নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি- আমার যত বিত্ত, প্রভু, আমার যত বাণী আমার চোখের চেয়ে দেখা, আমার কানের শোনা, আমার হাতের নিপুণ সেবা, আমার আনাগোনা–

বনমহুয়া

আমি আর কতোটুকু পারি ? কতোটুকু দিলে বলো মনে হবে দিয়েছি তোমায়, আপাতত তাই নাও যতোটুকু তোমাকে মানায়।

বনমহুয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভ্রান্তি-বিলাস (৬)

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৫৩



রিফ্লেক্সন জার্নাল - ২৭.১০.২০১৫
রাত- ০২:১০
সামিরা চৌধুরী


আজ পার্থের আচরণে আমি প্রচন্ড অবাক হলাম! এমন তো কখনও করেনা পার্থ। মিতি বলছিলো কাল নাকি পিকনিকে সে আমাকে ভীষন মিস করেছে। কিছুটা নাকি উদভ্রান্তের মত আচরণ ছিলো তার। গাজীপুর শালবন পিকনিক স্পট থেকে কাউকে কিছু না বলেই নাকি সে কাল হঠাৎ চলে এসেছে। পার্থ তো এমন না। এতগুলো দিনে আমি কখনও পার্থকে কোনো ব্যাপার নিয়ে এক তিল বিচলিত হতে দেখিনি। যে কোনো বড় বিপদেও সে থাকে নির্লিপ্ত অবিচল।

সেবার যখন আমাদের ক্লাসের সবচাইতে মেধাবী ছেলে আশফাকের সাডেন ডেথ হলো। একেবারে ইউনিভার্সিটির সামনেই হয়েছিলো এক্সিডেন্টটা। থেতলে যাওয়া মাথা , সে দৃশ্য সহ্য করাটা খুব কঠিন ছিলো যে কারো জন্যই। ঘটনাটা ঘটেওছিলো আমাদের চোখের সামনেই। আমি চিৎকার দিয়ে উঠেছিলাম। এক সেকেন্ডে আমার সামনে পৃথিবী আঁধার হয়ে এসেছিলো। চারিদিকে হই চই, লোকজন ছুটোছুটি। কিন্তু পার্থ নির্লিপ্ত ভাবে ভীড় সরিয়ে কাঁধে তুলে নিলো সেই প্রিয় বন্ধুর লাশ তারপর সি এন জি থামিয়ে নিয়ে গেলো মেডিকেলে। আমি অজ্ঞান হয়ে যেতে গিয়েও হতে পারিনি। ওর ঐ নিষ্ঠুর নির্দয় পাষান কলিজার পরিচয় মনে হয় সেদিনই পেয়েছিলাম আর তাই হতবাক হয়ে নিজেই অজ্ঞান হতে গিয়েও আর হতে পারিনি। সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছি ওর পাষান হৃদয় আমি গলিয়েই ছাড়বো। ওর সকল জেদ নিষ্ঠুরতা নির্লিপ্ততা আমি কুঁচি কুঁচি করে কেটে ধুলোয় ফেলে দেবো । হ্যাঁ পথের ধুলোয়।

আমি জানিনা আমি কেনো এই নিষ্ঠুর, নির্লিপ্ত, ভাবলেশহীন অভিনয় করা, হ্যাঁ ওর ভাবলেশহীন নির্লিপ্ততাকে আমার অভিনয় বলেই মনে হয়। আর সেটা যে তার অহংকার তা তার কথাতেই প্রকাশ পায়। সে তার পৃথিবীর প্রতি তাবৎ উদাসীনতাকে বা যে কোনো ঘটনার প্রতি নির্লিপ্ত আচরনকে মনে প্রাণে উচ্চ আসনে বসায় ও অহং বোধ করে। আমি যেদিন ওর প্রেমে পড়ি সেদিনও ঠিক ঠিকই জানতাম ও একটা কঠোরতার মুখোশ পরে থাকে এবং এটা নিয়ে তার যথেষ্ঠ অহংকারও রয়েছে। সাধু সন্যাসী হবার ইচ্ছা মনে হয় ওর। আমি ওর সাধু মানে হিমালয়ের সাধু সাজার ইচ্ছাটার মজা দেখিয়ে ছাড়বো। এ ইচ্ছাকে সমূলে উৎপাটন করেই ছাড়বো আমি। আমি ওকে ভালোবাসায় ভোলাবো। দেখি আমার ভালোবাসার কাছে কেমন করে পার পার সে? ওকে হারতেই হবে কারণ আমি ওকে অনেক অনেক ভালোবাসি। আর আমি এটাও জানি ভালোবাসার কাছে সকল কিছুই কোনো না কোনোদিন পরাজিত হয়। হতেই হয়। পার্থকেও পরাজিত হতেই হবে আমার ভালোবাসার কাছে।

