নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্য কথা

আমি কিছু না

অন্য কথা › বিস্তারিত পোস্টঃ

=== অপেক্ষা ===

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০৮

বাস থেকে নামতেই মেয়েলি গলায় চিৎকার শুনলাম

: এই মহি ।

ঘাড় ঘুরাতেই দেখি অনামিকা ।

: আরে অনামিকা যে ! কোত্থেকে ফিরছো ?

: এই তো ক্লাস শেষ হলো ।

: বাড়ি ফিরছো ?

: তা ছাড়া আর কই যাবো

বলেই হেসে ফেলল অনামিকা ।দেখলাম মুখের কোণের সেই সলাজ হাসিটা আগের মতই আছে ।

: অনেকদিন পর দেখা ।

: হুমম । কত বছর পর দেখা বলতো ?

আমি বললাম -

: এইত ৯/১০ বছর হবে

: দাঁড়াও হিসেব করে বলে দিচ্ছি। ১১ বছর ৩ মাস , দিনের হিসাবটা আর করলাম না।

: হুমম ! একদম আগের মতই আছ ।

: কেন তুমি কি বদলেছো ?

: কেন দেখনা মোচ পেকেছে। মাথায় চুলও পেকেছে কয়েকটা।

: তো এক চল্লিশ চলছে তাই না। তোমাকে কিনতু পয়ত্রিশ এর বেশি মনে হয় না । ডায়েট কর নাকি ?

হেসে ফেললাম । জিজ্ঞাস করলাম -

: বিয়ে করেছো ?

মাটির দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকলো ।

: হাসছ কেন ?

: ইচ্ছা হয়েছে ।

বলেই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকলো । তাকিয়ে দেখলাম ধীরে ধীরে ওর চোখ দুটো জলে ভরে উঠছে । বললো -

: তোমার বউটা তো সুন্দর । দুটো ছেলে । প্রাইভেট ফার্ম এ বড় বেতনে চাকরি কর । সুখের সংসার ।



অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । নিজেকে অপরাধী মনে হলো । কথা ফিরাতেই জিজ্ঞাস করলাম -

: চশমা নিয়েছ কবে ?

শাড়ির আচলে চোখ মুছতে মুছতে বলল -

: এই তো ভার্সি টির চাকরিটা নেয়ার পর থেকে লাগছে।

বললাম -

: পিএইচডি শেষ করে যোগাযোগ করনি কেন ?

: যোগাযোগটা আমার পক্ষ থেকে না তোমার পক্ষ থেকে হওয়া উচিত ছিল ?

: বিয়েটা করেই তো পিএইচডি করতে যেতে পারতে ?

: তাহলে পিএইচডি টা হত না ।

: কি ভাবে নিশ্চিত হলে ?

: হয় তো হত না । আমি ব্যাখ্যায় যেতে চাচ্ছি না । তোমার কাছে পাঁচটা বছর আমি চেয়েছিলাম । চাওয়া টা কি খুব বেশি ছিল ?

: আমি তোমাকে হারাতে চাইনি । ভয় ছিল এই পাঁচ বছরে তুমি হয়ত আমাকে ভুলে যাবে ।

: মহি, এই বিশ্বাসটুকু তুমি আমার উপর রাখতে পারলে না । এই আমাকে দেখো । আমি তো তোমাকে ভুলিনি । আশা ছিলো খবর নিবে । নাওনি । পিএইচডি র পর দেশে ফিরে শুনলাম বিয়ে করেছো।



চুপ করে থাকলাম। শরীরের সব কষ্ট গুলো বুকের দিকে ধেয়ে আসছে দ্রুত, খুব দ্রুত । অনামিকার মুখের দিকে তাকানোর ক্ষমতা ধীরে ধীরে লোপ পেয়ে যাচ্ছে । ওকি বুঝতে পারছে আমার অবস্থা । হয় তো । না বুঝার কথা না । ওর ডাকে সম্বিত ফিরে এলো ।



: যা হবার তো হয়েছে । বাসায় এসো সময় করে। মার সাথে আছি । গেল বছর বাবা মারা গিয়েছেন।

: ঠিকানা কি আগেরটাই ।

: হুমম । ইচ্ছে হলে ডিপার্টমেন্ট এ এসো। নাম বললেই হবে ।

: আচ্ছা ।

: কি ! সাহস আছে তো ? আসতে পারবে তো ? নাকি বউকে ভয় করো ।

বলেই হাসতে থাকলো অনামিকা ।

: ভয় নেই । তোমার বৌএর সাথে কোনদিন ই দেখা হবে না আমার ।



বলেই হাত দিয়ে আমার মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো । মনে পড়ল এটা প্রিয় একটা অভ্যাস ছিল ওর । ভুলে নি। বিদায়ের সময় হলেই একাজটা করত ।



: আচ্ছা আসি । দেখা হয়ে ভালো লাগলো । পারলে তোমার বাচ্চা দুটোকে নিয়ে এসো একবার ।



ধীরে ধীরে রাস্তার ওপারে চলে গেল ও । একটু মোটা হয়েছে। বয়স হয়েছে । কতো ? উনচল্লিশ । মনে হলো হাত তুলে আগের মত নাম ধরে ডাক দেই । পারলাম না । সেই অধিকার আজ আমার নেই ।



চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হলো -

"অনামিকা আমিও তোমাকে ভুলিনি । আজও ভালবাসি ।" বলতে পারলাম না একরাশ কষ্ট যেন গলায় দলা হয়ে আটকে আছে ।



( সবই কাল্পনিক)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪৬

বিকেল বলেছেন: ভালো লাগলো

২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫১

উৎকৃষ্টতম বন্ধু বলেছেন: কবিগুরুর হৈমন্তী গল্পটার মত এখানে নারী পক্ষের জয় হয়েছে। যাই হোক ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.