নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“Those who have the privilege to know have the duty to act.”― Albert Einstein

মোস্তফা কামাল পলাশ

"সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে"

মোস্তফা কামাল পলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অধ্যাপক মোহাম্মদ বাছিত এর "উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা : সংকটের স্বরূপ এবং উত্তরণে করণীয়" বই এর রিভিউ

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৫৬



পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে বিজ্ঞানী Albert Einstein এর “Those who have the privilege to know have the duty to act.” উক্তিটি আমার খুবই প্রিয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের তরুণ অধ্যাপক Dr. Mohammed Abdul Basith উপরোক্ত উক্তির যথার্থ প্রয়োগ করেছেন "উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা : সংকটের স্বরূপ এবং উত্তরণে করণীয়" নামক একটি বই রচনা করে। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতা Nelson Mandela এর শিক্ষা সম্পর্কিত একটি উক্তিও আমার খুবই প্রিয় তা হলও “Education is the most powerful weapon which you can use to change the world.” সৌভাগ্য ক্রমে আমি ও Dr. Mohammed Abdul Basith শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছি। বাছিত ভাই বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা গবেষণা বিষয় ন্যানোটেকনোলজি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৪৫১ সালে। অর্থাৎ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার ৪৭০ বছর পূর্বে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত।


আলোচনা শুরু করেছিলাম "উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা : সংকটের স্বরূপ এবং উত্তরণে করণীয়" নামক একটি বই নিয়ে। বাসিত ভাই, তার বই এর আলোচনা করেছে কিভাবে সীমিত আর্থিক সামর্থ্যের মাঝেও বুয়েটে একটি বিশ্বমানের ন্যানোটেকনোলজি ল্যাবরেটরি স্থাপন করে সেখানে ব্যাপক ভাবে গবেষণা চালু করেছে Nanotechnology Research Laboratory : Exploring Nanotech Research in BUET। নিজের ল্যাবরেটরিটি প্রায় বাংলাদেশের সকল গবেষকদের জন্য খুলে দিয়েছেন গবেষণা কাজের জন্য। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বসে উন্নত মানের এক্সপেরিমেন্টাল গবেষণা করা যায় না তা ভুল প্রমাণ করেছেন বাসিত ভাই। বাছিত ভাই নামক ওয়াস্তে গবেষণা করেন নাই; তার গবেষণার কাজগুলো প্রকাশ করেছেন বিশ্বের উন্নত পিয়ার রিভিউ জার্নালে। বাসিত ভাই তার বই এর বিস্তারিত আলোচনা করেছেন তার এই সফল অর্জনের যা বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিকনির্দেশনা হিসাবা কাজ করতে পারে বলে মনে করি। এই বই এ আলোচনা করেছে কিভাবে গবেষণা প্রপোজাল তৈরি করতে হয়; কিভাবে সেই গবেষণা করতে হয়; গবেষণার ফলাফল মানসম্মত আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে উপস্থাপন করতে হয়ে। আলোচনা করেছে গবেষণার জন্য দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা থেকে অর্থ যোগাড় করতে হয়।

এত বিষয় থাকতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার দিক-নির্দেশনা ও মান নিয়ে বই লিখলেন কেন তার পূর্বে ৩ টি দেশের উদাহরণ দিতে চাই যে দেশ ৩ টি উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যাপক ভাবে উপকৃত হয়েছে।

উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় বিনিয়োগ একটা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে কত দ্রুত উন্নত দেশের তালিকায় পৌঁছে দেয় তার উদাহরণ দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ও তাইওয়ান। এই ৩ টি দেশের মানুষদের মাথা পিছু আয় গত ৩০-৪০ বছরে আমেরিকা-কানাডা কিংবা পশ্চিম ইউরোপিয়ান দেশ গুলোর কাতারে পৌঁছে গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং কোম্পানি তো প্রায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৫ টি ইলেকট্রনিকস কোম্পানির তালিকায়; একই দেশের হুন্দাই কোম্পানিও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় হেভি-ইন্ডাস্ট্রির তালিকায় পড়ে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৭১ সালে ও সিঙ্গাপুর স্বাধীন হয়েছে ১৯৬৫ সালে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ৫ পূর্বে স্বাধীন হওয়া দেশ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল ছাড়া আর কোথাও নিজেদের চিকিৎসা করার ভরসা পান না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতি কিংবা মন্ত্রীরা। সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তো বিশ্বের প্রথম ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় থাকে। আমি মনে করি, বুয়েটের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বাছিত ভাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের কামরুল ইসলাম মামুন স্যার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সালেহ হাসান নাকিব স্যার কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মামুন স্যারের মতো ৫ জন করে গবেষক বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়গুলোতে থাকে তবে আগামী ১০-২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালগুলো বিশ্বের প্রথম ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় চলে আসবে।