কিন্তু হঠাৎ কি হলো পার্থর। এমন তো না সে। কেনো এমন উদ্ভ্রান্তের মত কাজ করছে? তাকে অনেকবার অনুরোধ করার পরেও সে কখনও আমাদের বাসায় আসতে রাজী হয়নি। সেই পার্থ কিনা সেদিন পিকনিক থেকে সোজা আমাদের বাড়িতে হাজির হলো। আমি তখন ছাদে ছিলাম। গাছে পানি দিচ্ছিলাম। পানি দিতে দিতে হঠাৎ আমার মনটা খারাপ হলো। হঠাৎ পার্থকে আমার ভীষন মনে পড়লো। পার্থর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। মুখটাতে আমি স্পষ্ট দেখলাম করুন আঁকুতি। পার্থের চেহারায় আমি কখনও তো এমন কোনো ছাঁয়া দেখিনি। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই রহিমাবুয়া খবর দিলো। আমার সাথে নাকি আমার একজন বন্ধু দেখা করতে এসেছে। এমন সচরাচর হয়না। আমার বাসায় কেনো যেন কোনো বন্ধুরা কখনও আসতে চায়না। আসার মধ্যে এক আসে মিতি। কিন্তু রহিমা বুয়া বললো এক বেডাছৈল আসছে। তাহলে তো মিতি না। আমার হঠাৎ মনে হল নিশ্চয় পার্থ এসেছে।

হঠাৎ মুচড়ে উঠলো বুকের ভেতরটা। আমার টেলিপ্যাথী হয়েছে নিশ্চয় পার্থ। পার্থই এসেছে। আমি কিছু না ভেবেই বললাম পার্থকে এখানে নিয়ে আসো বুয়া। আমি চুপ করে বসে রইলাম ছাদের দোলনায়। পার্থ উঠে এলো উদ্ভ্রান্তের মত। এসেই রহিমাবুয়ার সামনেই আমার হাত ধরে জানতে চাইলো, তোমার কি হয়েছে সামিরা? আমি অবাক হলাম। বললাম, কি হবে? কিছুই তো হয়নি। সে বললো তুমি আজ পিকনিকে যাওনি কেনো? আমার হঠাৎ মনে পড়লো ছি ছি আমার তো মনেই ছিলোনা আজ না আমাদের শালবন যাবার কথা। আমি লজ্জা পেলাম। ভুলে যাবার কথাটা ওকে আমি বলবোনা । ওর হাত ধরে বললাম-
কেনো যাইনি জানো?
ও বললো,
-কেনো?
-আমি না গেলে তুমি যে আমাকে দেখতে আসবে তাই।
ও অবাক হয়ে বললো,
-তার মানে?
আমি বললাম,
- আমি মরে গেছি কিনা এটা নিশ্চয় জানতে আসবে তুমি।
পার্থ কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আর তারপর-

আমরা কতক্ষন নির্বাক ছাদে বসেছিলাম মনে নেই। তবে অনেক পরে অন্ধকার হয়ে আসবার পরেও আমরা বসেই ছিলাম ছাদে। পার্থ বললো,
-সামিরা তুমি কাল আমার সাথে একখানে যাবে-
আমি বললাম,
-আচ্ছা।

জানতে চাইলাম না ও কোথায় নিয়ে যেতে চায় আমাকে। কারণ আমি জানি, ও আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে। আমি তো সেটা জানিই।

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:০৩

পার্থিব পার্থ বলেছেন: অন্ধকারে একা বসে থাকাটাও উপভোগ্য। তাই না?

