নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

খাদ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণ

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০১

মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে খাদ্য অন্যতম। কারণ বেঁচে থাকতে হলে মানুষের খাদ্য গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই, যা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। সরকারও বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে খাদ্য উৎপাদন, খাদ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পাশাপাশি খাদ্য আমদানি করে থাকে। এমন এক সময় ছিল যখন দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাহিদার সিংহভাগ খাদ্যশস্য আমদানি করতে হতো। ফলে সারা বছরই মানুষের খাদ্য সংকট লেগেই থাকত। সেই খাদ্য সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি দেশের কৃষককুলের অকান্ত শ্রমের বিনিময়ে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে। দেশে এখন প্রায় ১৬ কোটি মানুষের বাস। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে সাড়ে সাত কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হতো না। তখন আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ হেক্টর। সূত্রমতে, গত ৪৪ বছরে মানুষের বসতবাড়ি, হাটবাজার, রাস্তাঘাট, নগরায়ণ, অফিস-আদালত, শিল্প-কলকারখানা নির্মাণে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ। অথচ মানুষ বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এরপরও বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদার প্রায় পুরোটাই নির্বাহ হচ্ছে দেশীয়ভাবে উৎপাদিত খাদ্যশস্যে। তবুও কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের কৃষক পরিবারগুলোর দিন ভালো কাটছে না? কিন্তু কেন? যা আলোকপাত করতেই আজকের এ লেখার অবতারণা।
দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা বছরে সাড়ে তিন কোটি টনেরও বেশি। গত অর্থবছরে চাল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল তিন কোটি ৩৮ লাখ টন। উৎপাদিত চালের মধ্যে সরকারিভাবে বোরো ও আমন দুই মৌসুমে সংগৃহীত হয়েছে মাত্র ১২ লাখ টনের কিছু বেশি। এই হিসেবে দেখা যায়, উৎপাদিত মোট চালের অতি সামান্য অংশ সরকার মিলারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে, অবশিষ্ট বিশাল অঙ্কের চাল ব্যবসায়ী, চালকল মালিক ও কৃষক পর্যায়ে ধান ও চালের আকারে মজুদ থাকে। সরকার বোরো ও আমন দুই মৌসুমে উৎপাদনের তুলনায় সামান্য পরিমাণ ধান ও চাল সংগ্রহ করে, তা দিয়ে কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। মূলত সরকারের খাদ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থা অপরিকল্পিত এবং গতানুগতিক হওয়ার দরুন কৃষক উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পায় না। টানা গত ক’বছর যাবৎ কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর হওয়ায় উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দেশের প্রান্তিক চাষি, বর্গাচাষি ও মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারগুলোর দিন কাটছে অতিকষ্টে। আবার কৃষি চাষাবাদের নিয়ামক সার, বীজ, ডিজেল, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিসহ কৃষি মজুরের মূল্যও অনেক বেড়ে গেছে। এমতাবস্থায় কৃষি চাষাবাদ ধরে রাখতে ব্যাংক ঋণ, এনজিও ঋণ এমনকি মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নেওয়ায় প্রতিটি কৃষক পরিবারের দেনার পরিমাণও ক্রমান্বয়েই বাড়ছে। এ অবস্থা থেকে কৃষকদের বাঁচানো সম্ভব না হলে কৃষি চাষাবাদ মুখ থুবড়ে পড়বে এবং মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।
