![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটি শহুরে গল্প
-মনিরুল মনি
তিন কাপ চা খাওয়া হয়ে গেছে এরইমধ্যে।সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে খুব।কিন্তূ খেতে হলে অফিসের বাইরে যেতে হবে।এখন উঠে যাওয়াটা খারাপ দেখায়।এই অফিসের লোকজন মনে হচ্ছে রোবট।কেউ কারো সাথে কথা বলছে না।একজনের সামনে দিয়ে আরেকজন হেটে যাচ্ছে ।কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না,কিছু বলছে না,হাসছে না এমনকি হাই-হ্যালো পর্যন্ত বলছে না।ভাবখানা এমন যেন কেউ কাউকে চেনে না।সবার চেহারা খুবই সিরিয়াস ধরনের।ভাবভঙ্গিটাও চিন্তিত মানুষের মতো।যেন একেকটা যন্ত্রমানব।বেটারি চার্জ দিয়ে ছেড়ে দেয়েছে।চার্জ না শেষ হওয়া পর্যন্ত যে যার কাজ করবে।এই যে পিওন-এর আচরনটাও অদ্ভুত।কথা নেই বার্তা নেই কিছুক্ষন পর পর এসে এক কাপ চা দিয়ে যাচ্ছে।খাবো কি খাবো না কিছু জিজ্ঞেসও করছে না।দ্বিতীয়বার চা দেয়ার সময় বললাম,খাবো না,ধন্যবাদ।কে শোনে কার কথা।আমার মনে হচ্ছে ওর কাজই এই।অফিসে কোন অতিথি এলে নির্দিস্ট সময়(১০মিনিট,আমি খেয়াল করে দেখেছি) পর পর শুধু চা দিয়ে যাওয়া।কোন কথা বলা,উত্তর দেয়া এবং প্রশ্ন করা নিষেধ।রিসিপশনের মেয়েটাও যেন কেমন।সাধারনত এতো বড়ো অফিসে অতিব সুন্দরী একজন তরুনী রিসিপশনে বসে এবং কারনে-অকারনে প্রত্যেকটি কথা হাসতে হাসতে বলে।এটাই নিয়ম।কিন্তূ এই অফিসে ব্যতিক্রম।এই আইটেম কোথা থেকে ধরে নিয়ে এসেছে একমাত্র আল্লাহ্-ই জানে।যতবার বলছি,”দেখুন না?ফ্রী হল কি না” ততোবার কঠিন মুখ করে রোবটের মতো করে বলছে,”আমি দেখছি।ম্যাডাম এখনো ব্যস্ত আছেন।আপনি বসুন”।মুখটা এমন করে বলছে যেন আইমাত্র কেউ জোর করে চিরতার পানি খাইয়ে দিয়েছে।এভাবে বসে থাকলে আর কত কাপ চা যে খেতে হবে, কে জানে।
আমি এসেছি নওশিনের কাছে।নওশিন একটা মোবাইল ফোন কম্পানীর এসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার।মোটামোটি উঁচুদরের পোস্ট।বেতন-ভাতাও মারদাঙ্গা।আমার থেকে প্রায় দ্বিগুন স্যালারী ড্র করে প্রতিমাসে।আজ রবিবার।আমার অফিস বন্ধ।কিন্তূ নওশিনের থাকায় আমি এসেছি।একসাথে কিছুক্ষন বেড়াবো বলে।প্রতি রবিবারে-ই আমরা এমন করি।আমাদের অলিখিত,অবশ্য পালনীয় কর্ম।আজ ফোন দিয়ে আসিনি।অফিসে ঢুকে ফোন দিয়ে দেখি ওর মোবাইল বন্ধ।এখন রোবট রিসিপশনিস্ট-ই একমাত্র ভরসা।এরা আমাকে প্রায়ই দেখে কিন্তূ ভাবখানা এমন করে যেন জীবনেও দেখে নাই।আমি গত তিন-চার বছরে যতবার এসেছি অন্য অফিস হলে হয়তো এমডি থেকে পিওন পর্যন্ত সবাই চিনে ফেলতো।এই নিয়ে একদিন নওশিনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,তোমার কাছে কি প্রত্যেকদিন আমার মতো একজন করে বয়ফ্রেন্ড আসে?না হলে এমন বিহেভ করারতো কথা না।নিশ্চয়ই এমন হয়।রবিবার আমি,সোমবার রনি,মঙ্গলবার জনি,বুধবার মনি-এভাবে প্রত্যেকদিন কেউ না কেউ এসে বসে থাকে আর কাপের পর কাপ চা খায়।নইলে তো এমন হওয়ার কথা না।অথবা আমার চেহারা-মোবারক তোমার অফিসের কারো পছন্দ হয় না।শুনে ওর বিখ্যাত হাসি ছাড়া আর কিছু দেয়নি।
