![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর কাল পরিক্রমায় যুব সম্প্রদায়ই এনেছে পরিবর্তনের নতুন ধারা। সময়ের স্রোতধারায় আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সেতুবন্ধ রচনা করেছে যুবসমাজ। তাই বিশিষ্টজনেরা যুবদের মাঝেই খুঁজে পেয়েছেন অমিত সম্ভাবনার পথ। রাষ্ট্রের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে যুব সম্প্রদায়কে সম্ভাবনার ক্ষেত্র হিসেবে কাজে লাগানোর তাগিদ করেছে বোদ্ধামহল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের তথ্য প্রতিবেদনে বাংলাদেশের যুব সম্প্রদায়কে অফুরন্ত সম্ভাবনার উৎস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
১ নভেম্বর জাতীয় যুব দিবস-২০১৫। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে 'জেগেছে যুব, জেগেছে দেশ_ লক্ষ্য ২০৪১-এ উন্নত বাংলাদেশ'। এ প্রসঙ্গে যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় বলেছেন, দেশে প্রায় ৫ কোটি যুবক আছে। অনেকেরই কর্মসংস্থান হয়নি। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার দিয়েছেন জাতীয় অর্থনৈতিক মুক্তির সনদ রূপকল্প-২০২১। রূপকল্পের মাধ্যমে বেকারত্ব ৪০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার করা হয়েছে। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানে ১৭৫টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বেকারদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী ঋণ দেয়া হবে। দেশের ৫৭ জেলার ৪৪২টি উপজেলায় ৯ লাখ ৭২ হাজার ৪০০ জনকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যার মধ্যে ২০১ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১ জেলায় আবাসিক যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাস্তবায়নের কাজ চলছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৮ লাখ সাড়ে ৩৪ হাজার জনের মধ্যে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব উন্নয়নশীল দেশ ১২-২৪ বছর বয়সী যুব সম্প্র্রদায়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং চাকরির প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যয় করছে তারা উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং দ্রুত হারে দারিদ্র্য কমাতে সক্ষম হবে। কাজেই যুব সম্প্রদায়ের পেছনে বিনিয়োগের এখনই যথার্থ সময়। দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশই যুবক। আবার এদের মধ্যে ৮৬ শতাংশই বেকার। অথচ সুসংগঠিত যুবসমাজই গড়তে পারে একটি সমৃদ্ধ দেশ। তাই যুবশক্তিকে কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুবসম্পদে পরিণত করাই আমাদের দায়িত্ব হওয়া উচিত। নেতৃত্বের বিকাশ, মানবীয় গুণাবলি অর্জন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশদূষণ রোধ, লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণ, দুর্নীতি প্রতিরোধ প্রক্রিয়ায় যুবকদের অংশগ্রহণ, দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ, আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্ষমতায়ন প্রভৃতি অর্জনে যুবসমাজকে নিয়ে কাজ করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান। যুবসমাজ উন্নয়নের জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চাবিকাঠি। এমন প্রেক্ষাপটে যে পথে যুবসমাজের দক্ষতা ও চ্যালেঞ্জ পরিচালনা করা হবে তারই প্রভাব পড়বে বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর। প্রভাব পড়বে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনযাপন ও কল্যাণের ওপর। সমাজের শক্তি, উপকারভোগী এবং সামাজিক পরিবর্তনের শিকার সিংহভাগই যুবসমাজ। তারা প্রতিনিয়ত ভাগ্য দ্বারাও পরিচালিত। তারুণ্যের জোয়ারে উদ্ভাসিত যুবসমাজকে সুসংগঠিতকরণের মাধ্যমে আত্মপ্রত্যয়ী যুবশক্তি গঠনে তৎপর হতে হবে আমাদের। যুবরাই পাল্টে দেবে সনাতন ধারণা। যুবসমাজের মেধা, মনন আর কর্মশৈলীতে গড়ে উঠবে স্বনির্ভর বাংলাদেশ। তবেই ১৬ কোটি মানুষের মাঝে সুপ্ত প্রতিভা আর কর্মপ্রয়াসের বিকশিত ধারায় অচিরেই আসবে সম্ভাবনার সুফল।
চীনাদের একটি প্রবাদ আছে_ 'তুমি যদি কাউকে একটি মাছ খাওয়াতে চাও, তবে আগে তাকে মাছ ধরার কৌশল শেখাও'। দক্ষতা অর্জনের অন্তর্নিহিত অর্থ এ প্রবাদে আছে। দক্ষতা ছাড়া সমৃদ্ধি অসম্ভব। দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারলে বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধিশালী দেশে উন্নীত হবে। ১৬ কোটি মানুষের হাত দক্ষ কর্মীর হাত হলে উন্নয়নের চাকা ঘুরবেই। কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্র বাড়াতে হবে। জনশক্তি ও কর্মসংস্থানবিষয়ক তথ্য প্রতিবেদনে জানা গেছে, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট জনশক্তির কমপক্ষে ২০ শতাংশ অল্প দক্ষ, যথার্থভাবে শিক্ষিত নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে, কৃষি, শিল্প, প্রতিরক্ষা ও সেবা খাতে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির একটা বড় অংশ নিয়োজিত রয়েছে প্রবাসে।
