নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গিবাদবিরোধী উদ্যোগ

১৬ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৪৩

বুলগেরিয়া, জাপান ও সৌদি আরবে সাম্প্রতিক সফর সম্পর্ক গণমাধ্যমকে অবহিত করতে গত ৮ জুন বুধবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী যে কোনো আন্তর্জাতিক উদ্যোগে বাংলাদেশ পাশে থাকার জন্য প্রস্তুত। সন্ত্রাস দমনে সৌদি আরবের বাদশাহর আহ্বানে আমি সাড়া দিয়েছি। এই জোটে ৪০টি দেশ এ পর্যন্ত যোগ দিয়েছে। আমরা মনে করি এটা যুগোপযোগী পদক্ষেপ। সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবিরোধী যে কোনো পদক্ষেপেই আমরা সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত এমন কি সামরিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে নিরাপদ লোকদের টার্গেটেড হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। গোটা বিশ্ব সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতায় বিপন্ন তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় বোঝা যায়। আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে, ইসলামের নাম নিয়ে এ মানবতাবিরোধী সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে আইএস নামক মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংগঠনটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তারা প্রতিদিন ইবাদত-প্রার্থনার মতো জায়গায় নির্বিঘ্নে ও নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে। মানুষ হত্যা করছে তারা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে। এমনকি সমগ্র বিশ্বে। বাংলাদেশেও অতি সাম্প্রতিককালে যতগুলো গুপ্তহত্যা হয়েছে তার দায় স্বীকার করেছে আইএস। আইএস ভারতকেও টার্গেট করেছে- এমন খবর পত্রিকায় দেখেছি। আইএসের কারণে মধ্যপ্রাচ্য থেকে লাখ লাখ শরণার্থী ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে। কত কষ্ট তাদের! শিশু ও নারী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ইউরোপের পথে পথে মারা যাচ্ছে। নৌকায় পার হতে গিয়ে সাগরে ডুবে মারা যাচ্ছে শরণার্থীরা।
প্রতিদিন খবরের কাগজে দেখি সিরিয়া ও বাগদাদে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলায় লোক মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে বেসামরিক লোক বিশেষ করে নারী ও শিশু থাকে। আইএসের বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠেছে দুই সুপার পাওয়ার, আমেরিকা ও রাশিয়া। আমেরিকা সৌদি আরবের মিত্র আর রাশিয়া সিরিয়ার মিত্র। সিরিয়ার বাদশাহ বাসার আল আসাদকে রক্ষা করার ধনুকভাঙা পণ করেছে রাশিয়া আর সৌদি ধনকুবেরদের রক্ষায় নেমেছে আমেরিকা। পেট্রোডলারের স্বার্থ নিয়ে লেগেছে মানববিধ্বংসী সংঘর্ষ। এর মধ্যে আবার ইরান বাগদাদে শিয়া রাজত্ব রক্ষার কাজে আইএসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। বাগদাদে ও সিরিয়ায় তুমুল লড়াই চলছে শিয়া-সুন্নির। বলাই বাহুল্য যে, আইএস নামক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি সুন্নিপন্থী। আইএসও একটি সাম্রাজ্যবাদী ফ্যাসিবাদী দল। তারা অস্ত্রের জোরে সিরিয়া ও বাগদাদের অনেক ভূমি দখল করেছে। দখলিকৃত এলাকায় আইএস অর্থনৈতিক জোন তৈরি করেছে। অনেক তেলের খনি, স্বর্ণের খনি আইএস দখল করেছে। আমেরিকা ও রাশিয়া উভয় শক্তি বিমান হামলা চালাচ্ছে আইএসের তেলের খনির ওপর। আইএস এখন মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। অতি সম্প্রতি পিছু হটার খবর পাওয়া যাচ্ছে তাদের। আত্মরক্ষার্থে তারা এখন অমানবিক পন্থা অবলম্বন করেছে। পত্রিকায় পাওয়া যাচ্ছে, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় আইএস তাদের দখলিকৃত এলাকার নারীদের যৌনদাসী বানিয়ে বিক্রি করছে। মাদক চোরাচালানের সঙ্গেও তারা জড়িত। আইএস একটা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন। এদের দ্বারা ইসলামের উপকার হবে, এমন কথা যারা ভাবছে তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। পত্রিকায় এসেছে যৌন সম্পর্ক করতে রাজি না হওয়ায় ১৯ জন ইয়াজিদি নারীকে পুড়িযে হত্যা করেছে আইএস। উত্তর ইরাকের মসুল শহরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ওই ১৯ জন ইয়াজিদি নারীকে লোহার খাঁচায় আটক করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এদের দ্বারা ইসলামের আদর্শ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে? একটি জাতীয় পত্রিকায় পেয়েছি, এদের সম্পর্কেই মহানবী সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। এরা পরাজিত হয়ে তাদের দখলিকৃত এলাকা ইরাকের ফালুজায় ৯০ হাজার মানুষকে জিম্মি করেছে। তাদের বাধ্য করছে যুদ্ধে অংশ নিতে। যারা পালিয়ে যেতে চাচ্ছে তাদের গুলি করে হত্যা করছে। বাগদাদে গাড়ি বোমা হামলায় প্রতিদিন গড়ে ২৫ জন করে লোক মারছে আইএস।