অবশ্য সরকারকে ভোক্তার স্বার্থ ও কৃষকের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়। যেহেতু আমাদের দেশের মোট জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে খাদ্যপণ্য কিনে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়, সেহেতু সরকার চাল ও আটার দাম মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখার চেষ্টা করে, করাটাই যে স্বাভাবিক যা নিয়ে বিতর্কেরও কোনো অবকাশ নেই। মূলত সরকার এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই চাল, আটার বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে খোলাবাজারে চাল, আটা স্বল্পমূল্যে বিক্রির পাশাপাশি ভিজিডি, ভিজিএফ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় খাদ্যশস্য বিতরণ করে থাকে। আবার কখনো কখনো কাজের বিনিময়ে খাদ্যের পরিবর্তে টাকাও দিয়ে থাকে। যদি সরকারের খাদ্য মজুদের পরিমাণ কম থাকে তাহলে আপৎকালীন খাদ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তার স্বার্থে কাজের বিনিময়ে কর্মসূচিতে খাদ্য না দেওয়াটাই স্বাভাবিক। যখন সরকারের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুদ থাকার পরও কাজের বিনিময়ে খাদ্যের বদলে টাকা দেওয়া হয়, তখন ভাবাই স্বাভাবিক, সরকারের এ সিদ্ধান্ত সঠিক ও সময়োচিত নয়। বর্তমানে দেশের সরকারি খাদ্যগুদামগুলোয় মজুদ খাদ্যশস্যের পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ টনেরও বেশি, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় একই সময়ে খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ এখন অনেক বেশি। তারপরও অতি সম্প্রতি সরকার কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে খাদ্যের বদলে টাকার ব্যবস্থা করেছে, যা কোনোভাবেই যৌক্তিক এবং বাস্তবসম্মত নয় বলে দেশের সচেতন মানুষ মনে করে। কারণ গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয় আমন মৌসুমে ২ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করেছে। গত বোরো মৌসুমে গুদামে জায়গার অভাবে প্রায় ১৫-২০ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহ করতে পারেনি। সহজেই অনুমেয়, খাদ্যশস্য উৎপাদনের তুলনায় সরকারিভাবে খাদ্য সংরক্ষণ উপযোগী খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। যদিও মহাজোট সরকার গত সাড়ে ছয় বছরে ৫ লক্ষাধিক মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণ উপযোগী খাদ্যগুদাম নির্মাণ করেছে এবং এখনো নির্মাণকাজ অব্যাহত রয়েছে। সব মিলে এখন প্রায় ১৮-২০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রাখা সম্ভব। অর্থাৎ সীমিত ধারণ ক্ষমতার খাদ্যগুদামে খাদ্যশস্য মজুদ রেখে তা বিতরণের মাধ্যমে গুদাম খালি করার বিকল্প নেই। আবার সেই খালি গুদামগুলোতে উৎপাদিত কিংবা আমদানিকৃত খাদ্যশস্য মজুদ রাখতে হয়। আবার খাদ্যশস্য গুদামে বেশিদিন রাখলে সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ রাখাও কঠিন। যেহেতু সরকারিভাবে বর্তমানে খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ অনেক বেশি, আবার আমন চাল সংগ্রহ শুরু হবে। এমতাবস্থায় সরকারি খাদ্যগুদামের সংরক্ষিত চাল ও গম বিভিন্ন চ্যানেলে বিতরণ করা উচিত, যা বলাই বাহুল্য।
আবার ইতোমধ্যেই আগামী বোরো চাষাবাদের জন্য বীজতলার কাজ কৃষক শেষ করেছে। এমনকি আগাম জাতের বোরো রোপণের চাষও শুরু হয়েছে। অর্থাৎ আগামী ৪-৫ মাস পর নতুন বোরো ধানের কাটা মাড়াই শুরু হবে। শুধু বোরো মৌসুমেই চাহিদার সিংহভাগ ধান উৎপাদন হয়। আর বোরো মৌসুমে সরকার ধান ও চালের আকারে প্রায় ১১-১২ লাখ মেট্রিন টন সংগ্রহ করে থাকে। আমাদের আশঙ্কা, যদি সরকার খাদ্যগুদামে মজুদকৃত চাল ও গমের সিংহভাগ বিতরণ করতে না পারে, তাহলে আগামী বোরো মৌসুমে জায়গার অভাবে আশানুরূপ ধান, চাল সংগ্রহ করতে পারবে না। এমন অবস্থার সৃষ্টি হলে ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে কৃষককুল আবারও বঞ্চিত হবে। তবে আশার কথা, গত ক’মাস যাবৎ বেসরকারিভাবে শুল্কমুক্ত সুবিধায় প্রায় ৮-৯ লক্ষাধিক মেট্রিক টন চাল ভারত থেকে আমদানি হলেও সরকার চাল আমদানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় ইতোমধ্যেই