![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাজন হালদার ঢাকায় আসে পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির জন্য । কেননা রাজনদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না; নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। গোপালগঞ্জে ওদের বাড়ি। মায়ের নাম রেখা রানী বাবার নাম উত্তম কুমার হালদার। একটা বোন আছে ওর আর ও নিজে, দুই ভাই বোন আর মা-বাবা এই মিলে ওদের সংসার।
ঢাকায় আসার পরে এক পরিচিত লোকের মাধ্যমে চাকরিতে ঢুকে একটি ফরওয়ার্ডিং অফিসে ।ফরওয়ার্ডিং বিষয়টা আবার সবার কাছে ক্লিয়ার না । এটা হচ্ছে এমন একটা কাজ যে, দেশের বাইরে যে কোন পণ্য পাঠানোর জন্য এরা ই সব করে; থার্ড পার্টি হিসেবে , শিপার ও বায়ার এর সাথে মেইলিং , কন্টেইনার এ পণ্য স্টাফিং থেকে শুরু করে ঐ পণ্য বায়ার এর হাত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব । এই কাজটাকে ই বলে ফরওয়ার্ডিং । যাই হোক , অফিসটি উত্তরাতে , ছোট্ট একটি অফিস ;কর্মচারী কর্মকর্তা মিলে ৭ জন। অফিসের মালিক একটি পাবলিক ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করা। তিনি খুব বাণিজ্যিক এবং রাগি প্রকৃতির।
সহকর্মী পিয়াস ও খুরশিদার সাথে রাজনের খুবই ভালো সম্পর্ক। পিয়াস ও পাবলিক ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করা। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতনে রাজন এখানে জয়েন করে।একদিন অফিসে সহকর্মী পিয়াসের সাথে কথোপকথনঃ
- পিয়াস ভাই এখানে বেতন এত কম; অথচ কাজের কত চাপ ;তারপরে আবার বস খারাপ ব্যবহার করে, কি যে করি ?
- কিচ্ছু করার নাই চাকরি করতে হলে সবই সহ্য করতে হবে , যেহেতু আমাদের টাকার প্রয়োজন অতএব সহ্য করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
- তাই বলে একটু সুবিধা অসুবিধা হলে যখন তখন গালি গালাজ করবে? এ কেমন মালিক , আমাদের কপাল খারাপ নাকি উনি খারাপ ?
- জানিনা ভাই একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছি , ভাগ্য খারাপ অথবা কর্মদোষে এখানে আসছি , জাস্ট জীবনযাপনের জন্য , টাকা প্রয়োজন তাই এখানে জব করে যাচ্ছি।
খুরশিদা বলল- হ্যাঁ তাইতো টাকার প্রয়োজন তা ঠিক আছে , তাই বলে হঠাৎ হঠাৎ এরকম রূঢ় আচরণ সহ্য করে যেতে হবে? এইটা কোন কথা?
ফরওয়ার্ডিং এর পাশাপাশি এখানে একই সাথে একটি অর্গানিক প্রোডাক্টের কাজকর্ম শুরু হয় , সেগুলো ও ফরওয়ার্ডিং এর লোকজনের করতে হয় কাস্টমার কে ফোন দিতে হয় সপ্তাহে একদিন ।এমনকি চালডাল আসলে সেগুলো ঘাড়ে করে বা হাতে করে অফিসে নিয়ে আসতে হয়।
অফিসের পিয়ন নুর আলম উত্তর বঙ্গের লোক , সম্পর্কে সে মালিকের মামাতো ভাই। মামাতো ভাই হলে কি হবে সে ও মালিকের রূঢ় আচরণ থেকে বাদ যায়না । পিয়ন হোক আর যাই হোক এই লোকের আবার মাথা গরম। কাজের চাপ হলে সে চটে যায়।
- রাজন বলল নুর আলম ভাই এই ডকুমেন্টসগুলো কুরিয়ার করেন চিটাগাং পাঠাতে হবে।
- আরে ভাই এখন বাজে সাড়ে চারটা , পাঁচটার মধ্যে কুরিয়ার অফিসের কাজকর্ম বন্ধ এখন বলতেছেন কুরিয়ার অফিসে যেতে সারাদিন কি করছেন?
- আপনার কি মনে হয় বসে থাকি আলম ভাই? একটার পর একটা কাজ, চাপের মধ্যে থাকি দেখেন না?
- এতকিছু বুঝি না ভাই আমারে কুরিয়ার এর কাজ দিলে সাড়ে তিনটার মধ্যে দিবেন, তা না হলে আমি পারবো না।
- এই ডায়লগ কোথা থেকে শিখছেন যে পারবোনা।পারবো না বলে কোন কথা নেই আপনাকে পারতে হবে।
- আপনি বললে তো হবে না আমার দ্বারা সম্ভব না কুরিয়ার অফিস বন্ধ হয়ে গেলে আমি কি করে করব?
