![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি লাল নীল স্বপ্নের দেশে স্বপ্ন নিয়ে হাতড়ে বেড়ানো একটা মানুষ...
সূর্য প্রায় সন্ধায়ই একটা শপিং সেন্টারের সামনে দাড়িয়ে থাকে, সুখি মানুষ দেখবে বলে। শপিং শেষের হাঁসি মুখের বাড়ি ফেরা মানুষগুলোকে দেখতে ভালো লাগে তার। একবার গুনেছিলো প্রতি মিনিটে ১০ জন সুখি মানুষ দেখা যায় শপিং সেন্টারের বাহিরে; নানান রঙের মানুষ, হাত ভর্তি নানান রঙের শপিং ব্যাগ।
একটা ব্যাপার সূর্য খেয়াল করেছে, প্রকৃতি খুব সুন্দর করে অদ্ভুত অদ্ভুত মানুষগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় অদ্ভুত ভাবেই। একটা মেয়ে প্রায় বিকাল ৫ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত শপিং মলের বড় গেটটার কাছে এসে দাড়িয়ে ছিল একদিন। একই জায়গায় একই ভাবে ২ ঘণ্টা দাড়িয়ে থাকলে যে কারোই চোখে পরার কথা, সূর্য ও খেয়াল করেছে মেয়েটাকে। উদাসী, আনমনা মেয়েটি ঠিক ৭ টার সময় একটা গাড়ি আসলে গাড়িতে উঠে চলে যায়। খুবই সাধারণ ঘটনা। কিন্তু অদ্ভুত যে ব্যাপারটা তা হলো মেয়েটা প্রতি বৃহস্পতিবার ঠিক বিকাল ৫ টায় বড় গেটটার কাছে এসে দাড়িয়ে থাকে, সেই একই গাড়ি এসে ৭ টায় নিয়ে যায়। সূর্যর খুব জানতে ইচ্ছা করে মেয়েটি কি ৭ টায় যাবে বলে ৫ টা থেকে অপেক্ষায় থাকে? নাকি কোন বৃহস্পতিবারে ৫ টায় কারো জন্য অপেক্ষায় ছিলো আজ যা অভ্যাস হয়ে আছে। সূর্য ঠিক করেছে একদিন সে মেয়েটার সাথে কথা বলবে। তার অদ্ভুত দাড়িয়ে থাকার ব্যাপারে জানতে চাইবে। কিন্তু জেঁচে পরে জানতে চাওয়া কি ঠিক হবে? সূর্য জানে, মনের ভিতর কৌতূহল চাপা দিয়ে রাখতে নেই। মনের মধ্যে অনেকদিন কৌতূহল চাপা দিয়ে রাখলে সে কৌতূহলে পোকা ধরে যায়, অতৃপ্তির পোকা। সদ্য রঙ করা দেয়ালের পাশে নোংরা ইট অনেকদিন অবহেলায় রেখে দিলে নতুন দেয়ালটায় যেমন শ্যাওলা ধরে যায়, কৌতূহল না মিটালে মনের দেয়ালেও শ্যাওলা ধরে যায়। সূর্য ভাবে, এমনও তো হতে পারে মেয়েটাকে সে কখনোই কোন কিছু জিজ্ঞেস করতে পারবে না। হয়তোবা সে সুযোগটাই আসবেনা কোনোদিন। পরের বৃহস্পতিবার থেকে মেয়েটি হয়তো অন্য কোথাও তার সুখ খুঁজে পাবে। ব্যাপারটা আসলেই খুব অদ্ভুত, তবে জটিল কিছু না। পৃথিবীর খুব অদ্ভুত ব্যাপারগুলো চারপাশে রহস্য ভর করে থাকে, এ রহস্যভেদ এর ক্ষমতা প্রকৃতি মানুষকে দিতে চায় না সহজে। কখনও কখনও এই রহস্যের সুত্র বিষয়টার খুব কাছাকাছি পর্যায়েই থাকে। কিন্তু মানুষ জটিল চিন্তা করে নিজেকে আরও বাক্স বন্ধী করে ফেলে। রহস্য ভেদ করে উত্তরটা পাওয়ার অনুভূতি মানুষ কোন কিছু দিয়েই ব্যাখ্যা করতে পারে না। তাই প্রকৃতিও চায়না মানুষ সহজেই কোন কিছু পেয়ে যাক। সূর্য মনে মনেই তাই একটা উত্তর দাড় করে নেয় মেয়েটার ব্যাপারে। মেয়েটাও হয়তো মানুষ দেখে, সুখি মানুষ।
হঠাৎ একটা চিৎকার সূর্যকে রাস্তার দিকে নিয়ে যায়। একটা ছেলে বয়স ৪/৫ বছর হবে অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পরে আছে। বেঁচে আছে না মারা গেছে বুঝতে পারে না সূর্য। এই মাত্র সুখি মানুষের একটা প্রাইভেট কার বাচ্চাটিকে চাপা দিয়েছে। প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে ছেলেটার পা দুটো খুব খারাপ ভাবে থেতলে গেছে। ছেলেটার রক্তে ভিজে আছে পিচ ঢালা রাস্তাটা। মা পাশে কাঁদছে, বাবা চিৎকার করে একটা সি এন জি ডেকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে বাচ্চাটাকে। চারিপাশে সুখি মানুষ, শুধু যে জায়গাটায় এক্সিডেন্টটা হয়েছিল সেখানে রক্তের দাগ আর ৪/৫ বছরের বাচ্চার জন্য নুতন কেনা একটা জুতার থেতলানো প্যাকেট পরে আছে অবহেলায়। যে জুতা জোড়া হয়তো আর কোনদিনই সেই পায়ে শোভা পাবে না, যার জন্য তার তৈরি হয়েছিলো। এসব ভাবতে ভাবতেই চোখজোড়া ঘোলাটে হতে থাকে সুর্যের।
সন্ধ্যা নামছে। অদ্ভুত একটা অন্ধকার তার ঝাঁপী মেলে দেখে দিচ্ছে শহরটাকে, আশেপাশের সবকিছুকেই। সুর্য আর পারলো না দাড়িয়ে থাকতে, কিছু হারানোর অনুভূতি নিয়ে হেটে চলল যাযাবর পথে। আসলে পৃথিবীতে দুটো জিনিষ কোন ভাবেই প্রকাশ করা যায় না। এক পাওয়ার অনুভূতি আর দুই হারানোর অনুভূতি। প্রকৃতি কোন সুখের জিনিসই বেশিদিন বুকে ধারন করার সুযোগ দেয় না।
সূর্যর আর কোনদিনই জানা হয়নি সেই মেয়েটির চোখের দৃষ্টির ওপাশে কি আছে। সূর্য এর পর আর কোনদিনই শপিং মলের সামনে এসে দাঁড়ানোর সাহস পায়নি।
©somewhere in net ltd.