![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কারও অন্যায়ের দায় নেবেন না। কঠোরভাবে লাগাম টানুন দলীয় বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে। বহিরাগত, নবাগত, হঠকারীদের উৎসব চলছে আওয়ামী লীগে। মাত্র কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি আপনার সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। বিতর্কিত করছেন। গুটিকয়েক ব্যক্তির অপকর্মের দায় একটি সরকার নিতে পারে না। দুর্নাম বহন করতে পারে না একটি ঐতিহ্যবাহী দল। একদিকে বিশাল উন্নয়ন সাফল্য, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অন্যদিকে হাতে গোনা কিছু মানুষের বাড়াবাড়ি। আওয়ামী লীগ গণমানুষের একটি প্রতিষ্ঠান। আজ এ প্রতিষ্ঠানে ঘুণ পোকারা আক্রমণ করেছে। এ ঘুণ পোকাদের ধ্বংস করতে ব্যবস্থা নিন। বিতর্কিত মন্ত্রী-এমপিদের বাদ দিন। বের করে দিন মন্ত্রিসভা থেকে। কারাগারে নিন স্বঘোষিত গডফাদার, সন্ত্রাসবাজ, চাঁদাবাজ এমপিদের। কারণ তারা আইনের শাসন ব্যাহত করছেন। আপনার দলকেও বিতর্কিত করছেন। দলীয় নেতা-কর্মীরাও ওদের রোষানল থেকে মুক্ত নন। ওদের চিহ্নিত করুন। বিশাল মন্ত্রিসভায় ওদের সংখ্যা বেশি নয়। মাত্র কয়েকজন। এই গুটিকয়েককে রাখতে হবে কেন? একই কথা বিতর্কিত এমপিদের নিয়ে।
দেশজুড়ে ২০-২২ জন এমপি এখন অপকর্মে লিপ্ত। তাদের মতো আছেন হয়তো আরও ৫০ জন নেতা। আর ওদের লাঠিয়ালদের সংখ্যা কয়েক হাজার। এই মুষ্টিমেয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কাছে আওয়ামী লীগের ইমেজ জিম্মি থাকতে পারে না। উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে না। তাই দল ও সরকারে বিতর্কিতদের লাগাম টানুন। কঠোর ব্যবস্থা নিন উন্নয়নের অর্জন ম্লানকারীদের বিরুদ্ধে। চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, সন্ত্রাসবাজরা কোনো দলের নেতা-কর্মী নন। তাদের পরিচয় তারা সন্ত্রাসী। দলীয় পরিচয়ের আড়ালে তারা অপকর্ম করছেন। নিজেদের ফায়দা লুটছেন। সরকারকে বিব্রত করছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা দেখতে চায়। সরকারের সাফল্যেরও শেষ নেই। পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। ফোর লেনের কাজ দ্রুত শেষ হচ্ছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণ হচ্ছে। ব্রিটিশরা শতবর্ষ আগে টেমস নদীতে টানেল করেছে। বাংলাদেশে এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন আপনি। শুধু কর্ণফুলীর টানেল নয়, ঢাকায় মেট্রোরেলের কাজ এগিয়ে চলছে। শুরু হয়েছে উড়ালসড়কের কাজ। ঢাকা, চট্টগ্রামে একের পর এক ফ্লাইওভার, দৃষ্টিনন্দন হাতির ঝিল, বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন, আইটি ও প্রযুক্তি খাতের বিশাল উন্নয়ন সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে। সড়ক অবকাঠামোতে পরিবর্তন চোখ ধাঁধানো। প্রবৃদ্ধির গতি সর্বমহলে প্রশংসিত। সরকারি চাকরিজীবীদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে অতীতের সব সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। জনকল্যাণকর কাজে সরকার পদে পদে প্রশংসিত। সংবাদপত্র পড়ে সাধারণ মানুষের পাশে আপনি দাঁড়াচ্ছেন। এমনকি আমাদের পত্রিকা পড়েও আপনি অনেক দুস্থ-অসহায় শিল্লীর পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করছেন। আপনার উদারতা দেশকে নতুন পথ দেখাচ্ছে। সেই মুহূর্তে কারা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে? তাদের চিহ্নিত করুন। ব্যবস্থা নিন। কারণ দল ও সরকার আপনার কঠোর পরিশ্রমে আজকের এই