আমাদের রয়েছে বিশাল সম্ভাবনাময় যুবসমাজ। যুব সম্প্রদায়কে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত না করা গেলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। চাকরির বাজারে আসা বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত যুবক জনগোষ্ঠীকে চাকরির সংস্থান দিতে হলে গ্রামীণ এলাকায় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। দেশের মোট বেকার যুব জনশক্তির সিংহভাগের বাস গ্রামাঞ্চলে। প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী বেকারদের ৬৯.৫ শতাংশ বাস করে পল্লী এলাকায়। বাকি ৩০ দশমিক ৫ ভাগ শহরের অধিবাসী। গ্রাম ও শহর উভয় ক্ষেত্রে বেকারদের মধ্যে যেমন রয়েছে স্বল্পশিক্ষিত যুবক, তেমনই আছে উচ্চ ডিগ্রিধারী। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সারা বছর দেশে চাকরির যে ক্ষেত্র সৃষ্টি হয় বা পদ খালি হয়, তার চেয়ে প্রার্থীর সংখ্যা বহুগুণ বেশি। কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং কর্মপ্রার্থী_ এ দুইয়ের মধ্যকার ব্যবধান দিন দিন বেড়ে চলছে। প্রকৃতপক্ষে বেকার সমস্যা মোকাবেলা বা কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংকল্প এবং দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতারও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বেকারত্ব নিরসনে দেশে এমন একটি অর্থনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি করা দরকার যাতে উৎপাদনশীল খাতে, ক্ষুদ্র-মাঝারি এবং বৃহৎ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। শিল্প-কারখানা বৃদ্ধির ফলে কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। শিল্পে বিনিয়োগের অন্তরায় ও সীমাবদ্ধতা, নীতি-নিয়মের সংস্কার করা প্রয়োজন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কর্মমুখী শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। নানা ধরনের প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে ওঠে। আমাদের দেশে এমন প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে যারা প্রাতিষ্ঠানিক সম্প্র্রসারণের ধারাবাহিকতায় ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে কাজের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, পরামর্শ এবং সহায়তার মাধ্যমে বেকার সমস্যা সমাধানে ফলপ্রসূ উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব।
এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বে ২৫ বছরের নিচে যুবকের সংখ্যা প্রায় ৩০০ কোটি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি এ যুবসমাজকে অশিক্ষা, বেকারত্ব আর দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যেতে হয়। অথচ বিশ্বের সর্বত্র জনসংখ্যার সবচেয়ে সম্ভাবনাময়, প্রতিশ্রুতিশীল এবং উৎপাদনমুখী অংশ হচ্ছে সে দেশের যুবসমাজ। বর্তমান বিশ্বে যুবসমাজ এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অভাব-অনটনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেকারত্ব, মাদকাসক্তি, সন্ত্রাস আর এইডসের মতো ভয়ঙ্কর বিপদ। এ বিপদ থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন সবার জন্য উপযোগী কর্মসংস্থান তৈরি করা।
যুব সম্প্রদায়কে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত না করা গেলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত যুবককে চাকরির সংস্থান দিতে হলে গ্রামীণ এলাকায় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে।
এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট জনশক্তির কমপক্ষে ২০ শতাংশ অল্প দক্ষ, যথার্থভাবে শিক্ষিত নয়। সে হিসেবে ২০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কাজের জন্য উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন লোক পায় না। আর দক্ষ জনবল না পাওয়ায় এ প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্বব্যাংক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিপুলসংখ্যক যুবক থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটা বিরাট সুযোগ। বেশ কিছু দেশেরই অনেক দক্ষ শ্রমিক আছে। আবার অনেক দেশ দক্ষ শ্রমিকের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল। যুব সম্প্রদায় যাতে ভালো কাজ খুঁজে নিতে পারে সে রকম প্রস্তুতি নিতে তাদের গড়ে তুলতে হবে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রায় ১৩ কোটি যুবকই লিখতে-পড়তে পারে না। নাগরিক দায়িত্ব পালনের জন্য এসব যুবককে সুশিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপারে শিক্ষাদানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। শুধু সমাজকে সুন্দর করার জন্যই নয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে যুবসমাজকে কাজে লাগাতে এ রিপোর্টে আহ্বান জানানো হয়েছে।
বেকারত্ব নিরসনে দেশে এমন একটি অর্থনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি করা দরকার যাতে উৎপাদনশীল খাতে ক্ষুদ্র-মাঝারি ও বৃহৎ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। শিল্প-কারখানা বৃদ্ধির ফলে কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায় ও সীমাবদ্ধতা, নীতি-নিয়মের সংস্কার করা প্রয়োজন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কর্মমুখী শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। নানা ধরনের প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে ওঠে। আমাদের দেশে এমন প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে যারা প্রাতিষ্ঠানিক সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতায় ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে কাজের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, পরামর্শ এবং সহায়তার মাধ্যমে বেকার সমস্যা সমাধানে ফলপ্রসূ উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব। মোট কথা জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করলেই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সহজ হবে।
এসএম মুকুল: কলাম লেখক
©somewhere in net ltd.