নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এটা নিমচাঁদের ব্লগ

পুড়ছিল ওই শ্মশান ভরে কাঠের রাশি, পুড়তে আমি ভালোবাসি, ভালোইবাসি।

নিমচাঁদ

ঝিনুক নীরবে সহো,ঝিনুক নীরবে সহো ঝিনুক নীরবে সহে যাও, ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

নিমচাঁদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিজয়ীদের একটি গল্প থাকে , কিন্ত বিজিতদের কোন গল্প থাকে না

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৪২

প্রত্যেকের একটা নিজস্ব গল্প থাকে ।
ঘড়ির কারিগর জাকির নতুন দোকান দিয়েছে , রমরমা সাজ সজ্জা ।সন্ধ্যা বেলায় চার-পাঁচ রঙের ঘূর্ণায়মান বাতি ঝিকিমিকি করে রাস্তা আলোকিত করে ।সে আলো আমার গায়ে পড়তেই আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলুম ।

কি জাকির কি খবর ? দোকান খুব সুন্দর হয়েছে ।
- ভাই ,অনেক কষ্টে দিতে পারছি , অনেক কাহিনী আছে ।

আমি জানি মানুষ এক প্রাণী , জগতের অনেক জীবের সাথে তার অনেক মিল আছে । এই যেমন প্রতি জন মানুষের আলাদা আলাদা কাহিনী আছে ।
মহল্লায় দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে দুই পায়ের হাটু খাড়া করে মুড়ে ধরে উত্তম দাস ঘোলা চোখে রাস্তার দিকে চেয়ে থাকে ,
আমি জানি তার একটা গল্প আছে , সেই গল্পে একমাত্র ছেলেটা সুখী নায়ক , আর এই পোড়া বাবা দুখী একজন ভিলেন ।
উত্তম দাসের বয়স কতো ?
৭০ হতে পারে , ৮০ হলেও আমি আশ্চর্য হবো না ।

দুজোড়া জুতো পালিশে দিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে আমি জানি , কিছুক্ষণ পরেই উত্তম দাস তার ছানি পড়া ঘোলা চোখে আমার দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলবে, আমার পোলা পরশুদিন কি করছে শুনবেন ?

আমি জানি কি হতে পারে উত্তম কাকা। আপনার ছেলে গলা পর্যন্ত গিলে এসে , আপনাকে বেদম মারধর করেছে , আপনার দিনের আয় রোজগার গুলো পাতিপাতি করে খুজাখুজি করেছে -- এইতো ।

আমার ছাদের পেপে গাছে যে বাদুর টা নিয়মিত পাকা পেপে খেয়ে যেতো ,যখন ছাদে বিড়ি টানতে যেতাম তার তীব্র জ্বলজ্বল চোখে আমি প্রায় পড়তাম ।
আমি জানি তার ও একটা গল্প আছে ।
গেলোবার ছাদে এনে যে দীঘল কালো কোরবাণির গরুটাকে বেধে রেখেছিলাম , গাঢ় সন্ধ্যায় আমার ছোট কন্যা অনেক ক্ষণ তার দিকে চেয়ে ছোট একটা শ্বাস ফেলে বলেছিলো , বাবা গরুটা জানি কি বলতে চায় ।

আমি নিরবে মাথা নেড়ে নীচে চলে এসেছিলাম ,আমি জানি একটি কালো গরুর গল্প আছে্‌ ,আমি জানি আমাদের শান্তার মায়ের রিকশা ওয়ালা জামাইয়ের বার গমনের কাহিনী আছে , আমি শুনেছি চম্পাবতী নামের আমাদের পরিচিত সেলাই বালিকার জীবনে দু দুটি বঞ্ছনার করুণ গল্প আছে ।

আমি মাঝ রাতে টেলিফোনের ওপারে জানি ,
উনিও সুখী হতে চেয়েছিলেন । আমি জানি আমার একজন বড় আপার কিডনী প্রায় ড্যামেজ , উনি দেখা হলেই করুণ হাসি হেসে বলেন, তুমি ভালো আছো তো বিপ্লব ?

মহল্লার নতুন বিয়ানো ৬ টি কুকুর ছানা হতে এখন তিনটি টিকে আছে , বাকী গুলো মরে গেছে , কিন্ত এই দুপুরে দেখলাম, তাদের মা বাকী তিনটিকে জড়িয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে ।

মানুষ ও এমন , মৃতদের শোক আমরা অতি দ্রুত ভুলে যাই , প্রকৃতি ভুলে যেতে বাধ্য করে , সকালে জানাজা পড়ে রাত্রে পরিতৃপ্ত রমণ শেষে , শেষ রাত্রের জোছনার আলোতে অবগাহন করতে চায় মানব ----

এই ছোট ছোট গল্প শেষে আমরা এক সময় ধুলো মোড়া ফ্রেমের বাসিন্দা হয়ে যাই , আমি এই গল্প ভালো করে জানি , বিজয়ীদের অন্ততঃ একজন ইতিহাস বিদ থাকে , কিন্ত বিজিতদের কোন ইতিহাসবিদ থাকে না ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫৯

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: এরকম লেখা শুধু অনুভব করা যায়, কিছু বলার বা লেখার থাকে না, দ্বীর্ঘশ্বাস ছাড়া..........

২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১:১৩

সুমন কর বলেছেন: এই ছোট ছোট গল্প শেষে আমরা এক সময় ধুলো মোড়া ফ্রেমের বাসিন্দা হয়ে যাই................

ভালো লিখেছেন।

৩| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অসাধারন অনুভব!
জীবনের নির্যাস যেন ছেঁকে তুলে আনা!

সকলেরই গল্প থাকে। গল্পের পেছনেরো গল্প থাকে।
অনুভবের প্রখর চোখেই ধরা পড়ে-

জীবন বোঁধের সসীমতায় মানুষ আটকে থাকে আটপৌড়ে চেতনায়!
অসীমের আগল খুলে দিলে - অনন্ত অসীম সৃস্টিআনন্দে মেলে- মানুষেই সব!

@আপনার প্রণোচ্ছলতায় মুগ্ধ! রীতিমতো পাঙ্খা হয়ে গেলাম ভায়া :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.