নওশিনের সাথে আমার পরিচয় অনেকটা ফিল্মি কায়দায়।ফিল্মে যেমন হয় নায়িকা রোজিনা,ধনির দুলালী,পাজেরো গাড়ী চালাচ্ছেন ঠিক তখনই নায়ক জসিম, যিনি ঠেলাগাড়ী ঠেলছিলেন তারসাথে সংঘর্ষ হয়।এরপর পরই দুইজন দুইজনের দিকে মূগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে আর ক্যামেরা তাদের নিয়ে যায় কোন এক পার্কে যেখানে কল্পনায় ওনারা নাচ-গান করবেন।এবং গান শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাদের মধুর প্রেমের সুচনা হয়।আমাদের অবস্হাটা তুলনা করলে সে রকমই দাড়াবে।
নওশিনের সাথে আমার প্রথম দেখা এক্সিডেন্ট করে।ওর গাড়ীর সাথে আমার সিনজি’র সংঘর্ষ ঘটে মহাখালীর দিকে।সিনজি বিধস্ত হলেও আমার তেমন কিছুই হয়নি।বামহাতে সামান্য ছড়ে গিয়েছিলো।সিনেমায় যেমন নায়কদের গুরুতর কিছু হওয়ার নিয়ম নেই।কিন্তূ আমার সিনজি’র ড্রাইভার বেচারার দেহে এমন কোন জায়গা ছিলো না যেখানে একটু কেটে বা ছড়ে যায়নি।সে যখন কোনমতে উঠে দাড়িয়েছিলো তখন সে সম্পূর্ন রক্তাক্ত মানব।এই দেখে নওশিন খুব ভয় পেয়ে যায়।এদিকে লোকজন জমে যাচ্ছে।কির্তী-টা একজন মেয়ে চালকের দেখে মানুষের কৌতূহলের সীমা-পরীসিমা ছিল না।কিন্তূ দোষটা আসলে আমার সিনজি চালক সাহেবের ছিলো।যদিও সিনজি’র ক্ষতি হয়েছিল বেশি।দেখে মনে হচ্ছিল এর জন্য প্রাইভেট কার-ই দায়ী।তাই আমি নওশিন-কে কৌতূহলী দর্শকের দৃষ্টি থেকে খুব দ্রুতই মুক্ত করে দেই।আমার যেটা সবচেয়ে ভাল লেগেছিল সেটা হচ্ছে,ও সূযোগ পেয়েও পালিয়ে যায়নি।বরং ঝামেলা হবে জেনেও আহত যাত্রি এবং চালককে দেখতে গাড়ী থেকে বের হয়ে এসেছিল।সেদিন খুব একটা কথা হয়নি।কিন্তূ এই ঘটনা এবং ওর চেহারা ভূলে যাবার আগেই আবার দেখা হয়ে যায়-সেটা ওর অফিসেই।আমি সিম তুলতে গিয়েছিলাম।সেদিন নাম-ঠিকানা মানে কি করা হয়,কোথায় থাকা হয়-এটুকু পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছিল।কিন্তূ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!ঠিক একদিন পরই রাস্তায় আবার ওর সাথে দেখা।দুজনেই সিনজি’র খোজে অপেক্ষমান।গন্তব্য-উত্তরা থেকে ধানমন্ডি।পরে একসাথেই ট্যাক্সি-ক্যাবে পরিভ্রমন।এবং দেড় ঘন্টা আলাপচারিতায় আজকের অবস্তার বীজ-বপন।সেই শুরু তারপর মাঝে মাঝে ফোনে কথা,বাইরে দেখা করা।আর এখনতো ঘন্টায় ২-৩বার ফোন করা হয়।তবে দেখা করা সপ্তাহে একবারের বেশী হয় না।কখনো কখনো হয়তো হয় দেখা কয়েকবার কিন্তূ এরকম হওয়ার ইতিহাস খুবই কম।এখন আমরা প্রায়ই মনে করি কী করে এক সপ্তাহের মধ্যে তিনবার দেখা হয়ে গিয়েছিল।
©somewhere in net ltd.