![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণে সবকিছু। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া বিএনপির সামনে কোনো পথ নেই। সরকার এখন বস্তুতই গত নির্বাচনের আগের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। সাম্প্রতিক এক জরিপে এমনটা দেখা গেছে বলে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট জানিয়েছে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত প্রভাবশালী এ সাময়িকীর চলতি সংখ্যায় বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে আরো নানা মন্তব্য করা হয়েছে।
দ্য ইকোনমিস্টের মতে, খালেদা জিয়ার বিগত সরকারটি ছিল স্বজনপ্রীতি ও অযোগ্যতা দোষে দুষ্ট। ২০০৬ সালে সে সরকার যখন বিদায় নেয়, তখনকার তুলনায় দেশের অর্থনীতির আকার এখন দ্বিগুণ। শেখ হাসিনার সরকারের গ্রহণযোগ্যতা এখানেই। ২০০৯ সালে তার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দেশে দারিদ্র্য দ্রুত কমেছে।
খালেদা জিয়া বলছেন, তার ছেলে ফিরে আসবে; কিন্তু তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন নবীন বিএনপিকে দেশের ভেতর বিভক্ত ও বিদেশে বন্ধুহীন করবে। জঙ্গিবাদের প্রতি সহনশীল মনোভাব দেখানো বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতেই বিদেশি সরকারগুলো উৎসাহী বলে ইকোনমিস্ট মন্তব্য করেছে।
মর্যাদাশীল এ সাপ্তাহিকটি মন্তব্য করেছে, বিএনপি কীভাবে ময়দানে নামবে, তা বুঝতে আরো সময় লাগবে। দলটির নেতারা একসময় সরকারি নিরাপত্তা পেতেন। এখন ‘গু-াবেষ্টিত’ হয়ে চলাফেরা করেন বলে ইকোনমিস্ট জানায়। তারা মনে করছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার সর্বশেষ রায়ে বোঝা যাচ্ছে, রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জামায়াতের আর কার্যকারিতা নেই।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারক নিয়োগ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ হওয়া, বিচারপতিদের আচরণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া এবং পার্লামেন্টে একটি অনুগত বিরোধী দলের উপস্থিতির কথা উল্লেখপূর্বক ইকোনমিস্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সামনে এখন কোনো চাপ নেই। সবকিছুই তার অনুকূলে।
অন্যদিকে দ্য ইকোনমিস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অমীমাংসিত বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও উভয় দেশের মধ্যে একটি অনন্য ‘সিমেন্টের বন্ধন’ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। মেঘালয়ের চুনাপাথর থেকে সিলেটের লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট তৈরিকে কেন্দ্র করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পত্রিকাটি। সীমান্তের ওপার থেকে একটি কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে লাফার্জ কারখানায় চুনাপাথর আসছে। আর এই কনভেয়ার বেল্টটিই দুই দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেছে ইকোনমিস্ট।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উষ্ণ সম্পর্ক বিরাজ করলেও সত্যিই দুই দেশের সম্পর্ক কতদূর এগিয়েছে সে বিষয়েও একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ইকোনমিস্টের চলতি সংখ্যায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে প্রতিবেদক টম ফেলিক্স জোয়েনক মেঘালয় সীমান্তসংলগ্ন বাংলাদেশের ছাতকে অবস্থিত লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানা ভ্রমণের ছায়াকে আলেখ্য করে বিশ্লেষণ করেছেন দুই দেশের সম্পর্কের স্বরূপ।
প্রতিবেদনের প্রথমেই ব্যাপক উন্নয়নশীল বাংলাদেশের একটি চিত্র তুলে ধরে উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের স্বল্পতার কথা তুলে ধরা হয়। এ প্রসঙ্গে উঠে আসে সিমেন্ট তৈরির প্রয়োজনীয় কাঁচামাল চুনাপাথরের স্বল্পতার বিষয়টি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে দ্রুত নগরায়নের কারণে বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে বেড়েছে সিমেন্টের চাহিদা। টান পড়েছে সিমেন্টের কাঁচামালে; যার চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশকে নির্ভর করতে হয় প্রতিবেশী ভারতসহ অন্যান্য দেশের ওপর। সেই চাহিদা মেটাতেই নব্বই দশকের মাঝামাঝি ছাতকে লাফার্জের কারখানায় চুনাপাথর সরবরাহের জন্য ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তে একটি আন্তঃসীমান্ত কনভেয়ার বেল্ট নির্মিত হয়। দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত ১৭ কিলোমিটার (১১ মাইল) লম্বা এই কনভেয়ার বেল্ট থেকে ভারত থেকে চুনাপাথর আসে। এটিই বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় আন্তঃসীমান্ত কনভেয়ার বেল্ট বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ঢাকা থেকে ছাতক যাওয়ার পথে প্রতিবেদকের চোখে ধরা পড়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রভাবে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের চিত্র। সিলেট যাওয়ার পথে মহাসড়কের দুইধারে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিলেট অঞ্চলের বাসিন্দাদের নির্মিত সুন্দর সুন্দর ভবন প্রতিবেদকের দৃষ্টি কেড়ে নেয়।
