![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় চলছে। হঠাৎ করে কেন এমন কথা বলা হচ্ছে তা নিয়ে খোদ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই ব্যাপক সমালোচনা, ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তবে পদ-পদবী হারানোর ভয়ে কেউ এ ব্যাপারে মুখ খুলছেন না। বিএনপি হাইকমান্ডের একের পর এক এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে দল ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।
উল্লেখ্য, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান মঙ্গলবার লন্ডনের এক হোটেলে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে বক্তব্য রাখেন। একই দিনে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা তারেক রহমানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে বক্তব্য রাখেন। বৃহস্পতিবার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা দলের আলোচনা সভায়ও সাদেক হোসেন খোকা জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে বক্তব্য রাখেন। একই অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও বলেন, জিয়াউর রহমানই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক।
জানা যায়, বিএনপির একাংশ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে ছিল। কিন্তু সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মতামত না নিয়ে জোটের শরিক দল জামায়াতের কথায় দলীয় হাইকমান্ড নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ তাদের সমমনা দলগুলোকে নিয়ে সরকার গঠন করায় বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা নেমে আসে। এ কারণে এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনও করতে পারছে না দলটি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রথত দুই দফায় ভাল ফলাফল করে সারাদেশের সবস্তরের নেতাকর্মীদের হতাশা কাটানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল বিএনপির। কিন্তু প্রথম ২ দফায় আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক ভাল ফল করেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ করে সরকারী দলকে এ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারে উৎসাহিত করে বিএনপি। এর ফলে তৃতীয় ও চতুর্থ দফা উপজেলা নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়ে বিএনপি। এ কারণে দলের সর্বস্তরে আবারও হতাশা নেমে আসে। আর সর্বশেষ তারেক রহমান ও সাদেক হোসেন খোকা জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে বক্তব্য দিয়ে দলের ভেতরে বাইরে ব্যাপক সমালোচনার সুযোগ করে দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেন, হঠাৎ করে কেন তারেক রহমান ও সাদেক হোসেন খোকা জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করছেন তা বুঝতে পারছি না। জিয়াউর রহমান নিজে তাঁর জীবদ্দশায় যেখানে নিজেকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করেননি সেখানে দলের নেতারা এখন কেন এ দাবি তুলছেন তা নিয়ে দলের মধ্যেই অনেকে বিভ্রান্ত। দলের সর্বস্তরে এনিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে প্রকাশ্যে মুখ খুলে কেউ কিছু বলছে না। দল এ বিষয়ে সর্বশেষ কি অবস্থান নেয় তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় দেশের সুশীল সমাজও তারেক রহমান ও সাদেক হোসেন খোকার এ বক্তব্যকে ভাল চোখে দেখছে না। কেউ কেউ এমনও বলছে যে স্বাধীনতার মাসে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দিয়ে এমন বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে দলকে আবারও বেকায়দায় ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মহান স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন মঙ্গলবার লন্ডনে একটি হোটেলে বিএনপি আয়োজিত অনুষ্ঠানে তারেক রহমান দাবি করেন জিয়াউর রহমানই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তারেক আলোচনার শুরুতেই সভার ব্যাক ড্রপ দেখিয়ে বলেন, ‘এইখানে লাল অক্ষরে লেখা আছে, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।’ দলের নেতাকর্মীদের কাছে জিয়াকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বলার পেছনে যুক্তি তুলে ধরেন তারেক রহমান বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এটাই সত্যি, এটাই ইতিহাস। উনি ১৯৭১ সালে মার্চ মাসে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, এই যে বাংলাদেশ স্বাধীন আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।’ ‘এই ঘোষণা দেয়া উচিত ছিল তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের। কিন্তু তাঁরা তা দিতে ব্যর্থ হন, এর পাশাপাশি দেশের সাত কোটি মানুষের মনের ভাষা বুঝতেও তাঁরা ব্যর্থ হয়েছিলেন।’ তখন জিয়া নিজেই স্বাধীনতার ঘোষণা তৈরি করে তা পড়েন। ‘কারও পাঠানো ঘোষণা নয়, বরং নিজের হাতে ঘোষণা ড্রাফট করলেন এবং সেটা জাতির সামনে পড়লেন, বিশ্বের সামনে পড়লেন, যে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। শহীদ জিয়া তাঁর ভরাট কণ্ঠের মাধ্যমে, ইথারের মাধ্যমে সবাইকে জানালেন।’
তারেক রহমান বলেন, ‘শেখ মুজিব যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, এর পক্ষে অনেক প্রমাণ রয়েছে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, এ রকম প্রমাণ কোন দলিলে নেই। আওয়ামী লীগ ছয় দফার জন্য আন্দোলন করেছে, পাকিস্তানের ক্ষমতা ভাগাভাগির জন্য আন্দোলন করেছে তার প্রমাণ আছে, কিন্তু স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করেনি। ইতিহাসে তার কোন প্রমাণ নেই।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত আলোচনাসভায় খোকা বলেন, জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনিই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। জিয়াউর রহমান একদিনের জন্য হলেও দেশের প্রথম ঘোষিত রাষ্ট্রপতি। একাত্তরে ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ছিল না দাবি করে খোকা বলেন, সেটা ভাল বক্তব্য ছিল। কিন্তু দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল না। শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ভাষণ শেষ করেছেন ‘জয় পাকিস্তান’ বলে। অতএব এতেই স্পষ্ট হয় তিনি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে যে ৭ কোটি মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়েছে সে ৭ কোটি মানুষ পাকিস্তানবাসীকে নিয়েই বলা হয়েছিল বলে দাবি করেন খোকা। এছাড়া জিয়াউর রহমানই যে স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন সেটা মুজিব নগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদও তাঁর বইতে লিখে গেছেন বলে দাবি করেন খোকা।
সাদেক হোসেন খোকা দাবি করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা নয়, শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব। তিনি পুরো পাকিস্তানের জন্য আন্দোলন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে খোকা বলেন, জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। বেশি কথা বলবেন না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে এমন সব কথা বেরিয়ে আসবে, আপনাদের আর মুখ থাকবে না।
হঠাৎ করে তারেক রহমান ও সাদেক হোসেন খোকা কেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করছেন এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এ ব্যাপারে আমার কোন বক্তব্য নেই।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৪৯
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: আপনার মত করিৎকর্মা থাকতে বিএনপির ফাঁটল ধরায় কে?