- পিয়াস ভাই ও বলে উঠলো আরে ভাই কথায় কথায় এরকম পারবোনা বলিয়েন না তো এমনি মাথা গরম কাজ করে শেষ করতে পারিনা তারপরে আবার আপনাকে একটা কাজ দিলে বলেন যে পারবো না।
- টাইম শেষ হয়ে গেলে আমার কিছুই করার নেই ভাই, আর তাছাড়া আমার বেতন টাও তো বাড়াতে বলেন না। খালি কাম করান।
ইতোমধ্যে রাজনের ছোটবোন প্রিয়াঙ্কা তাকে ফোন করে।
- দাদা এ মাসে তো এখনো টাকা পাঠাস নি ; কখন পাঠাবি।
- বেতন পাইনি রে বোন, পাইলেই পাঠিয়ে দেব, সম্ভবত ১০ তারিখে পাব তুই চিন্তা করিস না ভালো করে পড়াশোনা কর ।
- প্রিয়াংকা বলল হ্যাঁ দাদা পড়াশোনা করে যাচ্ছি ।তোমার শরীরের কি অবস্থা? শরীরের যত্ন নিও ; ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করিও।
- আচ্ছা বইন পরে আবার কথা হবে, এখন চাপের মধ্যে আছি; প্রচুর কাজ।
- ঠিক আছে দাদা তুমি তাহলে কাজ করো আবার পরে কথা হবে। বেতন পেয়ে ই টাকা পাঠাইয়া দিবা ।
- ওকে রাখ ; ভালো থাকিস।
রাজন ভাবে হায়রে মধ্যবিত্তের জীবন, নিজের পড়াশোনা ; বোনের পড়াশোনার খরচ এত চাপ মাথায় কিভাবে নেই । রাজন শুধু ভেবেই যায় অথচ চাপ নিয়ে ই তাকে বেচে থাকতে হয় ।
সাড়ে বারোটার দিকে অফিসের বস বাবুল সাহেব আসলেন , নিজের চেয়ারে বসে আলম কে চা দিতে বললেন , পিসি টা অন করলেন ,চা খাওয়া শেষ হওয়ার পরে তার ক্যাম্পাসের ছোট ভাই একইসাথে তার অফিসের কর্মচারী পিয়াস কে ডাক দিলেন।
- পিয়াস সিগারেট খাওয়া তো, ( টাকা না দিয়েই খেতে চাইলেন, তারমানে পিয়াসের নিজের পকেটের টাকা দিয়ে সিগারেট আনতে হবে )
- আচ্ছা ভাই নিয়ে আসতেছি , ( পিয়াস সিগারেট আনতে যায় আর ভাবে শালার এমনি বেতন কম; তারপর আবার ১২ টাকা দামের বেন্সন এনে খাওয়াতে হবে নিজের টাকায়, ওহএমন কেন! যদিও পিয়াস নিজে ও মাঝে মধ্যে ভাইর থেকে ২/১ টা নিয়ে খায় )
- সিগারেট এনে দেওয়ার পরে বাবুল সাহেব জিজ্ঞেস করল কাজকর্ম কেমন চলে পিয়াস ? কোন সমস্যা।
- না ভাই, চলতেছে । ( মনে মনে ভাবে সমস্যা তো অনেক আরো ২/১ জন লোক হলে ভালো হতো ; চাপ টা একটু কম তো, কিন্তু বস কাম ভাইকে বলতে পারেনা যে ৫ জনের কাজ ৪ জন করতে হলে কতটা ধকল যায় )
- আচ্ছা ঠিক আছে ; যা ।
এই অফিসে বস অফিস ত্যাগ না করা পর্যন্ত কেউ অফিস ছাড়ে না বা ছাড়তে পারে না, এটাই অলিখিত নিয়ম ।
যে বাসাটাতে থাকে রাজন সেটা একটা ব্যাচেলর কোয়াটার বলা যায়, কেননা এই বিল্ডিং এ নব্বই ভাগ ই ব্যাচেলর বা স্ত্রী থাকলেও এখানে সিঙ্গেল হিসেবে থাকে। রাজন যে ফ্ল্যাটে থাকে এক রুমে তিনজন। একজন ওর পিসতুতো ভাই, একই বয়সের; বিশু নাম। আরেকজনের নাম জাকির; এক সময় রাজন আর সে একই অফিসে চাকরি করতো। ছেড়ে দিছে দু মাস হল । জাকির অর্গানিক প্রডাক্ট সেক্টরে ম্যানেজার ছিল। পাবলিক ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করা। সে একজন ভগ্ন হৃদয় । স্ত্রী থেকে আলাদা, সামান্য ভুল বোঝাবুঝি থেকে ৬ মাস দূরে দূরে থেকে রাগ ,অভিমান, ঝগড়া , গালাগালি অতঃপর দুজনের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তাদের বিবাদ হত ফেসবুক মেসেনজারে, কেননা মাসে দুই একদিন দেখা হলে ও তাদের মধ্যে কথা হত না , বড় জোর চোখাচুখি ।
---------------------------------------------------------
জাকির এর জীবনযাপন অত্যন্ত পেইনফুল ।লোকটির মেধা আছে, যোগ্যতা আছে , নানান মানসিক চাপের মধ্যে থেকে সে এখন ভালো কিছু করতে পারছে না। জাকির একজন ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার ও বটে। লোকটা নিজ পরিবার থেকেও আলাদা কারণ পরিবার ও চরম স্বার্থপর। এখন টাকা নেই তাই জাকির এর মূল্য নেই। স্ত্রী, পরিবার মা বাবা ভাই বোন সবার থেকে আলাদা; কেউ তার খোঁজ রাখে না।
রাতের বেলা খেতে বসে জাকির বলল তরকারি তো মজা হয় নাই বুয়া ভালো রান্না করে না; কি সব রাধে বুয়া ই জানে। আপনার কাছে কেমন লাগতেছে রাজন?
