নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃহত্তম বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষক আমি। একজন শৌখিন লেখকও বটে। শখের বশে কবিতাও লিখেছি এক সময়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও বিভাগীয় পত্রিকায় এবং ব্লগে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করি।

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন

মানুষের মাঝে প্রকৃতিকে খুঁজে বেড়নো আমার শখ। মানবতা আমার ধর্ম। কোন অভৌত সম্পর্কে আমি অনুগামী ভক্ত নই। আমার ভালো লাগা রক্ত-মাংসের মানুষের সম্পর্কায়নে। আমি সার্বজনীনতায় বিশ্বাসী।

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মনস্তাত্বিক দাসত্ব - ২রা ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা মুক্ত দিবস’ প্রসঙ্গে

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩১


(সুত্র: সম্পাদকীয়। দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম। ২রা ডিসেম্বর ২০১২। )

বিনিময় প্রথার যুগে দ্রব্যের বিনিময়ে দ্রব্য কেনা-বেচা আমাদের সকলেরই জানা। পরবর্তী সময়ে অ্যাডাম স্মিথ তার ‘‘ওয়েলথ অব ন্যাশনস” গ্রন্থে ‘বার্টার সিস্টেম’ এর মাধ্যমে দ্রব্য বিনিময়ের সংশোধনী এনে তাকে বাজারজাত করণের আধুনিকায়ন করেছেন। অতি প্রাচীন কাল থেকেই পণ্যের মতো হাটে-বাজারে মানুষ বিক্রি হতো। গ্রীসের অন্যতম প্রাচীন দার্শনিক অ্যারিষ্টটলের মতে, দাস ব্যবস্থা প্রকৃতিরই নিয়ম। গ্রিকরা দাস বা স্লেইভ বুঝাতে ‘মানুষের মতো জীব’ কথাটি ব্যবহার করতো। দাস প্রথার আদ্যোপ্রান্ত খুব ভালো করেই ফুটে উঠেছে উপন্যাসিক হাওয়ার্ড ফাস্ট রচিত স্টেনলি কুবরিক পরিচালিত হলিউডি চলচিত্র ‘স্পার্টকাস’ এ। দাস ব্যবস্থার প্রথম সফল বিপ্লবী মহানায়ক স্পার্টাকাসের সময়কাল খিষ্ট্রপূর্ব ১ শত বছর।

ইতিহাসবেত্তারা দাসপ্রথার সর্বশেষ সময়কে ১৯৬৩ ধরলেও আদতে এর কোন শেষ বলে কিছুই ঘটেনি। আমাদের আচরণ, স্বভাব ও রক্তের সাথে মিশে আছে এই দাসত্ব। দাস প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার নির্দিষ্ট কোন তারিখ নেই। তবে জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী ২ ডিসেম্বরকে পালন করা হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর দ্য এবলিশন অব স্লেভারি’ অর্থাৎ ‘আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা মুক্ত দিবস’ হিসেবে।
আজও আমরা বেচাকেনা হই মজুরীর বিনিময়ে। আমরা বন্দি করপোরেট সম্রাজ্যের চার দেয়ালে। আমাদের স্বকীয়তা নিয়ন্ত্রিত হয় করপোরেট সম্রাটদের ইচ্ছায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা বা রাত অধিকন্তু সমগ্র চাকুরী জীবন আমরা থাকি পরাধীন শৃঙ্খলে। এখানে ব্যক্তিগত কোন আবেগ, অনুভূতি এবং প্রয়োজন বলে কিছু নেই পেশাদারিত্বের লেবাসে।

‘প্রফেশনালিজম’ বন্দিত্বের নতুন কবজ। গৃহপালিত পশুর মতো ছকে আঁকা জীবনের চলচিত্র এটি। মনস্তাত্বিক দাসত্বের বাণিজ্যিকীকিরণ এখানে। সচরাচর আমাদের দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে একটি দৃষ্টান্ত প্রতীয়মান। পারিবারিক দাস-দাসীর ইতিকথা আর গৃহপরিচারীকার চারণভূমি এই ভারতমহাদেশ। স্থায়ী গৃহপরিচারীকার প্রচলিত ভাষা রূপান্তর চাকর বা চাকরানী। তাদের পাখির খাঁচার মতো পরাধীন জীবন বন্দনা মধ্যযুগীয় দাস প্রথারই প্রতিচ্ছবি। এখানে জীবন বড্ড বেরসিক। শারিরীক বন্দ্বিত্বের চেয়ে মানসিক বন্দ্বিত্ব চরম এখানে। এক অদৃশ্য বেড়ী বাঁধা থাকে মনের পায়ে। মনস্তাত্বিক দাসত্বের প্রভূত্ব মেনে নিয়ে এরা পৌঁছে যায় ত্যাগ, সেবা আর মহত্বের শিখরে। রবীন্দ্রনাথ তার ‘‘খোকা বাবুর প্রত্যাবর্তন” গল্পে পারিবারিক ভৃত্যের যে চরিত্র তুলে ধরেছেন তাতে আচরণ ও স্বভাব সিদ্ধ ভৃত্য রায়চরণের বংশ পরম্পরায় তিন পুরুষের সেবা করা আর যা কিছুরই প্রমাণ দিক মূলতঃ তা মনস্তাত্বিক দাসত্ব।

