নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাপে চাপা পড়ে যাচ্ছে জামাত

১০ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:১৭

বাংলাদেশের মানুষ ‘গালি’ অর্থে যে কয়টি শব্দের বহুল ব্যবহার করে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘রাজাকার’। সেই রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এখন বড় দুঃসময়। দেশি-বিদেশি চাপে তাদের ‘ত্রাহি-মধুসূদন’ অবস্থা। দেশে তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপি চারদলীয় জোটের সময়ে এবং ১৮ দলীয় জোটের সময়ে যেভাবে তাদেরকে কোলে তুলে রেখেছিল ২০ জানুয়ারির সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় সেই জামায়াতকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়েছে বিএনপি। অনেকে যদিও বলে থাকেন বিদেশি চাপে এটি বিএনপির একটি কৌশল, কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো কৌশলের আশ্রয় নিয়ে নয়, বিএনপি তার অস্তিত্বের প্রশ্নেই জামায়াতের সংসর্গ ত্যাগ করতে বদ্ধপরিকর। ২০ জানুয়ারি ও তারপর থেকে বিদেশিদের চাপে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে পর্দার বাইরে বা পর্দার অন্তরালে যে কোনো ধরণের সিদ্ধান্তে এসে কৌশলে তাদের এড়িয়ে চলুক বা বর্জন করুক অথবা ১৮ দলীয় জোট থেকে বের করে দিক সেটা জামায়াতের জন্য বড় সংকট। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে যাওয়ায় এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাওয়ায় জামায়াত এখন প্রমাদ গুনছে, তারা প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করতে পেরেছে, ১৯৪৭ সালের পর তারা নানান সময়ে বিভিন্ন সংকটে পড়লেও এবারই তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য তাদের বন্ধু বিএনপিকে তারা কাছে পাচ্ছে না এবং বিদেশিরাও ক্রমশ তাদের কাছ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে তাদের পৃথিবী ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের জন্য জামায়াত দেশে ও বিদেশে বহু লবিইস্ট নিয়োগ করেছিল। এই লবিইস্টদের পেছনে তারা খরচ করেছিল কোটি কোটি ডলার। কাড়িকাড়ি অর্থ খরচ করে তারা কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কাছ থেকে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে’Ñজাতীয় কিছু বিবৃতি আদায় করা ছাড়া আর কিছুই পায়নি। বলা চলে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় তাদের অঢেল টাকা বিনিয়োগ এক প্রকার জলেই গেছে। জামায়াত শত চেষ্টা করেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে আওয়ামী লীগকে নিবৃত্ত করতে পারেনি। কাদের মোল্লা ‘কট বিহাইন্ড’ হয়ে অলরেডি ‘সাজঘরে’ ফিরে গেছে। ক্রিজে আছে সাঈদী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, নিজামী, আবুল কালাম আজাদরা। আওয়ামী লীগ ৫ বছর নয় আর মাত্র ২ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারলেই জামায়াতের এসব নেতাদের স্থানও হবে ‘সাজঘর’।

জামায়াতে ইসলামী তাদের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের রক্ষার জন্য সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়ার পর থেকে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করেছে। তাদের চিন্তা চেতনায় ছিল সহিংসতা, নাশকতা, হত্যা, গুম, অরাজকতা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে দেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে পরিণত করতে পারলে আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব হবে না যুদ্ধাপরাধের বিচার এগিয়ে নেওয়া। কিন্তু তাদের সে মরিয়া চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর থেকে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত তারা একাত্তর স্টাইলে দেশের অন্তত আড়াইশ’ নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। নির্বাচন প্রতিহতের নামে তারা বিএনপিকে দিয়ে লাগাতার হরতাল-অবরোধ ডেকে মানুষ খুন করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা প্রচলন করেছে পেট্রলবোমার। চলন্ত বাস-ট্রাকে পেট্রলবোমা ছুড়ে তারা বহু যাত্রীকে হত্যা করেছে, অনেককে পাঠিয়েছে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ-ইউনিটে। সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের নামে তারা রাস্তার দুই পাশের অন্তত অর্ধ-লাখ গাছ কর্তন করেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে তৈরি পোশাকের কাভার্ড ভ্যান যাতে না যেতে পারে সেজন্য তারা হামলা চালিয়েছে কাভার্ড ভ্যানে, আন্তঃজেলা ট্রাকে। তারা রেল লাইন উপড়ে ফেলে হাজার হাজার যাত্রীর দুর্ভোগের কারণ ঘটিয়েছে। রেলের ক্ষতি করে অর্ধশত কোটি টাকার। তাদের তা-বে রেলের আয় অর্ধেক কমে গেছে। গণপরিবহন হয়েছে বিপর্যস্ত, সাধারণ মানুষ হয়েছে কর্মহীন, পণ্য পরিবহন করতে না পারায় দ্রব্যমূল্য হয়েছে অসহনীয়। সীতাকুন্ডে তারা ফ্রি-স্টাইলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। সীতাকুন্ডুসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা অন্তত ২০ হাজার যানবাহন পুড়িয়ে দিয়েছে। বগুড়ায় আকিজ গ্রুপের বাস ডিপোতে আগুন লাগিয়ে ওই কোম্পানির অন্তত দুই হাজার যানবাহন পুড়িয়ে কয়লা করে দিয়েছে। নির্বাচনের আগের দুই দিনে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা ৫৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত ক্ষতিই করেনি, কোমলমতি শিশুদের বইও তারা পুড়িয়ে দিয়েছে একাত্তরের উন্মুক্ততায়। ৫ জানুয়ারির অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দিন তারা সারা দেশে ২২ জন মানুষকে হত্যা করেছে। এরপরও নির্বাচন প্রতিহত করতে না পারায় তারা ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা থেকেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলে পড়ে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার অপরাধে। যশোরের মালোপাড়া, দিনাজপুর, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় জামায়াত হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে, তাদের বাস্তু থেকে উৎখাত করে যে নারকীয় কর্মকা- চালায় তা তাদের একাত্তরের নৃশংসতার কথাই মনে করিয়ে দেয়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের আড়ালে নির্বাচন প্রতিহতকে উপলক্ষ করে তারা সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি সম্পদের যে ব্যাপক ক্ষতি করেছে, যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেÑতা এতদিনে মানুষ বুঝে ফেলেছে যে নির্বাচন প্রতিহতের জন্য নয়; যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর অংশ হিসেবে জামায়াত এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। কিন্তু বিএনপি এতদিন বিষয়টি বুঝতে পারেনি। তারা ক্ষমতার চেয়ারে বসার জন্য জামায়াত শিবির এতদিন যা করেছে তাতে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপির চৈতন্যদয় হয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে তাদের সাম্প্রতিক দৈন্যদশার মূলে রয়েছে জামায়াতের হঠকারি, সহিংস, নাশকতাপূর্ণ ও উগ্র রাজনীতি।