খুব একটা ভালো না ভাই ; কি আর করার বুয়াদের রান্না এমনই হয়।
তাই বলে এমন অখাদ্য খেয়ে যেতে হবে ? বলল জাকির।
বিশু বলল ভাই রান্না যেমনই হোক এই বুয়া এবসেন্ট করে খুব কম সেই হিসেবে এই বুয়াই ভালো।
জাকির হাসে আর বলে হায়রে জীবন! কত কী যে মেনে নিতে হয় এ জিবনে কেন গোছাল নয় ? কেন সাজান সংসার ভেঙ্গে যায় , ভেঙ্গে ই যদি যাবে তবে সংসার কেন !কেন !
বিশু বলল ভাই এভাবেই চলতেছি আমরা কয়েক বছর যাবৎ, আপনি আবার বিয়েশাদী করে নেন তখন ভাবি ভাল রান্না করে খাওয়াবে।
আর বিয়ে !জাকির বলল মন উঠে গেছে! ভালো লাগেনা অবিরাম পেইন এর মধ্যে আছি।
কি আর করার ভুলে থাকতে হবে নতুবা নতুন করে জীবন সাজাতে হবে রাজন বলল। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে একটা জোকস শুনান ভাই আমাদেরও ভালো লাগবে আপনারও মনটা ভালো লাগবে।
খাওয়া-দাওয়া শেষে রাজন আবার অফিসের কাজে বসে যায়,সে বাসায় এসে অফিসের কাজ করে, অফিসের কাজ বলতে মেইলিং শিপার ও কন্সাইনী দের এর মেইল রিসিভ করা এবং আনসার দেওয়া , বাসায় এসেও এ কাজ তার ঘন্টা দেড়েক চলে। ছেলেটার ব্যাপক ধৈর্য। বিশু জাকিরের ল্যাপটপে গানা বাজনা শুনে অথবা মুভি দেখে এবং গল্প করে।
রাজন- ভাই একটা জোকস বলেন , মনটা ভালো করে কাজে বসে যাই ।
জাকির বলল- শুনেন তাইলে জোকস: এলাকার মামা ভাগ্নে কে বলল ভাগ্নে তোর বউ আর শালি তো জমজ তাইলে রাতের বেলা তাদের চিনিস কি করে? ভাগ্নে বলল চিল্লায়া উঠলে বউ আর লজ্জা পাইলে শালী।
হাহাহা রাজন ও বিশু হাসতে শুরু করলো আর বলল ভাই যে কি কন ।
ইতিমধ্যে রাজনের একটি প্রেম শুরু হয় ফেসবুক পরিচয় এর মাধ্যমে মেয়েটির নাম প্রিয়া। ওদের বাড়ি যশোরে , মেয়েটা মগবাজারে নার্সিং ইনস্টিটিউটে নার্সিং এ পড়াশোনা করে , মেয়েটা ভালো; হাস্যজ্জল এবং রোমান্টিক। সারা দিনে দশবার অন্তত রাজনকে ফোন দেয় ; অনেকবার মেসেজ দেয় এবং বেশ কয়েকবার ফেসবুকে নক করে। এভাবেই চলতে থাকে কয়েক মাস অতঃপর তারা একদিন দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রিয়ার ফোন- হ্যালো কি করছো
রাজন বলল এইতো বাসায় কাজ করছি, মেইলের আনসার দিচ্ছি , তুমি কি করতেছ?
- তোমার সাথে ফোনে কথা বলতেছি
- তাতো বুঝতেই পারতেছি , কাজটা কি করতেছ এই মুহূর্তে।
- কিছুই না ; তোমার কথা মনে পড়লো তাই ফোন দিলাম।
- আমার কথা মনে করা ছাড়া আর কোন কাজ নেই তোমার?
- থাকবেনা কেন ; তবে এখন তোমার কথা মনে করা ই আমার প্রধান কাজ ।
-এত ইম্প্রেস করতে হবে না , ইনিয়ে-বিনিয়ে পামপট্টি দিচ্ছ?
