নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাব

nothing special

মইণ

মইণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুড্ডি ও রাইছুল ইসলাম পাছাদ

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৪৮

ঘুড্ডি উরানো বোধহয় ছিল আমার সবচে ফাভারিট চাইল্ডহুড গেইমস। আমি নিকষ কালো হয়ে জন্মাইনি। কিন্তু এক সময় কুচকুচে হয়ে গিয়েছিলাম এই ঘুড্ডি উরানোর জন্য। সারাক্ষণই ঘুড়ী উরাতাম। ঘুড্ডি উরানোর উস্তাদ ছিলেন আমার শ্রদ্ধেয় খালাতো ভাই (মুক্তা ভাই)। আমার চেয়ে বয়সে হয়ত ৭-৮ বছর বড়। কিন্তু ছোটবেলায় উনি খুবই দুষ্ট ছিলেন। সব কিছুতে উনি উস্তাদ ছিলেন। উনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। যেমন- ঘুড্ডির নাটাইয়ের সুতায় কিভাবে মাঞ্জা দিতে হয়, কিভাবে গরুর চর্বি শুকিয়ে মরিচা বাততি বানাতে হয়, কিভাবে ইয়ো-ইয়ো খেলতে হয়, কিভাবে ইয়ো-ইয়োকে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় মাটিতে চালানো যায় ইত্যাদি।



আমার এই খালাতো ভাই চিল্লায় গিয়ে হুজুর হয়ে যাওয়ার আগে ছোটবেলায় তুমুল দুস্টমি করতো। আমার নাম ছিল ‘লাফুল’। উনি আমাকে ব্যঙ্গ করে ডাকতেন ‘রাইছুল ইসলাম পাছাদ’। কোথাকার নাম কোথায়? লাফুল থেকে রাইছুল, রাইছুল থেকে রাইছুল ইসলাম আসাদ এবং সেখান থেকে পাছাদ।



আর উনি আরেকটা কাজ করতেন। জঘন্য কাজ। প্রায়ই আমার মাথা লুঙ্গির ভিতরে আটকে বিকট পাদ দিতেন। আমার দম আটকে বমি আসার মতো আবস্থা হতো, আর উনি হাসতেন।



কিন্তু তবু আমার এই খালাতো ভাইটাকে আমি অনেক ভালবাসি। আমার ভাইটাও আমাকে ভালবাসে।



কিন্তু খুব ছোটবেলায় উনাকে ঘৃণা করতাম। কারন আব্বা বিদেশ থেকে আমার জন্য যতো খেলনা পাঠাতো সবগুলো মুক্তা ভাই ইঙ্গিনিয়ারিং করে নষ্ট করতো। খেলনা দেখা মাত্রই উনার এটাকে খুলে নারি-নক্ষত্র বের করে গবেষনা করতে হবে। গবেষণায় বরাবর একি ফল আসতো। ‘অপারেসন আন সাকসেসফুল’ অর্থাৎ রোগীটি মারা গিয়াছে। আমার সবগুলো খেলনা এভাবে নষ্ট করেছে মুক্তা ভাই। তাই মুক্তা ভাইকে দেখতে ইচ্ছা করতো না। কিন্তু উনি নাছোড়বান্দা। আমাকে দেখলেই “ওই রাইছুল ইসলাম পাছাদ” বলেই পাছার মধ্যে কষে থাপ্পর লাগাতো। ব্যাথা পেলেও ‘ঊ’ করতাম না। তাহলে ‘লুঙ্গি’ ট্রিটমেন্ট দেয়া হবে।



যাইহোক, ঘুড্ডিতে ফিরে আসি। মুক্তা ভাইয়ের ঘুড্ডি উরানোর নেশা ছিল। উনার একটা ‘জালালি’ নাটাই ছিল। ভন ভন শব্দ করতো। বিশাল বড়। একি রকম নাটাই ছিল পাশের বাসার রুবেল ভাইয়ের। উনারা দুইজন কাটাকাটি খেলতো বেশি। সবচে যেটা অবাক লাগতো আমার কাছে সেটা হচ্ছে ‘বাজাইল’। ‘লোট’-ও কম মজার ছিলনা। যখন একটা ঘুড্ডি আরেকটাকে কেটে দিতো এটাকে বলা হয় ‘লোট’। আর যখন একটা ঘুড্ডি আরেকটাকে কেটে দেয়ার পর, বাতাসে এলোমেলো ভাবে উরন্ত কেটে দেয়া ঘুড্ডিটাকে বিশেষ কৌশলে সুতোর মাধ্যমে পেচিয়ে আনে, এটার নাম ছিল ‘বাজাইল’। আমি কখনই এটা পারিনি।