চাল আমদানি বন্ধ হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশীয় উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নিশ্চিত করতে হলে আমদানি থেকে সরে আসতে হবে। আবার এ-ও সত্য, স্পর্শকাতর খাদ্যপণ্য আমাদনি বন্ধ থাকার কারণে মূল্য বেড়ে ভোক্তার কষ্ট হলে সরকারকে পুনরায় খাদ্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক হার কমানো কিংবা শূন্যের কোঠায় আনতে হবে। মূলত জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার আমদানি-রপ্তানির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আমাদের দেশে আবার আমদানি-রপ্তানির অনেক ক্ষেত্রেই জনস্বার্থের বিষয়টি উপেক্ষিত থাকে। আমরা আশাবাদী, সরকার কৃষকের উৎপাদিত খাদ্যশস্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আমদানি-রপ্তানির মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির ব্যাপারে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবে না।
কৃষক, ভোক্তা ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের স্বার্থরক্ষায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও বিতরণ ব্যবস্থাকে আমরা রোল মডেল হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। সে দেশে ধান, গমের কাটা-মাড়াই শুরু হলেই সরকারি উদ্যোগে নির্ধারিত দরে প্রত্যন্ত গ্রামের হাটবাজার থেকে ধান ক্রয় করে সরকারি খাদ্যগুদামে মজুদ করা হয়। আবার সংগৃহীত ধান সব চালকলে সরবরাহ করে উপযুক্ত দরে ছাঁটাই করে ফলিত চাল সরকারি খাদ্যগুদামে সংরক্ষণ করা হয়। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক শিল্প চালকল রক্ষায় প্রতিটি চালকলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ চালও সংগ্রহ করে। জানা গেছে, সে দেশে বছরজুড়েই নিম্ন আয়ের মানুষদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্বল্পমূল্যে রেশনিং পদ্ধতিতে খাদ্যপণ্য বিতরণ করা হয়। এমনকি ২-৩ বছর অন্তর অন্তর সরকারি খাদ্যগুদামে মজুদ চাল সংগৃহীত মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে গুদাম খালি করা হয়। উদ্দেশ্য হলো, কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকল্পে ধান ও চাল সংগ্রহ করা, আবার রেশনিং পদ্ধতিতে কম মূল্যে ভোক্তা পর্যায়ে চাল, গম বিতরণ করে মানুষের খাদ্য প্রাপ্তিকে নিশ্চিত করা। ফলে সে দেশে খাদ্য উৎপাদন প্রতিবছরই বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে উদ্বৃত্ত চাল পৃথিবীর নানা দেশে রপ্তানি করছে। অর্থাৎ উৎপাদন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থার ওপর উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য ও ভোক্তার স্বার্থরক্ষা করার বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভরশীল। কোনো কারণে উৎপাদন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থার সমন্বয়হীনতা দেখা দিলে উৎপাদক ও ভোক্তার স্বার্থ ক্ষুণœ হবে, এটাই স্বাভাবিক।
আমাদের দেশে খাদ্য উৎপাদন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই সমন্বয়হীনতা কিংবা গতানুগতিক ধারা চালু থাকায় একদিকে যেমন উৎপাদন, ভোক্তার স্বার্থরক্ষা করা সম্ভব হয় না, অন্যদিকে উৎপাদিত কৃষিপণ্যনির্ভর কৃষিভিত্তিক শিল্পের স্বার্থরক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ খাদ্যশস্য সংরক্ষণ উপযোগী পর্যাপ্ত খাদ্যগুদামের অভাব এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুপযোগী খাদ্য সংগ্রহ নীতিমালার কারণেও উৎপাদিত খাদ্যশস্যের উপযুক্ত মূল্য অনেক ক্ষেত্রেই নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। গতানুগতিক খাদ্য সংগ্রহ নীতিমালা পরিবর্তন করে বাস্তব অবস্থার আলোকে সংগ্রহ নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত। মান্ধাতা আমলের অ্যাঙ্গেল বার্ক পদ্ধতিতে ধান ছাঁটাই পদ্ধতি হয়তো বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে