নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্বাসী বান্দা

পরাজয় মানে না যে মন !

মোঃ মহিউদ্দিন

সত্য সন্ধানী এক পথিক, সর্বদা সত্যকেই খুঁজে ফিরি

মোঃ মহিউদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মজার অভিজ্ঞতা, পুঁথি পাঠ !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৩৯



মজার অভিজ্ঞতা, পুঁথি পাঠ !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!



সংস্কৃত শব্দ 'পুস্তিকা' শব্দ থেকে পুথি শব্দটির উৎপত্তি। এর নাসিক্য উচ্চারণ পুঁথি। হাতে লেখা বইকে আগে 'পুস্তিকা' বলা হতো। যেহেতু আগের দিনে ছাপাখানা ছিল না, তাই তখন হাতে পুঁথি লেখা হতো। প্রাচীন বা মধ্যযুগের প্রায় সকল সাহিত্য হাতে লিখতে হয়েছিল এবং এদের একাধিক সংস্করণও তৈরি হয়েছিল হাতে লিখে। তাই প্রাচীন ও মধ্যযুগের সকল সাহিত্যকেই পুঁথিসাহিত্য বলা হয়।



এক সময় আমার নানা বাড়ীতে বেশ পুঁথি পড়ার প্রচলন ছিল। মামা আর মামাতো ভাইয়েরা খুব সুরেলা গলায় পুঁথি পড়তে পারতো। পয়ার-ত্রিপদী সব রকম ছন্দ মিলিয়ে। পুঁথি পড়া শুনতে আমার বেশ ভালো লাগতো। নানা বাড়ীতে মামাদের অনেক পুঁথি ছিল। সোনাভান, ছয়ফল মুল্লুক বদিউজ্জামাল, শ্যামারোখ জেবল মুল্লুক, আমির হামজা আর জঙ্গে কারবালাসহ আরো অনেক সুন্দর সুন্দর নামের পুঁথি। দুলাল নামে আমার এক ভাই ছিল, সে খুব সুন্দর করে সুর ও ছন্দ মিলিয়ে পুঁথি পাঠ করতো, আমি মুগ্ধ হয়ে তার কন্ঠের পুঁথি শুনতাম। একদিন মেঝমামার ভুল উচ্চারণে পড়া পুঁথি শুনতে শুনতে একবার ভুল ধরিয়ে দিতে গিয়ে প্রচণ্ড ধমক খেয়েছিল দুলাল ভাই। মেঝমামার অবশ্য তোতলামোর সমস্যা ছিল, মামা রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলেছিলেন, ‘ব্-ব্যাডা, থি-থিরিত না হোরে হরছ, ম্-মাস্টর অই গিয়ছ, না?’ এই মামাটা ছিল ভীষণ রাগী। ওনার রাগ দেখলে বাড়ির কুকুরটা পর্যন্ত লেজ নামিয়ে দৌড়ে পালাত। সুতরাং এক ধমকে পুরো পরিবেশটাই বদলে গেল।



একদিন জ্যোৎস্না রাতে আমরা ছোটরা বাড়ীর উঠোনে দৌড়া-দৌড়ি খেলছিলাম, এমন সময় দুলাল ভাই বাইরে থেকে সবেমাত্র বাড়ী ফিরলেন, আমরা সবাই গিয়ে ধরলাম ভাইয়া তোমার কন্ঠে পুঁথি শুনবো। তিনি আপত্তি করলেন না বললেন, ঠিক আছে তোরা উঠোনে পাটি বিছিয়ে বস আমি আসছি। আমরা সবাই জ্যোৎস্না রাতের চমৎকার পরিবেশে পাটি বিছিয়ে উঠোনে বসে পড়লাম। কিছুক্ষন পর তিনি একটা পুঁথি নিয়ে এলেন এবং হারিকেনে আলোয় পড়তে শুরু করার আগে গলা খাঁকারি দিয়ে পরিষ্কার করে নিলেন। তারপর পড়তে শুরু করলেন :

আরে...