- পামপট্টি দিব কেন যা সত্যি তাই বললাম , আমার তো এখন সারাক্ষণ তোমার কথাই মনে পড়ে, পড়তে বসলেও , খেতে গেলেও, ঘুমাতে গেলেও।
- এত মনে পড়া ভালো না , পরে কাছাকাছি চলে আসলে তখন আর মনে পড়বে না।
- রাখি পরে কথা হবে।
- ওকে রাখ।
রাতে বাসায় এসে ও দেড়/দুই ঘণ্টার অফিসের কাজ রাজনের, আর জাকিরের মোবাইলে ফেইসবুকিং পাশাপাশি অনলাইনে অর্গানিক খাদ্য দ্রব্য বিক্রির বিজ্ঞাপন ।চাকরি টা ছাড়ার পর এই বিসনেস সে এখন নিজে ই ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু করেছে । মেসেঞ্জারে , কমেন্টস এ ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কিত কথাবার্তা কাস্টমারদের সাথে । এবং পাশাপাশি বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে টুকটাক কথা বার্তা, হাই হ্যালো। বিশু ইউটিউব এ দেখে নাটক কিংবা সিনেমা। প্রায়শ দেখে হাসির সিনেমা কিংবা নাটক, আরে হঠাৎ হাসির রোল জাকির এবং বিশুর।
জাকির নাটক দেখে ; এরই মধ্যে হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে যায়। কত কিছু ভাবে ; পরিবার , প্রাক্তন স্ত্রী ,বর্তমান ,ভবিষ্যৎ। তার কাছে মনে হয় তার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কেউ নেই পাশে এ জীবনে।
এরইমধ্যে মেসেঞ্জারে এক হিন্দু বান্ধবীর সাথে কথোপকথন। রিতা নাম তার ।
কি খবর কেমন আছো জাকির , জিজ্ঞেস করে রিতা ।
এই ত আছি বেচে, স্বাভাবিক মৃত্যুর অপেক্ষায় আছি , অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে তো আল্লাহ ক্ষমা করবে না । তাই স্বাভাবিক মৃত্যুর প্রহর গুনছি ।
বাদ দাও এসব । আর একটা বিয়ে করে নাও। নয় তো একটা পরকিয়া কর ।
কোনটাই হবে না বান্ধবি । মনযোগ দিতে পারছি না । সব কিছু কেমন এলোমেলো আর ফাকা লাগে ।
মনোযোগ দিতে হবে এভাবে তোঁ আর জীবন চলবে না ।
আর জিবন , এ জীবন মূল্যহীন । যেখানে কেউ আপন নেই , সেটা আবার কিসের জীবন !
এত প্রেম স্ত্রির সাথে তাইলে বিচ্ছেদ হইল ক্যামনে ?
ভুল বোঝা বুঝি মান অভিমান। দূরে দূরে থাকা দিনে দিনে সম্পর্কের অবনতি, ফেসবুকে ঝগড়া, রাগারাগি , গালাগালি অতঃপর সবকিছু শেষ। এখন আর কেউ মনে করে না। শোনো একটা টুকরো গপ্প বলি। এক লোকের স্ত্রী মারা গেল । পরে সে বলতেছে - বাপ যখন মারা গেল কত লোক আসলো কত আঙ্কেল বলল কাঁদে না বাপ সান্ত হ বাপ, তোর বাবা মারা গেছে তাতে কি হয়েছে আমরা তো আছি। এরপর মা মারা গেল কত আন্টি আসল আর বলল কি আর করবি বাপ, সবারই তো এক দিন চলে যেতে হয়। তুই চিন্তা করিস না ; কষ্ট নিস না তোর মা নাই তাতে কি হয়েছে আমরা আছি না?
বৌ মারা যাওয়ার পরে কোন মহিলা কিংবা মেয়ে এসে বলল না যে আমরা আছি না?
· আর একটা বিয়ে করে নাও , রিতা বলল।
· বিক্ষিপ্ত মন।ঘুম নেই খাওয়া নেই , তারপর আবার নেই যথেষ্ট উপার্জন , নেই পরিবারের সাথে যোগাযোগ কি করে হবে বিয়ে ?
· সামলে উঠ , তুমি অনেক ভেঙে পরছ , আবার নিজেকে গোছাও।
· আমার আর গোছান হবে কিনা এ জীবন আমি জানি না , ৪০ বছর পর্যন্ত স্ট্রাগল ই করে গেলাম । পরিবার ভাই বোন মা বাবার জন্য যতটুকু ই করেছি কারো সন্তুষ্টি পেলাম না এ জিবনে । পিতা যদি হয় মিথ্যাবাদী ও চরিত্রহীন সে পিতার সাথে কি করে থাকে ভাল সম্পর্ক ? আর কিভাবে থাকবে আমার মন ভাল কেমন করে আমি শান্ত হব ।
· ওহ তোমার ফ্যামিলি তে ও দেখছি অনেক ঝামেলা
· হুম ওদের জন্য বউর সাথে বিচ্ছেদ টা তরান্বিত হইছে , অরা এগিয়ে আসলে তো এটলিস্ট বিচ্ছেদ টা হত না । কোথায় গেলে পাব এক চিলতে শান্তি বলতে পার ?। ওকে রিতা ভাল থেকো । উপদেশ ও সান্তনা দিয়ে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
---------------------------------------------------------------------
আজ শুক্রবার রাজনের অফিস আছে । ওদের অফিস শনিবার বন্ধ । শুক্রবার এ দেশের বাইরে অনেক দেশেই অফিস আদালত চলে । তারা মেইল দেয় শিপমেন্টের আপডেট নেয় । সুতরাং শুক্রবার ওদের অফিস করে শনিবার বন্ধ। খুরশিদা আপু এই অফিসের সিনিয়র একজন । অন্ন ফরওয়াডিং অফিসে তার অভিঅভিজ্ঞতা ছিল । মহিলা মাঝে মধ্যেই হাসির কথাবার্তা বলেন। কাজ ও ভালো বোঝেন।
এরি মধ্যে দুপুরের খাবারের সময় হয়ে যায় .
