেছে) প্রবেশ করে এটা ‘জেনে’ (‘বিশ্বাস করে নিতে’) পারছে না যে সে একদিন ধ্বংস হবে? ধার্মিক যা ‘বিশ্বাস’ করে তা কেন ইবলিশ 'বিশ্বাস' করে না? তবে কি ইবলিশ আল্লাহকেও বিশ্বাস করে না? কিন্তু নাহ্! তা কি করে হয়? আল্লাহর অস্তিত্ব মেনে নিয়েই ইবলিশ অস্তিত্বমান। কেমন জানি প্যারাডক্স বাঁধে এখানে।****

ইবলিশ আল্লাহর প্রতিশব্দ তেমন কিছু আমি পরোক্ষভাবেও বলিনি, কিন্তু ইসলামের তত্ত্বানুযায়ী চিন্তা করলে তাই হতে হয়। যদিও ইসলামই আবার বলে, ইবলিশ আল্লাহর সৃষ্ট।

*ইবলিসও জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

প্রচন্ড জটিল একটি বাক্য। আমরা যখন গভীরভাবে (ধর্মীয় পন্ডিতগণ যে গভীর চিন্তা-ভাবনার কথা বলে থাকেন সেই রকম গভীর চিন্তায়!) চিন্তা করি তখন নানান সমস্যা বাঁধে।

এই বাক্যের অর্থ কি?

ইবলিশ জাহান্নামে কেন নিক্ষিপ্ত হবে?

যেহেতু ইবলিশ প্রকারান্তরে আল্লাহর 'অন্তরের' ইচ্ছা পূরণেই সাহায্য করছে? এক কথায় বলা যায়, চাঁদ-সূর্য যেমন আল্লাহর ইবাদাতে রত তেমনি ইবলিশও কিন্তু আল্লাহর ইবাদাতে রত (ভিন্ন দিক দিয়ে)! তবে সে কেন দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে?

ইবলিশ কি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে না চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে? ইবলিশ আল্লাহর আদেশ পালন করলে সেতো জান্নাতে যাবার কথা...যেহেতু সে আল্লাহর ইচ্ছার মুখাপেক্ষী এবং সবকিছুই (আদম-হাওয়া ও গন্ধম ফলকেন্দ্রিক গসপেল) আল্লাহর অন্তরের লীলা ছিল? জানি, এ যুক্তির বিরুদ্ধ যুক্তিও আছে (গভীর ধর্মীয় উপলব্ধি নিয়ে চিন্তা করলে); ধর্ম এমন একটি তত্ত্ব নানান ধরনের প্যাঁচ দিয়ে সবকিছুই জায়েজ করে ফেলা যায়।

আপনি একটু পরেই লিখেছেন, "ইবলিস স্বয়ং জানে যে, তার নিজের সত্তা ‘আল্লাহর’ ইচ্ছার মুখাপেক্ষী।"

তাহলে সে কেন আল্লাহর আদেশ অমান্য করলো? উত্তর দিবেন, মূলত সবই আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছাপ্রসূত সূক্ষ্ণ পরিকল্পনা? (এই প্রশ্নটা একটু স্থূল, আমি সূক্ষ্ণ বানানোর একটু চেষ্টা করা যাক)

আল্লাহর ইচ্ছা- শব্ধযুগল কিসের দ্যোতক? ইলেকট্রন-প্রোটনযুগলের মধ্যকার তত্ত্বীয় বলের কারণ আল্লাহ ধরে নিতে আমার সমস্যা নাই, ধরে নিলাম চন্দ্র-সূর্য-পৃথিবী বস্তুত্রয়ের সুনির্দিষ্ট প্রাকৃতিক আচরণ মূলত আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ীই চলছে (ইসলাম তত্ত্বের গভীর ব্যাখ্যা যেটা বলে যে সবকিছুই আল্লাহর প্রার্থনায় রত)। ইবলিশের ইচ্ছা যদি আল্লাহর ইচ্ছার মুখাপেক্ষীই হবে তবে কেন সে বস্তুবাদী প্রকল্প ধারা অভিশপ্ত হবে?