বৈরাটনগরে ঘর শাহা সেকান্দর

অজুপা তাহার পত্নী অতি মনোহর।

হইল সন্তান এক অজুপার ঘরে

চাঁদের সমান রূপ ঝলমল করে।

রূপেতে হইল আলো সমস্ত ভুবন

রাখিল তাহার নাম জুলহাস সুজন।

দিনে দিনে সেই পুত্র বাড়িতে লাগিল

দ্বাদশ অব্দের যবে বয়েস হইল।

একদিন চলিলেন করিতে শিকার

লইয়া অনেক লোক সাথে আপনার।

হইলেন উপস্থিত এক কাননেতে

কাননের মধ্যে মৃগ খুঁজে সকলেতে।

হঠাৎ হরিণ এক উঠে দৌড় দিল

ভূপের নন্দন তার পশ্চাতে চলিল।

মায়ার হরিণ সেই কি করে তখন

একটি সুড়ঙ্গ দিয়া করিল গমন।

দেখিয়া নৃপের সুত না পারে থাকিতে

সুড়ঙ্গের পরে চলে হরিণ মারিতে।

এখানেতে লোক সবে না দেখে তাহায়

কাননে কাননে তারা খুঁজিয়া বেড়ায়।

অনেক খুঁজিল নাহি পাইল দরশন

আক্ষেপ করিয়া সবে চলিল তখন।

সুড়ঙ্গেতে গিয়া সেথা সেকান্দর সুতে

দেখে হেন অন্ধকার রজনী হইতে।

এদিক ওদিক কিছু দেখিতে না পায়

বিপাকে পড়িয়া যুবা করে হায় হায় ।

পায়ের ঠাহরে তবে চলিতে লাগিল

এগার কোসের পথ চলে যদি গেল।

চক্ষু মেলি দেখে এক সুন্দর শহর

সুবর্ণের অট্টালিকা সুবর্ণের ঘর..................



আহ ! উহ ! তারপর সাবাস....এরপরই মেজমামার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা, ‘আহ, এরেই কয় হুঁতি হড়া। চালা বাতিজা চালাইজা তোর হুঁতি হড়া বউত সোন্দর অই গেছে। মেজমামা এতক্ষন বারান্দায় বসে বসেই শুনছিলেন। মামার কথা শুনে দুলাল ভাইয়ের আত্মবিশ্বাস এবং অহঙ্কার দুটোই বেড়ে গেল এবং গলার স্বরও বেড়ে গেল। কিছুক্ষন পর সিরাজ নামে এক লোক এল, আরে! সেও দেখি বাহবা দিচ্ছে ‘সাবাস তালতো’ চালাই’জ ! পুঁথিপড়া এগিয়ে চলে, আর রাতও বাড়ে। আশে পাশের বাড়ীর কোলাহল বন্ধ হয়ে আসে এবং বাতিও নিভে গেছে। গাজী আর চম্পাবতীর প্রেমকাহিনী শুনতে শুনতে শ্রোতাদেরও চোখ ঢুলু ঢুলু হতে শুরু করে। দুই একজন ইতিমধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমিও হাই তুলতে শুরু করলাম। এক সময় বলে উঠলাম, আইজ থাক, বাইছা ! বউত রাইত অই গেছে। পুঁথি শুনা বন্ধ করে সবাই উঠে দাঁড়ালাম। চাঁদ চলে গেছে গাছের আড়ালে। একটা আলোকিত অন্ধকার চারদিকে। উত্তুরে বাতাস দিচ্ছে। কুয়াশার চাদর আস্তে আস্তে মুড়ে ফেলেছে চারদিকের পরিবেশ । দক্ষিণ-পুবের আকাশে হলুদ আলোর আভাস। সম্ভবত চট্রগ্রাম বন্দরের বাতি। চমৎকার লাগছে।

............................................



বাঙালীর ঐতিহ্য পুঁথি সাহিত্য পুন:রাবিষ্কারের মত কত ভাল ভাল কাজ পইড়া আছে, কেউ উঁকি মাইরাও দেখে না। আমি এই বিষয়টি নিয়া তো কাজ করতে চাই, আপনাদের সাহায্য যে প্রয়োজন ! এ ব্যাপারে আমাকে কেউ সাহায্য করতে পারবেন কি ?

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৪৭

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: পুঁথির সুর আজও গাও গেরামে শুনি
গাজি কালুর কিচ্ছা আর কত না কাহিনী ।
সেই পুরনো দিনের কথা তাইনা

২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৫৩

মোঃ মহিউদ্দিন বলেছেন: ঠিক বলেছেন !

৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১১:০৩

জাতির নানা বলেছেন:
পুঁথি সঙ্কলন কোথায় পাওয়া যায়??

আমার কাছে কয়েকটা পুথির বই ছিলো কিন্তু সব কয়টার অর্ধেক ঘুনে খাইয়া ফেলছে।

৪| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১১:০৭

মোঃ মহিউদ্দিন বলেছেন: ভাই আমিও পুঁথি সংন্কলন খুঁজছি পাইতাছি না।

৫| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০০

ঘোর ছাড়া এক সুখি ছেলে বলেছেন: মারাত্মক সুন্দর লাগে কোন ১টা ছবি তে দেখছিলাম পুঁথি পাঠ কিন্তু বাস্তবে দেখি নাই শুনি ও নাই

৬| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১:১৫

ঘুড্ডির পাইলট বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো , আমি নিজেও কিছু দিন ধরে পুথি সম্পর্কিত তথ্য খুজতাছিলাম। আপ্নার ব্লগে পেয়ে গেলাম একটা ডিজিটাল পুথিও লেখছি একসময় পোষ্ট দিতে হইবো।

৭| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:০০

চলতি নিয়ম বলেছেন: আমি গাজীর গান খুজতেছি। কারো কাছে কি কোনো লিঙ্ক আছে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.