নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশুদিবস ও জাতির পিতার জন্মদিন

১৬ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:২৪





১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন স্বাধীনতার মহান এ স্থপতি। তিনি বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছুটে বেড়িয়ে বাঙালির কাছে পৌঁছে দেন পরাধীনতার শিকল ভাঙার মন্ত্র। সে মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে স্বাধীন দেশে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি আজ বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় দেশে। প্রতিবছর তাই সমগ্র জাতি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনকে 'শিশু দিবস' হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্মরণ ও পালন করে।



বঙ্গবন্ধুর বাল্যকাল টুঙ্গিপাড়া গ্রামেই কাটে। টুঙ্গিপাড়া প্রথমে কোটালিপাড়া ও পরে গোপালগঞ্জ থানার অন্তর্গত ছিল। মধুমতি আর বাঘিয়ার নদীর তীরে এবং হাওড়-বাঁওড়ের মিলনে গড়ে ওঠা বাংলার অবারিত প্রাকৃতিক পরিবেশে টুঙ্গিপাড়া গ্রামটি অবস্থিত। স্বাধীনতা লাভের পর টুঙ্গিপাড়াকে পৃথক থানা করা হয়।

টুঙ্গিপাড়া গ্রামেই শেখ মুজিবুর রহমান ধনধান্যে-পুষ্পে ভরা শস্য শ্যামলা রূপসী বাংলাকে দেখেছেন। তিনি আবহমান বাংলার আলো-বাতাসে লালিত ও বর্ধিত হয়েছেন। তিনি শাশ্বত গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ছেলেবেলা থেকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। গ্রামের মাটি আর মানুষ তাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করত। শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজ জীবনে তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজা পীড়ন দেখেছেন। গ্রামের হিন্দু, মুসলমানদের সম্মিলিত সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসামপ্রদায়িকতার। আর পড়শি দরিদ্র মানুষের দুঃখ, কষ্ট তাকে সারা জীবন সাধারণ দুঃখি মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসায় সিক্ত করে তোলে। সমাজ ও পরিবেশ তাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে। তাই পরবর্তী জীবনে তিনি কোনো শক্তির কাছে, সে যত বড়ই হোক, আত্মসমর্পণ করেননি; মাথানত করেননি।



চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়রা খাতুনের তৃতীয় সন্তান। ৭ বছর বয়সে তিনি পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল, গোপালগঞ্জ সরকারি পাইলট স্কুল ও পরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে লেখাপড়া করেন। মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনার সময় তিনি চোখের দুরারোগ্য বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে কলকাতায় তার চোখের অপারেশন হয়। এই সময় কয়েক বছর তার পড়াশোনা বন্ধ থাকে।



১৯৪২ সালে তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে কলকাতায় গিয়ে বিখ্যাত ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং সুখ্যাত বেকার হোস্টেলে আবাসন গ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি বিএ পাস করেন। শেখ মুজিবুর রহমান এই সময় ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই সময় তিনি হোসেন সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিমের মতো নেতাদের সংস্পর্শে আসেন। সময়টি ছিল বাংলার ইতিহাসের এক উত্তাল সময়। দেশপ্রেম, স্বাজাত্যবোধ আর হিন্দু, মুসলিম ঐক্যের পাশাপাশি কংগ্রেস মুসলিম লীগের বিভেদের রাজনীতিতে ক্ষত-বিক্ষত বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন। বঙ্গবন্ধুর বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক বিকাশ হয়েছিল এহেন বিরাজমান আবহে। উদার গণতান্ত্রিক চেতনার পাশাপাশি অসামপ্রদায়িক ও জাতীয় ঐক্যের চেতনায় তার দীক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছিল।



