নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

উগ্রপন্থা ও গণতন্ত্র একসাথে চলতে পারে না

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৩১

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যশোর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের বসতবাড়ি, ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়। সহায়-সম্বল হারিয়ে তীব্র শীতের মধ্যে অসংখ্য নারী-পুরুষ-শিশু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি করেছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আশ্রয় নিয়েছেন মন্দিরে। আক্রমণের সময় বনে-জঙ্গলে-আখক্ষেতে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। নির্বাচনের আগের রাতে হিন্দুদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোট দিলে বিপদ হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভয়ে-আতঙ্কে অনেক জায়গায় হিন্দুরা ভোটকেন্দ্রের ধারে-কাছেও যায়নি। তারপরও তারা আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পায়নি। দিনাজপুরের একজন আক্রান্ত ব্যক্তি- অনন্ত চন্দ্র রায় দুঃখ করে বলেছেন, ‘ভোট এলেই আমাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসে। কোনোদিন কি এর প্রতিকার হবে না? কেমন করে এদেশে থাকবো? এই জিজ্ঞাসা শুধু অনন্ত রায়ের নয়, হিন্দু সম্প্রদায়ের কম-বেশি সব সদস্যেরই। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন আমাদের দেশে একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কারণে-অকারণেই তাদের ওপর হামলা হয়, আক্রমণ হয়। তাদের জীবন অনিরাপদ করে তোলা হয়। তাদের সম্পদ লুটপাট করা হয়। জায়গা-জমি জবরদখল হয়ে যায়। আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার মধ্যে বেঁচে থাকতে হয়। এটা কোনো মানুষের জীবন নয়। ভোটের সময় হামলা-আক্রমণের ঘটনা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। প্রতি নির্বাচনের পরেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে থাকে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার আগে-পরে এই হামলা-আক্রমণের ঘটনা অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছিলো। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এটাই যে, প্রতিটি হামলা-নির্যাতনের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির জড়িত থাকলেও কাউকেই তখন গ্রেপ্তার করা হয়নি, আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হয়নি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আশা করা হয়েছিলো ২০০১ সালে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিটি ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত হবে এবং প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির বিধান করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। উল্টো মহাজোট সরকারের আমলেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর, আরো স্পষ্ট করে বললে বৌদ্ধ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নৃশংস আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। কোনো ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতকারীরা উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে এমন কোনো প্রমাণ দেওয়া যাবে না। ক্ষেত্রবিশেষে দু-একটি মামলা হয়েছে, দু-একজনকে গ্রেপ্তারও হয়তো করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকেছে। ফলে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করা, তাদের জীবনকে বিপন্ন করে তোলা, ত্রাসের মধ্যে তাদের বসবাসে বাধ্য করা যেনো তাদের ‘নিয়তি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশকে বলা হয়ে থাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দেশের সব মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। এই দেশে সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না, অগণতান্ত্রিক-স্বৈরাচারী শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না এটাই ছিলো প্রত্যাশিত। কিন্তু নানান রাজনৈতিক উত্থান-পতনের কারণে মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি আমাদের দেশের রাজনীতিতে ঠাঁই করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সমাজে-রাজনীতিতে-অর্থনীতিতে-প্রশাসনে যতো শক্তি সঞ্চয় করেছে, দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতার উপাদান ততই বেড়েছে। উদারতা, সহনশীলতার পরিবর্তে উগ্রতা এবং অসহিষ্ণুতার বিস্তার ঘটেছে। ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তি প্রকটভাবে দেশের ওপর চেপে বসার সুযোগ পেয়েছে। জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। কিন্তু ক্ষমতার রাজনীতির সংকীর্ণ স্বার্থে এই উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদের সাথে আপোস করেছে মধ্যপন্থার রাজনৈতিক শক্তি। এখন তার খেসারত গুনতে হচ্ছে গোটা দেশকে। উগ্রবাদ এবং গণতন্ত্র যে একসাথে চলতে পারে না এটা না বুঝতে পারার ব্যর্থতার কারণেই দেশে বর্তমানে গণতান্ত্রিক রাজনীতির নামে সন্ত্রাস-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে সেটাও এই উগ্রপন্থার রাজনীতিরই পরিণতি। রাজনীতি থেকে সব ধরনের উগ্রবাদীদের হটাতে না পারলে আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভবিষ্যৎ বিপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যারা একদিনের ভোটের গণতন্ত্রের শুদ্ধতার জন্য বিলাপ করেন, তারা সাধারণ মানুষের জীবন সংহার করে যে উগ্রবাদী রাজনীতি করছে তার বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটিও হচ্ছে না।

