নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অসম্পুর্ন মানুষ আমি ।

মোস্তাফিজুর রহমান জাকির

মোস্তাফিজুর রহমান জাকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

সপ্ন

০৭ ই মে, ২০২১ রাত ২:০৮


সোহান ছেলেটা দেথতে কালো বর্ণের . তবে মানুষ হিসেবে সে মন্দ নয় ।
যদিও জন্ম মাদারীপুর তবে মানুষ হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায় । অর্থাৎ ওদের বাবার যেখানে পোস্টিং ওরা সেখানে ই থেকেছে । দুই ভাই এক বোন আর মা বাবা এই নিয়ে ছিল ওদের সংসার । সেনাবাহিনী তে চাকরি করার আগে সোহানের বাবা সর্বহারা পার্টি করতেন । শোনা যায় তিনি শাহজাহান খানের নেতৃতে একসময় সর্বহারা পার্টি করতেন এবং বহু মানুষকে কারনে অকারনে মেরেছেন ।
ইন্টারমিডিয়েট পাঁশ করার পরে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হয়নি সোহানের ফলে খুব সম্ভবত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সে । তবে সেখানে ও পড়াশুনা কণ্টিনিউ করেনি । বাবা পেনশনে আসার পরে টাকা পয়সার টানাটানি , সংসারে অশান্তি এই সব কিছু দেখে শুনে আর ভাল লাগে না সোহানের । সে বিদেশ যাওয়ার জন্য সিরিয়াস হয়। এবং তার মার সাথে বিষয় টা শেয়ার করে সবার আগে -
- মা আমি বিদেশ যেতে চাই এবং সেটা ইংল্যান্ড , কিভাবে কি করবা কর । টাকা পয়সার বন্দোবস্ত কর , যে ভাবে হোক আমার ইংল্যান্ড যাওয়ার ব্যাবস্থা কর । আমি ওখানে গিয়ে অনেক টাকা আয় করব , তোমাদের সাপোর্ট দিব । এই অভাব অনটন কমে যাবে আশা করি ।
- এত টাকা কই পামু , ইংল্যান্ড যাইতে তো মেলা টাকা লাগবে । তোর বাপের পেনশনের টাকা দিয়া তো এই বাড়ীটা যতদূর পারলাম করলাম , সাভারের মত জায়গায় জমি কিনে তারপর বাড়ি ঘর করা , কম টাকার ব্যাপার না । টাকা পয়সা তো হাতে নাই রে বাবা ।
- মা আমি অত কিছু বুঝি না , আমার বিদেশ যাইতে হইব এইটা বুঝি । আব্বাকে বল ব্যাবস্থা করতে । তুমি তোমার ভাইর কাছ থেকে কিছু ধার নাও , পরে প্রয়জনে ফেরত দেয়া যাবে । আগে তো যাই, আর গেলে তো পয়সা পাতি আয় করা যাবে , ধার নিলে মাইনসের টা পাঠাইয়া দিমু । সমস্যা নাই ।
- আচ্ছা দেখি তোর বাপের সাথে কথা বলে , কি করা যায় । তোর তো এমনিতে একটা কিছু করা উচিৎ সংসারের যে অবস্থা ! তোর বাপের প্রতি মাসে পেনশনের যে কয়ডা টাকা পায় তা দিয়ে কি সংসার চলে ! এদিকে সুরুজের পড়াশুনা এখনো শেষ হয় নাই , ও কেবল মেট্রিক টা দিল অরে তো অন্তত গ্রাজুয়েশন টা করান লাগব । তারপরে না হয় ও ওর পথ বেছে নিতে পারবে ।
মা ­-বড় ছেলে কথা বলতে বলতে ছোট ছেলে সুরুজ মোবাইল টিপতে টিপতে চলে আসল । এখনকার ছেলে পেলে হাঁটতে হাঁটতে মোবাইল টিপে , কথা বলতে বলতে টিপে , এমনকি বাথরুমে বসে ও টিপে । এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে নাকি বদ অভ্যাসে তারা ই ভাল বলতে পারবে । অবশ্য জিজ্ঞেস করলে বলে মোবাইলে অনেক ভাল কাজ ও হয় আর আমরা সেটা ই করি । এই সুরুজ ছেলেটা আই টি মোটামুটি ভাল বুঝে , সে মেট্রিক পাঁশ করেছে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে । ইতোমধ্যে সে একা একা বড় বড় সাউন্ড বক্স , আই পি এস এগুলো বানায় , আলাদা আলাদা পার্টস পাতি কিনে এসব গড়ে সে ।
সুরুজ - কি নেয়ে আলোচনা মা ? ভাইরে কি বিয়ে টিয়ে করাবা নাকি ? মেয়ে কিন্তু আমি পছন্দ করব , একটা মাত্র ভাবি হবে আমার দেখে শুনে না করাইলে কি হবে নাকি ।
মা - কি কস ! তোর ভাই তো এখনো নিজের পায়ে ই দাড়াতে পারেনি , বউ রে কি খাওয়াইব । চাকরি বাকরি নাই , আয় রোজগার নাই , বিয়ে !
সুরুজ - আচ্ছা ; ভাই তাইলে কার পায়ে খাড়ায়া রইছে মা ? ঐ দুইডা পা কার ?
মা- ঐ দুইডা দিয়া ও শুধু হাটে , ঐ পায়ে জোর নাই , নিজে কামাই রোজগার না করলে পা নিজের হয় না । তোর ভাই বিদেশ যাইতে চায় , সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে বুঝলি । আমাগো এহন চলতে কষ্ট , সংসার চালাইতে কষ্ট , অরে ক্যামনে বিদেশ পাডামু সেইটা নিয়া ই ভাবতেছি ।
সুরুজ - ভাই যখন যাইতে ই চায় একটা ব্যাবস্থা কর । আর যেতে পারলে তো আমাদের সুবিধা , আমার ও সুবিধা ; টাকা পয়সা চাইলে ভাই ফিরাইব না । একবার যাইতে পারলে তো ভাই আমগো লাইগা টাকা পাঠাইব ই । তাই না ? পাঠাইয়া দাও মা ।
মা- পাঠাইয়া দাও বললে ই পাঠান যায় না । টাকা থাকতে হবে না ?
সোহান- শোন মা, পারিবারিক ভাবে চেষ্টা করলে যে কোন কাজ সহজ হয় । এটা ও হবে ব্যাপার না , চেষ্টা টা একটু সিরিয়াসলি কর , যাদের টাকা পয়সা আছে এমন আত্মীয় স্বজনের কাছে চাও দেখবা ব্যবস্থা হয়ে গেছে । বললাম ই তো ওখানে গিয়ে সবার টাকা ই পাঠিয়ে দিব ।
মা- আচ্ছা আমি যাই ঘড়ে অনেক কাজ , তাছাড়া রান্না বান্না ও বাকি । রান্না না করলে খাবি কি । আমি দেখি আগে তোর আব্বার সাথে কথা বলি । দেখা যাক কি হয় ।