যারা ভারী জালালি নাটাই চালাতে পারে আর বাজাইল করতে পারে তারাই ঘুড্ডি মাষ্টার। আমার মুক্তা ভাই ছিল ঘুড্ডি মাষ্টার।



আর আমি ছিলাম পিকিং-আপ মাষ্টার। আমার রাডারের উপর দিয়ে যত ঘুড্ডি উরেছে আমি সবগুলোকে ধরাশায়ী করতাম। বিশাল ‘কডি’র (আম পাড়তে ব্যবহৃত হয়) সাহায্যে। কতবার হাত কেটেছি এভাবে। কারন, ঘুড্ডি ধরাটা ব্যাপার ছিলনা। ব্যাপার ছিল সুতা ছেরাটা। সুতা যখন ছিঁড়তে যাবো তখন নাটাইওয়ালা দিতো ‘ঘেরা’ আর ফচ করে আঙ্গুলে রেখার মতো করে কেটে যেতো। তবু তারপরেও ঘুড়ি রেখে দিতাম। আর ঘুড্ডির মালিক ছাদ থেকে চিৎকার করতো। বাট হু কেয়ারস? ইউ ট্রেস্পাসড ইন মাই প্রপারটি।



আরেকটা ভাবে আমার ঘুড্ডি আমদানি হতো। আমাদের আমগাছ আর নারিকেল গাছ। ঘুড্ডি যখন গাছে পেচিয়ে যেতো সেটা আর মালিকের পক্ষে পাওয়া সম্ভব ছিলনা। গাছে আটকে থাকতো। পরে একসময় বাতাসে সেটা ভাসতে ভাসতে নিচে পরতো। আর আমি ক্যাচ করতাম। তখন এতো ভালো লাগতো! মনে হতো স্বর্গ থেকে আমাকে ঘুড্ডি পাঠানো হয়েছে। কারন উপর থেকে পরতো তো তাই।



ঘুড্ডির মতন সুন্দর বস্তু বোধ হয় এই পৃথিবীতে নাই। ভিঞ্চির কাছে মোনালিসা যেমন সুন্দর, আমার কাছে ঘুড্ডি তেমন সুন্দর। আমার কাছে সব সময় ৫০-৬০ টা কিংবা তারো অধিক ঘুড্ডি ষ্টকে থাকতো। দুই চোখ ওয়ালা ঘুড্ডি ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় ঘুড্ডি।



ঘুড্ডি উরানো একটা শিল্প। এই হিসাবে বাংলাদেশে শিল্পীর অভাব নাই। এর মধ্যে যে কতো কায়দা-কানুন আছে তা ঘুড্ডি না উরালে বুঝবেন না। ইংল্যান্ডেও ঘুড্ডি উরাতে দেখেছি। ওদের ঘুড্ডির মধ্যেও কত প্রজুক্তি!! দেখে হাসি আসে। তোরা এর মধ্যে শিল্পটা কখনও খুজে পাবিনা।



ওদের ঘুড্ডি কখনও লোট হবেনা। তাদের ঘুড্ডি বাজাইল করা তো প্রশ্নই আসেনা, আর শুধু গোত্তা খায়। তাদের ঘুড্ডি কখনও ‘চা’ খাবেনা।



হ্যা, আমাদের দেশের ঘুড্ডিরাও ‘চা’ খায়। যানেন না বোধ হয়। ঘুড্ডি যখন খালে-বিলে-নদীতে বা পুকুরে পরে গিয়ে ভিজে যায়, তখন এটাকে বলে ঘুড্ডির ‘চা’ খাওয়া।