"সে বুঝলো না মাটি দেখতে যেমনই হোক আর আগুন যত দাহ্যশক্তিগুণসম্পন্নই হোক আল্লাহ যখন হুকুম করেন তখন আগুন অেপক্ষা মাটি অবশ্যই শক্তিশালী। আর আজো তা প্রমাণিত হয়েই চলেছে। আগুন অেপক্ষা মাটিই শক্তিশালী। আগুন ব্যবহার করে আজ মাটির মানুষ সভ্যতা আর ভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলেছে।"

'বুঝলোনা' কিংবা মাটি 'দেখতে যেমনই হোক' কথাগুলোও বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। ইবলিশ, ফেরেশতা বা আল্লাহর সাপেক্ষে 'বোঝা', 'দেখা' এসব কি অর্থ বহন করে তার ধারনা নেই আমাদের সীমিত জ্ঞাণে। জগতকে আমরা যেভাবে দেখি আল্লাহ, ইবলিশ, জ্বিন বা ফেরেশতারাও সেভাবেই দেখে? এগুলো বহু ধরনের জটিলতা আনয়ন করে।

আগুন শক্তিশালী না মাটি শক্তিশালী, কিংবা আগুন উত্তম না মাটি উত্তম- এটা নতুন বিতর্ক...শক্তিশালী কথাটার অর্থ কি এক্ষেত্রে? কি বোঝাতে চাইলেন বুঝলাম না। আপনি প্রমাণ করে দিয়েছেন আগুন অপেক্ষা মাটিই উত্তম কিংবা শক্তিশালী। তবে আমার মনে কিছু প্রশ্ন জাগলো :

1. সোনা উত্তম না লোহা উত্তম?
2. বায়ূ উত্তম না পানি উত্তম?
3. পাহাড় শক্তিশালী না সাগর শক্তিশালী?
4. কালো রং উত্তম না সাদা রং উত্তম?

মনে হয় এসব নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে।

"আল্লাহর’ সাথে তার বিরোধের স্থানটি ভিন্ন….."

আল্লাহর ইচ্ছার মুখাপেক্ষী হলে আল্লাহর সাথে বা আল্লাহর ইচ্ছার সাথে বিরোধের তাত্পর্য কি?

আমরা যদি আল্লাহর ইচ্ছার মুখাপেক্ষীই হই তবে আমাদের পাপ-পূণ্যের তাত্পর্য নিয়েই যন্ত্রণা শুরু করে নাস্তিকরা যার চোটে মুসলিমরা শেষপর্যন্ত দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। একদল বিশ্বাস করে মানুষ সম্পুর্ণ জড় পদার্থের ন্যায়; বিনা হুকুম ব্যতিত যারা কিছুই করতে পারে না (জাবরিয়া)। আবার কাদেরিয়ারা মনে করে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন, না হলে বেহেশত-দোষখ বা শাস্তি ও পুরষ্কারেরর প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু যেকোন দলের মতামত গ্রহণ করলেই আবার নতুন খটকা লাগে। ফলে বের হল সুবিধাবাদী নীতি যাকে মধ্যমপন্থাও বলে যেতে পারে। আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত- যারা বিশ্বাস করে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীনও নয়, এবং সম্পূর্ণ পরাধীনও নয়। নির্দিষ্ট সীমার ভেতর সে তার ইচ্ছা শক্তিকে প্রয়োগ করে। মানে সমস্যা বাঁধলেই উত্তর বের করতে হবে যেভাবে হোক- এটাই হল ধর্মীয় পন্ডিতদের নীতি (অবস্থা এমনই ইসলামে এখন কোনকিছুর সরাসরি উত্তর নেই, সব উত্তরই ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে দেওয়া হয় এবং ধর্মীয় পন্ডিতরা বারবার স্মরণ করিয়ে দেন : গভীর চিন্তা ও উপলব্ধি নিয়ে বুঝতে হবে এগুলো, না হলেই বিভ্রান্ত হবার ঘোর আশঙ্কা)।