খাবার এর সময় হলে এখানে একে অপরকে ডাকে অত:পর যে ক'জন উপস্থিত হয় তারা খেতে বসে যায়।
খুরশিদা বলল কি আনছেন রাজন বের করেন , পিয়াস ভাই আপনার টা ও খোলেন দেখি কি নিয়ে আসছেন একসাথে খাই , আমারটাও আপনি খান , ভাগ যোগ করে খাই।
নেন খান, আমারটা তো রান্না করে দেয় দাদী শাশুড়ি, বউ সেই সকাল ছয়টার সময় উঠে অফিসে যায়, তার আর রান্নার সময় কই , বউ ইপিজেড এ একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে। দুজনে মিলে কষ্ট করে সংসার টা চালাই।
রিপন বলল- কেন ভাই আপনার একার টাকায় সংসার চলে না পিয়াস ভাই?
নারে ভাই কয় টাকা আর আয় করি, এই টাকায় কি সংসার চলে ?ও আর আমি যা পাই দুজনে মিলে তাই দিয়ে টেনেটুনে সংসারটা চলে। বলল পিয়াস।
মধ্যবিত্তের কি কষ্ট ভাই, কত স্ট্রাগল তারপরে দু'মুঠো রোজগার। কিছু টাকা জমা করা ও অনেক কষ্টের।
খুরশিদা বলে ওঠে হ্যাঁ ভাই এখনকার দিনকাল অনেক কষ্টের , জিনিসপত্রের দাম অনেক আমরাও দুজনে মিলে আয় করি যদিও আমি ও আমার হাসবেন্ড পিয়াস ভাইয়ের চেয়ে বেশি আয় করি, কষ্ট করে সারা মাস শেষে অল্প কিছু টাকা সেভ করি।
জাকির বলল এই ঢাকা শহরে যার ইনকাম ৪০০০০ টাকার বেশি দিয়ে থুয়ে সে যদি কিছু ইনকাম করতে পারে তাছাড়া সম্ভব না । আমার তো এক টাকা ও থাকে না ।
কথা বলতে বলতে তাদের খাওয়া শেষ হয়ে যায় অবশেষে যে যার ডেস্ক এ ফিরে যায়।
ইতোমধ্যে রাজনের ফোন আসে প্রিয়ার কল
হ্যালো কি করছ রাজন
কাজ করছি , জীবন জীবিকা । আর কি করব । কাজ ছাড়া আর কি আছে দুনিয়ায় ।
শুধু তো কাজ ই কর আমার খবর তো একটু নাও না ।
নিতাম ফ্রী হয়ে ফোন দিতাম , তার আগে তো তুমি ই দিয়ে দিলে , কি করতেছ তুমি । পড়া লেখা চলতেছে তো । তোমার কথা মনে হচ্ছিল আমার। ভাবছি বাড়িতে বিয়ে শাদির ব্যাপারে কথা বলব । তোমার ব্যাপার টা জানিয়ে দিব ।
দাও , এটা তো মজার খবর । আর কত দূরে দূরে থাকব ;এভাবে ভালো লাগে না । আমি তোমার কাছাকাছি থাকতে চাই
কত কাছে ?
যত কাছে থাকা সম্ভব , দূরত্ব থাকবেনা এক ইঞ্ছি ও এরকম কাছে ।
তাইলে তো নিঃশ্বাস নেয়া যাবেনা। দম আটকিয়ে মরে যাব ।
যাবা মরে সমস্যা কি, তাও আমার বুকে মরলে । এতেও কি তোমার আপত্তি আছে নাকি ?
নাহ আর আপত্তি ক্যামনে থাকে তোমার বুকে ই তো আমার জাগতিক শান্তি , যাকে বলে ওম শান্তি ওম । আচ্ছা অবসর সময় তুমি কি কর প্রিয়া ?
এইতো ফেসবুক দেখি গান শুনি তোমার সাথে কথা বলি আর ইউ টিউব এ মাঝে মধ্যে হিন্দি সিরিয়াল দেখি । রুম এ তো আর টিভি নাই। কমন রুমে সব সময় যেতে ভাল্লাগেনা ।
হিন্দি সিরিয়াল দেখ? বল কি এত মহা ধৈর্যের বিষয় । আচ্ছা একটা ছোট ঘটনা শুনবে ?
