নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মাঝে মিশে থাকতে চাই, তবে কিভাবে শুরু করব তা ভাবতেই অনেক সময় পেরিয়ে যায়। তাই, গান কবিতা এগুলোর আশ্রয় নিয়ে চলি নিজেকে আড়াল করে।

মায়াস্পর্শ

মনের বিপরীতে পার করে এসেছি সহস্রকাল, হঠাৎ এক উদ্ভ্রান্ত অবয়বে বেঁচে থাকি এপার ওপার।

মায়াস্পর্শ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার নাই

২৪ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩

একটা পোস্ট দেখে লেখার সাধ জাগলো। যা নিয়ে লিখবো তা আমার নেই।
আমার দাদা-দাদি, নানা-নানি কেউ নেই। বাবা মা যখন ছোট ছিলেন তখনই তারা পরপারে উড়াল দিয়েছেন। বাবার বয়স যখন ৪ বছর তখন দাদি অসুস্থতায় মারা যান আর ৭ বছর বয়সে দাদা।
মার বয়স যখন ৮ বছর তখন নানি মারা যায়, ১৪ বছর বয়সে নানা। আমার ৭ জন খালা একটা মামা। মামা সবার ছোট ছিলেন ২০১২ সালে উনিও মারা যান।
বাবার বড় ভাই ছিলেন মানে আমার বড় আব্বা তার সাথেও জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বার দেখা হয়েছে।
আমার মা বাবা মামাতো ফুফাতো ভাইবোন ছিলেন। নিজেদের ভেতরে বিয়ে শাদী হয়েছে। বাবা আর বড়বাবা দুইজনই ছোটবেলায় এতিম খানায় ছিলেন চাচাদের অবহেলার কারণে। নিজের বাবার যা কিছু ছিল তা আর ভাগ্যে জোটেনি। বাবার চাচারা নিজেদের করে নিয়েছিলেন সব। তারপর বাবার মামা এতিম খানা থেকে নিয়ে এসে নিজের কাছে রাখেন। নিজের ছেলেদের মতো রাখলেও তার দোকানে কাজ করাতেন। বাবার জীবন সংগ্রামের কথা অন্যদিন লিখবো। আজ এই দাদা-দাদি, নানা-নানি কে কখনো না দেখার অনুভূতি তা কেমন তা লিখার চেষ্টা করি।
ছোটবেলায় সারাদিন মায়ের কাছে বায়না করে বলতাম,ওমা বলতো আমার নানী কেমন ছিল? মা বিভিন্ন ভাবে নানীর বর্ণনা দিতেন। এলাকার যেসব বয়স্ক মানুষ ছিল তাদের থেকে শুনতাম আমার নানা-নানি, দাদা-দাদি কেমন ছিলেন।
আমার নানি ছিলেন কালো বর্ণের তবে মানুষ্ হিসেবে পুরো পাড়া জুড়ে তার সুনাম ছিল। নাম ছিল জুলেখা খাতুন, সবাই জলপাই বলে ডাকে এখনো। একদম মাটির মানুষ ছিলেন। মারা যাওয়ার আগেও নাকি তার মাথার সবগুলো চুল একদম কিশকিশে কালো ছিলো। শাড়ি পড়তেন সবসময় এক পাল্লা করে। কোনোদিন ছবি তুলেননি।
আমার দাদির নাম শহর বানু। রূপে গুনে সেরা ছিলেন পুরো শহরের ভেতর। গায়ের রং নাকি একদম ধবধবে দুধসাদা ছিলো। এক কলসি ভর্তি শুধু গয়নাই ছিলো তার। যেদিন উঠানে বসতেন সেদিন নাকি এলাকার বৌ ঝিদের ভিড় লেগে যেতো তাকে দেখার জন্য। এটা আমাদের এলাকার মুরুব্বিদের থেকে শোনা কথা। আমার বাবা এবং মা বলেন আমার বড় বোন অনেকটা দাদির মতো হয়েছে, তবে দাদি আরো বেশি সুন্দর ছিলেন। কোন এক অজানা অসুখে অকালে মারা যান।
আমার দাদার নাম ইসরাইল শেখ। পাকিস্তান পিরিয়ডে সরকারি ড্রাইভার ছিলেন। বাবা খুব গর্ব করে বলতেন ওই সময় নাকি তিনি জীপ গাড়ি চালাতেন। একদিন হেটে বাড়ি ফেরার সময় হোঁচট খেয়ে পরে গিয়েছিলেন রেললাইনের ওপর। সরাসরি বুক যেয়ে রেল লাইনের পাতের ওপর পড়েছিলো এবং ওখানেই মারা গিয়েছিলেন।
আমার নানা অনেক দুঃখী মানুষ ছিলেন। আয় রোজগার তেমন ছিলো না। ঘরে মা মরা সাত মেয়ে আর এক ছেলে। নুন আন্তে পান্তা ফুরাতো। তার নাম ছিলো মোস্তফা শেখ। যুদ্ধের সময় কয়েকজন লোককে পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের করতোয়া নদীর ধাঁরে লাইন করে দাঁড় করিয়েছিলো ব্রাশ ফায়ার করার জন্য। নানা ছিলেন একদম লাইনের শেষে। ফায়ার শুরু হওয়ার সাথে সাথেই নানা সহ আরো দুয়েকজন বুদ্ধি করে নদীতে লাফিয়ে পড়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন। যুদ্ধের কয়েকবছর পর অসুস্থতাজনিত কারণে নানা মারা যান। এসব গল্প শুনে শুনে জীবনের অর্ধেকটা সময় পার হয়ে গেলো। কল্পনায় তাদেরকে দেখি। আশেপাশে কারো দাদা দাদিকে দেখলেই অনেক সম্মান করি।
একবারে ঈদের দিনে এক বন্ধুর সাথে তার নানা বাড়ি গিয়েছিলাম। বাড়িতে ঢুকতেই তার নানা দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে হাতের মধ্যে একটা ১০০ টাকার নোট ধরে দিলো। পাশে আমি দাঁড়িয়ে ভেবেছিলাম আমাকেও হয়তো জড়িয়ে ধরবে। তেমন টা হলো না , জিজ্ঞেস করলো কে এটা ? তারপর আমার হাতেও ১০ টাকার একটা নোট দিয়ে দিলো। বন্ধুর মা বলেছিলো বন্ধুর নানা নানি মানেই আমার নানা নানী। সেটা আসলে হয়ে উঠে না। হয়তো একসময় বুড়ো হয়ে যাবো তবুও তাদেরকে না দেখার এই খায়েশটা হয়তো আমৃত্যু থেকেই যাবে। ভালো থাকুক সবার নানা নানী দাদা দাদি। জীবনে সব স্মৃতিই আছে শুধু তাদের সাথে কাটানো কোনো স্মৃতি নেই । আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতবাসি করুন ।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:১০

