নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃহত্তম বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষক আমি। একজন শৌখিন লেখকও বটে। শখের বশে কবিতাও লিখেছি এক সময়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও বিভাগীয় পত্রিকায় এবং ব্লগে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করি।

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন

মানুষের মাঝে প্রকৃতিকে খুঁজে বেড়নো আমার শখ। মানবতা আমার ধর্ম। কোন অভৌত সম্পর্কে আমি অনুগামী ভক্ত নই। আমার ভালো লাগা রক্ত-মাংসের মানুষের সম্পর্কায়নে। আমি সার্বজনীনতায় বিশ্বাসী।

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ জটিলতার প্রয়োজন দ্রুততর সমাধান

০১ লা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:২৯


(সুত্রঃ সম্পাদকীয়, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ, ৪ আগষ্ট ২০১৮, শনিবার, চট্টগ্রাম।)
( অনলাইন পত্রিকা সংস্করণ- জাগোনিউজ২৪ডটকমঃ Click This Link )

গত কয়েক বছরে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম গতিশীল উন্নতি দেখা গেছে বাংলাদেশে। ২০০৬ সাল থেকে উন্নতির মুখ দেখতে থাকে বাংলাদেশ। এরপর থেকে বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২.৫ করে বাড়তে থাকে প্রতি বছর। এধরেণের উন্নতির পিছনে নারীর ক্ষমতায়নে সরকারি উদ্যোগ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্র্যাকের ভূমিকা আলোচনায় এসেছে অনেকবার। নারীদের শিক্ষাদান এবং তাদের সোচ্চার করে তোলাতে শিশুস্বাস্থ্য এবং শিক্ষার উন্নতি হয়েছে আগের তুলনায় কয়েকগুণ। বাংলাদেশের এ উন্নতির পেছনে আরেকটি কারণ হলো তৈরি পোশাক শিল্পের সাফল্য। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে শ্রমিকদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে বারকয়েক। যদিও এখনো শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য আরও উপযুক্ত আইন প্রণয়ন জরুরি। বর্তমানে যে আইন আছে তা নতুন কর্মসংস্থান এবং শিল্প ক্ষেত্রে উন্নতির যথেষ্ট কাজে এসেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ৭৫৫টি পোশাক কারখানার সংস্কারকাজ শেষ করতে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ না করলে কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে দেশীয় সক্ষমতায় ‘রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন’ বা ‘সংস্কারকাজ সমন্বয় সেলে’র (আরসিসি) কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রেতাজোট ‘অ্যাকর্ড’ ও ‘অ্যালায়েন্সে’র মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের মে মাসে। কারখানা সংস্কার তদারকিতে তাদের আরও ছয় মাস সময় দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে, রানা প্লাজা বিপর্যয় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল ৷ চালু হয়েছিল ‘‘অ্যাকর্ড”, ‘‘অ্যালায়েন্স” এবং ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ” এর মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, যার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের গার্মেন্টস ওয়ার্কারদের কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা। তথ্যমতে, পোশাক শিল্পে কর্মরত প্রায় ৪৫ লক্ষ শ্রমিক অত্যন্ত পরিশ্রম করে দেশ এবং শিল্পের উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করে আসছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা ও শিল্প উন্নতির লক্ষ্যে ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করে চলেছেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নতুন করে নির্ধারণের জন্য একটি মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়। পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি মাসিক ১৬ হাজার টাকার পরিবর্তে ২০% বৃদ্ধিতে অর্থ্যাৎ ৬ হাজার ৩৬০ টাকা দিতে রাজি হয় মালিকপক্ষ। সর্বশেষ মজুরি বোর্ডের তৃতীয় সভায় গত ১৬ জুলাই ২০১৮ এ প্রস্তাব করেন গার্মেন্টস মালিকদের প্রতিনিধি হিসেবে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। এদিকে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে যখন ব্যবধান বিস্তর তখন বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় শ্রমিক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার ভূঁইয়া ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ২০ টাকা করার প্রস্তাব দেন। বর্তমানে একজন নতুন শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা। তবে শামসুন্নাহার ভূইয়ার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে থাকা শ্রমিক সংগঠনগুলো। ফলে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়। এদিকে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ চূড়ান্ত করতে হবে, যা আগামী ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে মজুরির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম । যদিও বোর্ডকে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার জন্য সরকারের বেঁধে দেওয়া ছয় মাস সময় আগামী ১৮ আগস্ট শেষ হচ্ছে। বাকি কাজ শেষ করার জন্য মজুরি বোর্ড শ্রম মন্ত্রণালয়ের কাছে আরও তিন মাস সময় বাড়ানোর আবেদন করবে বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, গার্মেন্টস শ্রমিকদের তীব্র আন্দোলনের পর মজুরী বোর্ড ২০১৩ সালে পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরী ৫৩০০ টাকা ঘোষণা করে যেখানে দাবী ছিল ন্যূনতম মজুরী ৮০০০ টাকার। সর্বশেষ ২০১৩ সালে যে ন্যূনতম মজুরী ঘোষণা হয়েছিল ৫৩০০ টাকা; যাতে খাদ্য ভাতা হচ্ছে ৬৫০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ১২০০ টাকা, যাতায়ত ভাড়া ২৫০ টাকা, মেডিকেল ২০০ টাকা, বেসিক ৩০০০ টাকা। দেশে এইখাতের শ্রমিকদের জন্য ১৯৮৪ সালে প্রথম মজুরী ঘোষণা করা হয়। ওই সময় শ্রমিকদের ন্যূনতম মোট মজুরী ছিল ৬৩০ টাকা। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে ৯৩০ টাকা, ২০০৬ সালে ১ হাজার ৬৬২ টাকা, ২০১০ সালে ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। ‘ট্রেডিং ইকোনমিক্স’এর ২০১৮ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মার্কিন ডলারে বাংলাদেশের শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন দেখানো হয়েছে ৬৩.২৬ ডলার। যেখানে কানাডার ২৬১৭ ডলার, ফ্রান্সের ১৮৩০ ডলার, জার্মানীর ২৫৯১ ডলার, যুক্তরাজ্যের ২৬১৯ ডলার, যুক্তরাষ্ট্রের ১৭৪০ ডলার এবং জাপানের ১৮৭০ ডলার। আইএলও ১০০ ডলারের নিচে বেতন যেই যেই দেশের তার একটি তথ্য দিয়েছে যার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। রানা প্লাজা দূর্ঘটনার পর সি.এন.এন. একটা তথ্য প্রতিবেদনে দেখিয়েছিল আমেরিকাতে তৈরী একটা ডেনিম শার্টের মজুরী পড়ে ৭.৪৭ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬০০ টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশে তৈরী শার্টটির মজুরী পড়ে দশমিক ২২ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৮ টাকা। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশের মজুরী কাঠামোকে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে ২০০৬ সালে দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশে উৎপাদিত একটি গার্মেন্টস পণ্য ইউরোপে বা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১০০ ডলার বিক্রি হলে কারখানার মালিক পান ১৫ – ২০ ডলার, উৎপাদিত রাষ্ট্র ২৫ – ৩০ ডলার এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠান ৫০ – ৬০ ডলার পেয়ে থাকে। উৎপাদনকারী শ্রমিকের ভাগে পড়ে মাত্র ১ ডলার।