মধ্য-ডান পন্থার রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে উগ্র-ডানের জামায়াতে ইসলামীর অতিমাত্রায় মাখামাখির কারণেই দেশের রাজনীতিতে যে উগ্র ধারার বিস্তার ঘটছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গত কয়েক মাসে আমাদের দেশের রাজনীতিতে আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা চলেছে তার জন্য দায়ী জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত যে একটি অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী দল সেটা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণেই পরিষ্কার হয়েছে। এই দলটি গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে গোপনে নিজেদের সহিংস রাজনীতির চর্চা অব্যাহত রেখেছে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা না দেখেই তারা সশস্ত্র ক্যাডারবাহিনী গড়ে তুলেছে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা মাথায় রেখে। বিএনপির আশ্রয়-প্রশ্রয় জামায়াতের জন্য সুবিধাজনক অবস্থা তৈরি করেছে। জামায়াত যে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে গ্রাস করে ফেলছেÑএটা বিএনপি বুঝতে পারছে না। বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক এজেন্ডা এক নয়। জামায়াতের আশু লক্ষ্য হলো যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দ-িত দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি। অন্যদিকে বিএনপির আশু লক্ষ্য হলো ক্ষমতায় যাওয়া। দেশের মধ্যে অরাজকতা-নৈরাজ্য তৈরি হলে জামায়াতের লাভ, বিএনপির ক্ষতি। কিন্তু বিএনপি এখন অন্ধ আওয়ামী লীগ বিরোধিতার কারণে সেটা উপলব্ধি করতে পারছে না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র পথ হলো নির্বাচন। অথচ জামায়াতের প্ররোচণায় বা ফাঁদে পড়ে বিএনপি এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো না। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে উল্টো নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়ে বিএনপি নিজেদের গণতান্ত্রিক অবস্থানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। নির্বাচন প্রতিহত করা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিএনপি কেন নির্বাচন বর্জন করে ভোটারদের নির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরিবর্তে নির্বাচন প্রতিহত করার সহিংস আন্দোলনে জড়িয়ে পড়লো? এই প্রশ্নের উত্তর বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মী-সমর্থকদের জানতে চাইতে হবে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে গত কয়েক মাসে যেভাবে সন্ত্রাস-সহিংসতা চালানো হয়েছে, যেভাবে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা হয়েছে, দেশের সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে, তাকে কোনোভাবেই গণতন্ত্রসম্মত বলা যায় না। গণতন্ত্রে বলপ্রয়োগের সুযোগ নেই। শক্তির জোর নয়, যুক্তির জোরই গণতন্ত্রের সার কথা। অথচ বিএনপি এবার জামায়াতের খপ্পরে পড়ে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস-সহিংসতার সঙ্গে জড়িয়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য কত বড় ক্ষতি করেছে সেটা তারা এখন বুঝতে না পারলেও একসময় এজন্য তাদের আফসোস করতে হবে।

বলা হচ্ছে, দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বিএনপি আন্দোলন করছে। তাদের আন্দোলনের মূল কথা হলো নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। তাহলে প্রশ্ন হলো, ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে দেশের বিশেষ জনগোষ্ঠীকে ভোটদান থেকে যারা বিরত রাখতে চায় তাদের কোন বিবেচনায় গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি বলে ধরা হবে? দুঃখজনক হলেও সত্য যে হিন্দু সম্প্রদায়সহ আরো কিছু জনগোষ্ঠীর মানুষকে ভোটদানে বিরত রাখার জন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তাদের মধ্যে বিএনপির নামও আছে। আগে এই কাজটি বিএনপি সমর্থকরা রেখে-ঢেকে করলেও জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ হওয়ার পর এখন এটা তারা নগ্নভাবেই করছে। জামায়াতি রাজনীতির উগ্রপন্থার প্রভাব বিএনপিকে এতটাই আচ্ছন্ন করেছে যে, তারা গণতন্ত্রের নাম করে এমন সব কর্মকা- করছে, যা কোনোভাবেই গণতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিএনপি নেতৃত্বকে এটা বুঝতে হবে যে, উগ্রপন্থা এবং গণতন্ত্র একসাথে চলে না। বল প্রয়োগ, ভয়-ভীতি দেখানো আর গণতন্ত্র সমান্তরাল পথে চলতে পারে না। গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা যদি বিকশিত করতে হয় তাহলে হিংসার পথ পরিহার করে, সন্ত্রাস-নাশকতার ইতি টেনে বিএনপিকে শান্তির পথেই ফিরে আসতে হবে। বল প্রয়োগ করে দাবি আদায়ের কৌশল ত্যাগ করে যুক্তির জোরকে প্রাধান্য দিতে হবে। শান্তি ও সমঝোতার পথে না হাঁটলে দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণ করা যাবে না। ক্রমাগত হামলা-নির্যাতনে টিকতে না পেরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যদি নিরূপায় হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হয় তাহলে আপাতদৃষ্টিতে উগ্রপন্থার সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিজয় হলেও শেষ বিচারে ক্ষতি হবে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তির। বাংলাদেশকে যারা একটি উগ্র-জঙ্গিবাদী সাম্প্রদায়িক দেশে পরিণত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন উদার গণতান্ত্রিক চেতনার মানুষদের এক হয়ে রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়। দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকেও বেছে নিতে হবে তারা উগ্রপন্থার সহায়ক হবে নাকি গণতান্ত্রিক ধারার পক্ষে অবস্থান নেবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.