মা চলে যায় , দুই ভাই মিলে এবার আলোচনা করে , মধ্যবিত্তের সপ্নের আলোচনা, জীবন আর একটু গোছান যায় কিভাবে সেই আলোচনা ।
এ জীবন অনেকটা ফরিং এর জীবনের মত ; এখানে উড়ে তো সেখানে ঘুরে বেড়ায় । সে জিবনের মানে হচ্ছে আর একটু সুখের সন্ধান , আর একটু ভাল থাকা ।
সুরুজ বলে ভাই চিন্তা করিছ না , তোর দেশের বাইরে যাওয়ার ব্যাবস্থা হবে । আর সোহান ভাবে সেই ব্যাবস্থাটা কি করে হবে , আর কখন ঘুরে দাঁড়াবে ,লাইফ কখন তার নিজস্ব গতি পাবে । কিছু মানুষ ধনবান থেকে আরও ধনবান হচ্ছে অপরদিকে এই উন্নয়নশীল দেশের বেশিরভাগ মানুষ চিন্তা করে কি করে খেয়ে পড়ে বাঁচা যায় । আর সম্ভব হলে দুটো পয়সা বাঁচিয়ে সংসারের প্রয়োজনীয় দুটো জিনিসপত্র কেনা যায় । দু পয়সা কি করে জমানো যায়, মেয়াটাকে বিয়ে দেয়ার জন্য অথবা ছেলেটার চাকরীতে ঘুস দেয়া লাগতে পারে সে জন্য ।
সমাজে সব চেয়ে কোণঠাসা মধ্যবিত্ত শ্রেণী , এরা না পারে খুব উন্নত জীবন যাপন করতে না পারে কারো কাছে হাত পাততে । এ পৃথিবীর মানুষ পুজিবাদের কাছে জিম্মি এ জন্য ই প্রায় পৌনে দুশ বছর আগে কার্ল মার্ক্স বলেছেন, পুঁজিবাদের ধরণ অনুযায়ী মুনাফার জন্য বড় ব্যবসায়ীরা কর্মীদের বেতন ও সুবিধাদি কমিয়ে দেয়। এতে মধ্যবিত্ত ক্রমে গরীব হতে থাকে। এর ফলে একটি বড় অংকের নগদ অর্থ অল্প কিছু মানুষের হাতে জমতে থাকে।
মার্ক্সের কথা ই বোধ হয় সত্যি- আজকের পৃথিবীতে ৫০০ কোটি মানুষের যা সম্পদ, তার চেয়ে বেশি সম্পদ আছে মাত্র ৪২ জন ধনী মানুষের হাতে ।