রায়হান সাহেব চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করার আগে একটা বহুজাতি কোম্পানিতে চাকুরিরত ছিলেন। সেখানে থাকাকালীন সময়ে প্রায় প্রতি ছুটির দিনগুলোতে বিশেষত জাতীয় দিবসগুলেতে কোম্পানি বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করতো; যেমনঃ ‘‘ ‘ক’ কোম্পানি ফুটবল কম্পিটিশন”। আর এধরনের প্রত্যেক অনুষ্ঠানে তাকে উপস্থিত থাকতে হতো কোম্পানি প্রতিনিধি হয়ে। একসময় রায়হান সাহেব বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও পরিবার পরিজন থেকে নিজেকে আলাদা আবিস্কার করলেন। তার মনে হলো তিনি যেন ছিটকে পড়ছেন সমাজ থেকে। তাই তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেন চাকরি ছেড়ে দেওয়ার এবং পরবর্তিতে যোগ দিলেন শিক্ষকতায়।

একটা উদাহরণ দাঁড় করানো যেতে পারেঃ
প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই মনে আতঙ্ক জাগে রায়হান সাহেবের। বড্ড অনিহা জাগে অফিসে যেতে। মনের ঘরে ছবি ভেসে উঠে ‘প্রফেশনালিজম’ নামক মায়া দয়াহীন যান্ত্রিক সম্পর্ক ও আবহ গুলোর। দৈনিক ১০/১২ ঘন্টা এক্সেকিউটিভ পোশাকের এই কয়েদিকে অফিস শেষে পরিবার বা বাসার উদ্দেশ্যে বের হতে হয় জামিন নিয়ে প্যারলে (Parole), পরের দিন ঠিকঠিক সময়ে অফিসে ফিরে আসবেন এরকম সন্ধিতে। পারসোনাল বা সোশ্যাল লাইফ বলে কিছু নেই। শত কষ্ট করে বসের অহেতুক বকাবকি, অরগানাইজেশনাল পলিটিকস, কাজের সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ার পরও মাসের শেষে ঘরভাড়া আর সংসারের নানাবিধ খরচ ও টানাপোড়নের কথা ভেবে বাধ্য হয় রায়হান সাহেব অফিসে যেতে। অফিসে না গিয়েও বাসায় বসে দেখেছেন কেন যেন অসস্থি লাগে। একটা মনস্তাত্তিক দাসত্বের শিকার হয়ে গেছে সব কিছু। বুকের ভিতরে কিসের যেন একটা হাহাকার বোধ করেন সব সময়। নিজে কিছু একটা হওয়ার, কিছু একটা না করতে পারার প্রসব বেদনা কুরে কুরে খায় তাকে অহর্নিশ। কিন্তু করপোরেট দুনিয়ায় মানুষের জীবনযাপনের ধারা ও ধরন সবই নিয়ন্ত্রিত হয় করপোরাল ইচ্ছায়। সকাল থেকে রাত অব্দি কাজ করে আর কিছুই করার থাকে না। তাই অসহায় রায়হান মাঝে মাঝে নিরবে কেঁদেই ফেলেন। কেমন যেন একটা মানসিক যন্ত্রণা বোধ করেন সব সময়।
আমরা সবাই জানি সার্কাসের বিশাল দেহী হাতি কেমন করে তার মালিকের সাথে সুবোধ হয়ে খেলা করে কোনরকম হুমকি ছাড়া-ই। শিকার মানানোর পদক্ষেপ হিসেবে হাতিটিকে প্রথমে চিকন অথচ শক্ত ধরনের এমন কিছু শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। যখনই ওই হাতিটি পালানোর জন্য এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে তখনই সে পায়ে দড়ির টান পায় এবং পায়ে চোট লাগে। এমনি করতে করতে হয়তো পায়ে ঘা পড়ে যায়। পক্ষান্তরে, চোট পাওয়ার ভয়ে হাতিটি আর পালাতে চায়না। সে ওই গন্ডির মধ্যে থাকতে এবং মনিবের প্রভুত্ব মেনে নিতে বাধ্য হয়।
আজ সকালে বড় এক করপোরেশনের সামনে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম- সারিসারি এক্সিকিউটিভের দল গলায় টাই ঝুলিয়ে মুরগির ছানার মতো তড়িঘড়ি করে খোয়াড় স্বরূপ অফিসে ঢুকছে। দেখে মনে হলো যেন ঢুকতে পাছে দেরি না হয়ে যায়। শুনা গেল এ তড়িঘড়ির পেছনে কারণ ছিল প্রতি তিনদিনের বিলম্বে একদিনের বেতন কর্তন।