আইএস সমর্থিত একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন নাইজেরিয়ার বোকোহারাম। পাশ্চাত্য শিক্ষাবিরোধী এ সংগঠনটি নাইজেরিয়ায় লোমহর্ষক বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে; নাইজেরিয়াকে গোরস্থানে পরিণত করেছে। পত্রিকায় এসেছে যে, ১০ লাখ কিশোর-কিশোরী ও শিশুকে বোকোহারাম স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় প্রতিটি দেশে মসজিদে ঢুকে নামাজে সিজদারত মুসলিদের হত্যা করছে আইএসের সন্ত্রাসীরা। আইএস সমর্থিত তালেবান আফগানিস্তানে বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে। অতি সম্প্রতি আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় কুন্দুজ প্রদেশের মহাসড়ক থেকে ৪০ জনেরও বেশি মানুষকে অপহরণ করেছে তালেবান গোষ্ঠী। মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি শিশু হাসপাতালে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। হয় আইএস আক্রমণ চালাচ্ছে না হয় আইএসবিরোধী সরকারি বাহিনী আক্রমণ চালাচ্ছে। ১০ তারিখের পত্রিকায় পাওয়া গেছে, সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তরাঞ্চলীয় আলেপ্পো শহরে শিশু হাসপাতালে বিমান হামলায় ১৫ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
এমনি পরিবেশে সৌদি ও ইরানের মধ্যে রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। সৌদি সরকারবিরোধী গণবিক্ষোভে নেতৃত্বদানকারী শিয়া সম্প্রদায়ের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা ৫৬ বছর বয়সী নিমর আল নিমরকে সৌদি সরকার শিরñেদ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ইরান এ বছর সৌদিতে হজে পাঠাচ্ছে না তার দেশের হাজিদের। চলতি বছরের হজ পালন নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতায় উপনীত হতে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিদ্ব›দ্বী দু’দেশ সৌদি আরব ও ইরান। সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ব্যর্থতার জন্য দুই দেশের কর্মকর্তারা পরস্পরকে দোষারোপ করছেন।
এমন সঙ্গিন মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সৌদি সফরে গিয়েছিলেন। এ সফর নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। বর্তমানে সৌদি আরবের অবস্থা অনেকটা ত্রিশঙ্কু। শিয়াদের বিরূপ দৃষ্টিতে পড়েছে তারা, আবার আইএসেরও প্রতিক‚লে, কারণ তার প্রধান মিত্র আমেরিকা আইএসবিরোধী। আইএস সৌদি আরবে ঢুকেও শিয়াদের ওপর গুপ্তহত্যা চালিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটেই সৌদি আরব সন্ত্রাসবিরোধী আন্তর্জাতিক জোট গঠনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বিশ্ব সন্ত্রাসবিরোধী ভূমিকায় অংশ নিয়েছেন। বর্তমান বিশ্বে যে ক’জন রাষ্ট্রপ্রধান সন্ত্রাস দমনে সাফল্য অর্জন করেছেন, শেখ হাসিনা তার মধ্যে একজন।
আমরা চাই সৌদি আরবের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী সংগঠন গড়ে উঠুক। আইএস কিন্তু বিশ্ব সন্ত্রাসের মুরব্বি হয়ে উঠেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তরুণ-তরুণীরা গোপনে আইএসে যোগদান করছে। একটি জাতীয় পত্রিকা মন্তব্য করেছে যে, ‘আইএস কেয়ামতের মিশনে নেমেছে।’ তারপর তারা বলেছে, ‘আইএস বা ইসলামিক স্টেট বিশ্বজুড়ে এক আতঙ্কের নাম। মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে ইউরোপ- সর্বত্র চলছে তাদের সন্ত্রাসী হামলা। বিশ্বজুড়ে ইসলামিক স্টেটের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ।’
বাংলাদেশের গুপ্তহত্যাকে তাই বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না। নির্দয়তা নির্মমতার দিক থেকে আইএসের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গিদের পার্থক্য নেই। আন্তর্জাতিক জঙ্গিবিরোধী সংগঠনে যোগ দিয়ে যে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী তা যথার্থ।
মাহমুদুল বাসার : কলাম লেখক।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:১৩

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: "বর্তমান বিশ্বে যে ক’জন রাষ্ট্রপ্রধান সন্ত্রাস দমনে সাফল্য অর্জন করেছেন, শেখ হাসিনা তার মধ্যে একজন।" - সত্যিই? কোন জগতে বাস করেন ভাই? সাফল্য অর্জন করেছেন নাকি এই মহিলা তার হিংস্র-কুটিল-বিভেদাত্মক-বিধ্বংসী রাজনীতির মাধ্যমে এই দেশটাতে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম জঙ্গি আক্রমন ডেকে এনেছে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.