![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সংঘাতের চিরচেনা পথেই হাঁটছে বিএনপি। অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির নেত্রী খালেদা জিয়া। এর বিপরীতে আরো কঠোর হচ্ছে সরকারও। তৎপর হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চলবে অভিযান। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বিধিনিষেধ বাড়বে। দেশের সাধারণ মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সরকারের একাধিক শীর্ষ ব্যক্তি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে সরকার। আপাতত বিএনপির কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, বিএনপির কর্মসূচির ওপর নির্ভর করছে সরকারের অবস্থান। সহিংসতার পথ ছেড়ে বিএনপি যদি সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসে, সরকারও দমনপীড়ন নীতি পরিহার করে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে। আর বিএনপি যদি জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি বহাল রাখে- এ ক্ষেত্রে জনস্বার্থে সরকার আরো কঠোর হবে। ইতোমধ্যে বিএনপির লাগাতার অবরোধে চলমান সহিংসতার লাগাম টেনে ধরতে গত
রোববার মধ্যরাত থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর চিরুনি অভিযান (কম্বিং অপারেশন)। ঢাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ, কানসাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, শেরপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, রাজশাহী, বরিশাল ও চট্টগ্রামসহ দেশের যে ২৭টি জেলায় কয়েক দিনে সবচেয়ে বেশি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে ওই জেলাগুলোতে অভিযান পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ওইসব এলাকায় অভিযানের সময় রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও ভাড়াটে পিকেটাররা যাতে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় পালাতে না পারে এ জন্য ২৪ ঘণ্টা সড়ক, নৌ ও রেলপথে বিশেষ পাহারা বসানো হবে। খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ অভিযানের তদারকি করবে। এরই মধ্যে সন্দেহভাজন নাশকতাকারী, তাদের অর্থের জোগানদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের তালিকা যৌথ বাহিনীর হাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, অবরোধের নামে নাশকতা ও মানুষ হত্যাকারীদের ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা এসব মামলার আসামি, তাদের গ্রেপ্তারেই এ অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতি মোকাবেলায় রয়েছে। পরিবহন সেক্টর থেকে শুরু করে সব জায়গায় মানুষের জানমাল নিরাপদ রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করছে।
এদিকে, খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশের গাড়ি ও জলকামান সরিয়ে নেয়া হয়েছে। গত রোববার রাত আড়াইটার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশের দুটি ভ্যান ও জলকামান সরিয়ে নেয়া হয়। সে সঙ্গে কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদেরও প্রত্যাহার করা হয়। গতকাল সোমবার দেখা গেছে, সেখানে অল্প কয়েকজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য সময়ে তার কার্যালয়ে যে ধরনের নিরাপত্তা দেয়া হয়, এখনো তেমন নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, দেশের মানুষ আশা করেছিল খালেদা জিয়া অবরোধ প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসবেন। কিন্তু তিনি জাতিকে হতাশ করেছেন। তিনি অবরোধের নামে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যেতে চান। এ পরিস্থিতিতে আরো কঠোর হওয়া ছাড়া সরকারের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। বিএনপি-জামায়াত মানুষ মারবে আর সরকার চেয়ে চেয়ে দেখবে, তা হবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘অবরুদ্ধ নাটক’ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, অবরোধের নাটক বন্ধ করুন, আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। আপনার এ অবেরোধ প্রত্যাহার করে নিন। আপনি দুইবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দেশের মানুষের প্রতি যদি সামান্যতম দায়িত্ববোধ থাকে, তাহলে মানুষ পুড়িয়ে মারবেন না। তিনি বলেন, আজ সময় এসেছে খালেদা জিয়াসহ ২০ দলের এ সন্ত্রাস নৈরাজ্য রুখে দেয়ার। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং মানুষ পুড়িয়ে মারার জন্য খালেদা জিয়াসহ শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।
খালেদা জিয়া জনগণের ওপর অযৌক্তিক অবরোধ চাপিয়ে দিয়ে সারা দেশের মানুষকে অবরুদ্ধ করে রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, অবরোধ, হরতাল ডেকে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে, গাড়ি পুড়িয়ে, রেললাইন উপড়ে ফেলে মানুষ হত্যা করে খালেদা জিয়া এখন জনগণের আতঙ্ক এবং শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা সারা দেশজুড়ে জঘন্য ডাকাতের চেয়েও হিংস্র হায়েনা রূপে আবির্ভূত হয়েছে। এই সন্ত্রাসীদেরও তাড়াতে হবে।
আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু বলেন, এটা কোনো অবরোধ কর্মসূচি নয়। স্রেফ কিলিং মিশন। আপনারা (সাংবাদিকরা) দয়া করে বার্ন ইউনিটগুলোতে যান এবং সেখানে আগুনে পোড়া অসহায় মানুষের আর্তচিৎকার জাতির সামনে তুলে ধরেন। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে রাজনীতির নামে এভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারে না কেউ।
©somewhere in net ltd.