নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমাকে খুঁজে পেতে এখানে যেতে পারেন- https://www.facebook.com/rezwan.tanim?fref=ts

রেজওয়ান তানিম

প্রকাশিত গ্রন্থঃ অসুখগুলো প্রাপ্তবয়স্ক, শাদা পরচুল অন্ধকার, মৌনমুখর বেলায়, শাহবাগের সাথে সংহতি

রেজওয়ান তানিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুদ্ধাপরাধীদের জন্যে ঘৃণার মিনার

১৪ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৩

নতুন সূর্য ওঠার গল্প শুনতে সবসময়ই ভাল লাগে আমার। কিশোর বয়সে মা আমাকে ঘুম পারিয়ে দিতেন। খুব ভীতু ছিলাম তো, একা ঘরে ঘুমুতে পারতাম না। ঘুম পাড়াতে এসে মা প্রায়ই শোনাতেন রূপকথা, কুঁজো বুড়ির গল্প। আমি বলতাম, ওসব থাক মা, তুমি সকালের গল্প বল, বল সেই জাগ্রত সময়ের কথা। বল না মা, কেমন করে জেগেছিল শহীদের রক্তে ভেজা বাংলায় ভোরের সোনালি সূর্য? কেমন করে পেয়েছি আমরা রক্তের অক্ষরে লেখা লাল সবুজের অস্তিত্ব।



মা শোনাতেন তার চিত্রপটে আকা দু চারটা গল্প। তখন মা খুব ছোট ছিলেন। তেমন কিছু মনে করতে পারেন না। শুধু মনে পড়ে জানলাগুলো আটকানো থাকত, বাইরে গুলির শব্দ। মা’র কাছ থেকে শোনা গল্পগুলোই আমাকে শোনাতেন। গল্পগুলো খুব সাধারণ। ওর মাঝে ছিল নানুর কাছে এসে হায়েনাদের বানর খোজার গল্প (এই বানর আসলে ওদের ধৃত কোন রমণী, নানাবাড়ির পঞ্চাশ গজ দূরেই ছিল হায়েনাদের ক্যাম্প), ওই পশুগুলোর হাত থেকে শিশুদের চকোলেট নেবার গল্প (এ গল্পটি বলেই মা ডিসক্লেইমার দিতেন, তিনি ও চকোলেট খান নি), আর আরেকটা ছিল হাতবাঁধা এক ছেলের পালাবার সময় পিঠে গুলি খাওয়ার গল্প। ওর বেশিরভাগই তেমন কোন বড় ঘটনা নয়, যা ঘটেছিল একাত্তরে নতুন একটা দিনের গল্প লেখার, তার তুলনায়। তবু ওগুলোকে মনে হত মহাকাব্যের মতন, যার প্রতিটি শব্দ অসাধারণ ওজস্বিতা নিয়ে আমার কানে ঝংকার তুলত। আমি বার বার শুনতাম ওগুলো। বিশেষ করে ওই গল্পটা, বাঁচার আকুতি নিয়ে গোসলখানার জানলা ভেঙে হাতবাঁধা ছেলেটির ধানক্ষেতে ধরে পলায়ন, অত:পর কিছুদূর যেতেই বর্বরদের গুলি খেয়ে মৃত্যু; পাক হানাদার বাহিনীর প্রতি কচি মনে বিষাক্ত ক্রোধ জাগাত। মনে হত, ওদেরও যদি অমন হাতবাঁধা অবস্থায় শিরদাঁড়া বরাবর গুলি করা হত, তবে বোধহয় ন্যায় বিচার হত।



এই দু তিনটা গল্পে কি কৌতূহল মেটে? আরো গল্পের খোঁজ করি, পত্র পত্রিকায়, টেলিভিশনে, বই পত্রে। আরেকটু বড় হয়ে অর্ন্তজালে। আমার সামনে এখন অনেক অনেক দৃশ্য, অঙ্ক, সর্গ- এই অন্তিম বেদনার মহাকাব্যের। এত রক্ত, এত মানবিক বিপর্যয়ের কথা, এত বেদনা ও ত্যাগের কথা লেখা নেই পৃথিবীর কোন মহাকাব্যে, জানা নেই পৃথিবীর কোন জাতির। জীবন ঝরে গেছে ওই নয়টি মাসে একেকটি ঝরা পাতার মত। আর সে গণহত্যায়, মৃত্যুর মহাকাব্য তৈরিতে পাকি পাপাত্মাদের সহায়তা করেছে এদেশের কিছু জারজ! যারা ইসলামের কথা বলে করেছে বেঈমানি মাটির সাথে।