প্রতিবেদনে প্রতিবেদকের জবানিতে বলা হয়, ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার পথে সবুজ ধানক্ষেতের মাঝে মাঝে উঁকি দেয় আলিশান ভবন। স্থানীয়ভাবে ‘লন্ডনি’ নামে পরিচিত যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা এসব ভবনের মালিক। সিলেট শহরের পশ্চিমদিকে একটি ছোট রাস্তা ধরে এগুলে মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড় নজরে আসে। এই অঞ্চলের বার্ষিক মৌসুমী বৃষ্টিপাতের অধিকাংশই হজম করে এসব পাহাড়। পাশেই অবস্থিত সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের জন্য খ্যাত ভারতের চেরাপুঞ্জি। ওই পবর্তমালা বিধৌত বেশির ভাগ পানিই সুরমা নদী ধরে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পৌঁছে বঙ্গোপসাগরে।
এই নদীর উত্তর পাশে ছাতকে স্থাপিত কনভেয়ার বেল্টের বাংলাদেশ অংশ। যার একটি প্রান্ত শেষ হয়েছে ফরাসি-স্প্যানিশ সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লাফার্জ সুরমার মালিকানাধীন বিশাল একটি সিমেন্ট কারখানায়। কারখানা থেকে বের হওয়া সিমেন্টের ব্যাগগুলো বাঁকানো একটি ধাতব স্লাইড ঘুরে জমা হয় নদীতে রাখা বার্জে। সেসব সিমেন্ট রওনা হয় ঢাকার উদ্দেশে।
নদীর দক্ষিণ পাশে এক চায়ের দোকানদার বালক জানাল, এখানে ব্যবসা ভালোই। তবে কিছুদিন আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না। বছরখানেক কনভেয়ার বেল্ট দিয়ে চুনাপাথর আসা বন্ধ ছিল। পরিবেশের ক্ষতির কারণ দেখিয়ে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট এই খনিজ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। অবশ্য পরবর্তীতে তা আর বজায় থাকেনি।
প্রতিবেদকের চোখে আরও ধরা পড়ে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার উন্নয়নের চাহিদার কথা। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় চায়ের দোকানের বিক্রেতা জানালেন, এখানে (সুরমা নদী) একটি ব্রিজ হলে ভালো হতো। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আমলে এখানে একটি সেতুর নির্মাণ শুরু হয়েছিল; কিন্তু উত্তরসূরি শেখ হাসিনা এর কাজ শেষ করেননি। ফেরি পার হতে খরচ হয় ২৫ টাকা। ফেরিঘাটে দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর মাত্র ৫ মিনিটেই আমরা অপর পাড়ে পৌঁছলাম। এর ফাঁকেই আবার লাফার্জ সুরমার প্রসঙ্গে ফিরে আসেন প্রতিবেদক। সেখানে উঠে আসে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনার কথা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নব্বই দশকের মাঝামাঝি ১২ লাখ টন সিমেন্ট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্লান্টটি বানাতে খরচ হয় ২৮ কোটি ডলার। এটাই ছিল তখন বাংলাদেশে সর্বোচ্চ একক সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ। লাফার্জ সুরমা জানিয়েছে, এই কারখানার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিবছর ৬ কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা বেচে যাচ্ছে। পাশাপাশি তারা সরকারকে বছরে ১ কোটি ডলার কর দিচ্ছে। এছাড়া তৈরি হয়েছে ১ হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান। বাংলাদেশে প্রতিবছর দেড় কোটি টন সিমেন্ট চাহিদার দশ ভাগের এক ভাগ মেটায় এই কারখানাটি।
লাফার্জের ওই কারখানার চিত্র তুলে ধরার প্রসঙ্গেই প্রতিবেদক ঢাকা ও দিল্লির সাম্প্রতিক কূটনৈতিক তৎপরতার বিষয়টিও তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, যদিও সীমান্ত হত্যা বন্ধ, পানি ভাগাভাগি চুক্তি এবং সিটমহল বিনিময়সহ অনেক অমীমাংসিত ইস্যুতেই ইদানীং নিজেদের মধ্যে আশ্বাসবাণী বিনিময় করছেন দুই দেশের কূটনীতিকরা; কিন্তু অগ্রগতি খুব একটা হয়নি।
এছাড়া ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ৪ হাজার ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত থাকলেও অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনের লড়াইয়ে বাংলাদেশ যে আঞ্চলিক সহযোগিতা খুব কমই পেয়েছে এ বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রতিবেদকের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মূল ভূমিকা পালন করে দেশের প্রবাসী ও পোশাক শ্রমিকরা। বাংলাদেশের প্রবাসীদের বেশির ভাগই মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক। অপরদিকে পোশাক শ্রমিকদের বানানো পোশাকের মূল গন্তব্যস্থল ইউরোপ এবং আমেরিকা মহাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংগ্রামে প্রতিবেশী দুই দেশের সংশ্লিষ্টতা তাই খুব একটা নেই বলেও উল্লেখ করেন প্রতিবেদক।
সবশেষে এই ১৭ কিলোমিটার লম্বা কনভেয়ার বেল্ট এবং দেশের পশ্চিম সীমান্তে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থাপিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এই দুটি স্থাপনাই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নির্মিত একমাত্র স্থাপনা। এই দুটি স্থাপনা দুই দেশের মধ্যে সেতু বন্ধনের সৃষ্টি করেছে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:২৭
নাহিদ হাকিম বলেছেন: আপনি দারুণ লিখেছেন।