হাঁ শুনাও
আচ্ছা শুন , একদিন এক তরুণী আলাদিনের চেরাগ পেল! ঘষা দিতেই দৈত্য হাজির, অতঃপর তরুণীর তিনটি ইচ্ছা-
১. আমাকে অনেক ধৈর্য্যশীল করে দাও,
২. পৃথিবীর যত প্যাঁচ আর কুটনামি শেখার এবং বুঝার ক্ষমতা দাও
৩. এমন কিছু দাও যেন কোনদিন শেষ হবে না।
অতঃপর দৈত্যটা তাকে হিন্দি সিরিয়াল দেখতে বসিয়ে দিল,
বুচ্ছি তুমি আমাকে মিন করে কৌতুকটা বলছ ।
শুধু তোমাকে না, মাক্সিমাম বাঙালি মহিলাদের উদ্দেশ্য করে বলছি ।
শোন আমি সিরিয়াল খুব কম দেখি । হুদাই চেতাইবা না ।
আচ্ছা যাউকগা সামনের দিকে আউগ্গা ।ওকে ভালো থেকো পরে কথা হবে।
সারাদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরে আসে রাজন রা, অফিস থেকে বাসার দূরত্ব 30 টাকা রিকশা ভাড়া সমান । কেউ হেঁটে আসে কেউ রিকশায় আসে। সময় থাকলে দু টাকা সেইভ করার চিন্তাভাবনা। বাসায় আসতে আসতে দশটা বেজে যায়। তারপর হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসা । খাওয়া-দাওয়া শেষে আবার কাজ। রাজন করে মেইলিং এর কাজ আর জাকির অনলাইন রিলেটেড কাজ মানে কিছু সেইভ খাদ্যপণ্যের এর পোস্ট দেয়া। বা নতুন করে পোস্ট বানানো। অনলাইনে থাকা কালিন জাকিরের মেসেঞ্জারে রুবি রায় এর নক ।
কেমন আছো জাকির? কি করতেছ
এইতো আছি বেঁচে, ফেস বুকিং করছি, পেইজে পোস্ট দিচ্ছি , কাস্টমার এর কমেন্ট দেখছি। রিপ্লাই দিচ্ছি। এ সমস্ত আর কি! তুমি কেমন আছ? কেমন চলছে স্কুল তোমার ?
চলছে; যাচ্ছে দিন , ভালো হলেও করে যেতে হবে মন্দ হলেও করে যেতে হবে কিছুই করার নেই এটাই জীবন। তাছাড়া ইস্কুলে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে বাসায় আসার পরে মাঝেমধ্যে খুব একাকী মনে হয়।
তাতো হবেই; দেখে শুনে একটা বিয়ে করে ফেলো। তাহলেই একা থাকার অবসান হয়ে যাবে।
বললেই কি আর হুট করে বিয়ে করে ফেলা যায় এতই যদি সহজ হতো তাহলে তো কবেই করে ফেলতাম।
কেন তোমার কি বিশেষ কেউ আছে নাকি যদি থেকেই থাকে তাহলে তাকেই বিয়ে করে ফেলো।
আছে বিয়ে করতে ভয় পাই ওই ছেলে জীবন সম্পর্কে সিরিয়াস নয় যখন তখন চাকরি ছেড়ে দেয় ছেলেমানুষি করে এমনকি আমাকে মাঝে মধ্যে সন্দেহ ও করে, রুবি রায় জবাব দ্যায় ।
তবুও তোমার একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে হয় ওকে বিয়ে করতে হবে নতুবা নতুন কাউকে খুঁজে নিতে হবে। পাত্র দেখবো নাকি তোমার জন্য ? জাকিরের জবাব।
দেখো ভালো যদি কাউকে পাও ।
চেষ্টা করতে পারি, ভালো-মন্দ স্রষ্টাই ভাল জানেন, তাছাড়া অর্ডার দিয়ে তো আর বানানো যাবেনা। হাহাহা ।
আচ্ছা দেখো পাইলে আমাকে জানাইও।
ঠিক আছে আমি দেখছি বিষয়টা। নিঃসঙ্গতা কি জিনিস আমার চেয়ে কেউ ভালো জানে না। যেদিন থেকে বউ চলে গেল তারপরে এই দুই বছর পরিপূর্ণ ঘুম নেই , খাওয়া নেই , মনে শান্তি নেই। সময়ে অসময়ে তার কথা এ ই মনে পরে । এ এক ভীষণ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি। এ ব্যথা কাউকে দেখানো যায়না হয় সহ্য করে যেতে হবে নতুবা মরে যেতে হবে।
তোমার আর আমার অবস্থা কিছুটা সেম । তবে তুমি বিচ্ছেদ হওয়ার পরে নিঃসঙ্গ আর আমি বিয়ে না করেই নিঃসঙ্গ অথবা বয়ফ্রেন্ড থাকতে ও নিঃসঙ্গ। জীবন বড় মায়াহীন ; ছন্দহীন।
কি আর করা স্রষ্টা যেভাবে রাখে সেভাবে থাকতে হবে। আমাদের কর্ম দোষ না হয় ভাগ্য দোষ।
আচ্ছা বন্ধু রাখি ,পরে কথা হবে ভালো থেকো .