বাছিত ভাই তার বই এ বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা চর্চা নিয়ে আলোচনা করেছেন। নির্দিষ্ট করে আলোচনা করেছেন মানসম্মত উপাচার্যের প্রয়োজনীয়তা। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রায় সকল প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হলও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর উপাচার্যগুলো। এই পদগুলোতে যে মানুষগুলোকে নিয়োগ দেওয়া হয়; খোজ নিলে দেখা যাবে প্রায় প্রত্যেকেই নিয়োগ হয়েছে রাজনৈতিক লবিং এর মাধ্যমে। নিজেরা যখন লবিং এর মাধ্যমে অন্যের অনুগ্রহে উপাচার্য পদে বসেন তখন ঐ পদে বসে অন্যের লবিং এড়াতে পারেন না।

আমি মনে করি এই বই এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাটি হলও কিভাবে থিসিস লিখতে হয়। উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলও এই বিষয়টিতে। আমি হলফ করে বলতে পারি বাংলাদেশের হাতে গোনা দুই-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে গোনা দুই-একটি বিভাগের হাতে গোনা দুই-একজন শিক্ষক তার আন্ডারে অনার্সের ফাইনাল ইয়ারের প্রজেক্ট কিংবা মাস্টার্সের থিসিসের কাজটি আন্তর্জাতিক মানে উপনীত করতে গবেষণা ছাত্রটিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেন বা সাহায্য করেন। ফলে বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীটি বিদেশে গিয়ে চরম বিপদের সম্মুখীন হন প্রথম সেমিস্টারেই কিংবা প্রথম বছরেই। কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসার পরে প্রথম সপ্তাহেই আমি নিজে এই বিপদের সম্মুখীন হই। প্রথম সেমিস্টারে নিজের সুপারভাইজারের আন্ডারে একটি রিডিং কোর্স নিয়েছিলাম। প্রথম সপ্তাহে ৩ টি গবেষণা প্রবন্ধ ও একটি বই এর ২ টি অধ্যায় পড়ে নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের উত্ত লিখে সুপারভাইজারকে পাঠানো পরের দিন সুপারভাইজারের ই-মেইল পাঠিয়েছে Plagiarism বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিসি ও পানিশমেন্ট এর লিংক। ইমেইল পড়ে আমি পুরাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি। মান-সম্মান নিয়ে টানা-টানি অবস্থা। পরেরদিন সুপারভাইজারকে মুখ দেখাবো কিভাবে এই ভেবে কুল পাই না। পরের দিন সুপারভাইজারের সাথে দেখা হলে আমাকে বলে তুমিই প্রথম না। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ছাত্র-ছাত্রীরা এই ভুলটা নিজের অজান্তেই করে; কারণ তাদের নিজ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে উচ্চশিক্ষায় Plagiarism যে একটি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ তা শিক্ষা দেওয়া হয় না। আমার দুর্ভাগ্য যে বাসিত ভাই এর এই বইটি যদি আমি পড়তে পারতাম উচ্চশিক্ষার্থে বাংলাদেশ ছাড়ার পূর্বেই।

উচ্চশিক্ষার্থে আগ্রহী বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষকদের অনুরোধ করবো "উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা : সংকটের স্বরূপ এবং উত্তরণে করণীয়" বইটি সংগ্রহ করে পড়ার জন্য। মাতৃভাষায় উচ্চ শিক্ষার দিক-নির্দেশনা বিষয়ক এমন তথ্য-সম্মৃদ্ধ বই খুজে পাওয়া দুষ্কর।




মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


ভালো বই হওয়ার সম্ভাবনা

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১০

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন:
বইটি প্রকৃত পক্ষে অনেক সাহায্যকারি হবে তরুন গবেষক কিংবা ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে চায় এমন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য।

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: সত্য কথা বলি- এই রকম বই আমার পড়া হয় না।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১০

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন:

এবার শুরু করে দেন রাজীব ভাই। আপনার কোন বই বের হয় নাই এই বই মেলায়?

৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪৪

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কথা বলি, এরা হলো দল কানা। এদের পক্ষে জাতিকে নতুন কিছু দেয়া সম্ভব নয়।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১১

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন:
এই দল কানাদের মাঝে উপরোক্ত অধ্যাপক একজন ব্যাতিক্রম।

৪| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই ধরণের বই কি বাংলাদেশে আগে লেখা হয়েছে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.