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:০৯

বনমহুয়া বলেছেন: যেমন তুমি থাকো। গাছের মত। কলাগাছ।

২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:০৬

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১০

বনমহুয়া বলেছেন: ধন্যবাদ পরামানিকভাই।

৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:০৬

সামি রোহিত বলেছেন: ভালই লেগেছে বাট আরও একটু জানতে ইচ্ছা করছে তারপর কি হল

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১১

বনমহুয়া বলেছেন: আরও জানবেন পরবর্তীতে।

৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১৪

পার্থিব পার্থ বলেছেন: আমি উপভোগ করি বলেই বসে থাকি। তোমার মত অস্থির নাকি আমি?

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১৬

বনমহুয়া বলেছেন: তোমার উপোভোগ ছুটানো হবে। নেক্সট পর্ব লিখি না আগে তারপর দেখো।

৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৩

পার্থিব পার্থ বলেছেন: কি করবে? আমাকে আবার.........আমি আর সেখানে যেতে চাই না।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৬

বনমহুয়া বলেছেন: পাবনা?

৬| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৫

সজিব হাওলাদার বলেছেন: জানতে ইচ্ছে করে ,আপনাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাইছিল?কাজী অফিস?

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৭

বনমহুয়া বলেছেন: হা হা না । কাজী অফিস না। কই গেছিলাম কালকে জানবেন।

৭| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৬

জুন বলেছেন: অপেক্ষায় থাকলাম পার্থ কই নিয়ে যায় সামিরাকে দেখার জন্য বন মহুয়া :)
ভালোলাগা।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৯

বনমহুয়া বলেছেন: থাকেন আপা। দেখি পার্থ কি বলে।

৮| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৩৯

পার্থিব পার্থ বলেছেন: আমিত আসলে হেরে গিয়ে জিতেই গেছি! আর কি দরকার?

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৪১

বনমহুয়া বলেছেন: পার্থ সজীবভাই জানতে চায় কাজী অফিস যাবে নাকি সামিরা?

৯| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৫০

পার্থিব পার্থ বলেছেন: সজীব ভাই, কই গিয়েছিল সেটা কাল জানবেন।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২০

বনমহুয়া বলেছেন: একটু পরে জানিও ওকে?

১০| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:১৭

জেন রসি বলেছেন: গল্প জমে উঠেছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

++

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২০

বনমহুয়া বলেছেন: ধন্যবাদ জেন রসি।

১১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:১৮

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: এই পর্বটা বেশ অদ্ভুত তো!

গল্পের অর্ধেকটা অংশ বেশ পরিচিত আমার।

আর শেষের দিকে পরের পর্বের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হল। সবমিলে ভ্রান্তি না থাকলেও - হালকা একটা রহস্যতে ডুবে গেছি... লেখিকাকে অনুরোধ করব - এটা যেন তাড়াতাড়ি শেষ না হয়... আরো অনেক বড় হয়ে পরে শেষ হলেই ভাল লাগবে।

আজকে সারাদিনের দুইটা পার্ট বেশ ভালই ছিল। তবে আগের থেকে কমে গেছে আকর্ষণটা। তবে গল্পের শেষ জানার অপেক্ষায় আছি।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২২

বনমহুয়া বলেছেন: হুম আপনি তেমন বুঝা যাচ্ছে।


তাড়াতাড়ি শেষ হবে কিনা জানিনা।

আকর্ষন কমলে কি আর করা। এটা কেইস স্টাডি রক্তিমভাই। যা আছে তাই লেখা হবে।

১২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:২৫

গেম চেঞ্জার বলেছেন: যতটা জমবে আশা করেছিলাম ঠিক ততোটা জমে নি।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২২

বনমহুয়া বলেছেন: ফ্রিজে রেখে দিচ্ছি দেখি আজকে জমে নাকি?

১৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০০

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: সুন্দর । ভাল লাগছে ।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৬

বনমহুয়া বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.