এভাবেই দিন চলে যায় রাজন জাকির আর বিশুর । অফিস - বাসা , খাওয়া-দাওয়া রাতে কিছুক্ষণ ফেসবুক অথবা ইউটিউব ; এইতো ।রোবটিক জীবন ওদের।
আজকে অফিসে মিটিং , বাবুল স্যার সবাইকে নিয়ে বসবেন । অফিসের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা হবে। সুবিধা বলতে অফিসের কিভাবে সুবিধা হয় সেই আলোচনা। এমপ্লয়ীদের অসুবিধার কথা এখানে খুব কমই আলোচনা হয়। বললেও সেটা বাবুল সাহেব টেকনিক্যালি স্কিপ করে যায়। আবার বলেন এত অসুবিধার কথা বলো কেন। বলতে বলতে হয়তো কোন এক সময় এই অসুবিধা গুলো সুবিধায় পরিণত হয়। মালিক বলে কথা তাও আবার কমার্শিয়াল মালিক। সব সময় নিজের হিসাব করে একশত পারসেন্ট। এরপরে অন্যান্যদের অসুবিধা। শুধুমাত্র মালিকের সুবিধা দেখা বাংলাদেশের পেক্ষাপটে একটা রেওয়াজ হয়ে গেছে। এখানে খুব কম মালিক ই এমপ্লয়ীদের অসুবিধার কথা শোনেন । সে যাই হোক।
বাবুল স্যার বললেন আচ্ছা রাজন কোন সমস্যা আছে।
না স্যার তেমন কোন সমস্যা নেই। তবে কাজের অনেক চাপ স্যার সামলানো মুশকিল। তবুও রাজন বলতে পারেনা লোক প্রয়োজন স্যার। পাঁচজনের কাজ তো তিনজনে করতে পারে না।
সবাই ডাইরি হাতে নাও আমি যা বলি নোট করে নাও।
ঠিক আছে স্যার সমস্বরে সবার উত্তর।
জাকির তোর কি খবর বল
এইতো ভাই চলছে
কি চলছে? কিভাবে চলছে?
এইতো ভাই আছি কোনরকম দিন যাচ্ছে আর কি
তুই কেমন আছিস সেটা বিষয় না কাজকর্ম কেমন চলতেছে সেটা বল, সেলস কেন বাড়তেছে না তোর সেটা বল, কি সমস্যা।
সমস্যা তো অনেক, জাকির বলল । এই ছেলেটা আবার সব কথা মুখে আটকে রাখতে পারে না। কিছু কথা মুখ ফসকে বলে ফেলে।
তোর মুখে শুধু সমস্যার কথাই শুনি সমস্যা নিয়েই তো চলতে হয় এর মধ্যেই কাজ করতে হবে তোর ইউনিভার্সিটির যারা অনলাইনে অর্গানিক প্রোডাক্ট সেল করতেছে তারা কিভাবে করতেছে।
তাদের অনেকের লোকবল অনেক ভাই। আর আমার তো ম্যাক্সিমাম কাজ আমাকে একাই করতে হয়। রিকোজিশন পাস করতে ঝামেলা হয়। তুমি অনেক সময় সাইন দিতে দেরি করো তাই একাউন্টস রিকোজিশন সংক্রান্ত ব্যাপার গুলো ঝুলিয়ে রাখে। সো কিছু কাজ পেন্ডিং থেকে যায়।
কাজ কর কাজ কর , সমস্যার কথা না ভেবে কাজ কর তুই কথা বেশি বলিস।
এই হচ্ছে মিটিং যেখানে বসই সর্বেসর্বা । অনেকের কথাবার্তা শুনে বা কোনটা কাজে পরিণত করবে কোনটা করবে না সে সিদ্ধান্ত তার একার।
মিটিং শেষ করে যে যার ডেস্ক এ চলে গেল।
রাজন- ব্রেইন টা হাং হয়ে আছে জাকির ভাই; কি যে করি বুঝতে পারতেছি না।
জাকির- বোঝা লাগবে না কাজ কাম শুরু করে দেন।
শোনেন একটা কথা মনে পড়ল বেলাল নামে আমার এক চেইন স্মোকার বন্ধু ছিল । ওর ব্যাংকে চাকরি হয়ে যায় । তো একদিন ম্যানেজার বেলাল কে বলল শোনেন বেলাল সাহেব জানেনতো প্যাকেট ও বান্ডেল এর মধ্যে কি পার্থক্য? বেলাল বলল জানি স্যার , প্যাকেট হয় সিগারেটের আর বান্ডিল হয় বিড়ির ।
রাজন- ভাই আপনি পারেন ও হাহাহা । যাক; কেমন যেন লাগছিল আপনার কথা শুনে একটু ভাল্লাগছে । মাথা টা একটু হালকা লাগছে ।
জাকির ভাবছে রাজন ছেলেটা হাসছে অথচ ওর মাথায় কত চিন্তা। নিজের থাকা পড়ার চিন্তা ও পড়াশোনার খরচ চালানো। বোনকে টাকা পয়সা দেওয়ার চিন্তা। মা-বাবাকে টাকা-পয়সা দেয়া। আবার সপ্তাহে একদিন প্রিয়ার সাথে ডেটিং করা, সেখানেও খরচাপাতির হিসাব আছে। এ জীবন বড় ক্যালকুলেটিভ । এরই নাম মধ্যবিত্তের জীবন ।