অবস্থানে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তাহাজ্জতের নামাজ পড়ে আপনি দিনের কাজ শুরু করেন। রাত-দিন পরিশ্রম করেন। দেশকে বদলাতে কষ্ট করছেন। আপনার বোন ও আপনাদের সন্তানরা দেশের সাতেও নেই পাঁচেও নেই। তারা এখনো বিদেশে সাধারণ মানুষের মতো জীবন অতিবাহিত করছেন। আপনার এবং আপনার পরিবারের এই আত্দত্যাগ দেশবাসী অবহিত। আপনার পরিবারের এই আত্দত্যাগ মুষ্টিমেয় কিছু লোকের কারণে ম্লান হতে পারে না। কারণ আপনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষের একমাত্র ভরসা। আধুনিক বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার ঠিকানা। এই ভরসাটুকু ধরে রাখতেই প্রয়োজন আইনের শাসনের বাস্তবায়ন। উন্নয়ন এগিয়ে চলছে। এগিয়ে যাবে। এই উন্নয়নকে থামানো যাবে না। এখন আইনের শাসনে মন দিন। দক্ষ মানুষদের মূল্যায়ন করুন। চাটুকার, তোষামোদকারীদের বর্জন করুন। চাটুকাররা সব সময় সর্বনাশ করে। স্পষ্ট, সত্য কথা বলার মানুষরাই আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী। আপনি কঠোর হোন। চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দিয়েছেন বাংলাদেশ শব্দটি। আপনি দিচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক বাংলাদেশ। এই দেশ বিশ্বের বুকে এখন নতুন মর্যাদায়। ষড়যন্ত্র অতীতেও ছিল, বর্তমানেও আছে, ভবিষ্যতেও হবে। কিন্তু আপনি সব ষড়যন্ত্রের বাঁধ ভেঙেছেন। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে একক চেষ্টায় আজ বাংলাদেশকে নতুন মর্যাদায় এনেছেন। এই মর্যাদা ম্লান করতে দেওয়া যায় না। সুবিধাভোগীরা কখনো নিষ্ঠাবান হয় না। দুঃসময়ে আপনার পাশে যারা থাকেন সুসময়ে তারা হারিয়ে যান।
সুসময়ের পাখিরা একসময় উড়ে যায়। '৯৬ সালের পর রাজধানীর অনেক এলাকার ফুটপাথ দখল করে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নামে অফিস বানানো হয়েছিল। মগবাজার মোড়ের কথা এখনো মনে আছে। ২০০১ সালের পর সেই সাইনবোর্ডগুলো হঠাৎ বদলে গিয়েছিল। যুবলীগের স্থানে যুবদল, শ্রমিক লীগের স্থলে শ্রমিক দল হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ বদলে গিয়েছিল সব কিছু। সুবিধাভোগীরা দ্রুত বদলাতে পারেন। সুযোগসন্ধানীরা কেটে পড়তে পারেন। ২০০১ সালে হঠাৎ দখলবাজরা নতুন সাইনবোর্ড নিয়েছিলেন। ২০১০ সালে তাদের অনেকে আবার ফিরে এসেছেন। এখনো আসছেন অনেকে। সঙ্গে নিয়ে আসছেন বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতা-কর্মীকে। তারাই এখন সরকারি জমি দখল করে অফিস বানানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। হানাহানি-সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছেন। দলের প্রতি কারও ভালোলাগা থাকলে জমি কিনে অফিস করুক। সরকারি জমি দখল করে অফিস বানাতে হবে কেন? দখল প্রতিযোগিতার পরিণতি ভালো হয় না। এই অতি-উৎসাহীদের লাগাম টানুন। মানুষের মধ্যে সহনশীলতা উঠে যাচ্ছে। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ উঠে যাচ্ছে। একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। সামাজিক, নৈতিক মূল্যবোধগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আপনার আদর্শ ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা থামাতে হবে। আওয়ামী লীগ চলবে বঙ্গবন্ধু ও আপনার আদর্শে। তাহলে কোনো সমস্যা থাকে না। সংকট থাকে না।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো বিশাল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটি চলবে তার ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনুযায়ী। কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা এ দলটিরই অবদান। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর অতি-উৎসাহীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল দলে। সেই অতি-উৎসাহীদের বলা হতো সিঙ্টিন ডিভিশন। ২০১০ সাল এবং গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর তেমন অতি-উৎসাহীদের আবারও দেখা যাচ্ছে। এই অতি-উৎসাহীরা সর্বনাশ করছেন। দলে, সরকারে ওদের আধিপত্য। কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তাও আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি আওয়ামী লীগার। দলে নবাগত, বহিরাগত, অনাগত আর হাইব্রিডদের যুগ চলছে। ওরা আওয়ামী লীগ সম্পর্কে জানে না, জাতির জনক সম্পর্কে জানে না। জাতির জনকের কন্যাদের আত্দত্যাগ, সততা, নিষ্ঠা সম্পর্কে জানে না। জানে না বলেই শোক দিবসে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি কোনোমতে কোনায় দিয়ে নিজেদের ছবি বিশাল করে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন বাজারজাত করেছে। বাণিজ্য করছে। তাদের বিলবোর্ডে ঢেকে গেছেন ইতিহাসের মহানায়ক। এই অতি-উৎসাহীরা হঠাৎ আওয়ামী লীগার। তা না হলে বিমানবন্দরের ভিতরে বিশাল সাইনবোর্ড বসাবে কেন? বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সব বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের সম্পদ। কারণ বাংলাদেশ শব্দটি বঙ্গবন্ধুর সৃষ্টি। ভারতে মহাত্মা গান্ধী আজ শুধু কংগ্রেসের সম্পদ নন। পাকিস্তানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এখন শুধু মুসলিম লীগ অথবা পিপলস পার্টির সম্পদ নন। বাংলাদেশের ইতিহাসের মহানায়কও তার মর্যাদায় থাকবেন। আওয়ামী লীগ নাম নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অপদস্থ করার অধিকার কারও নেই। কাঙালি ভোজের খাবারের প্যাকেটে বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখতে চাই না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই দিন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ আমাকে বললেন, শেখ হাসিনার সবচেয়ে ভালো গুণ কী জান? আমি বললাম তার অনেক ভালো গুণ আছে, কোনটির কথা বলছেন? তিনি বললেন, প্রশাসনিক দক্ষতার কথা বলছি। তিনি সব ফাইল পড়ে স্বাক্ষর করেন। মতামত দেন। খুব কম প্রধানমন্ত্রী এটা করেন। আসলেই বাস্তব। আপনার সঙ্গে যারা বিভিন্ন সময়ে কাজ করেছেন, তারা বলছেন, আপনি কাজের গতি নিজে মনিটরিং করেন। দেশের একজন সফল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার দূরদর্শিতায় আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায়। এই অবদান আপনার একক। এখানে কারও বাহবা নেওয়ার কিছু নেই। এখন সবাই বাঘ। দুঃসময়ে সবাই বিড়াল। আপনি একাই সব কিছু সামাল দেন। বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে আপনাকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য আমারও হয়েছে। আপনার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই আওয়ামী লীগ আজকের স্বপ্নচূড়ায়। এই চূড়ায় দীর্ঘ অবস্থানের জন্যই প্রয়োজন দখলবাজ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসবাজ, টেন্ডারবাজ, দুর্নীতিবাজ, বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান। গুটিকয়েক মানুষের বিদায়ে সমর্থন পাবেন ১৬ কোটি মানুষের, যারা অতীতে আপনার সঙ্গে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।
নঈম নিজাম, লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
©somewhere in net ltd.