১৯৪৬ সালে সামপ্রদায়িক দাঙ্গায় শান্তি স্থাপনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অসম সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন। যা তাকে পরবর্তী জীবনে হিংসা, বিদ্বেষের বিরুদ্ধে অহিংস, অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি আস্থাবান করে তুলেছিল। ১৯৭১ সালে আমাদের সুমহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে যে অসহযোগ আন্দোলন তিনি করেছিলেন তার শিক্ষা তিনি পূর্বতন সময়েই গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্তির পর তিনি পূর্ব বাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকাকে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দেন ও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।



ভ্রান্ত দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব বাংলা সফরে এসে পাকিস্তানের সংবিধান রচনা ও উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা দিলে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজ তথা বাঙালি জাতি গোষ্ঠী প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। শেখ মুজিবুর রহমানসহ ছাত্র নেতারা এ ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেন। সদ্য প্রতিষ্ঠিত তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক ছাত্র, রাজনৈতিক নেতারা এই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েকজন ছাত্র নেতাকে জরিমানা ও বহিষ্কার করে। এ অন্যায় আদেশ পালনে তিনি অস্বীকৃতি জানান।

পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনামলে এক যুগেরও অধিককাল তিনি কারান্তরে অন্তরীণ ছিলেন; ন্যূনতম পক্ষে দুইবার ফাঁসির কাষ্ঠে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন; ১৮ বার কারাবরণ করেছেন। সারাজীবন অসংখ্য মামলার মোকাবেলা করেছেন। কিন্তু কোনো দিন বাংলার মানুষের স্বাধিকার ও অধিকারের প্রশ্নে থমকে দাঁড়ায়নি।

পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনে স্বাধীনতার অভ্যুদ্বয়ে তিনি বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে গেছেন স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যে। '৫২, '৫৪, '৬২, '৬৬ আর '৬৯-এর রক্তঝরা মহান গণঅভ্যুত্থানের পথ পেরিয়ে '৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় সবই বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামী ইতিহাসের একেকটি মাইলফলক। আর এই সংগ্রামের প্রেরণার উৎস ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সাহসী, দৃঢ়চেতা, আপসহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে উঠেছিল একটি নিপীড়িত পরাধীন জাতি। দেশের মানুষকে স্বাধীনতা ও মুক্তির অদম্য সপৃহায় তিনি ঐক্যের দুর্গ গড়ে তুলেছিলেন। যার বজ্রকণ্ঠ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালি জনগোষ্ঠীকে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত মরণপণ সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল। তিনি আমাদের মাতৃভূমি জননী জন্মভূমিকে গরবিণী করেছেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকহানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গণহত্যা চালানোর অব্যবহিত পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-আদিবাসী-উপজাতি তথা ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-শ্রেণী নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয় ছিনিয়ে আনে।



স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয় লাভের পর পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি লাভ করে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ ভূমিতে ফিরে এসে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায় আত্মনিয়োগ করেন। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে মাত্র সাড়ে তিন বছর বেঁচে ছিলেন। মানবতার শত্রু, ঘৃণ্য ঘাতকের দল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং এদেশের দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফুটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের একমাত্র চাওয়া-পাওয়া। যার জন্য জীবনে তিনি জেল-জুলুম-হুলিয়া কোনো কিছুই পরোয়া করেননি। শত যন্ত্রণা, দুঃখ, কষ্ট-বেদনাকে তিনি সহ্য করেছেন। ফাঁসির মঞ্চও যার কাছে ছিল তুচ্ছ, তিনি হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এক কথায় বলতে গেলে বাংলা, বাঙালি, শেখ মুজিব একবৃন্তে তিনটি চেতনার ফুল। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের মাঝে বঙ্গবন্ধু চিরদিন অমস্নান থাকবেন। বাংলার শোষিত-বঞ্চিত-নির্যাতিত-মেহনতি জনতার হৃদয়ে চিরভাস্বর থাকবেন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:০৮

জেনারেশন সুপারস্টার বলেছেন: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী।তিনি বেঁচে থাকলে বিদেশীরা আজ এত মাতব্বরি করার সাহস পেত না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.