জামায়াতের বুদ্ধিতে বিএনপি লাগাতার হরতাল-অবরোধ করেছে, মানুষের জীবন ও সম্পদহানী ঘটিয়ে বিরাগভাজন হয়েছে। কূটনীতিকদের ওপর নির্ভরশীলতার দিকে জামায়াত-বিএনপিকে ঠেলে দিয়েছে। এ কারণে মানুষের সমর্থন না পেয়ে বিএনপি পেয়েছে জনধিক্কার। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষায় বিএনপি একূল-ওকূল হারিয়ে শেষ পর্যন্ত এখন বুঝতে পেরেছে তাদের এই বিপর্যয়কর অবস্থার জন্য দায়ী তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াত। ফলে বিএনপি এখন জামায়াতকে এড়িয়ে চলছে এবং বাড়িয়ে বললে বলতে হয় জামায়াতকে তারা জোট থেকে বের করে দেওয়ার চিন্তা পাকাপোক্ত করে ফেলেছে। এক্ষেত্রে অবশ্য জামায়াতের এখন একমাত্র ভরসা তারেক রহমান। কিন্তু তিনি লন্ডনপ্রবাসী হওয়ায় তারেকের মাধ্যমেও যে বিএনপির সঙ্গে পূর্ব সখ্যতা বজায় রাখতে পারবে তা নিয়ে জামায়াত নেতাদের মধ্যেই রয়েছে সংশয়।

বিএনপি দৃশ্যমানভাবে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করলে আওয়ামী লীগও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে। জামায়াতকে ইতোমধ্যেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছে। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের নিবন্ধনও ইতোমধ্যে বাতিল করেছে। এখন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ বলছেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলেই চলবে না, এর সাংগঠনিক ভিত্তিও ভেঙ্গে দিতে হবে এবং অর্থের উৎস বন্ধ করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে বলা চলে, আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয়বারের মতো ৫ বছর ক্ষমতায় থাকলে শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্যই সম্পন্ন করবে, জামায়াতকে বিএনপিছাড়া করবে, জামায়াতের সাংগঠনিক ভিত্তি ভেঙ্গে দেবে এবং অর্থের উৎস বন্ধ করে দেবে। বিদেশি চাপে জামায়াত এখন বিএনপিছাড়া, তরুণ প্রজন্মের চাপে তারা এখন কোণঠাসা, লবিইস্টদের কারসাজিতে তারা এখন অর্থছাড়া। তাদের চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। এই অন্ধকার অবস্থা থেকে তাদের টেনে তোলার মতো দেশি-বিদেশি কোনো বন্ধুই তাদের পাশে নেই। ফলে তারা তাদের অস্তিত্ব সংকট নিয়ে দিশেহারা। তারা এখন বুঝতে পারছে বাংলাদেশে রাজনীতি করার দিন ফুরিয়ে আসছে। তাই তারা যে কোনো উপায়ে বিএনপি অথবা সরকারের সাথে রাজনৈতিক আঁতাত করার পাঁয়তারা করছে; যার শেষ পরিণতি দেখার জন্য আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতেই হবে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:২০

হতাশ নািবক বলেছেন: সহ মত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.