ইবলিশ না থাকলে পূণ্যের সাগরে ভেসে ভেসে জান্নাতুল ফেরদাউসে চলে যেতাম- মুসলিমদের বড় আক্ষেপ। ধর্মীয় পন্ডিতগণ বলেন, তাহলে আল্লাহর ইচ্ছা বা পরিকল্পনা পূর্ণতা পেত না। অথচ প্রথম ভাবনাটাই ভুল। আসলেই কি হত? লাতিন আমেরিক কিংবা আফ্রিকার গহীন জঙ্গলে যেসব হাজার হাজার উপজাতি তারা কি ঈমাণদার হত? ফার্মগেটের ফুটপাত যে উদ্বাস্তু মানুষগুলোর আশ্রয়স্থল তাদের ঈশ্বর কোথায় থাকেন ? এদের জীবনের তাত্পর্য কি? মৃত্যুর পর এরা স্বর্গ না নরকে যাবে? ওরাতো কুরআনের মর্ম বোঝে না, আযানের ধ্বনি শুনলে মুমিন মুসলমানদের মতন দেল খোদার প্রতি হিপনোটাইজড মুহাব্বতে বিগলিত হয়ে পড়ে না...ওরা পায়খানা-প্রস্রাব করে পশ্চিমে মুখ করে...কে জানে পরকালে কি ভয়ঙ্কর শাস্তি অপেক্ষা করছে ওদের জন্য।

শীতের সন্ধ্যায় ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে একদিন যখন কোচিং সেরে বেরিয়ে আসছি তখন ফার্মগেটের পার্কের পাশে ফুটপাতে দুটো শিশুকে উদোম গায়ে ঘুমোতে দেখলাম (ওদেরকে এখনো মাঝে মাঝেই দেখি), পরনে ছেড়া হাফপ্যান্ট। পশ্চিম দিকে পাঁ দিয়ে শুয়ে আছে।

হায়! কতবড় গুনাহের কাজ করছে এরা, পবিত্র কাবা শরীফের দিকে পাঁ রেখে ঘুম যাচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা কি এদের ক্ষমা করে দেবেন এদের অজ্ঞতার জন্য? এদের জন্মও হয়েছে হয়তো এখানে, এভাবেই কাটবে সারা জীবন, সমাজের উঁচুতলায় সত্পথে ওঠার সম্ভাবনা অসত্পথে ওঠার সম্ভাবনা থেকে অনেক কম। এরা কিভাবে বুঝবে ইসলামের সৌন্দর্য, কুরআনের মাহাত্ন? এরাতো সারা জীবন বেইমাণদার অবস্থায় জগত ও জীবন সম্পর্কে একটা ধোঁয়াশা নিয়ে কাটিয়ে দেবে।

ইসলাম না গ্রহণ করে এরা কি বেহেশতে যেতে পারবে? তা কিভাবে হয়? তাহলেতো এদের মত পৃথিবীর আনাচে-কানাচে যেখানে সভ্যতার আলো পৌঁছায়নি এমন জায়গায় বসবাসকারী লক্ষ-কোটি বেইমাণদার মানুষকেও আল্লাহ তায়ালার বেহেশতে নিতে হবে...অথচ বেহেশতে না নিলে নিক্ষিপ্ত করতে হবে দোযখে যদিও এদের শৈশবই এদেরকে ভাগ্যের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। তাহলে আল্লাহ তায়ালা এদের কোথায় রাখবেন? বেহেশত আর দোযখের মধ্যবর্তী স্থানে কি আছে?

ইবলিশের ধোকায় পড়ে মানুষের যত বেঈমানদারী কাজ। আল্লাহর কর্তৃক স্বীয় ইচ্ছা প্রয়োগের নির্দিষ্ট সীমার ভেতর থাকার পরও মুমিন ব্যক্তিকে আল্লাহর আদেশ অমান্য করার জন্য প্রয়োজনীয় দাগা দেয় এই ইবলিশ। না হলে সবাই হত ঈমাণদার।

বুঝি না, আল্লাহর ইচ্ছার মুখাপেক্ষী হওয়া সত্বেও (যখন কেউ ইবলিশের মতন ধোকা দেওয়া দেবার জন্য নিয়োজিত ছিল না) ইবলিশকে কে ধোকা দিয়েছিল যার ফলে সে আল্লাহর আদেশ অমান্য করে অভিশপ্ত হয়েছিল?

১৭| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:২৫

নাজিম উদদীন বলেছেন: গল্প ভাল হইছে !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.