![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশে চার দশক আগে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধার সঙ্গে বন্যা যুক্ত হয়ে ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। অবস্থা এমনই সঙ্গিন হয়ে উঠেছিল যে, তখন আমদানি করা খাদ্য সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল ১০ লাখের বেশি মানুষ ওই দুর্ভিক্ষে মৃত্যুবরণ করেছিল।
তবে এক সময়ের 'ফুড বাস্কেট কেস' এখন খাদ্যঝুড়িতে রূপান্তরিত হয়েছে। এই দেশটিই হয়ে উঠেছে বাদবাকি বিশ্বের কাছে ক্ষুধা হ্রাসের মডেল। জাতিসংঘের এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ চরম ক্ষুধা অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে দেখা যায়, বৈশ্বিক ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ১৯৯০ সালের একশ' কোটি থেকে কমে এখন ৭৯ কোটি ৫০ লাখে দাঁড়িয়েছে। এতে দেখা যায়, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বকে ক্ষুধামুক্ত করার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এক উজ্জ্বল স্পটে পরিণত হয়েছে। গত ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মতো আরও দুটি দেশের ক্ষুধা হ্রাসের ক্ষেত্রে সাফল্যের কাহিনী রয়েছে। দেশ দুটি হলো ইথিওপিয়া ও নেপাল। নিউইয়র্কে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক গ্গ্নেন বলেন, এই তিনটি দেশের সাফল্য বিশ্ব থেকে ক্ষুধা নির্মূলে আশা জাগায়। তার মতে, কিছু বিষয়কে একত্র করতে পারলে যে এ ক্ষেত্রে সাফল্য আসে, তা-ই প্রতিফলিত হয়েছে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে_ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উন্নত কৃষি উৎপাদনশীলতা, কৃষকদের বাজারে প্রবেশের সুযোগকে ফোকাস করা ও অতি দরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ১৯৮০'র দশক থেকে চাল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিপ্লব দেশটিকে চাল আমদানিকারক থেকে আত্মনির্ভরশীল দেশে পরিণত করে। কৃষিতে যান্ত্রিক চাষ, সেচ, নারীশিক্ষার পাশাপাশি বিশেষভাবে অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের ওপর জোর দেওয়ার যোগফল হিসেবে চরম ক্ষুধার দেশ বলে পরিচিতি বাংলাদেশের পুরনো ইমেজ মুছে যায়। ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের আখতার আহমেদ মনে করেন, দারিদ্র্য ও ক্ষুধা হ্রাসের যে তিনটি চলক রয়েছে, তার সবই বাংলাদেশে সাধিত হচ্ছে। তার মতে, নিয়মিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি; 'মানব উন্নয়ন', যেটাকে তিনি দেখান শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি ফোকাস করে; 'নিরাপত্তা বলয়' যার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় যেসব মানুষ অংশ নিতে পারে না সেই সমাজের নিম্নতম অবস্থানে থাকা মানুষদের কাছে নগদ অর্থ ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়া_ এসব একত্রে ক্রিয়া করে দারিদ্র্য ও ক্ষুধার হারকে হ্রাস করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে মডেল হতে পারে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় যেসব দেশ এ ক্ষেত্রে ভালো করতে পারছে না তাদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। প্রতিবেশী ভারত উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সত্ত্বেও ক্ষুধা হ্রাসের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। জাতিসংঘ রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে ক্ষুধা-তালিকায় ভারত এখন এক নম্বরে রয়েছে। বিশ্বের মোট কম খাওয়া ৭৯ কোটি ৫০ লাখ মানুষের মধ্যে ১৯ কোটি ৫০ লাখ অর্থাৎ এক-চতুর্থাংশের মতো মানুষের বাস ভারতে। আরেক বড় প্রতিবেশী দেশ চীন ১৯৯০ সাল থেকে বিশ্বে দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষুধা দূর করার কৃতিত্বের অধিকারী। কলাম্বিয়ার ড. ডেনিনের মতে, গ্রামীণ উন্নয়ন আটকে স্থবির হয়ে থাকা থেকে সাংস্কৃতিক 'জটিল ইস্যু'র সঙ্গে যুক্ত। পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও সেখানে ক্ষুধা ও অপুষ্টির শিকার হয় মানুষ। অন্যদিকে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে গভীর সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। অর্থনীতিতে সাধারণভাবেই নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গার্মেন্টশিল্পে নারী শ্রমিকদের ব্যাপক উপস্থিতি এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়। এনজিওর ভূমিকার কথাও বলা যায়। বাংলাদেশে ক্ষুধা হ্রাসের ক্ষেত্রে এই উভয় ফ্যাক্টরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ, যেটা এখন বৈশ্বিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে, সেটা ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে। 'শিক্ষার জন্য খাদ্য' কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ সামাজিক সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এভাবে ক্ষুধা হ্রাসের কর্মসূচি এখন সারা দুনিয়ায় বিস্তৃত হয়েছে। জাতিসংঘের রিপোর্টে দেখা যায়, এ ধরনের নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টির কর্মসূচি ক্ষুধা দূর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য অবশ্য ব্রাজিল, মেক্সিকো, হন্ডুরাস ও লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশকেও কৃতিত্ব দিতে হয়।
ড. আখতার আহমেদ ২০০৭-০৮ সালে বৈশ্বিক বড় ধরনের খাদ্য সংকটের সময় বাংলাদেশ কীভাবে তা মোকাবেলা করেছিল তা উল্লেখ করেন। ভারত হঠাৎ খাদ্য রফতানি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার পর বাংলাদেশ বেশ অসুবিধায় পড়ে যায়। এরপর খাদ্যে যাতে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে তার জন্য খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন ধ্যান-ধারণা বাস্তবায়ন প্রচেষ্টা অনেক বৃদ্ধি করা হয়। এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে কাজ করা ড. আহমেদের মতে, বাংলাদেশের সরকারগুলো যেভাবে এ ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে তা অন্যত্র দেখা যায়নি। তারা সংস্কার ও সামাজিক অগ্রগতি অর্জনের প্রচেষ্টা চালিয়েছে।
এর অর্থ এই নয় যে, বাংলাদেশ ক্ষুধা সমস্যা সমাধান করে ফেলেছে। জাতিসংঘ রিপোর্টেই উল্লেখ করা হয়েছে, এ দেশে এখনও দুই কোটি ৭০ লাখ অপুষ্টিতে ভোগা লোক রয়েছে।
ডেনিন মনে করেন, বিশ্ব এসব চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে পারলেও একবিংশ শতাব্দীতে অনেক বেশি জটিল সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে অপুষ্টি বা পুষ্টিজনিত সমস্যা। একই দেশে কম পুষ্টি ও অতিরিক্ত পুষ্টি সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক গরিব দেশ আকস্মিকভাবে আবিষ্কার করতে পারে যে, সেখানে কম পুষ্টি ও অতিরিক্ত পুষ্টি সমস্যা কীভাবে বোঝা হয়ে উঠেছে। তারা এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় প্রস্তুত নয়। তবে ক্ষুধা ও অপুষ্টি ইস্যুতে বিশ্ব বেশি করে মনোযোগ দিচ্ছে দেখে ডেনিন আশাবাদী।
ষ সাংবাদিক; দি ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর থেকে
সংক্ষেপিত ভাষান্তর সুভাষ সাহা
©somewhere in net ltd.