সেই জারজেরা হায়, স্বাধীনতার পঁয়ত্রিশ বছর পূর্তিতে গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে শ্বদন্ত বের করে ফুর্তি করে, হিমযন্ত্রের ঠাণ্ডা বাতাস খায় শহীদ রক্তে স্নাত বাংলার মাটিতে। ভাবতে পারিনা এখনো, এত রক্ত ও ক্লেদে, কষ্টের কাফনে মোড়ানো বিদেহী আত্মাদের পুণ্যে গড়া দেশে কি করে এটা সম্ভব? এই কি চেতনা একাত্তরের? এই কি পরিচয় আজকের তরুণ, যুবকের, মধ্যবয়স্ক ও বৃদ্ধদের; একদল রাজাকারের হাতে আজ দেশের ক্ষমতা? অনেক বেদনা নিয়ে লিখেছি সেদিন ’ক্ষমা চাই’। এ ক্ষমা চাইবার কোন অধিকার নেই আমাদের, তবুও চেয়েছি শহীদের আত্মার কাছে।



এখন সে কবিতার সাত বছর পূর্তি। আমাদের আশাবাদী মনে একটু জলসিঞ্চন। স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বছর পর শুরু হল জন্মজারজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। সবার উচ্ছ্বাসকে মিইয়ে দিতে এলো ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। বিচারের রায় হলো কসাই কাদেরের। মাত্র তিনশ চুয়াল্লিশটি লাশের হিসেব দেবার জন্যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে সরকার পক্ষ। বিজ্ঞ বিচারকের কাছে যথেষ্ট মনে হয়নি কসাইটার তাণ্ডবলীলা, রায় হিসেবে জুটল তাই যাবজ্জীবন। কত মানুষ খুন করলে তবে বিচারে পাওয়া যেত ফাঁসির আদেশ? হয়ত এক হাজার, দু হাজার কিংবা এক লাখ মানুষ!



ঘরের কোনে বসে আমি গাইতে থাকি একবুক হতাশার গান। এমন সময় অর্ন্তজালে প্রতিবাদ করে কিছু তরুণ। কিছুক্ষণের মাঝেই ওরা চলে যায় রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে, কালের সাক্ষী শাহবাগ মোড়ে। রায়ের বিরুদ্ধে তোলে প্রতিবাদ, ফাঁসির দাবি তুলে আঁকে পোস্টার, লেখে শ্লোগান। বুকের কোনে জ্বলে ওঠা আগুন তাদের দীপ্ত করে। তারা হয়ে ওঠে একেকজন নব যুগের মুক্তিসেনা।



প্রথমে আট-দশ, বিশ-পঞ্চাশ, শখানেক, শ-দুয়েক_এর পরে হাজার হাজার লক্ষ্য মানুষ স্রোতের মত নেমে আসে শাহবাগে। একাত্তরের চেতনায় দুদিনের মাঝেই ভরে ওঠে পুরো প্রজন্ম চত্বর। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, তরুণ, তরুণী সব বয়সের গনমানুষের আজ একই দাবি, কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই, রাজাকারের বিচার চাই। আমার ঘরকুনো মন, কখনো তোলেনি এইটুকু শ্লোগান, কখনো যায়নি কোন মিছিলে, মিটিঙে। কিন্তু প্রজন্ম চত্বর আমাকে টেনে নিয়ে গেল মশাল মিছিলে, শত শত তরুণের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমিও বললাম,



‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই

রাজাকারের ফাঁসি চাই’