আর ঘুড্ডি যখন এক সাইডে ঘুরতেই থাকে ঘুরতেই থাকে, তখন এটাকে বলে ‘গোঁত্তা’ খাওয়া। ঘুড্ডি কখনও ডানে গোঁত্তা খায়, কখনও বামে গোঁত্তা খায়। সেক্ষেত্রে ঘুড্ডি উরারুকে যেটা করতে হয় সেটা হচ্ছে সামান্য একটু কাগজ (সাধারণত ঘুড্ডির লেজ) ছিরে যেদিকে গোঁত্তা খায় সেই পাশে লাগিয়ে দিতে হয়। এটাকে বলে ‘কান্নি’ দেয়া।



ঘুড্ডি অনেক রকম আছে। যেমনঃ



-চোক্ষা ঘুড্ডি



-দাতওয়ালা ঘুড্ডি



-লেঞ্জা বড় ঘুড্ডি



-ঝিরিঝিরি ঘুড্ডি



-কানা ঘুড্ডি



-দুই চোখা ঘুড্ডি



-পলিথিনের ঘুড্ডি



-হাইপো থারমা ঘুড্ডি (এটা আমার নিজের আবিষ্কার। ঘুড্ডির মধ্যে পিনহোল ক্যামেরা লাগিয়ে উরানো, আর হাই রেডিয়েন্সে সেই পিকচার ক্যাচ করা)



-মশাল ঘুড্ডি। যেটা গাছের সাথে বেঁধে উরানো হয়। ভনভন আওয়াজ করে। এগুলো আজকাল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এগুলো আর দেখা যায়না। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল হয়ে গেছে। গ্রাম অঞ্চলের ছেলেরাও আজকাল পিএসপি (PSP-Play Station Portable) খেলে।



ঘুড্ডি আজকালকার ছেলেরা তেমন একটা উড়ায় না। আর যারাও বা উরায় তারা ‘লোট’ ‘কাটাকাটি’ ‘বাজাইল’ ‘গোঁত্তা’ ‘কান্নি’ ‘চা’ ‘মাঞ্জা’ এসব ব্যাপারে তেমন একটা ধরনা রাখেনা। কেবল উড়ানোর জন্য উড়ায়। অনেকটা মেয়েদের মতো। মেয়েরা ঘুড্ডি উড়ায় খুব হাস্যকর স্টাইলে।



যদিও মেয়েদের ঘুড্ডি উরানো হাস্যকর, তবুও আমার জীবনে ঘুড্ডি উড়ানোর হাতেখড়ি হয় একটা মেয়ের হাতেই। পলিথিনের ঘুড্ডি কিভাবে বানাতে হয় এটা সে-ই প্রথম শিখিয়েছিল এবং আমার ঘুড্ডি লাইফের আল্টিমেট সঙ্গি ছিল সে-ই। শুধু ঘুড্ডি না, আমার ‘লুডু’ এবং ‘দাপ্পা’ লাইফের একমাত্র সঙ্গি সে-ই ছিল। যার নাম এনি।



মেয়েরা কিভাবে ঘুড্ডি উরায় জানেন? ওরা ঘুড্ডিটাকে কোনরকমে গুটি সুতা দিয়ে বাঁধে। বেঁধে গুটি মাটিতে ফেলে দেয়, আর হাতকে নাটাই হিসেবে ব্যবহার করে। এর কারন একটাই হতে পারে। মেয়েদের হাত কোমল বলে তারা মাঞ্জা দেয়া সুতা ধরতে পারেনা। তাদের হাত ধারালো কিছুই পছন্দ করেনা। কারন তারা সশরীরে আপাদমস্তক সমস্তটাই একটা ধারালো বস্তু।



তবে আমাকে যে মেয়ে ঘুড্ডি উড়ানো শিখিয়েছিল, সে অবশ্য এভাবে উড়াতো না। সে রুটি বানানোর বেলুনের মধ্যে সুতা পেচিয়ে উরাতো। এবং ওর দেখাদেখি আমিও ওভাবেই উড়াতাম।



আমি আমার লেখায় ঘুড়ীকে ঘুড্ডি কেন লিখেছি জানেন? কারন ঘুড্ডির দোকানে গিয়ে আপনি যদি বলেন আমাকে একটা ঘুড়ী দেন, তাহলে দোকানি আপনাকে ঘুরিয়ে পাছায় লাত্থি দিয়ে ঘুড়ী বানিয়ে উরিয়ে দিয়ে বলবে- ‘এতো শুদ্ধ মারাইলে ঘুড্ডি উরান লাগবো না’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.