শ্রমিকদের বাড়ি ভাড়া, যাতায়ত ভাড়া, চিকিৎসা ব্যায় বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতে পোশাক শিল্পে শ্রমিক মজুরী পুনঃনির্ধাণের দাবির যৌক্তিকা আছে বৈকি। তবে বর্তমান ৫৩০০ টাকা থেকে এক লাফে ১৬০০০ টাকার দাবি কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ। হঠাৎ করে এক ধাপে এতো টাকা বাড়ানোর সক্ষমতা সব মালিক শ্রেণীর পক্ষে কতোটা সম্ভবপর তা বিবেচনা করে দেখতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে এখাতে কোন উপায়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করে বাংলাদেশে এই শিল্পের বর্তমান সুনাম নষ্ট করার পিছনে কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দেওয়া যাবে না। এমনও হতে পারে বাংলাদেশে এই শিল্পের বর্তমান প্রতিষ্ঠিত অবস্থান নষ্ট করে এই বাজারকে বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে ভিয়েতনাম, ভারত, শ্রীলঙ্গাসহ অন্যান্য দেশে প্রতিষ্ঠিত করার সুদূর প্রসারি চিন্তার কাজ করতে পারে কোন বিদেশী চক্র। বাংলাদেশ বর্তমানে ২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গার্মেন্টস রপ্তানি করে থাকে। সরকার সেটাকে ২০২১ সাল – অর্থাৎ দেশের পঞ্চাশতম বার্ষিকীর মধ্যে ৫০ বিলিয়নে দাঁড় করাতে চান। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে এক হয়ে কাজ কাজ করতে হবে। যাদের ঘর্মাক্ত শ্রমের বিনিময়ে আজ আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশের স্বীকৃতি অর্জন করতে পেরেছি তাদের শ্রমের মূল্য ও জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্রের ভূমিকা প্রধান। আর তা করতে হবে তাদের মজুরী বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে। পোশাক শিল্পে কর্মরত এই বিশাল (৪৫ লাক্ষ) শ্রমিকগোষ্ঠীকে হতাশায় রেখে ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। হতাশা ও অনিশ্চয়তা শ্রমিকের উৎপাদক্ষমতা কমিয়ে দেয়, নষ্ট করে দেয় শ্রমশক্তি। তাই যতদ্রুত সম্ভব শ্রমিকদের ন্যুনত মজুরী বাস্তবসম্মত উপায়ে যৌক্তিক ভিত্তিতে পুনঃনির্ধাণ করে শ্রমরোষ বন্ধ করে তাদের উৎপাদমূখী করতে হবে।

লেখকঃ কলামিষ্ট
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: সহমত।
তারা যে পরিমান কষ্ট করে সে পরিমান পারিশ্রমিক পায় না।

০১ লা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:০৫

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: কৃতজ্ঞতা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.