নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহা. মাসুদ

সাদামাটা এক লোকটার সম্পূর্ণ নাম- মোহাম্মদ মাসুদ।

মোহা. মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপরাধের আরেক নাম শিশুহত্যা

২৮ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:০৫


অপরাধের আরেক নাম শিশুহত্যা
মোহাম্মদ মাসুদ

দিন যত যাচ্ছে শিশুরা ততই নিরাপদহীন সমাজ ব্যবস্থার মুখোমুখি হচ্ছে। বর্তমানে শিশুদের অবস্থানই তা সুস্পষ্ট। আমাদের বর্তমান মনুষ্যত্ব, বিবেক অতল গহ্বরে ডুবে যাচ্ছে। দেশ নানা দিক থেকে যখন এগিয়ে যাচ্ছে; ঠিক তখনই আমরা অবরুদ্ধ হয়ে যাই নিজেদের বিকৃত মানসিকতার কাছে।
আমরা গত ১ মে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অন্যের গাছ থেকে আম পাড়ার সামান্য শৈশব-দুরন্তপনায় ৮ বছরের শিশু তানজিলাকে হত্যার শিকার হতে দেখি। গত ১২ এপ্রিল দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলিতে ৪ বছরের শিশু আবতাহি অপহরণের পর হত্যার স্বীকার হয়। ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না পেয়ে অপহরণকারীরা তাকে হত্যা করে। গত ১৪ এপ্রিল বরিশালের বানারীপাড়া পৌর এলাকায় ভাড়াটে মো. রিপন মিয়ার সাড়ে ৩ বছরের সন্তান হাফিজুল কান্নাকাটি করায় রাতে রাগের বশে আছাড় মেরে হত্যা করেন বাড়িওয়ালী নূপুর বেগম। এদিকে ময়মনসিংহে ছুরিকাঘাতে বিদ্ধ আলোচিত ১৭ মাসের শিশু বিথী প্রায় ২ মাস মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গত ৫ মে রাতে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যায়।
পৃথিবীতে সন্তানের সবচেয়ে নিরাপদ ও উত্কৃষ্টতম স্থান মায়ের কোল; কিন্তু সমপ্রতি মায়ের হাতে নিজ সন্তান হত্যার কিছু চিত্র সেই সম্পর্ক কলঙ্কিত করেছে। রামপুরার বনশ্রীতে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি একটি বাসায় মা নিজ হাতেই দুই সন্তানকে মেরে ফেলে। এদিকে গত ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডের এক ভবনের ৫ তলা থেকে মা ছুঁড়ে ফেলে দেন তার সদ্যজাত সন্তানকে। এর একদিন পরে গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরের মনিপুর থেকে নবজাতকের খণ্ডিত মস্তক উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শিশুটির মা সোনিয়াকে আটক করে পুলিশ। অন্যদিকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা সুন্দ্রাটিকি গ্রামের অমানবিকতার বলি হয়েছে চার শিশু। হত্যার পর এক সঙ্গে বালিচাপা দিয়ে রাখা হয় তাদের। এর একদিন আগে গাজীপুরে হত্যা করা হয় অন্য এক শিশুকে। গত ৫ জানুয়ারি একই দিনে দেশে ছয় শিশুকে হত্যা করা হয়।
এক গবেষণার প্রতিবেদনে উঠে আসে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই ২৯ শিশুকে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভঙ্গিতে হত্যা করা হয়। এদিকে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ও মানবাধিকার কমিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত দেড় মাসে ৪৫ শিশুহত্যার শিকার হয়। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিসংখ্যান থেকে শিশুহত্যার সর্বশেষ ৫ বছরের ভয়ানক-নিষ্ঠুর চিত্রটি দেখে নেয়া যেতে পারে। গত পাঁচ বছরে (১৭ ফেব্রুয়ারি ’১৬ পর্যন্ত) শিশুহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ১২২টি। ২০১২ সালে হত্যার সংখ্যা ছিল ২০৯টি শিশু। পরের বছর বেড়ে হয়েছে ২১৮ জনে। আর তার পরের বছর ২০১৪ সালে লাগামহীনভাবে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬৬ জনে। এদিকে ২০১৫ সালে এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ২৯২ জন। আর ২০১৬ সালের শুরু না হতেই (১৭ ফেব্রুয়ারি ’১৬ পর্যন্ত) এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় প্রায় অর্ধশত শিশু। এসব চিত্রই বলে দেয়, প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে কোমলমতি শিশু নির্যাতন হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর স্বাদও নিতে হচ্ছে। মিডিয়ার সুবাদে কিছু ঘটনা আসলেও অধিকাংশ ঘটনাই চাপা পড়ে যায়।
এ নির্মম হত্যাযজ্ঞে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে নিশ্চুপ। এরকম নয়। গত বছরের আলোচিত দুই ঘটনা সিলেটের শিশু রাজন হত্যা ও খুলনায় শিশু রাকিব হত্যায় দ্রুত বিচার শেষে আদালত খুনিদের ফাঁসির আদেশ দেয়। তাহলে প্রশ্ন হলো, শিশুহত্যা কেন বেড়ে চলেছে? আম পাড়া, কান্না করার মত ক্ষুদ্র অপরাধে কেন শিশুকে প্রাণ দিতে হবে? কেনোই হত্যার লক্ষ্যবিন্দুতে কোমলমতি অবুঝ অসহায় শিশুরা? এক্ষেত্রে বলা যায়, শিশুদের ওপর যখন অত্যাচার-নির্যাতন চালান হয় তখন তারা প্রতিবাদ করতে পারে না, তাদের সহজে গুম-অপহরণ করা যায়, খুনও করা যায় সহজলভ্য উপায়ে। সমাজের চলমান রীতিনীতি, আচার-আচরণ, আইন-কানুন এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় ভয়াবহ আকৃতি ধারণ করেছে। এজন্য সন্ত্রাসী, অপরাধী, দুর্বৃত্ত, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, এমনকি নিজ মমতাময়ী মায়ের চোখেও হত্যার সহজ নিশানা শিশু নামক অসহায় প্রাণটি।
শিশু নির্যাতন বন্ধে আন্তর্জাতিক শিশু সনদের আদলে ২০১৩ সালে যে আইনটি করা হয়েছিল তা এখনো বিধান করা হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব এর বিধান করতে হবে। এ অসহিষ্ণু নির্মম সমাজে শিশুরা যে বেড়ে উঠবে তা দিন যত যাচ্ছে ততই ম্লান হয়ে আসছে। শিশুদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ স্বাভাবিক করা, আজ সময়ের দাবি। যার জন্য প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরের প্রতিটি স্থানে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন; জাগ্রত করতে হবে মনুষ্যত্ববোধ, নৈতিক আদর্শ। এগিয়ে আসতে হবে সবার। স্মরণ রাখতে হবে—আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।
লেখক :শিক্ষার্থী, মাস্টার্স, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি
ই-মেইল :[email protected]
সূত্র: উপ-সম্পাদকীয়, দৈনিক ইত্তেফাক, ১২ মে ২০১৬।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.