![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বাধীনতার পরপরই দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে বাংলাদেশ। বিপুল দারিদ্র্য আর ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা হয় একটি নতুন দেশের। এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিল বিশ্ববাসী। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গত সাড়ে চার দশকে বাংলাদেশ সেই সংশয়কে মিথ্যে প্রমাণ করেছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে দারিদ্র্যকে পিছে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে দেশ। ফলশ্রুতিতে গত কয়েক বছর ধরেই দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সামনের কাতারেই রেখেছে বিশ্ববাসী। ২০১২ সালের শেষভাগে 'আউট অব দ্য বাস্কেট' নিবন্ধে দ্য ইকোনমিস্ট দাবি করেছিল, 'কী করে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হওয়া যায়, সেটা দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।' এ কথার সূত্র ধরেই বলা যেতে পারে, দারিদ্র্যজয়ের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে রোল মডেল। বিশ্বনেতারাও বাংলাদেশকে এই সাফল্যের স্বীকৃতি দিচ্ছেন, গণ্য করছেন। তাদের মতে, বাংলাদেশ যত তাড়াতাড়ি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়ন ঘটিয়েছে, দুনিয়ার আর কোনো দেশ তা পারেনি। আর এ সাফল্য সত্যিই অভূতপূর্ব। অন্যদিকে দারিদ্র্যজয়ের সাফল্য দেখতে বাংলাদেশে সফরে এসে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট যখন বলেন, 'এটি স্মরণ করার মতো সফলতা। বাংলাদেশের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার আছে অনেক দেশের'- তখন দেশের এই সাফল্য আমাদের গৌরবান্বিত করে।
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলেছিল, বাংলাদেশে হতদরিদ্রের সংখ্যা কমেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে যেখানে দুই কোটি ৮০ লাখ অর্থাৎ ১৮ শতাংশ হতদরিদ্র মানুষ ছিল, সেখানে সাত বছরের ব্যবধানে প্রায় ৮০ লাখ হতদরিদ্র অতি দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে এসেছে। এছাড়া একাধিক পরিসংখ্যানেও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১২ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ আর ২০১৬ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে। বিশ্বব্যাংক ধারাবাহিকভাবে অতিদারিদ্র্যের হার কমার এই প্রবণতাকে 'অর্জন' হিসেবে মনে করে। অপরদিকে বিশেষজ্ঞরাও আশা করেছেন, দারিদ্র্যজয়ের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ২০৩০ সালে দারিদ্র্য হার কমে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে (এসডিজি) ২০৩০ সালের মধ্যে অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা শূন্য থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক কর্মকা- সে লক্ষ্যেরই ইঙ্গিতবাহী।
অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশের মহাসড়কে হাঁটছে। যার অন্যতম শর্ত হচ্ছে দারিদ্র্যবিমোচন। তবে সার্বিকভাবেই বাংলাদেশের অগ্রগতি এখন দৃশ্যমান। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, বেড়েছে শিক্ষা ও সচেতনতার হার। অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কার্যক্রম, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি (ভিজিডি, ভিজিএফ, জিআর, ওএমএস, টেস্ট রিলিফ, কাবিখা ইত্যাদি), সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার, গ্রামীণ এলাকায় সড়ক ও জনপথের ব্যাপক উন্নয়ন এবং সংযুক্তি, গ্রামীণ অকৃষি কর্মসংস্থান, প্রবাসী আয় অব্যাহতভাবে বাড়া ও ব্যাপক বিদ্যুতায়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণেই দেশে দারিদ্র্য হ্রাসে সাফল্য এসেছে। এসব উন্নয়নমুখী কর্মকা-ে শক্তিশালী হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম অবকাঠামো 'পদ্মা সেতু প্রকল্প' বাস্তবায়ন করছে দেশ। বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা, সৃষ্টিশীল চেতনার মধ্যদিয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়ার আন্তরিকতার কারণে। ফলশ্রুতিতে বিশ্ববাসী বর্তমানে অবাক বিস্ময়ে অন্যরকম এক বাংলাদেশকে দেখতে পাচ্ছে। যা বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের।
সর্বোপরি বলতে চাই, দারিদ্র্যজয়ে বর্তমান সাফল্য সত্ত্বেও এসডিজি অর্জনে কিছু চ্যালেঞ্জ নির্দেশ করেছে বিশ্বব্যাংক। এটি বেশ কঠিন হলেও যথাযথভাবে মোকাবেলা করা গেলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া মোটেই অসম্ভব নয় বলেও দাবি তাদের। সংশ্লিষ্টদের মতেই বলতে চাই, প্রতিবছর দারিদ্র্য হ্রাসের হার দশমিক ৯২ শতাংশ বজায় রেখে বছরে গড়ে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকেই এখন নজর দেয়া যুক্তিযুক্ত। অন্যদিকে দারিদ্র্যজয়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এটাও বহুল উচ্চারিত। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, দেশের সার্বিক উন্নয়নে এ ব্যাপারে সরকার তাদের আন্তরিকতা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকবে।
©somewhere in net ltd.