ফেনিক্স বলেছেন:



এটা বাংলার বেশীরভাগ মানুষের জীবন কাহিনী।

২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:৪৪

মায়াস্পর্শ বলেছেন: তাদের কবরস্থান চিনি কিন্তু এতো বড় কবরস্থানে কোথায় কবর দেওয়া হয়েছে তা জানিনা। এক অন্যরকম খারাপ লাগা কাজ করে ভেতরে। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

২| ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:১১

শায়মা বলেছেন: আমিন!!!

২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:৪৭

মায়াস্পর্শ বলেছেন: আমিন।
আমার মাকে নানীর দেওয়া একটা ট্রাঙ্ক (শিটের বাক্স) আমাদের বাসায় আছে এখনো।
ধন্যবাদ আপু।

৩| ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:৩৩

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমিন।

২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:৪৮

মায়াস্পর্শ বলেছেন: আমার দাদার বাড়ি যেটা বাবার চাচারা আত্মসাৎ করেছে সেই বাড়ির সামনে দিয়ে গেলে একটা অন্যরকম আবেগ কাজ করে।
ধন্যবাদ কুতুব ভাই।

৪| ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:৪৭

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম । চমৎকার লিখেছেন । জীবনের গল্প পড়তে এবং জানতে খুব ভালো লাগে। প্রেম পীরিতি নয়।

২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:৫১

মায়াস্পর্শ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। বয়স বা সময়ের সাথে সাথে মানুষের পছন্দ পরিবর্তন হয়। আমারও এরকম কিছু লিখতে অনেক ভালো লাগে। সামনে আরো লিখবো।

৫| ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:২৩

কামাল১৮ বলেছেন: জীবন সুন্দর হোক।অতিতের কথা বেশি মনে করতে নেই,দৃষ্টি সামনে রাখুন।বর্তমানে বাচুন।

২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:৪০

মায়াস্পর্শ বলেছেন: ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়, সুন্দর উপদেশ দিয়েছেন।

৬| ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৩৪

মেহবুবা বলেছেন: কামাল ১৮ এর মন্তব্যে সহমত।
আপনার নিজের সুখী পরিবার হোক, সামনের দিনগুলো কাছের মানুষদের নিয়ে আনন্দে কাটুক।

২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:৪২

মায়াস্পর্শ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
একটা বিষয় খুব আফসোস হয় যে উনারা ছিলো কিন্তু কখনো দেখিনি।

৭| ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:০৫

সামিয়া বলেছেন: আল্লাহ উনাদের জান্নাত নসিব করুন। ভালো লাগলো তাদের জীবন কাহিনী পড়ে, আমরা তো এই যুগে ওসব সিচুয়েশন ভাবতেই পারবো না। দাদীর এক কলস গহনা ছিল !! কি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার!! নানার পাকিস্তানি বাহিনীদের হাত থেকে বেঁচে ফেরার ঘটনাটা খুব ভালো লেগেছে সবাই যদি ওভাবে বেঁচে লাফ দিয়ে বেঁচে যেত।

২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:৪৮

মায়াস্পর্শ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। দাদির নামটা আমার কাছে আনকমন লেগেছে। বেঁচে থাকলে হয়তো আমিও দাদির কোলে ঘুমাতে পারতাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.