এমন অনেক ঘটনা পরিক্রমার এমন এক একটি জীবন, এক একটি নাটক, এক একটি গদ্য অথবা পদ্য ঔপণিবেশিক অতীতের নির্মম দাস বানিজ্যের কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয়। সত্যিকারের মুক্তির মন্দির এখনো সভ্যতার ইতিহাসে স্থাপিত হয়নি। তবে আমরা আশা করি ১ লা মে তথা আর্ন্তজাতিক শ্রমিক দিবসের মতো আমাদের দেশেও ২রা ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা মুক্ত দিবস’ যথাযথ ভাবগাম্ভির্যতার সাথে পালিত হোক (যদিও অনেক বড় বড় দেশীয় কোম্পানি ১লা মে তে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কার্জক্রম বহাল তবিয়তে চালু রাখে )। সচেতনতা বাড়ুক সকল শ্রেণীর পেশাদার বা চাকুরীজীবিদের মধ্যে। তৈরি হোক কাজের সুষ্ঠু, বন্ধু সুলভ ও সামাজিক পরিবেশ। দূর হোক মানসিক দাসত্ব ও নির্যাতন। মানসিকতা হোক মানবিক ।

লেখকঃ কলামিষ্ট

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৪

দেবজ্যোতিকাজল বলেছেন: কোন কোন দেশে দাস বিদ্রোহ হয়নি ?

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৫

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: স্যার, আপনার এই প্রশ্নের উত্তরটা এই মুহূর্তে আমার পক্ষে দেওয়াটা কঠিন। তবে উল্লেখযোগ্য দেশগুলো, যেগুলোতে দাস বিদ্রোহ অন্যতম পর্যায়ে পৌছেছে তার কয়েকটা নাম আমি অাপনার সাথে শেয়ার করতে পারি। যেমনঃ হাইতি, আমেরিকা, সাউথ আফ্রিকা প্রভৃতি দেশ।
প্রশ্ন ও লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৩| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৮

দেবজ্যোতিকাজল বলেছেন: তুমি যে দাসত্বের কথা বলেছ ,আমি তা বলিনি ।আমি বলেছি দাস প্রথার কথা ।একমাত্র ভারতবর্ষেই দাস বিদ্রোহ হয়নি । কারণ ভাগ্যবাদ বা অদৃষ্টবাদ কে প্রচার করার ফলে ।
অদৃষ্টবাদ ও ভাগ্যবাদকে মানলে তাকে প্রতিবাদ বিমুখ করে :):):)ভাল থেকো:D:D:D

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৪

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: দারুণ একটা নতুন তথ্য জানতে পারলাম স্যার আপনার কাছ থেকে। বিশ্বজোড়া পাঠশালায় আমার আরেকজন পন্ডিত গুরু আপনি হলেন। কৃতজ্ঞ থাকব যতদিন বাঁচি।
আজ একটা লিখা পোষ্ট করলাম। আপনার গুরুগম্ভির সমালোচনা প্রত্যাশি

৪| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৩

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: দারুণ একটা নতুন তথ্য জানতে পারলাম স্যার আপনার কাছ থেকে। বিশ্বজোড়া পাঠশালায় আমার আরেকজন পন্ডিত গুরু আপনি হলেন। কৃতজ্ঞ থাকব যতদিন বাঁচি।
আজ একটা লিখা পোষ্ট করলাম। আপনার গুরুগম্ভির সমালোচনা প্রত্যাশি।

৫| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৮

গেম চেঞ্জার বলেছেন: দৈনিক ১০/১২ ঘন্টা এক্সেকিউটিভ পোশাকের এই কয়েদিকে অফিস শেষে পরিবার বা বাসার উদ্দেশ্যে বের হতে হয় জামিন নিয়ে প্যারলে (Parole), পরের দিন ঠিকঠিক সময়ে অফিসে ফিরে আসবেন এরকম সন্ধিতে। পারসোনাল বা সোশ্যাল লাইফ বলে কিছু নেই। শত কষ্ট করে বসের অহেতুক বকাবকি, অরগানাইজেশনাল পলিটিকস, কাজের সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ার পরও মাসের শেষে ঘরভাড়া আর সংসারের নানাবিধ খরচ ও টানাপোড়নের কথা ভেবে বাধ্য হয় রায়হান সাহেব অফিসে যেতে। অফিসে না গিয়েও বাসায় বসে দেখেছেন কেন যেন অসস্থি লাগে। একটা মনস্তাত্তিক দাসত্বের শিকার হয়ে গেছে সব কিছু।

আপনার অ্যাপ্রোচটা পছন্দ হয়েছে...... চালিয়ে যান। আর নতুন বলে টুকিটাকি কিছু পরামর্শ হিসেবে আপনাকে আমি এই পোস্টটি রেফার করবো।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩২

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: স্যার, অাপনার Click This Link [সামু ব্লগের সহজ পাঠ!! (অনভিজ্ঞদের জন্য)] লিখাটা খুব বেশী সাহায্য করেছে আমাকে। অত্যন্ত উপকারী একটা পোস্ট।

আপনাকে স্যালুট।

আমার লেখনি সন্ক্রান্ত আপনার মন্তব্য, সাজেশন, এডভাইস ও সামালোচনা সবসময় উচ্চ মর্যাদায় থাকবে।

ধন্যবাদ,

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.