ত্রিভুজ ভালবাসা

০৭ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৫

মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা, মা আর সন্তানের মাঝে অদ্ভুদ একটা ত্রিভুজ ভালবাসা কাজ করে।

কখনো আব্বুর সামনে জোর গলায় কথা বলি না। এটা ঠিক ভয় না...

জীবনে যা কিছু দরকার হয় সবকিছুই আম্মুকে বলি। আর আম্মু গিয়ে আব্বুকে। বকাও শুনতে হয় আম্মুকে।

আব্বুটা অনেক কঠিন। শাসন তেমন করে না, কিন্তু দুইবছর পরে যেদিন ধরতো কাঁদায়ে ছাড়তো। মনে পড়ে আব্বুর হাতে পিটানি খেলে অনেক কাঁদতাম। আর বেশিরভাগ পিটানি রাতেই খেতাম। পিটানোর পরে আম্মু এসে আদর করে ঘুমাতে বলতো। কিন্তু কেঁদেই যেতাম। একসময় আম্মু নিজের রুমে চলে যেত। হঠাৎ গায়ের উপর দেখতাম একটা হাত!!!
আব্বুর হাতই থাকতো। আঘাত করার স্থানে হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতো।

অসুস্থ হওয়ার পরে যন্ত্রণায় প্রচন্ড কাঁদতাম।নিজের চুল ছিড়ে ফেলতাম। হাত আর পা ধরে রাখতো তিনচার জন। আম্মু বাতাস দিত আর কাঁদতো। আব্বু সামনে থাকতো না। আড়ালে চলে যেত। আব্বুদের মনে হয় সামনে কাঁদতে নেই।

১ম বার অপারেশনের সময় অজ্ঞান করা হইছিলো বলে কি হয়েছিলো বলতে পারবো না। কিন্তু ২য় অপারেশনের সময় ভুল করে একঘন্টা আগেই ওটিতে নিয়ে গিয়েছিলো। আব্বু আর আম্মু বাইরে ছিল। ভিতরে বসে আমি আরেকটা অপারেশন দেখছিলাম। একজন ডাক্তার এসে বললো "তোমার তো অপারেশন করতে দেরি হবে তাই তোমার আব্বু-আম্মু তোমার সাথে আরেকবার দেখা করবে।"
দরজার কাছে গিয়ে দেখি আম্মু কাঁদছে। আব্বুকে কাঁদতে দেখি নি, কিন্তু চোখের নিচে পানি মোছার দাগ ছিল।

অপারেশনের পরে হসপিটালে ড্রেসিং এর সময় প্রচন্ড কাঁদতাম। যন্ত্রণায় মাথা ঘুরে যেত। আব্বু ধরে রাখতো আর আম্মু এককোণে বসে কাঁদতো। একদিন হঠাৎ আব্বুকে ভেউ ভেউ করে আমার সাথে কাঁদতে দেখেছিলাম। আমি আর কাঁদতে পারি নি।

তৃতীয় অপারেশন করে বাসায় আসার পরে আম্মুরে ড্রেসিং করতে দিতাম না। বলতাম বড় হয়ে গেছি তোমার সামনে ড্রেস খুলতে পারবো না। প্রতিদিন দুইবার একদম আম্মুর মত করে আব্বুই ড্রেসিং করে দিতো।

আব্বু গরমের সময়ে প্রতিদিন পান্তাভাত খায় । রুটি বা গরমভাত খেতো না। প্রায় প্রতিদিনই আব্বু আমাকে গালে তুলে ঐ ভাত খাওয়াতো যদিও আমি আগেই একবার খেতাম।

সবাই বলে আম্মু আর আব্বু নাকি আলাদা রকমের হয়। আমি তো তা দেখি না। আম্মুর মধ্যে যেমন আব্বুকে দেখি, আব্বুর মধ্যেও তো আম্মুকে খুঁজে পাই।

আব্বুর গলা ধরে মাঝে মাঝে বলতে ইচ্ছা করে তোমাকে অনেক ভালবাসি। কিন্তু বলা হয় না। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা বাবাকে এটা বলার সাহস পায় না....

০ টি +০/-০