নেই। অ্যাঙ্গেল বার্ক পদ্ধতিতে চাল ছাঁটাই করায় লোহার ঘর্ষণে প্রচুর পরিমাণ চাল ভেঙে খুদ হয়ে যায়। যা দিয়ে মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের বদলে প্রাপ্ত খুদ পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অথচ নতুন প্রযুক্তিনির্ভর রাবার সেলারে ধান ছাঁটাই করে রাবার পলিশার দ্বারা চাল প্রস্তুত করলে চালও ভাঙে না, আবার চকচকে হয়। এর সঙ্গে কালার সর্টার মেশিন সংযুক্ত করলে চালের মধ্যে মরা দানা, বিবর্ণ দানা এবং অপুষ্ট চালও বাছাই করা সম্ভব। ইতোমধ্যেই এ ধরনের আধুনিক মিলের সংখ্যা আমাদের দেশে পাঁচশর কিছু বেশি আছে। পক্ষান্তরে গোটা দেশে প্রায় ১৯ হাজারের বেশি হাসকিং মিল চাতাল রয়েছে। মূলত কৃষিভিত্তিক শিল্প হিসেবে সারা দেশে হাসকিং মিলগুলো স্থাপিত হয়েছে। যেখানে নারী-পুরুষ মিলে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ২০ লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। বর্তমানে সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় চাল সংগ্রহে যে ধরনের বির্নিদেশ নির্ধারণ করেছে, যা হাসকিং মিলে প্রস্তুত করা সম্ভব নয়। বাস্তব কারণে ইতোমধ্যেই হাসকিং মিলগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। অর্থাৎ হাসকিং মিলগুলো বন্ধ হলে লাখ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান বন্ধের পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক হাসকিং মিল চাতাল একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে কৃষি অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাবের কারণে কাক্সিক্ষত পরিমাণ প্রবৃদ্ধিও অর্জিত হবে না। এমনকি হাসকিংনির্ভর মিল চাতাল বন্ধ হলে গোটা দেশে অত্যাধুনিক অটোরাইস মিলগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। সঙ্গত কারণে কৃষকের উৎপাদিত ধান বিক্রির জায়গাও সংকুচিত হবে। বাস্তব এ অবস্থাকে বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিত সংগ্রহ নীতিমালার পরিবর্তন করে দুই ধরনের চালের মূল্য নির্ধারণ করে চাল সংগ্রহ এবং বিতরণে নতুন কৌশল গ্রহণ করা উচিত।
দেশে অতি উচ্চফলনশীলন নানা জাতের চিকন ও মোটা ধান উৎপন্ন হচ্ছে, সেহেতু আমরা আশা করছি, নিকট ভবিষ্যতে দেশ খাদ্যে উদ্বৃত্ত হবে। উদ্বৃত্ত চাল রপ্তানি করা সম্ভব না হলে ধান নিয়ে চাষিদের দুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। আমাদের বিশ্বাস, সরকার যদি বাড়তি খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিতরণ এবং রপ্তানি করার মতো সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করে, তাহলে দেশের কৃষককুলকে চরম সংকটে পড়তে হবে। অর্থাৎ কৃষকের উৎপাদিত খাদ্যশস্যের উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। ফলে কৃষক ধানের চাষ ছেড়ে দিয়ে পাট চাষের দিকেই ঝুঁকে পড়বে। কারণ সরকার পাটের হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় ইতোমধ্যে পাটের বাজার মূল্য অনেক বেড়ে গেছে। দেশের চাষিরা যে পণ্য উৎপাদন করে বেশি মূল্য পাবে, তারা সেই পণ্যই বেশি করে চাষাবাদ করবে। আর যদি পাটকলগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণ পাট নগদ অর্থে কিনতে পারে, তাহলে ধান উৎপাদনের উপযোগী জমিতে ধানের বদলে পাটের চাষ বৃদ্ধি পাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কোনো কারণে এমন পরিস্থিতির জন্ম হলে ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমরা চাই, পরিকল্পিতভাবে ধান উৎপাদন, চাল ও ধান সংগ্রহ, সংরক্ষণের পাশাপাশি বিতরণের ক্ষেত্রে কৃষি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে খাদ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের ক্ষেত্রে চলমান খাদ্য নীতিমালা পরিবর্তন করে চাষি ও ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়াই হবে যৌক্তিক।
লেখক : কলামনিস্ট
- See more at: Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.