এভাবেই মিছিলে, মিটিঙে এগিয়ে চলছে শাহবাগ। প্রাণের টানে লাখো লাখো মানুষের কাঁধে কাঁধ রেখে দাঁড়ানোয় তৈরি হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি ঘৃণার মিনার। এ মিনার ছড়িয়ে গেছে আটষট্টি হাজার গ্রামে, এ মিনার ছড়িয়ে গেছে সারা বিশ্বের বাঙালীদের মাঝে। এ মিনারে শামিল জনতা আজ বিচার নিয়ে ফিরবে বলে পণ করেছে। বসেছে ফাঁসি আদায়ের মারণযজ্ঞে-জেনে রেখো বাংলাদেশ, গোটা পৃথিবী; ইস্পাত কঠিন এ দৃঢ়তা, রোখার নেই কেউ।



প্রথম প্রকাশ: বাংলানিউজ ২৪.কম

২য় প্রকাশ: লিপি, মুক্তগদ্য সংখ্যা।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ওরা ঘৃন্য ওরা জঘন্য ।

১৪ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০১

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১৪ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৬

এরিস বলেছেন: ওদের জন্য কষ্ট করে ধিক্কার দিতেও ইচ্ছে হয়না।

১৪ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৫

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: এ জন্যেই গড়তে চাই ঘৃণার মিনার

৩| ১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ১:৪৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: ক্ষমা চাই কবিতাটা কই?

১৫ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৪

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: ব্লগে আপলোড প্রথম কবিতাটাই ছিল - ক্ষমা চাই

৪| ১৭ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:০৬

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন: ফেসবুকে একটা লিংক দেখে বাংলানিউজ ২৪.কম এ লেখাটা পড়েছিলাম। অসাধারন লেগেছিল।

১৭ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:৩১

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ নাজিম

৫| ২২ শে মে, ২০১৩ দুপুর ২:৫৮

আমি সাজিদ বলেছেন: তানিম ভাই।

ক্ষমা চাই কবিতাটা পড়া হয় নি। আমি নতুন কিনা।

লিঙ্ক টা দিবেন?

আর আপনার গল্প বলার মধ্যে অসম্ভব সুন্দর একটা সাবলীলতা আছে।ঈর্ষা হচ্ছে।

কবিতার পাশাপাশি ছোট গল্প লিখলেও পারেন।:)

২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:৩৯

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: এই ব্লগেই বেশ কিছু গল্প আপলোড করা আছে।

চাইলেই খুজে পাবে গল্প বিভাগে।

আর ক্ষমা চাই হাসান ভাইয়ের কমেন্টের উত্তরে দিয়েছি

৬| ২৩ শে মে, ২০১৩ দুপুর ২:৩৬

হানিফ রাশেদীন বলেছেন: কী খবর? ভালো আছ আশা করি।

২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:৪০

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: হানিফ ভাই, আপনার খবর কি ?

টিভিতে গিয়ে তো আমাদের ভুলেই গেলেন ;)

৭| ২৪ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:২৬

রেজোওয়ানা বলেছেন: লেখাটা সুন্দর হয়েছে, কবিতাটাও শেষে এড করে দিলে পারতে।

২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:৪১

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: কবিতাটা ব্লগে আমার প্রথম পোস্ট

যা হোক এখানে দিচ্ছি। এই কবিতাটা ছিল ব্লগে আমার প্রথম পোস্ট

ক্ষমা চাই
০৯ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৪০ |
শেয়ারঃ
0 0