----------------------------------------------------------------------
জাকির আজকে অফিসে যায় নি । এত চাপ নেয়া যায় নাকি ? এখানে চাপের চেয়ে ও বড় ঝামেলা হচ্ছে মালিক ব্যাটার ব্যাবহার ভালো না । কখন ভালো থাকে তার মন; আর কখন মন্দ বোঝা মুস্কিল । টাকা ছাড়া ব্যাটা কিছু চিনে না ।
ঘুম থেকে দেরি করে উঠে সে । যদিও চাকরি বাকরি করে তবু নিয়মের মধ্যে বেশি থাকা হয় না । এই বয়সে সংসারে বউ না থাকলে যা হয় আর কি! ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই তার পুরনো বন্ধু মিন্টুর ফোন ।
মিন্টু- দোস্ত কেমন আছিস ?
জাকির- আছিরে দোস্ত , এখন ও মরি নাই ।
মরবি ক্যান শালা ? এত আপ সেট হওয়ার কি আছে ।
যে ভাবে ভাববি জগত তো সেভাবে হবে না । বিশেষ করে এদেশে তো আর ও হবে না ।এটা অনিয়মের দেশ , কিছু করার নেই এর মধ্যেই চলতে হবে ।
হাঁ বন্ধু একমুখী প্যারা হলে মেনে নেয়া যেত । প্যারা তো বহু মুখী। এক জিবনে শান্তি পাইলাম না ।
কি প্যারা ?
নিজ পরিবার , নিজ বাবা ভাই বোন দ্বারা ষড়যন্ত্রের স্বীকার । মানুষের হাতে যখন টাকা পয়সা না থাকে তখন কিছু কিছু বাপ মা ও পরিবর্তন হয়ে যায় ।
কি আর করবি; দুনিয়া স্বার্থের খেলা এখানে কেউ কারো নয় । সবাই আপন ভালো বুঝতে চায়। অন্যের মনের খবর কে জানতে চায় ?
হয়ত তোর কথাই ঠিক , তবু মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে । একটু শান্তির জন্য বেচে থাকে , স্বস্তির জন্য বাঁচে । কিছুটা ভালবাসা পাওয়ার তরে এবং দেয়ার তরে ভালবাসে । কারো আশা পুরন হয় আর কেউ মনে মনে আওড়ায়- সমুদ্রের কিনারায় বসে জল বিনে চাতকী মইল ।
সে যাই হোক এখন বল মিন্টু তুই কেমন আছিস ?
মিন্টু- আমি ও খুব একটা ভাল নেই রে দোস্ত , এই চলছে আর কি! বউ বাচ্চা নিয়ে এই এই ২০২০ সনে মধ্যবিত্তের ভাল থাকা খুব মুস্কিল । চালের দাম বেশি আলুর দাম বেশি এমন কি গরিবের পুষ্টি ডালের দাম ও বেশি । বাজারের উপর কারো নিয়ন্ত্রণ নেই । সরকারের ত নেই ই । এখানে ফড়িয়া, মধ্যসত্ত্ব ভুগি , ও সরকারি দলের ক্ষমতাশালী কিছু ব্যাক্তি বর্গ চাল , ডাল , পেয়াজ, আলু ইত্যাদির বাজার নিন্ত্রন করে । সাধারন মানুষ জাস্ট বলির পাঠার মত । শক্ত প্রতিবাদ ও কেউ করছে না রাস্তায় নেমে । যারা ই বা একটু সাহস করে রাস্তায় নেমে এবং সাহসের সাথে প্রতিবাদ করতে যায় হয় তাদের জেলে যেতে হয় নয়ত মার খেতে হয়।
জাকির- কি আর করার এর ই মধ্যে বেঁচে থাকতে হবে । আমার কি মনে হয় জানিস এই অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ; যেটা গনতন্ত্রের নামে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে এসব যদি আজ শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হোক কিংবা মাওলানা ভাসানি বেঁচে থাকতেন আর দেখতেন তারা কি করতেন আল্লাহ মালুম । আমার মনে হয় সরকার তাদের ও টেনে হেঁচড়ে জেলে পুরে দিতেন নয়ত এসব দেখে ওনারা রাজপথে আত্নহত্যা করতেন । ওনারা কেমন বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন আর আজ কেমন অরাজক পরিস্থিতি ।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.