অবসর গ্রহন করার পরেও সংসারের ঘানি টানতে ব্যাস্ত বাশার সাহেব , এখন তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানির গাড়ি চালান , মানে ড্রাইভার । সারা মাস কাজ করে হাজার বিশেক টাকা পান , তাই দিয়ে ই চলতে হয় । কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফিরে খাওয়া দাওয়ার পরে সোহানের মা রোজিনা বেগম তাকে বললেন -
রোজিনা বেগম - শোন , সোহান বিদেশ যেতে চায় এবং ওর টার্গেট ইংল্যান্ড । টাকা পয়সা কিভাবে ব্যাবস্থা করা যায় বল ।
বাশার সাহেব- টাকা কোথায় পাব ? আমার কাছে টাকা পয়সা নাই । তুমি জান না রিটায়ার্ড করার পরে এককালিন যে কয়টা টাকা পেলাম তা দিয়ে তো জমি কিনে এখানে বাড়ি করলাম , আজকের এই সেমি পাকা বাড়ি করলাম ।
রোজিনা বেগম- সে তো জানি । ছেলে দেশের বাইরে যেতে চায় । তাছাড়া ও তো পড়াশুনা রেগুলার করতেছে না । অনার্সে ভর্তি হল , প্রথম বর্ষের পরীক্ষাটা ও দিল না । ওর তো একটা কিছু করতে হবে । দেখ আত্মীয় সজন কারো কাছ থেকে নেয়া যায় কিনা ।
বাশার সাহেব- আমার কোন আত্মীয় নাই টাকা দেয়ার মত । তোমার ভাইদের কাছ থেকে নাও । আমি কষ্ট-ক্লেশ করে বড় জোর লাখ খানেক টাকা দিতে পারব ।
রোজিনা বেগম- আচ্ছা আমি বড় ভাইকে ফোন দিয়ে দেখব নাকি সরাসরি তার বাসায় যাব ? আমার মনে হয় ভাইয়ের মিরপুরের বাসায় গেলে ই ভাল হয় , সামনা সামনি কথার আলাদা একটা কদর আছে , ভাই হয়ত মুখের উপর না বলতে পারবে না ।

( চলবে )


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.