শোন, আমি ক্ষমা চাই স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য-
একটা একাত্তর আনবার জন্য।
ক্ষমা চাই এই ভেবে-কেন বলেছিলাম এই কথা-
একাত্তরে-দীপ্ত ডিসেম্বরে-এদেশ,
আমার-তোমার অনেক সাধনার! আর নেই বাধা,এবারই
স্বপ্ন পাবে ছোয়া বাস্তবতার।
ক্ষমা চাই কেন বলেছি-মোর অবুঝ ছেলেটিকে,
স্বাধীনতা,সে মুক্ত রঙিণ ঘুড়ি।
কেন বলেছিলাম চঞ্চলা কিশোরী বোনটার হাত ধরে,
স্বাধীনতা মানে-লাল সবুজ শাড়ি।
ভাবি বিষণ্ন দিনে,কেন বলেছিলাম সেদিন-আনব মুক্তি
সকল শোষিত বঞ্চিতের প্রাণে-
লজ্জা হয়,আজ তাকিয়ে সময়ের আয়নায়,দেখি নিজেই
আটকে গেছি শৃংখল গহনে।
দীর্ঘ সময়!পয়ত্রিশটি বছর, শুধু চেষ্টাই করে গেলাম
বাধব প্রাণ একটু আশা ডোরে!
হয়েছি ব্যর্থ। হে সহিষ্ঞু জাতি, হে নিরীহ বাঙালিরা-
ক্ষমা করে দিও,এ অধমেরে।
ক্ষমা কোরো অগ্নিঝরা দিন,যখন বিরুলিয়া গ্রামবাসীরা
শুনেছিল আমার নির্ভীক উচ্চারণ!
আমার সোনার বাংলায়-কোন পাপিষ্টের,কোন রাজাকারের
হবে না ঠাই,পাবে না কোন আসন।
আজ ক্ষমা চাই-ওদের কাছে,যাদের বলেছি-ওরে জালিম,
জোকের দল-হোক দেশটা স্বাধীন;
এরপর পাবি বিচারের রায়-দেখবি কেমন করে তোদের
সেধিযে দেবে মাটি,করবে অন্তরীণ।
হে যুদ্ধাপরাধী,নিপীড়ক অমানুষের দল-ক্ষমা কর্ আমায়
সেদিনের কথা রাখতে পারিনি বলে;
বাকরুদ্ধ আমি নিরবে জল ফেলি, যখন হাটু গেড়ে ঠুকি
সেলাম সেদিনের কথা ভুলে।
এক বুক কষ্ট, তবু ক্ষমা চাই-যাদের বলেছিলাম,এইত
আর কটা দিন, এর পরে
চারদিক উজ্জ্বল করে আসবে নানা রঙের আলো,
সব কালো যাবে দূরে সরে।
ক্ষমা করে দিও বিপ্লবী হে, নির্ভীক সিংহ হৃদয়
কানসাটের আলোর সৈনিকেরা;
গড়লে ইতিহাস তোমরা,লজ্জার ইতিহাস!আলোর দাবিতে
দিলে প্রাণ,ছেড়ে গেলে ধরা!
কার কাছে চাইব ক্ষমা ?সে ভাষা থাকে না আমার-
যখন ছোট্ট শিশু বেড়াতে গিয়ে,
আনন্দ কি জানবার আগেই, হারিয়ে যায় বর্বরতায়-
অপরুপ পৃথিবীকে বিদায় দিয়ে।
জানি না কোন ভাষাবিদ আসবে কী এদেশে কোনদিন
যে দেবে এ শিশুর মাকে সান্তনা!
কোন সমব্যথী কী আসবে এগিয়ে,শোকাতুর পিতার কাছে
মুছে দিতে কাফন পড়ানোর যন্ত্রনা?
ক্ষমা চাই, যুবতী মেয়ে ফুলের পাগলপ্রায় মাতা আর
নির্বাক বিষণ্ন পিতার কাছে।
যে ফুল দিত স্বর্গ সেৌরভ,দুমড়ে মুচড়ে সমাজের ধিক্কারে-
ঝরে গেল অকালেই সে।
ক্ষমা কোরা পৃথিবী,এ মানব আর দেশকে - প্রিয় ফুল,
পারিনি নিরাপদ জীবন দিতে।
ক্ষমা কোরো অদৃষ্ট,আমি হতভাগা পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা বলে
আমি চলি,দেশসেবার দুশো টাকা ভাতাতে।
শেষ ক্ষমা চাই-আমার শহীদ সকল বন্ধুদের কাছে
আনর দেশ,যারা নিজের জীবন দিয়ে।
ক্ষমা কোরা তোমরা আমায়,হয়েছি ব্যর্থ আমরা সবাই
কথা দিয়ে তা ধরে রাখতে গিয়ে।
(২৬.০৭.০৬)

৮| ০২ রা জুন, ২০১৩ রাত ১:৫০

মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: সুন্দর লিখছেন - লেখা পছন্দ হইছে

০২ রা জুন, ২০১৩ রাত ১:৫৮

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: জেনে সুখী হলাম

ভাল থাকা হোক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.